উপন্যাস : প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ই ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১২ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত |
১১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত (পর্ব - ১২)
'আই লাভ ইউ পাখি।'
এই কথাটা শুনে শয়নের মনের ভেতর কি চললো বোঝা গেলো না।তবে ও একটা কথাও বলল না।নিঃশব্দে ফোন কেটে নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলে দিলো।এটা কেনো করলো নিজেই বুঝলো না।কিন্তু এই মুহূর্তে মেজাজ যে বেশ খারাপ হয়ে আছে সেটা বুঝতে পেরে পাখির ফোন'টা বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে এসে দরজা আঁটকে দিলো।আর এদিকে বেচারি পাখি জানতেও পারলো না তার সামান্য অনুপস্থিতিতে কি অঘটন ঘটেছে।সে তো মনে মনে খুশি হয়েছিল আজ একসাথে খেতে বসবে বলে।দুপুরে কখনোই একসাথে খাওয়া হয় না।সবসময় ওর একাই খেতে হয়।এইজন্য তেমন খেতেও মন চায় না।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে পাখি দ্রুত ড্রইং রুমে এলো।আজ শ্যাম্পু করতেই দেরি হয়ে গেছে।পাখি ভেবেছিলো শয়ন ওর জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু এসে দেখলো সব সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা টেবিলে কিন্তু শয়ন নেই।কিচেনে গিয়ে দেখলো ওখানেও নেই।এবার ও শয়নের রুমের দরজায় খেয়াল করলেই বুঝতে পারলো শয়ন রুমে আছে।কিন্তু দরজা আঁটকে রেখেছে কেনো?পাখি ইতস্তত করতে করতেই নক করে ফেললো।বলল,'খাবেন না?'
ভেতর থেকে উত্তর আসলো না।পাখির চিন্তা হলো।আবার জ্বর চলে এলো না তো!পাখি চিন্তিত কন্ঠে আবার বলল,'আপনার কি জ্বর এসেছে আবার?প্লিজ দরজাটা খুলুন।'
এবারও কোনো উত্তর এলো না।পাখি ভাবলো এমন কি হয়েছে যে দরজা বন্ধ করে রেখেছে কথাই বলছে না।আসতে কি বেশিই দেরি হয়ে গেলো।পাখি কিছু বুঝতে পারলো না।তবুও অনুতপ্ত কন্ঠে আবারও বলল,'সরি,আসলে শ্যাম্পু করতেই দেরি হয়ে গেছে।রাগ করবেন না প্লিজ।দরজাটা খুলুন না।'
এত রাগের মাঝেও হাসি পেলো শয়নের।তবুও হাসিকে প্রশ্রয় না দিয়ে রাগটাই প্রশ্রয় দিলো।গমগমে স্বরে ভেতর থেকেই বলল,'আমি খাবো না।আমার ক্ষিধে নেই।আপনি খেয়ে নিন।'
'ক্ষিধে না থাকলেও খেতে হবে।খেয়ে ঔষধ না খেলে জ্বর আবারও চলে আসবে।প্লিজ হালকা হলে খেয়ে নিন।'
'আমার জন্য চিন্তা করতে হবে না।জ্বর আসবে না।আপনি যান এখন।'
পাখি মন খারাপ করে এসে সোফায় বসে রইলো।ও এখনো বুঝতে পারছে না আসলে হয়েছে'টা কি!কেন এমন করছে শয়ন।তবে এখন সত্যিই খুব খারাপ লাগছে।এখানে আসার কোনোদিনই নিজের জন্য এত মনযোগ দিয়ে রান্না করেনি ও।যতোটা আজ শয়নের জন্য করেছে।ওরা একসাথে খেতে বসবে বলে।কিন্তু একমুহূর্তেই কি হলো?কেন রেগে আছে লোকটা?পাখি মন খারাপ করে ওভাবেই বসে রইলো।খাবার ছুঁয়েও দেখলো না।
বিছানায় হেলান দিয়ে কখন যে ঘুম চলে এসেছিলো শয়ন বুঝতেও পারলো না।ঘুম ভাঙলো বিকেল চারটায়।ঘড়িতে তাকিয়ে আৎকে উঠলো।অতঃপর তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বাইরে আসলো।ভেবেছিলো পাখি খেয়ে নিয়েছে কিন্তু সোফার ওপর পাখির ক্লান্ত,ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে বুঝতে পারলো ও এখনো খায় নি।এবার নিজেরই খারাপ লাগলো।মেয়েটা এত কষ্ট করে রান্না করলো আর।সবটা এভাবে নষ্ট হলো ওর জন্য।শয়ন পাখির মুখের ওপর ঝুঁকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।কি শান্ত!
হালকা গলায় ডাকলো,'পাখি,ওঠো।'
শয়নের খেয়ালেই ছিলো না যে সে দূরত্বের লাইন ইতোমধ্যে পার করে ফেলেছে।নিজেদের মাঝের বরফের পাহাড় যে ভালোবাসার উত্তাপে গলে পড়া শুরু হয়েছে সেটা কেউই বুঝতে পারলো না।দিনদিন যত উত্তাপ বাড়বে ততই বরফ গলে পড়বে।
পাখির ঘুম ভাঙলো।আধো চোখ মেলে তাকাতেই চমকে উঠলো শয়নকে এত কাছে দেখে।চোখ বড় বড় হয়ে করে ফেললো।নিঃশ্বাস বেড়ে গেলো।শয়ন চট করে সরে এসে বিপরীত সোফায় বসে বলল,'খাও নি কেনো?তোমাকে না বলেছিলাম খেয়ে নিতে।'
পাখির কাছে আশ্চর্য লাগছে।শয়ন ওকে তুমি করে বলছে!এটা কি আদৌ বাস্তব নাকি স্বপ্ন?অগোচরে নিজের হাতে চিমটি কেটে নিশ্চিত হলো আসলেই এটা বাস্তব কিন্তু হলো কি করে?কি অদ্ভুত না?হুটহাট করে সবকিছু হয়ে যাচ্ছে!ঘুমিয়ে পড়ার আগে একরকম চিত্র ছিলো ঘুম থেকে উঠে আরেকরকম।এভাবে হুটহাট করেই কি ভালোবাসা হয়ে যাবে?
পাখি উঠে বসলো।গোমড়া মুখে বলল,'খেতে মন চায় নি তাই খাই নি।'
শয়ন মুচকি হাসলো।বলল,'আচ্ছা,এখন খেয়ে নি চলো।'
পাখি মাথা নেড়ে সায় জানালো।খেতে বসে পাখি খেয়াল করলো শয়ন নিজের শাহাদাৎ আঙুল উঁচু করে খাচ্ছে।ও ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,'আঙুলে কি হয়েছে?'
'তেমন কিছু না।সালাদ বানাতে গিয়ে হালকা কেটে গিয়েছে।এখন জ্বলছে আর কি!'
পাখি ইতস্তত কন্ঠে বলল,'কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?'
শয়ন পূর্ণ মনযোগে বলল,'হ্যাঁ বলো।'
'এভাবে খেতে তো আপনার কষ্ট হচ্ছে।আর ঠিকঠাক খেতেও পারছেন না।এমনিতেও অনেক দেরি হয়ে গেছে।আপনার দুপুরে ঔষধ খাওয়ার কথা ছিলো।এখন তো আর দেরি করা যাবে না।তো আমি আপনাকে খাইয়ে দিলে আপনার কষ্ট কম লাগবে। তাড়াতাড়ি ঔষধ ও খেয়ে নিতে পারবেন।'
শয়ন এক সেকেন্ডও চিন্তা করলো না।তখনই বলল,'হ্যাঁ দাও।'
আসলেই বেচারার হাত ভিষণ জ্বলছিলো।তখন পেয়াজ কাটার সময় কিসব ভাবতে ভাবতেই খেয়ালই ছিলো না কখন হাত কেটে ফেলেছে।
ফারজানা বেগম এখন সুস্থ তবে কারো সাথে একটা কথাও বলছে না না।এদিকে মেয়ে পক্ষ'কে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিদায় করেছে অয়ন।এখন পর্যন্ত কিছুই শয়নকে জানায় নি।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জানাবে।কিন্তু এখন মা'কে কিভাবে বোঝাবে সেটাই বুঝতে পারছে না।সারাদিন কারো সাথে কথা না বললেও রাতে অয়নকে ডেকে নিষ্প্রাণ গলায় বলল,'শয়নরে বইলা দিবি।ওয় যেন আর বাড়ি না আসে।ওয় আমার জন্য মইরা গেছে।ওরে ত্যাজ্য করলাম আমি।'
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন