উপন্যাস       :        প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা        :         আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি Bangla Golpo - Kobiyal
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি

1111111111111111111111

২৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২৮)

প্রিয়ন্তি বাবার পাশে এসে বসেছে। হাবিব তখন ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত। পরশু গায়ে হলুদের ব্যাপারটাই মিটমাট করছেন। কাছের আত্মীয়রা গায়ে হলুদ সহ বিয়েতে আসবেন। দূরের সবাইকে শুধু বিয়েতে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। ছোটখাটো মেহেদী অনুষ্ঠান বাসায় করারও চিন্তা করে রেখেছেন। প্রিয়ন্তি পাশে বসে রইল কিছুক্ষণ। হাবিবের ফোনে কথা বলা শেষ হলে তবেই ও নিজের কথা তুলবে। হাবিব মেয়েকে দেখে অল্পক্ষণের মধ্যেই ফোন কেটে পকেটে রাখেন। মেয়ের অস্থির চেহারার চোখ রেখে মুহূর্তেই বড্ড আবেগপ্রবণ হয়ে যান। হাবিব অগোচরে আবেগে ভেসে যাওয়া মনকে প্রবোধ দিয়ে প্রশ্ন করেন, 'কিছু বলবে? '

প্রিয়ন্তি চুপ করে বসে থাকে। হাতের উপর হাত রেখে চোখ পিটপিট করে যাচ্ছে। হাত ঘামছে অবিরত। কোথা থেকে কথা তুলবে তাই ভাবছে। হাবিব মেয়ের গতিবিধি সূক্ষ চোখে পরখ করেন। মেয়ের অশান্তি বুঝতে পেরেও নিজে থেকে কথা তুলেন না। সময় দেন প্রিয়ন্তিকে। কিছুক্ষণ পর প্রিয়ন্তি দম ছেড়ে বলে, 'বাবা, আমি এই বিয়ে করতে পারব না। '

হাবিব অবাক হন না। চুপ করে শুনেন। ঢিলে হয়ে যাওয়া চশমা নাকের উপর তুলে বেশ গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, 'কেন? মাহতিম খারাপ ছেলে? পরিবার খারাপ? '
প্রিয়ন্তি অস্থির কণ্ঠে আওড়ায়, ' তেমন নয় ব্যাপারটা। '
' তাহলে কেমন ব্যাপার? বিয়েতে মানা করার কারণ আসলে কি? '

প্রিয়ন্তি সিদ্ধান্ত নেয় বাবাকে সব কথা খুলে বলবে ও। সেসব কথা বলতে যত লজ্জা লাগুক না কেন, প্রিয়ন্তি সব লজ্জাকে পাশ কাটিয়ে বাবাকে সবই বলে দেবে। প্রিয়ন্তি উত্তর দেয়, 'মাহতিম ভালো ছেলে বাবা। কিন্তু তাকে আমি মন থেকে পছন্দ করি না। মাহতিম প্রায় সাড়ে তিন বছর থেকে আমাকে ভালোবাসে। প্রথম প্রথম অন্য দশটা ছেলের ন্যায় আমি ওকে মানা করে দেই। কিন্তু ধীরে ধীরে ওর ভালোবাসা, ওর পাগলামি আমাকে অতিষ্ট করে তুলেছে। ওর এসব পাগলামি দেখে আমি অনেক চেষ্টা করেছি ওকে মেনে নেবার। কিন্তু দিনশেষে ওর করা একেকটা ভয়ংকর পাগলামি দেখে আমি ওকে মানতে পারিনি। ইভেন এখনো পারছি না। ওর সঙ্গে বিয়ের কথাটা আমি কল্পনাও করতে পারি না বাবা। '
হাবিব সব শুনেন। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, 'কিরকম পাগলামি করেছে সে? '

প্রিয়ন্তি উত্তর দেয়, 'অনেক রকমের পাগলামি বাবা। আমার জন্যে কলেজের নেতাদের সঙ্গে মারধর করা। আমার পেছনে স্পাই লাগানো। আমাকে কোনো স্যার বকাঝকা করলে সেই স্যারকে হ্যারেজ করা, কোনো ছেলে আমার দিকে চোখ তুলে তাকালে, তাকে একা রাস্তায় পিটিয়ে ভয় দেখানো। তার এসব বাচ্চা ছেলের মত পাগলামি আমাকে নানা বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে। আমি নানাভাবে অনেক বড়বড় বিপদে পড়েছি শুধু তার এই পাগলামিগুলোর কারণে। এমন বড় বিপদ, যা মুখে বলতেও আমার বুক কাপছে। আমি অনেকবার তাকে বলেছি, এসব না করতে। কিন্তু দিনশেষে সে আমার ব্যাপারে এতটাই পজেসিভ ছিল যে, আমার হাজার বারণ সে কানে নেয় নি। বারবার লোক পেটানো, আমার জন্যে অন্যকে হ্যারেজ করা, এসব যেন তার হাতের ময়লা হয়ে গেছিল। সে সব বুঝত। কিন্তু এসব পাগলামির কারণে আমার ক্ষতি হওয়া সে কখনও বুঝতে চাইত না। আমার ভার্সিটি জীবন হেল করে দিয়েছিল সে। আমি এই পাগল ছেলেকে কিছুতেই বিয়ে করতে চাইনা বাবা। এটা আমার জন্যে অসম্ভব। '

হাবিব সব শুনেন। ডান হাত থুতনিতে ঠেকিয়ে গম্ভীর মুখে বসে থাকেন চেয়ারে। প্রিয়ন্তি উত্তরের আশায় বাবার মুখের দিকে চেয়ে আছে। কিছু সময় কেটে যাবার পর হাবিব কথা বলেন, 'সে কি করেছে না করেছে, এসব নিয়ে পরে কথা বলছি। আগে এটা আমাকে বলো। ইয়ান কি তোমায় সত্যি মন থেকে ভালোবাসে, নাকি তার ভালোবাসা তোমার কাছে কখনো মিথ্যা মনে হয়েছে? '

প্রিয়ন্তি মুহূর্তেই দমে যায়। বাবার হুট করে এমন কথা বলে বসবেন, সেটা প্রিয়ন্তি বুঝতে পারেনি। মাহতিমের ভালোবাসার উপর প্রিয়ন্তি কখনোই প্রশ্ন তুলতে পারেনি। আসলে সে সুযোগ মাহতিম প্রিয়ন্তিকে দেয়নি। মাহতিম সর্বদা প্রিয়ন্তি বলতে উন্মাদ ছিল। প্রিয়ন্তি নত হয়। নম্র কণ্ঠে উত্তর দেয়, ' না, মনে হয়নি। '
' ভালো। এবার আমাকে বলো। তার চরিত্রে সমস্যা আছে? আজকাল ছেলেদের যেসব অশ্লীল জিনিসে ঝোঁক থাকে, তার সেসব আছে? '
প্রিয়ন্তি সঙ্গেসঙ্গে উত্তর দেয়, 'না, নেই। '
' এটাও নেই? আচ্ছা। এবার আমাকে বলো। সে কখনো তুমিসহ অন্য কোনো মেয়েকে তার কথা বা কাজ দ্বারা অসম্মান করেছে? '

প্রিয়ন্তি কিছুক্ষণ ভাবে। একে একে মনে করার চেষ্টা করে সব। ভার্সিটিতে মাহতিম বরাবরই জনপ্রিয় মুখ ছিল। সুদর্শন এবং চঞ্চল ছেলে হওয়ায় মেয়েরা প্রায়শই ওর কাছ ঘেঁষতে পছন্দ করত। কিন্তু এতসব মেয়ের ভিড়ে মাহতিমের চোখ থাকত শুধুমাত্র প্রিয়ন্তির দিকে। একবার একটা কলেজ বার্ষিক অনুষ্ঠানে মাহতিম স্টেজে উঠে সবার সামনে মাইক হাতে প্রিয়ন্তিকে ভালোবাসি বলেছিল। তারপর থেকে মেয়েরা নিজে থেকে সরে গেছে মাহতিমের থেকে। মাহতিম সেদিন হেসে হেসে প্রিয়ন্তিকে বলেছিল, 'দেখেছ তোমার সতীনদের কিভাবে তাড়িয়ে দিলাম? একেই বলে ট্রু লাভ! এই খুশিতে একটা ঝটপট চুমু খেয়ে নাও তো প্রিয়ন্তিকা! বেশি গভীর করে দিও না আবার। তাহলে আমার আবার কিছুমিছু হয়ে যাবে। বি এলার্ট, ওকে? '

প্রিয়ন্তি চোখ বুজে মৃদু নিঃশ্বাস নেয়। তারপর উত্তর দেয়, 'না, সে কোনো মেয়েকে অসম্মান করেনি। '
' এটাও না? আচ্ছা, এবার বলো। সে তোমার সঙ্গে কেমন আচরণ করে? তোমার সঙ্গে কখনো খারাপ আচরন করেছে আজ অব্দি? যে আচরণ তোমার আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছে? কিংবা সে কখনো কি তোমায় ছোট করে, অপমান করে কথা বলেছে? '

প্রিয়ন্তি চুপ থাকে। আবার ভাবতে বসে। অনুরাগকে নিয়ে মাহতিম প্রিয়ন্তির সঙ্গে উচু গলায় কথা বলেছে ঠিকই। কিন্তু রাগের মাথায় সে প্রিয়ন্তিকে ছোট করে বা অপমান করে কিছুই বলেনি। প্রিয়ন্তির রাগ, প্রিয়ন্তির আত্মসম্মানের প্রতি সর্বদা মাহতিমের নজর ছিল। প্রিয়ন্তির শরীরে সামান্য কাটার আঘাত লাগলেও, যায় বুকে ঝড় উঠে যায়। সে মানুষটা নিজে থেকে কখনোই আঘাত করেনি প্রিয়ন্তিকে। প্রিয়ন্তি শান্ত হয় এবার। বুকের মধ্যে বয়ে চলা ঝড় শান্ত হয়ে যায়। আস্তে করে বলে, ' সে আমাকে অপমান করেনি কখনো। '

হাবিব মৃদু হাসেন এবার। চশমা খুলে ভাঁজ করে টেবিলের উপর রাখেন। তারপর বলেন, 'একটা ছেলের প্রকৃত স্বামি হবার জন্যে সব গুন ইয়ানের মধ্যে আছে। এটা আমার মুখের কথা নয়। তুমি নিজেই এটা স্বীকার করেছ। ইয়ানের মধ্যে বখে যাবার কোনো বদ গুন নেই। তোমাকে সে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে ভালোবাসে। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার, সে নিজের বৃদ্ধ বয়সেও তোমার হাত ছেড়ে দেবে না। এটা আমার বিশ্বাস। তুমি নিজেকে সময় দাও। চিন্তা করো ওকে নিয়ে। সে তোমাকে সুখে রাখবে। আমার বিশ্বাস, ইয়ানের চেয়ে আর কেউ তোমাকে ততটা ভালোবাসতে পারবে না। ভালোবাসা বিহীন একজন পুরুষের সঙ্গে আজীবন সংসার করা যায়। কিন্তু যে পুরুষের মনে তোমার প্রতি সম্মান নেই, সেই পুরুষের সঙ্গে এক মুহুর্ত থাকা জাহান্নামের মত মনে হয়। ইয়ান তোমাকে ভালোবাসে। তারচেয়ে বড় কথা, সে তোমাকে সম্মান করে। এই দুই গুন তুমি সব পুরুষের মধ্যে খুঁজে পাবে না। যার মধ্যে পাবে, তাকে সময় থাকতে আগলে নাও। দেরি হয়ে যাবার আগে, তাকে নিজের আঁচলে পুড়ে নাও। এটাই বুদ্ধিমতীর কাজ। আর আমি জানি, আমার মেয়ের বুদ্ধির কখনো তুলনা হয়না। '

প্রিয়ন্তি নিশ্চুপ হয়ে রয়। হাবিব চেয়ার থেকে উঠে পড়েন। কক্ষ থেকে যাবার আগে প্রিয়ন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু স্বরে বললেন, ' আশা করছি, তুমি সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে। মনে রাখবে, এই একটা সিদ্ধান্তের উপর তোমার সারাজীবনের সুখ নির্ভর করছে। '

হাবিব চলে যান। প্রিয়ন্তি ঠায় বসে থাকে চেয়ারে। চোখ আবার পিটপিট করছে। কি বলে গেলেন বাবা? বাবা বিচক্ষণ মানুষ। শিক্ষক হওয়ায় সবার মুখ সহজেই পড়ে ফেলতে পারেন। বাবা বলছেন, মাহতিম প্রিয়ন্তির জন্যে সেরা পছন্দ! তাহলে? বাবার কথা ফেলে দেবার মত নয়। একটা মানুষ সব দিক থেকে পারফেক্ট হয়না। খুঁতহীন মানুষ ফেরেশতার সমান। আর মানুষ কখনো ফেরেশতা হয়না। প্রিয়ন্তি কি করবে এখন? একবার ভেবে দেখবে কি? মাহতিমকে একবার শেষ সুযোগ দেবে কি? কিন্তু যদি এই সুযোগ দেবার কারনে প্রিয়ন্তিকে পস্তাতে হয়,তখন? উফ! প্রিয়ন্তি পাগল হয়ে যাবে। এই মাহতিম নিজেও পাগল হয়েছে, এখন নিজের পাগলামি দ্বারা প্রিয়ন্তিকেও পাগল বানিয়ে ছাড়ছে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন