উপন্যাস : প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ই ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১২ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত |
১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত (পর্ব - ১৪)
কান্নারত স্বামীকে শান্ত করতে পাখি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।এই মূহুর্তে এর থেকে বেশি প্রয়োজন বোধহয় আর কিছু নেই।শয়ন পাখির হাত ধরে পেছন থেকে সামনে এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ওর কাঁধে নিজের থুতনি রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,'মা,এটা কি করে করতে পারলো?আমি সহ্য করতে পারছি না।আমি কি করবো?কি করবো আমি?পাখি বলো না কি করবো আমি।'
পাগলের মত শুধু এসবই বলতে থাকলো শয়ন।পাখি পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করতে চাইলো ছোট বাচ্চাদের মত।এভাবেই কিছুক্ষণ পার হলো।একসময় শান্ত হলো শয়ন।পাখিকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে বলল,'অনলাইন অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি খাবার।তুমি গিয়ে পড়ো।আমি রুমে যাচ্ছি।'
রান্নাঘর থেকে ধীর পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেলো শয়ন।পাখি একা দাড়িয়ে আছে।নিজেকে ভিষণ অপরাধী মনে হচ্ছে।না চাইতেও মা,ছেলের সম্পর্কের কাটা হয়ে গেছে।নিজের মা'কে ভিষণ ভালোবাসে শয়ন কিভাবে থাকবে মায়ের মুখ না দেখে কথা না বলে?হয়তো এখন করে না কিন্তু একটা সময় যদি এই সম্পর্ক শেষের জন্য ওকেই দোষারোপ করে শয়ন তখন?মেনে নিতে পারবে ও?
রাত'টা আর কোনো কথা হয় নি দু'জনের মধ্যে।সকালেও তেমন কোনো কথা হয় নি ওদের।শয়ন চলে গেছে অফিসে আর পাখি নিজের কোচিং এ।ক্লাসেও পূর্ণ মনযোগ দিতে পারছিলো না মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছিলো 'এরপর কি হবে?কিভাবে সামলাবে শয়নকে?'
ক্লাস শেষে বের হবার সময় কালকের মত আজও ডাক পড়লো পাখির।ও শুনেও না শোনার ভান করে চলে যেতে লাগলে।পেছন থেকে রেহান দৌড়ে এসে পথ রোধ করে দাঁড়ালো।রুষিত গলায় বলল,'এতবার ডাকছি শুনছো না কেন?'
'আমার ইচ্ছে নেই।'
'কথা আছে তোমার সাথে।'
'কালই তো সব বলে দিলাম এখন আবার কি কথা।'
'আমি বিশ্বাস করি না।জানি মেয়েরা মানা করার জন্য বয়ফ্রেন্ডের কথা বলে কিন্তু তুমি তো এককাঠি ওপরে।সরাসরি জামাই আছে বলে দিলে!'
'আমি মিথ্যা বলছি না।'
'প্রমাণ কি এ কথার?'
'কি প্রমাণ লাগবে?'
'দেখা করাও তোমার স্বামীর সাথে।আমি দেখি কে সেই পুরুষ।'
'আমি পারবো না।'
রেহান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,'আমি জানতাম কারণ না থাকলে দেখা করাবে কি করে!এবার সত্যিটাই বলে দাও।'
পাখি গম্ভীর স্বরে বলল,'উনি আপনার মত বেকার না।যে সারাদিন পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়াবে।ওনার অফিস আছে।শুক্রবার ছাড়া ছুটি নেই।দেখা করতে চাইলে শুক্রবার চলে আসেন দুপুরে।দাওয়াত থাকলো।'
পাখি এত দৃঢ় কন্ঠে বলল যে এক নিমিষেই রেহানের সব আশা ভরসা ধূলিসাৎ হয়ে গেলো।মুখে কোনো কথাই এলো না।পাখি ওর সামনে দিয়েই গটগট করে হেঁটে চলে গেলো।
রেহান ওর যাওয়ার পানেই তাকিয়ে রইলো।মনে হচ্ছে না পাখি একদণ্ড মিথ্যাও বলছে।বিষন্নতায় মন ছেয়ে গেলো ওর।ভালোবাসা যদি আসতেই হতো তাহলে যাকে পাওয়া যাবে না তার ওপরেই কেন আসলো?পৃথিবীতে কি মেয়ের অভাব ছিলো?
অফিসের কাজেও ঠিকমত মন দিতে পারলো না শয়ন।সারাদিন বিধ্বস্ত অবস্থায় পার করলো।যেন কিছুই করতে মন চাচ্ছে না।বাসায় এসে নিজের ঘরেই বসে রইলো শয়ন।পাখি নিজেই গেলো ওর ঘরে।সামনাসামনি বসে বলল,'আমার মনে হয় আপনার আম্মার সাথে সরাসরি কথা বলা উচিত।'
শয়ন বিষন্ন কন্ঠে বলল,'কি বলবো?মা তো কথা বলার সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছে।সে আমাকে নিজের ছেলেই ভাবে না।'
পাখি অপরাধী গলায় বলল,'আমার জন্যই আপনাদের মা-ছেলের সম্পর্কের এই অবস্থা।'
'না তোমার জন্য না।তুমি তো পরিস্থিতির স্বীকার।মা নিজের ভূল বুঝতে পারছে না কিন্তু একদিন নিশ্চয়ই বুঝবে।আমি সেই দিনের অপেক্ষা করবো।'
পাখি ওর কাঁধে ভরসার হাত রাখলো।অতঃপর উঠে যেতে চাইলে শয়ন ওর হাত ধরে পাশে বসিয়ে দিলো।নিজের মাথাটা পাখির ঘাড়ে রেখে শান্ত কন্ঠে বলল,'পরে যাও।আমার পাশেই বসে থাকো।'
এভাবেই দিনেদিনে ওরা একজন আরেকজনের ভরসা হয়ে উঠলো।কখন যেন একই সুতোয় বাঁধা পড়লো দু'টো মন তারা টেরই পেলো না।
কাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা।স্বভাবতই ভয় পাচ্ছে পাখি।আর ভয়ে পড়াও হচ্ছে না।তাই শয়ন অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরলো।আসার সময় একটা শাড়ি,বেলি ফুলের মালা,টিপ,চুড়ি নিয়ে ফিরলো।পাখিকে দিয়ে বলল,'ঝটপট রেডি হয়ে যাও।বের হব আমরা।'
'কিন্তু কাল তো আমার পরীক্ষা।'
'তো?আমি সকাল থেকে দেখছি পরীক্ষার চিন্তায় আধমরা হয়ে যাচ্ছো তুমি।পড়ছোও না শুধু চিন্তা করছো।'
'আমার ভয় লাগছে অনেক।'পাখির চোখে মুখে শঙ্কা।শয়ন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,'আমার বিশ্বাস আছে তোমার ওপর।আমি দেখেছি তুমি পরিশ্রম করেছো তোমার সাধ্য অনুযায়ী।পরিশ্রমীরা কখনো হারে না।নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো।পরীক্ষা ভালো হবে।আজ আর পড়তে হবে না।যাও রেডি হও।'
যখনই এই লোকটা ওকে ভরসা দেয় তখনই এক নিমিষেই সমস্ত দুশ্চিন্তা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।পাখি মুগ্ধ চোখে আরও একবার তাকালো মানুষ'টার দিকে।
ঘুরেফিরে আসতে ওদের রাত দশটা বাজলো।রাতের খাবার বাইরে ই খেয়েছে।বাসায় ফিরে শয়ন বলল,'এখন আর কিচ্ছু করবে না।রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।সকালে উঠে একবার দেখে নিবে।'
'আপনি যাবেন আমার সাথে?'
'হ্যাঁ,অবশ্যই।তোমাকে দিয়ে আমি অফিসে যাবো।হয়তো আনতে যেতে পারবো না কিন্তু সিএনজি ঠিক করে রেখেছি।তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেবে।'
পাখি খুশি হলো।এত ব্যস্ততার মধ্যেও মানুষ'টা ওর খেয়াল রাখতে ভোলে না।প্রত্যেক'টা মেয়েই চায় কেউ তার প্রতি সমস্ত খেয়াল রাখুক।যত্ন নিক,ভালোবাসুক,সম্মান করুক।তবুও এত যত্নের পরও পাখি কোথাও একটা সংশয় বোধ করে।আসলেই কি শয়ন ওকে ভালোবাসে?নাকি এসব দায়িত্ব থেকে করে?
সকালে কথামত পাখিকে হলে পৌঁছে দিয়ে শয়ন চলে গেলো।পরীক্ষা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে সিএনজি'র খোঁজ করতে করতে হঠাৎই দেখলো শয়ন হাত নাড়ছে ওকে দেখে।পাখির কি হলো কে জানে!এক দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ওকে।আশেপাশের কিছু মানুষ তাকিয়ে ছিলো ওদের দিকে কিন্তু ওদের পরোয়া না করেই নিজের মানুষ'টাকে জড়িয়ে ধরলো পাখি।
এই দৃশ্য কিছুটা দূর থেকে রেহান ভালোভাবেই দেখলো।কিন্তু মোটেও খুশি হতে পারলো না।এতদিন অনেক চেষ্টা করেছে পাখিকে ভূলে যাওয়ার কিন্তু কাজ হয় নি।আর আজ যখন এই দৃশ্য দেখলো তখন যেন আর ঠিক থাকতে পারলো না।মাথায় জেদ চেপে বসলো।মনুষ্যত্ব হারিয়ে গেলো।বুঝলো না এটা ভালোবাসা না এটা জেদ!পাখি ওর জেদ!ভালোবাসা নয়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন