উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
২৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ৩০)
কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পরে প্রিয়ন্তি বসে আছে মাহতিমের ঠিক সামনে। দুজনের মাঝখানে পাতলা স্বচ্ছ পর্দা টানানো। মাহতিমের গায়ে জড়ানো সবুজ এবং হলুদের মিশ্রণের পাঞ্জাবি। বুকের কাছে সোনালী রঙের ব্রোঞ্জ আটকানো। ঘন চুল জেল লাগিয়ে সোজা করে রাখা। সর্বদা সুদর্শন ছেলেকে গায়ে হলুদের সাজে এবার ভীষন চোখে লাগছে। মাহতিমের ঘোলা চোখ প্রিয়ন্তির দিকে তাক করা। প্রিয়ন্তির মুখে মেয়েরা হলুদ লাগাচ্ছে। প্রিয়ন্তি চোখ বন্ধ করে খিলখিল করে হাসছে একেকজনের আচরণে। সেই হাসির শব্দ মাহতিমের কানে প্রবেশ করা মাত্রই মাহতিম অন্য জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। কানের মধ্যে কেউ যেন জাদু করছে। মাহতিমের ইচ্ছে করছে প্রিয়ন্তির পাশে গিয়ে বসতে। হাতে হাত রেখে ভালোবাসার কথা বলতে। প্রিয়ন্তির কানে কানে আদর মেখে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, 'মেয়ে, তোমার ঝনকার তোলার হাসির তরে আমার হৃদয় চুরমার হোক। হৃদয়ের রাণী, তোমায় ভালোবেসে আমি নিঃস্ব হই, ফতুর হয়ে যাই, কুরবান হই। '
মাহতিমকে হলুদ মাখাতে ওয়াহিদ এলো। মাহতিমকে চোখ টিপে কানে কানে বলল, 'ভাই, জিতসস। অবশেষে যার হাতে উঠতে বসতে থাপ্পড় খেলি, তারেই বিয়ে করতেছিস। কি মামু, কেমন ফিল হচ্ছে? '
মাহতিম ওয়াহিদের মত করে টিপ্পনী কেটে বলে, ' বাসর বাসর ফিল হচ্ছে মামু। জলদি এই বিয়ের প্যারা শেষ করে বাসরে ঢুকা আমাদের। '
ওয়াহিদ হকচকিয়ে যায়। চোখ রাঙিয়ে মাহতিমের কাধে থাপ্পড় বসিয়ে বলে, ' শালা লুচ্চার ঘরের লুচ্চা। প্রিয়ন্তি যেন তোরে কোনোদিন ছুঁইতে না দেয়। বিড়াল মারার আগেই যেন তোর শক্তি শেষ হয়ে যায়। '
মাহতিম হাসে। বলে, ' আমার শক্তির উপর নো প্রশ্ন, মামা। শক্তি তোর উপর একবার পরীক্ষা করে দেখব নি? '
ওয়াহিদ চকিতে সরে আসে মাহতিমের থেকে। ভয়ার্ত গলায় বলে, 'শালা, দূরে থাক। আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। '
' থাক না। আমি নাহয় তোর বেড পার্টনার বয়ফ্রেন্ড হব। সমস্যা? '
ওয়াহিদ বুঝতে পারে, খুশির চোটে মাহতিম পাগল হয়ে গেছে। একে এখন ঘাটানো মানে লজ্জা শরমের জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের ইজ্জত খোয়ানো। ওয়াহিদ দ্রুত মাহতিমের মুখে হলুদ লাগিয়ে সরে আসে। এখন থেকে ওয়াহিদ মাহতিমের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে। কখন যে মাহতিম প্রিয়ন্তি ভেবে তার উপর ঝাঁপিয়ে পরে ঠিক নেই।
মাহতিম অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে প্রিয়ন্তিকে মেসেজ করে। প্রিয়ন্তি তখন সবে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। মেহমান সবাই এখন নাচ গানে ব্যস্ত। প্রিয়ন্তি সেলফোন হাতে নেয়। মাহতিমের মেসেজ পড়ে, 'আমার পাশে এসে বসবে, প্রিয়ন্তিকা? আমার খুব একা একা লাগছে। '
প্রিয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাহতিমের দিকে। মাহতিম অসহায় চোখে প্রিয়ন্তির দিকে তাকায়। প্রিয়ন্তি চোখ রাঙায়। পাল্টা মেসেজ করে, 'এত মানুষের মাঝে কেন একা একা লাগবে? চুপচাপ বসে থাকো। '
মাহতিম মেসেজ পড়ে মুচকি হেসে উঠে। মেসেজ করে আবারও, 'তুমি আমার পাশে এসে বসল, আমি চুপ করে বসে থাকব। প্রমিজ।'
প্রিয়ন্তি বিরক্ত হয়। লিখে, 'অসভ্যতা করা কি বন্ধ করবে? '
মাহতিম লিখে, 'অসভ্য হয়েছি আমি তোমারই প্রেমে। কাছে আসো না, আরো কাছে আসো না। '
প্রিয়ন্তি তাজ্জব বনে যায় মেসেজটা পরে। নাক মুখ কুঁচকে লিখে, 'ছিঃ, অসভ্য ছেলে। আর একটা অসভ্য মেসেজ পাঠালে, দেখবে আমি কি করি! চুপ করে বসে থাকো। '
মাহতিম প্রিয়ন্তির মেসেজ পরে প্রিয়ন্তির দিকে তাকায়। মাথা চুলকে ঘাড় হালকা কাত করে মৃদু হেসে উঠে। প্রিয়ন্তির চোখ পরে মাহতিমের ঠোঁটে লেগে থাকা সে হাসির পানে। প্রিয়ন্তি থমকে যায় আচমকা। হৃদয়ে কিছু একটা হয়ে যায়। সঙ্গেসঙ্গে প্রিয়ন্তি চোখ সরিয়ে নেয়। প্রিয়ন্তি ভাবে, এই ছেলেটা মারাত্মক আকর্ষন করতে জানে সবাইকে। পাগল হবার সঙ্গেসঙ্গে মাহতিমের মধ্যে পাগল করা সৌন্দর্য্যও লেগে আছে। এতসব কি করে এড়িয়ে যাবে প্রিয়ন্তি?
প্রিয়ন্তি ঢোক গলাধঃকরণ করে।
অবশেষে মাহতিমের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। গায়ে হলুদের একদম শেষ পর্যায়ে ছবি তোলার জন্যে ফটোগ্রাফার প্রিয়ন্তি এবং মাহতিমকে পাশাপাশি এনে বসিয়েছে। মাহতিমের খুশি এবার যেন বাঁধ ভেঙেছে। সে বারবার ছবি তোলা ছেড়ে প্রিয়ন্তির দিকে তাকাচ্ছে। প্রিয়ন্তি মুখে বিরক্তি দেখালেও, মনেমনে সে ততটা বিরক্তও হচ্ছে না। একপ্রকার উপভোগ করছে বললে ভালো হবে। ফটোগ্রাফার বলল, 'ভাই, কনের কোমরে ধরে সামনে তাকান। ভাবি, ভাইয়ের একটু পাশে এসে বসেন। ক্লোজ না হলে ছবি ভালো আসছে না। '
মাহতিম তো এই কথা শোনার জন্যেই অপেক্ষা করছিল। সে প্রিয়ন্তির দিকে তাকায়। ফিসফিস করে অনুমতি চায়, 'মে আই? '
প্রিয়ন্তি চোখ বুঁজে নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর বলে, 'হালকা করে ধরবে। আমার অস্বস্থি যেন না হয়। '
মাহতিম শুনে। প্রিয়ন্তি মনেমনে চাইছে না মাহতিম প্রিয়ন্তির কোমর স্পর্শ করুক। প্রিয়ন্তি যেটা চাইছে না, সেটা মাহতিম কি করে চায়? তাই মাহতিম ফটোগ্রাফারের দিকে চেয়ে বলে, 'ভাই, ধরাধরি ছাড়া ছবি তুলেন। ক্লোজ হওয়া ছাড়াও সুন্দর ছবি তোলা যায়। ফটোগ্রাফার হয়ে সব অ্যাঙ্গেলে সুন্দর ছবি তোলা জানা উচিত আপনার। '
ফটোগ্রাফার মাথা চুলকে আওড়ায়, ' সরি, ভাই। সরি ভাবি। '
মাহতিম বলে, ' সরি বলার দরকার নেই। ছবি তুলেন। '
ফটোগ্রাফার ছবি তুলতে থাকে। মাহতিম প্রিয়ন্তির পিঠে হাত নিয়ে তাকে না ছুঁয়ে সুন্দর পোজ দেয়। ফটোগ্রাফার ছবি তুলে সেটা। ছবি দেখে মনে হচ্ছে মাহতিম প্রিয়ন্তির গা ছুঁয়ে ছবি তুলেছে। আসলে তা না। মাহতিম গা ছুঁয়ে ছবি তোলার শুধু ভান করছে। একে একে ফটোগ্রাফার সুন্দর সুন্দর ছবি তুললো দুজনের। বাকি মেহমানরা এসে বর কনের সঙ্গে ছবি তুলল। এতসব ভেজালের মধ্যে প্রিয়ন্তি হাপিয়ে উঠল। গা ব্যথায় চিরবিরিয়ে উঠছে। মাহতিম প্রিয়ন্তির অবস্থা বুঝে বলল, 'কষ্ট হচ্ছে? অনুষ্ঠান শেষ করে দেই? '
প্রিয়ন্তি নড়েচড়ে বসে। বলে, ' সবাই কি মনে করবে? '
মাহতিম শক্ত গলায় বলে, ' সবার কথা বুঝতে শিখে গেলে, নিজের কথাই ভুলে যাবে প্রিয়ন্তিকা। তুমি সুস্থ না থাকলে এত কষ্ট করে বিয়ে করার মানেই হয়না। সিম্পল ভাবে বিয়ে সেরে নিলেই হবে। '
মাহতিমের কথা শুনে প্রিয়ন্তি ঘোরে চলে যায়। একটা মানুষ কি করে এতটা ভালোবাসতে পারে কাউকে। প্রিয়ন্তি ভালোবাসার মত কোনো মেয়েই নয়। প্রিয়ন্তির মত রাগি, বদমেজাজি মেয়েদের কপালে ভালোবাসার মানুষ জুটে না। জুটে তার মতই আরেক বদমেজাজি পুরুষ। প্রিয়ন্তি মনেমনে দ্বিধায় জড়ায়। মুখে বলে, 'আমি ঠিক আছি। টেনশন নিও না। '
মাহতিম তীক্ষ্ম চোখে প্রিয়ন্তির দিকে তাকায়। প্রিয়ন্তির চেহারার হাল দেখেই মনে হচ্ছে, প্রিয়ন্তি ঠিক নেই। ব্যস! আর কিছু শোনার দরকার নেই মাহতিমের। সে তার বাবাকে ডেকে বলে, 'অনুষ্ঠানের সব কাজ শেষ, বাবা? '
মাহতিমের বাবা উত্তর দেন, ' হ্যাঁ, মেহমানদের খাওয়া দাওয়া শেষ। তোমাদের ছবি তোলা শেষ? '
মাহতিম উত্তর দেয়, ' শেষ। আজ আর না। এবার বাসায় যাওয়া উচিত বাবা। বড্ড টায়ার্ড লাগছে। '
মাহতিমের বাবাও তার কথায় সায় দেন। মাহতিমের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে স্টেজ থেকে নিচে নেমে সবাইকে বাসায় যাওয়ার কথা বলেন। একে একে মেহমান শূন্য হয়ে যায় সেন্টার। কনেপক্ষ এবং বরপক্ষ তৈরি হয় বাসার যাওয়ার জন্য। প্রিয়ন্তিকে যখন মাহতিম গাড়িতে তুলে দিচ্ছিল। তখন প্রিয়ন্তির কানের কাছে মাহতিম কয়েকটা কথা আওড়ায়, 'আর মাত্র একটা দিন প্রিয়ন্তিকা। তারপরই তুমি পুরোদস্তুর আমার হয়ে যাবে। আমি খুব খুশি প্রিয়ন্তিকা। তুমি খুশি তো? '
প্রিয়ন্তি শেষের কথার উত্তর দেয় না। মাহতিমের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলে, 'সাবধানে বাসায় যেও। কালকে দেখা হচ্ছে। '
অনুরাগ যতক্ষণে সেন্টারে এসেছে ততক্ষণে বর কনের গাড়ি সেন্টার ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। অনুরাগ সেন্টারে এস পুরো সেন্টার খালি দেখতে পেয়েছে। সেন্টারের কর্মচারী সেন্টার পরিষ্কার করার কাজে লেগে আছে। অনুরাগ বুঝতে পারে, সে বড্ড দেরি করে ফেলেছে। তার আরো আগে এখানে পৌঁছা উচিত ছিল। অনুরাগ এগিয়ে আসে। সেন্টারের একটা লোককে জিজ্ঞেস করে, 'এখানে একটু আগে একটা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়েছে না? ওরা কখন চলে গেছে? '
সেন্টারের কর্মচারী উত্তর দেয়, ' এইতো একটু আগেই গেল। আপনি কে? এখন দাওয়াতে এসেছেন নাকি? '
অনুরাগ এই কথার উত্তর দেয় না। কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করে, 'আচ্ছা, এই বর কনের বিয়ে কি এই সেন্টারেই হবে? আপনি কিছু জানেন? '
' না, এই সেন্টারে না। সবার মুখে শুনলাম, তাদের বিয়ে হিল ভিউ সেন্টারে হবে। '
অনুরাগের মন প্রসন্ন হয়। সে মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানায় কর্মচারীকে। তারপরই দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যায় সেন্টার থেকে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৩১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন