উপন্যাস : প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ই ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১২ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত |
১২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত (পর্ব - ১৩)
সন্ধ্যায় পড়তে বসেও বিকেলে শয়নকে খাইয়ে দেওয়ার দৃশ্য মনে করে লজ্জায় লাল হচ্ছে পাখি।কিন্তু তখনই ওর ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে ফোন বেজে উঠলো।অপরিচিত নাম্বার হওয়া স্বত্বেও দরকারি ফোন ভেবে রিসিভ করলো পাখি।ওপাশ থেকে অধৈর্য গলায় একপুরুষ কন্ঠ বলে উঠলো,'দুপুরে ফোন কেটে দিয়েছিলে কেনো?ব্লক করেছো কেনো?'
পাখি কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না।ভাবলো রং নাম্বার তাই ভদ্র গলায় বলল,'রং নাম্বার।'
'না,রাইট নাম্বার।ফোন কাটার সাহসও করবে না।'একরকম জোর গলায় বলল পুরুষটি।'
এবার পাখি বিরক্ত হয়ে বলল,'কে আপনি?কি বলছেন এসব?'
'এত তাড়াতাড়ি ভূলে গেলে?আজই তো কথা হলো সকালে।'
এবার পাখি চিনতে পারলো।রেগে বলল,'আপনার মত অসভ্য দু'টো দেখি নি।এমন করছেন কেনো?'
'কারণ তুমি আমাকে পাত্তা দিচ্ছো না।আমি তোমার পাত্তা চাইছি।'
'আমি আপনাকে একটা কথা ক্লিয়ারলি দেই আমি বিবাহিত।আমার স্বামী আছে এবং আমি তাকে ভালোবাসি।প্লিজ,আমাদের মধ্যে আসার চেষ্টা করবেন না।'
কথাগুলো বলে মুখের ওপর ফোন কেটে দিলো পাখি।বিরক্ত কন্ঠে বিড়বিড় করে গোষ্ঠী উদ্ধার করলো কিছুক্ষণ কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়লো রেহানের একটা কথা।ও দুপুরে ফোন করেছিলো।ফোন কেটে ব্লক করা হয়েছে কিন্তু কে করেছে?ওই সময় তো পাখি গোসলে ছিলো।তারমানে শয়ন!এটা মনে পড়তেই বুক'টা মোচড় দিয়ে উঠলো।সেইজন্যই কি দুপুরে রেগে ছিলো লোকটা?কি বলেছিলো ওই হতচ্ছাড়া ছেলেটা?উল্টাপাল্টা কিছু বলে নি তো!ভয়ে হৃৎপিণ্ড কাঁপছে।শয়ন এখন কি ভাবে পর সম্পর্কে?আগেই সব বলে দেওয়া উচিত ছিলো।ইশ!
এদিকে দরজার বাইরে থেকে পাখির প্রত্যেক 'টা কথা শুনেছে শয়ন।ও মূলত এসেছিলো পাখিকে বাইরে যাওয়ার কথা বলতে।কিন্তু এসে পাখির কিছু কথা শুনে ভেতরে না গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো।একটু শুনেই বুঝলো দুপুরের ছেলেটা ফোন করেছে।আবারও রাগ উঠে যাচ্ছিলো শয়নের কিন্তু পরক্ষণেই পাখির কথা শুনে রাগ লগে পানি হয়ে গেলো।মেয়েটা কি অবলীলায় স্বীকার করে নিলো তার স্বামী আছে আর সে তাকে ভালোবাসে!আসলেই পাখি ওকে ভালোবাসে?ও নিজেও কি পাখিকে ভালোবাসে?এত শক্ত,সামর্থ্য পুরুষ হয়েও নিজের এই অনুভূতিগুলো চিনতে পারছে না শয়ন।ও ভাবেই নি সিনহার পরও কাউকে এত ভালো লাগবে।
শয়ন এবার পাখির ঘরে ঢুকলো।নমনীয় স্বরে বলল,'আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।আমার এক বন্ধু এসেছে ওর সাথে দেখা করতে।তুমি দরজাটা লাগিয়ে নিও।বেশি সময় লাগবে না আমি চলে আসবো।'
পাখি মাথা নাড়লো।অতঃপর ক্ষীণ স্বরে বলল,'আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।আপনি ফেরার পর বলবো।'
শয়ন বুঝতে পারলো ওই ছেলে সম্পর্কিত কথাই বলবে।ও মাথা নেড়ে বলল,'আচ্ছা,তুমি পড়ো।আমি আসছি।'
বন্ধুর সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর বাসায় ফিরছিলো শয়ন।আজ সারাটাদিন কোনো না কোনো ভাবে মেয়েটা ওর মস্তিষ্কেই বিচরণ করছিলো।ওকে ছাড়া আর কিছুই ভাবার সুযোগ পায় নি শয়ন।কিন্তু এই রেহানের কিছু একটা করতে হবে।ব্লক করার পরও সাহস কি করে হয় অন্য নাম্বার থেকে ফোন করার।এই ছেলে কে?কি করে?এসব জানতে হবে আর পাখির সাথে দেখা হলো কি করে এটাও জানতে হবে।বাসায় ফিরেই পাখির ঘরে গেলো শয়ন।ওকে দেখে পাখি বই বন্ধ ভূমিকা ছাড়াই বলল,'আমাকে আজকে কোচিং এর এক স্যার কিছু কথা বলার জন্য ডেকেছিলো।তো আমি পড়াশোনার কথা ভেবে দাঁড়িয়েছিলাম।কিন্তু তিনি আমাকে কফিশপে যেতে বললেন আমি যাই নি।বলেছি কথা থাকলে এখানেই বলতে তখন তিনি আমাকে নানাভাবে এপ্রোচ করার চেষ্টা করছিলেন।আমি এসবে পাত্তা না দিয়ে সোজা বাসায় চলে এসেছি পর দুপুরে যখন ফোন দিয়েছিলো তখন তো আমি গোসলে ছিলাম।আমি জানি না উনি আপনাকে কি বলেছে তবে আমাকে ক্ষমা করবেন আমার উচিত ছিলো এসেই আপনাকে সব বলে দেওয়া।তারপর সন্ধ্যায় আবার ফোন করে বিরক্ত করছিলো।বলছিলো...'
শয়ন এখানে থামিয়ে দিয়ে বলল,'আর বলা লাগবে না সন্ধ্যার কথাগুলো আমি শুনেছি।তোমাকে যখন বাইরে যাওয়ার কথা বলতে এসেছিলাম তখনই শুনেছি।তুমি চিন্তা করো না একদম।আমি ওকে দেখছি।তুমি শুধু ওর নাম্বারটা আমাকে দিও।'
পাখি মাথা নাড়লো।এরপর শয়ন বলল,'খিচুড়ি খাবে?'
'হ্যাঁ খাওয়া যায়।আপনি বসুন আমি বানাচ্ছি।'
শয়ন চোখ পাকিয়ে বলল,'আমি তোমাকে বানাতে বলেছি।আমি শুধু তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি।চুপচাপ বসো,পড়তে থাকো।হয়ে গেলে আমি ডাক দিবো।'
'কিন্তু আপনার তো হাত কেটে গেছে।'
'একটুই তো!আর এখন শুকিয়ে গেছে কাটা।সমস্যা নেই।তুমি সময় নষ্ট করো না পড়ো।'
'আচ্ছা।'
শয়ন চলে গেলো রান্নাঘরে।আর পাখি নিজের পড়া পড়তে থাকলো।ভর্তি পরীক্ষার আর একসপ্তাহ বাকি।প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা তারপর বাকিগুলো শুরু হবে।এখন থেকেই ভীষণ চিন্তা হচ্ছে!চান্স হবে তো?লোকটা এত আশা করে আছে ওর দিকে এইজন্যও আরও ভয় হচ্ছে।
রান্নাঘরে পেয়াজ কাটতে কাটতে শয়নের ফোন এলো,অয়ন ফোন করেছে।পেঁয়াজের ঝাঁঝে চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে ওর।তবুও ফোন রিসিভ করে বলল,'কেমন আছো ভাইয়া?'
'ভালো না।'
'কি হয়েছে?'
'তোকে মা ত্যাজ্যপুত্র করেছে।'
কথাটা শুনে শয়ন থমকে দাঁড়ালো।হাত থেকে ফোন'টা পড়তে পড়তে বাঁচল।কল কেটে গেছে সাথে সাথেই।এবার পেঁয়াজের ঝাঁঝ নয়।সত্যি সত্যিই চোখভর্তি পানিতে ভেসে গেলো ওর গাল।পেছন থেকে পাখি কাঁধে হাত রেখে বলল,'কাঁদবেন না।আপনি কাঁদলে আমারও কান্না পায়।'
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন