উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
২৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২৯)
রাতের গভীরতা হইহই করে বাড়ছে। তীব্র বাতাসের দাপটে গায়ের চামড়া শীতে কুকড়ে যাচ্ছে। প্রিয়ন্তি গায়ে শাল জড়িয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। যেদিকে চোখ যায় শুধু গহীন অন্ধকার! রাস্তায় এক দুটো কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটু দূরে বালুর উপর একটা বিড়াল শীতে কাচুমাচু হয়ে ঘুমোচ্ছে। প্রিয়ন্তি বিবশ নয়নে সব দেখে যায়। হাতে সেলফোন তুলে। আঙ্গুলের ডগা সেলফোনে রেখে মাহতিমের নাম্বার ডায়াল করে। কল করবে কি করবে না, সেটাই আপাতত দ্বিধার প্রশ্ন। অনেকবার কল অপশনে আঙ্গুল নিয়েও কি মনে করে ফিরে এসেছে। নাম্বার কেটে দিয়ে আবার ডায়াল করেছে। একপ্রকার যুদ্ধ করছে নিজের মনের সঙ্গে। এই প্রথমবার প্রিয়ন্তির বড্ড অস্থির বোধ হচ্ছে। জীবনের এই তুমুল সংকটে এসে সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। কি সিদ্ধান্ত নিবে ঠাহর করতে পারছে না। প্রিয়ন্তি ঢোক গিলে। শেষবারের মত মাহতিমের নাম্বার ডায়াল করে চোখ বন্ধ করে দ্রুত কল অপশনে চাপে। রিং বাজছে। সঙ্গে কম্পিত হচ্ছে প্রিয়ন্তির অস্থির হৃদয়। সেকেন্ডের ভেতর মাহতিমের কন্ঠ শুনতে পেল। ওপাশ থেকে মাহতিম হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে বলছে, 'আমার কথা মনে পরল বুঝি? '
প্রিয়ন্তি ঢোক গিলে। কিছুক্ষণ চুপ থাকে। মাহতিম প্রিয়ন্তির নিরবতা বুঝতে পেরে কথা বাড়ায় না। চুপ করে প্রিয়ন্তির নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে যায়। কি সুন্দর করে নিঃশ্বাস নেয় প্রিয়ন্তিকা। প্রিয়ন্তির আলতো করে নিঃশ্বাস টানার শব্দে মাতাল হয়ে যায় মাহতিম। চোখ বুঁজে ঘনঘন নিঃশ্বাস নেয়। আবার কান পেতে শুনে প্রিয়ন্তির অস্থির নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ। প্রিয়ন্তি খানিক পর শুধায়, 'আমার জন্যে তোমার কাছে কিছু সময় হবে? '
মাহতিম অবাক হয়। এই প্রথম প্রিয়ন্তি ভীষন নম্র কণ্ঠে মাহতিমের সঙ্গে কথা বলল। মাহতিম নিজের বিষ্ময় কাটিয়ে উঠে সুন্দর হেসে বলে, 'আমার কাছে সময় নয় প্রিয়ন্তিকা। আমার জীবন, আমার হৃদয়, আমার শূন্যতা, আমার ভালোবাসা চাও। আমি পুরোটাই তোমার। '
প্রিয়ন্তি শুনে। তারপর আবার চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর থেমে থেমে প্রশ্ন করে সে, 'তোমার কাছে আমি কেমন মেয়ে, মাহতিম? আমাকে এত কেন ভালোবাসো? আমি সবসময় তোমাকে অবহেলা করেছি। অপমান করেছি। কিন্তু এতকিছুর পরও কেন এতটা ভালোবাসো আমায়? ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা পাওয়া উচিত। লা/ঞ্ছনা, অ/পমান, দুঃ/খ নয়। '
মাহতিম পূর্ন মনোযোগ দিয়ে শুনে কথাটা। তারপর অবাঞ্ছিত ভাবনায় না জড়িয়ে সঙ্গেসঙ্গে উত্তর দেয়, 'কারণ আমি ভালোবাসার বদলে কিছু পাব বলে তোমায় ভালোবাসি নি। তোমাকে ভালোবাসতে আমার ভালো লাগে, আনন্দ লাগে, সুখ লাগে। তাই ভালোবাসি। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি নি। সেইসঙ্গে ভালোবেসেছি তোমার রাগ, তোমার দুঃখ, তোমার অপমান, তোমার লাঞ্ছনা, তোমার ওই বাঁকা চোখের চাহনি, রাগী নয়নের তীক্ষ্মতা। তুমি আপাদমস্তক মানুষটাকেই আমি প্রচন্ড ভালোবাসি, প্রিয়ন্তিকা। কারণ জিজ্ঞেস করবে না। কারণের ঝুলি আমার কাছে নেহাৎ শূন্যই। ঠিক যেমন শূন্য তোমার মনে আমার জায়গাটা। '
প্রিয়ন্তির মনে হয়, তার বুকে কেউ আগুন জ্বা/লিয়ে দিয়েছে। বুকের ভেতরটা কেমন পু/ড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। এ কোন দ্বিধায় সে জড়িয়ে গেল। মাহতিমের কথায় কিছু একটা ছিল। হয়ত এতদিন নিজের মনে পুষে রাখা কষ্টের তী/র সে সময় সুযোগ বুঝে ছুঁড়ে দিয়েছে প্রিয়ন্তির দিকে। তী/রের সূক্ষ সূঁ/চ বিঁ/ধেছে সোজা প্রিয়ন্তির বুকের মধ্যখানে। প্রিয়ন্তি লম্বা করে নিঃশ্বাস টেনে নেয়। মাহতিম হেসে বলে, 'নিঃশ্বাসটাও কি সুন্দর করে নেও, প্রিয়ন্তিকা। '
প্রিয়ন্তি শুনে এই পাগল ছেলের কথা। শুনে পাগল ছেলের হাজার রকম পাগলামির কথা। অবশেষে একটা সিদ্ধান্ত নেয়। কঠিন সিদ্ধান্ত। প্রিয়ন্তি মাহতিমকে বিয়ে করবে। একটাবার ঠকে যাবার ঝুঁকি নিয়ে মাহতিমের হাতে হাত রেখে কবুল বলে স্বামি স্ত্রী হবে। জ্ঞানত প্রিয়ন্তি কখনো কারো সঙ্গে কটু আচরণ করেনি। আল্লাহ নিশ্চয়ই প্রিয়ন্তির কপালে জনমভর দুঃখ রাখবেন না। প্রিয়ন্তি ছোট্ট করে বলে, 'রাখছি। কালকে দেখা হচ্ছে। শুভ রাত্রি। '
কথা বলে প্রিয়ন্তি সঙ্গেসঙ্গে কল কেটে দেয়। মাহতিম কল কাটার শব্দ শুনতেই পাইনি। সে হতভম্ব হয়ে ফোন কানে নিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। তার বুক কাঁপছে। থরথর করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে শরীরের সমস্ত পশম। এ কি বলেছে প্রিয়ন্তিকা। কালকে তো তাদের গায়ে হলুদ। কাল মাহতিমের পুরো পরিবার এবং প্রিয়ন্তিকার পরিবার একসঙ্গে একটা কমিউনিটি সেন্টারে গায়ে হলুদ করবে। এটা অবশ্য মাহতিমের ইচ্ছে। দুই পরিবার একসঙ্গে গায়ে হলুদ করলে অনুষ্ঠানের আনন্দ আরো দ্বিগুণ হবে। প্রিয়ন্তিকা কালকে দেখা করবে মাহতিমের সঙ্গে। অর্থাৎ প্রিয়ন্তিকা গায়ে হলুদে যাবে। নিজের ইচ্ছেই যাবে। তার মানে প্রিয়ন্তিকা মাহতিমকে বিয়ে করার জন্যে রাজি। মাহতিমের মাথায় যতক্ষনে কথাটা এলো, মাহতিম সঙ্গেসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল। মাথার ঘন চুল আঙ্গুল চালিয়ে খা/মচে ধরল মাথার চুল। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল। একটু পর এক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে পা উঁচু করে 'হুররে' বলে লাফিয়ে উঠল। ফোন বের করে প্রিয়ন্তির অগোচরে তোলা সব ছবি চুমুতে ভরিয়ে ফেলল। চোখের কোণায় জল জমেছে মাহতিমের। প্রিয়ন্তি ছবিতে এক আঙ্গুল বুলিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, 'আমার জান! তোমার এই বিয়েতে রাজি হওয়ায় আমার কাছে অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু তুমি বিয়েতে রাজি হয়েছ। আল্লাহ আমাকে এর চেয়ে বড় উপহার বোধহয় আর কিছু দিত পারতেন না। আমার তাহাজ্জুদের নামাজের দোয়া অবশেষে কবুল হল প্রিয়ন্তিকা। আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ সো সো সো মাচ। '
মাহতিম কথাটা বলে আবার চুমু খেল প্রিয়ন্তির ছবিতে। সারারাত মাহতিম আর এক ফোঁটা ঘুমাতে পারল না। অস্থির হয়ে বসে ছিল। একবার সোফায়, একবার বিছানা, একবার বারান্দায় পায়চারি করেই রাত্রি কাটিয়ে দিল। বুকের ভেতরে সুখের ঝ/ড় বইছে তার। এই অকল্পনীয় সুখ তার কেন যেন সহ্য হচ্ছে না। চারপাশ কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে। অস্থির অস্থির বোধ হচ্ছে। প্রিয়ন্তিকা বিয়েতে রাজি হয়েছে। মাহতিমকে বিয়ে করবে বলে রাজি হয়েছে। এত সুখ মাহতিম কোথায় রাখবে? বুকের ভেতর শক্ত করে পুরে রাখবে যে!
অনুরাগ বাবা-মা সহ গাড়ি নিয়ে প্রিয়ন্তির বাসার সামনে এসে থামল। চোখের রোদচশমা খুলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। পরপর পেছন থেকে অনুরাগের বোন মা বাবা নেমে দাঁড়াল। অনুরাগ গাড়ির দরজা বন্ধ করে মাথা তুলে পাঁচ তলা তলা ঘরের দিকে চেয়ে মৃদু হাসল। বিড়বিড় করে আওড়াল, 'এক বিস্ময়কর রমণীকে জিতে নেবার জন্যে আমি এসে গেছি, প্রিয়ন্তি! '
অনুরাগ প্যান্টের পকেটে হাত রেখে রাজাদের মত এগিয়ে গেল বিল্ডিংয়ের দিকে। দারোয়ান দরজার সামনে ঘুমাচ্ছে। অনুরাগ কেশে উঠল। দারোয়ান কাশির শব্দে হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে গেল। ইতি-অতি চেয়ে অনুরাগের দিকে নজর গেল। অনুরাগ জিজ্ঞেস করল, 'প্রিয়ন্তিদের বাসায় যাব। কয় তলায়? '
দারোয়ান মাথা চুলকে বলল, ' দুই তলায় ডান পাশের বাসা। '
অনুরাগ মুচকি হেসে বলল, ' ধন্যবাদ। আমরা কি ভেতরে যেতে পারি? '
দারোয়ান হতভম্ব হয়ে বলল, ' চেনা জানা নেই। আপনারে ক্যান ভিতরে ঢুকতে দিমু। আর তাছাড়া, ওরা বাসায় নাই। গায়ে হলুদ করতে সেন্টারে গেছে। '
অনুরাগের ভ্রু দৃশ্যমান রূপে কুঁচকে গেল। জিজ্ঞেস করল, ' কার গায়ে হলুদ? '
' প্রিয়ন্তি আপার। '
প্রিয়ন্তির গায়ে হলুদ কথাটা শুনে অনুরাগের মাথায় যেন আকাশ ভে/ঙে পরে। অনুরাগ চোখে ঝাপসা দেখে। মাথায় যেন কেউ দশ মণ পাথর চেপে দিয়েছে। অনুরাগ তপ্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে, 'কার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে? '
দারোয়ান হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে বলল, ' মাহতিম ভাইয়ের লগে। মেলা ভালো পোলা। আমারে রোজ পান কিন্না দেয় তো। কি যে মায়া করে, কি বলমু। আইচ্ছা, আপনি আমারে ইতা জিগান কেনে? '
অনুরাগ দ্রুত রোদচশমা চোখে পরে নেয়। সবাইকে নিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে পেছনের দারোয়ানকে উত্তর দেয়, 'আমার অর্জনকে যে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তার সম্পর্কে একটু কি খবর রাখব না। ইনফোগুলোর জন্যে ধন্যবাদ। আসি! '
অনুরাগের কথা কিছুই দারোয়ানের বোধগম্য হয়না। সে ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থাকে শো করে ধোঁয়া উড়িয়ে চলে যাওয়া গাড়ির দিকে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৩০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন