উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
১২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ১৩)
আজ শান্তা মরিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায় অনুষ্ঠান। প্রিয়ন্তি-মাহতিমের ব্যাচ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিদায় জানাবে। প্রিয়ন্তি শাড়ি পরেছে আজ। নীল রঙের শাড়ির গা, সোনালী রঙের শাড়ির বর্ডার। বেশ সুন্দর একটি শাড়ি। মুখে সাধারণ সাজসজ্জা। কেবল চোখে কাজল, দু ভ্রুয়ের মাঝখানে একটি কালো টিপ, ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। এই সাধারণ সাজেও যেন প্রিয়ন্তিকে অপূর্ব দেখাচ্ছে। প্রিয়ন্তি তৈরি হবার পরপরই মাহতিমের কল এসেছে। প্রিয়ন্তি কল ধরে।
ওপাশ হতে মাহতিম বেশ হন্তদন্ত হয়ে সুধায়, ' এই, কখন আসছ? অলরেডি অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। '
প্রিয়ন্তি মৃদু হেসে বলে, ' আরে আসছি রে বাবা। আধা ঘন্টা অপেক্ষা করো। '
' ওহ, হ্যাঁ। আসার পথে এক ডালা ফুল নিয়ে এসো। লাগবে এখানে। ফুলের ঘাটতি আছে। '
' আচ্ছা, আনব। '
মাহতিম কিছুক্ষণ থেমে থাকে। প্রিয়ন্তি শুনে, মাহতিমের বেপরোয়া নিঃশ্বাসের চঞ্চলতা। খানিক পর মাহতিমের কণ্ঠ কেপে উঠে। প্রিয়ন্তি শুনে, ' দ্রুত আসো। সবাই খুঁজছে তোমাকে। আর আম..আমিও অপেক্ষা করছি। '
প্রিয়ন্তির ভ্রু কুঁচকে যায়। কিছু একটা বলবে তার আগেই মাহতিম কল কেটে দেয়। প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ঘনঘন নিঃশ্বাসের বহর ত্যাগ করে ভাবে, মাহতিম মুখে যত বলুক সে প্রিয়ন্তিকে বন্ধু মনে করবে, মনেমনে ভালোবাসবে, ভালোবাসা প্রকাশ করে প্রিয়ন্তিকে অপ্রস্তুত করবে না। কিন্তু মাহতিম এসবের একটা শর্তও মেনে চলতে পারছে না। প্রিয়ন্তি বুঝে, মাহতিম পারবেও না কখনো। যতই কঠিন হোক না কেন প্রিয়ন্তির মন, প্রিয়ন্তি জানে মাহতিম প্রিয়ন্তিকে পাগলের মত ভালোবাসে। কেন বাসে? এই যে প্রিয়ন্তিকে ভালোবাসার বদলে সারাজীবন লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করে এসেছে। এসব অনুধাবন করে প্রিয়ন্তির বুক জ্বলে যায়, বুকের ভেতরটায় অপরাধবোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে।
ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা না পাওয়ার বিড়ম্বনা বোধহয় জগতের আর কিছুতে নেই। না সওয়া যায়, না বলা যায়। শুধু পুড়েই যায় সবকিছু। জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যায়। তবুও ওপাশের মানুষকে ঘৃণা করতে ইচ্ছে করে না। বরং সেই মানুষটা আড়চোখে তোমার দিকে তাকালেই তুমি শেষ হয়ে যাও, বুকের ভেতর ধরফর করে। হায়রে ভালোবাসা!
প্রিয়ন্তি মন থেকে চাইবে, যেন মাহতিমের কপালে এক ভালো মেয়ে জটুক। যে মাহতিমের ভালোবাসার বদলে আসমান সমান ভালোবাসা দিক!
প্রিয়ন্তি আর দেরি করে না। মাহতিমের মেসেজ আসছে বারবার। কখন পৌঁছাবে, দ্রুত পৌঁছায় যেন, আসছে না কেন এখনো, এসব মেসেজ ইতিমধ্যে ২০ টা এসে জমা হয়েছে আনরিড মেসেজ বারে। প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। শাড়ির কুচি সামলে মা'কে বলে বেরিয়ে পরে।
ঝরা ফুলের ডালা কিনেছে প্রিয়ন্তি। অনেক রকমের ফুলের পাঁপড়ি কেটে ঝোঁপ করে রাখা আছে ডালাতে। প্রিয়ন্তি একহাতে ডালা নিয়ে ওপর হাতে পার্স নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আবার মাহতিমের কল আসে। প্রিয়ন্তি ফোন বের মক কানে ধরে, ' আর কত দেরি করবে? আমি কি নিতে আসব? গাড়ি পেয়েছ নাকি হেঁটে আসছ আবার? '
প্রিয়ন্তি এবার একটু কঠোর হবার চেষ্টা করে। বলে, ' আর একবার ফোন করলে আমি কিন্ত ফোনের মধ্যেই চড় মেরে বসব, মাহতিম। '
প্রিয়ন্তি রেগে যাচ্ছে দেখে মাহতিম দমে যায়। মুখ ভার করে বলে, ' ঠিকাছে, ঠিকাছে। কুল, রাগছ কেন? এসো আস্তে ধীরে। '
প্রিয়ন্তি কল কেটে দেয়। প্রিয়ন্তি লক্ষ্য করে না, কথার ফাঁকে ফাঁকে কখন যে রাস্তার পাশে এসে পরেছে। প্রিয়ন্তি মাথা ঝুঁকে ফোন পার্সে রাখবে তার আগেই একটা গাড়ি এসে প্রিয়ন্তির পায়ে এসে ধাক্কা দেয়। আচমকা ধাক্কায় প্রিয়ন্তি টাল সামলাতে পারে না। ফুলের ডালা সহ মাটিতে হোঁচট খেয়ে পরে। ডালা থেকে ঝরা ফুলের পাঁপড়ি সব বের হয়ে এদিক সেদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। প্রিয়ন্তি পায়ে হালকা ব্যথা পায়। ভীষন রেগে মাথা তুলে গাড়ির দিকে তাকায়। তাৎক্ষণিক গাড়ি থেকে ফরমাল লুকে এক লম্বাটে, সুদর্শন ছেলে নেমে আসে। নাম তার অনুরাগ। প্রিয়ন্তির পাশে হাঁটুগেড়ে বসে অনুরাগ ভীষন অনুতপ্তের স্বরে বলে, ' আম সো সরি। আপনাকে হর্ন দিচ্ছিলাম, শুনেন নি। ব্যথা পেয়েছেন? ওহ, সরি। ফুলগুলো সব নষ্ট হল। '
প্রিয়ন্তি ভীষন বিরক্ত হয়। ব্যথা দিয়ে, ব্যথা পেয়েছেন কি না জিজ্ঞেস করছে। গর্দভ একটা। সাধের ফুল নষ্ট হয়েছে। ইশ! খারাপ লাগছে। প্রিয়ন্তি উঠে দাঁড়াল। শাড়ি থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বিরক্ত কণ্ঠে বলল, ' আমি ব্যথা পাইনি, আপনি এখন যেতে পারেন। '
প্রিয়ন্তি কথা বলে আর তাকায় নি অনুরাগের দিকে। বরং ফুলগুলো কুড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে। অনুরাগ বেশ অবাক চোখে প্রিয়ন্তিকে আগাগোড়া দেখে। ভারী মিষ্টি মেয়ে। প্রিয়ন্তিকে ফুল কুড়াতে দেখে সে দ্রুত বলে, ' আমি তুলে দিচ্ছি ফুল। আপনি দাঁড়ান। '
প্রিয়ন্তি এবার বেশ কঠোর চোখে অনুরাগের দিকে চায়। বেশ স্পষ্ট কণ্ঠে সুধায়, ' আমি পারব। আপনার সাহায্যের প্রয়োজন নেই। '
অনুরাগকে একপ্রকার অগ্রাহ্য করে প্রিয়ন্তি ফুল সব কুড়িয়ে ডালাতে পুড়ে নেয়। দোকানের মত করে ডালায় ফিতে লাগিয়ে অনুরাগের দিকে চায়। বলে, ' হর্ন না শুনলে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করবেন। কেউ নিশ্চয়ই যেচে পরে গাড়ির ধাক্কা খেতে চাইবে না। '
অনুরাগ এখনও চোখ বড়বড় করে প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে আছে। প্রিয়ন্তি এমন চাওনি দেখে ভ্রু চপাট করে কুচকে ফেললে সঙ্গেসঙ্গে চোখ সরিয়ে নেয় সে। নম্র ভঙ্গিতে সুধায়, ' জি, অবশ্যই। আপনিও ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তার মাঝখানে এসে যাবেন না। কেউ নিশ্চয়ই যেচে পরে কাউকে গাড়ি দিয়ে মেরে ফেলে জেলে যেতে চাইবে না। '
প্রিয়ন্তি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে অনুরাগের দিকে তাকিয়ে সোজা চলে যায় সামনে। অনুরাগ পেছনে স্থির দেহে দাড়িয়ে চেয়ে থাকে প্রিয়ন্তির যাবার পানে। অতঃপর বিড়বিড় করে আওড়ায়, ' অদ্ভুত মেয়ে তো! '
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন