উপন্যাস       :        প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা        :         আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি Bangla Golpo - Kobiyal
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি

1111111111111111111111

৩০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ৩১)

প্রিয়ন্তি লাল রঙের লেহেঙ্গা গায়ে এগিয়ে আসছে স্টেজের দিকে। পায়ের নিচে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি। দৃষ্টি নত। ঠোঁটে মৃদু হাস। এটুকুই যথেষ্ট মাহতিমের হৃদস্পন্দন থামিয়ে দেবার জন্য। মাহতিম সটান দাড়িয়ে যায় আসন ছেড়ে। ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে বধূ রূপে সজ্জিত প্রিয়ন্তির দিকে। ওয়াহিদ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে মাহতিমের কাঁধে হাত চেপে ধরে বসানোর চেষ্টা করে বলে,
' নির্লজ্জের নির্লজ্জ, বস। প্রিয়ন্তিকে হা করে গিলবার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে না। '
মাহতিম শুনে না সেই কথা। তার সর্বাঙ্গ এর স্নায়ু আটকে আছে প্রিয়ন্তির দিকে। মাহতিম ঠোঁটে হাসি টেনে বিড়বিড় করে,
' বি-উ-টি-ফুল! '

ওয়াহিদ চোখ পিটপিট করে মাহতিমের দিকে তাকায়। এই মেয়েটার চক্করে পরে তার বন্ধু একদিন নির্ঘাত পাগল হয়ে যাবে। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ওয়াহিদের। প্রিয়ন্তি স্টেজের সামনে এসে দাঁড়ায়। অপেক্ষা করে মাহতিমের। মাহতিম এখনো সেইভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। নড়াচড়া অব্দি করছে না। ওয়াহিদ ঠেলে মাহতিমকে। মাহতিম ঘাড় কাত করে বিরক্তি নিয়ে তাকায় ওয়াহিদের দিকে। ওয়াহিদ বিরক্ত হয়ে বলে,
' হা করে না থেকে প্রিয়ন্তিকে হাত ধরে স্টেজে উঠা। স্মৃতি করে রাখ এই সময়। '

মাহতিম হেসে উঠে। এগিয়ে যায় প্রিয়ন্তির দিকে। হাত বাড়িয়ে দেয় প্রিয়ন্তির দিকে। প্রিয়ন্তি আশেপাশে চেয়ে বিব্রত হয়ে হাত রাখে মাহতিমের হাতে। মাহতিম সঙ্গেসঙ্গে মুঠোয় পুড়ে নেয় প্রিয়ন্তির নরম-কোমল হাতখানা। প্রিয়ন্তি চমকে উঠে। সারা অঙ্গ শিরশির করে উঠল যেন। প্রিয়ন্তি অনুভব করে, মাহতিমের হাত কম্পিত হচ্ছে। প্রিয়ন্তি হাসে। ছেলেটা এতটা নার্ভাস হচ্ছে কেন? প্রিয়ন্তি মাহতিমের হাত ধরে স্টেজে উঠে আসে। দুজন একসঙ্গে সাজানো আসনে বসে। বসার পর থেকে মাহতিম মাথা নত করে আছে। বারবার পায়ের আঙ্গুল অন্য আঙ্গুল দিয়ে খুঁটছে। বসার পর থেকে একবারও সে তাকায় নি প্রিয়ন্তির দিকে। প্রিয়ন্তি সবই দেখে। কৌতূহল বশত মুখ এগিয়ে এনে অল্প আওয়াজে প্রশ্ন করে,
' এদিকে তাকাও। পায়ে কি দেখো এত? '

মাহতিম গলা খাঁকারি দেয়। থেমে থেমে বলে,
' তোমার দিকে তাকানোর সাধ্য আমার নেই। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। '
প্রিয়ন্তি মাহতিমের ক্ষণে ক্ষণে কেপে উঠা হাতের উপর হাত রাখে। প্রিয়ন্তি অনুভব করে, মাহতিমের হাত ঘামছে। প্রিয়ন্তি হাত সরায় না। ঘর্মাক্ত সেই হাতের উপর নিজের হাত চেপে ধরে মৃদু স্বরে বলে,
' পাগল হলে সমস্যা নেই। আমি সামলে রাখব। এবার তাকাও। '
মাহতিম লম্বা করে শ্বাস ছাড়ে। প্রিয়ন্তি ঠোঁটে কৌতুক হাসি চেপে চেয়ে দেখে সবকিছু। মাহতিম এবার মাথা তুলে। প্রিয়ন্তির চোখে চোখ রাখে। প্রিয়ন্তি নাকের নথ ঠিক করে বলে,
' আমাকে কেমন দেখাচ্ছে? '
মাহতিম হাত বাড়ায়। প্রিয়ন্তির নাকের নথে হাত দিতেই চমকে উঠে প্রিয়ন্তি বলে, ' কি করছ? মানুষ দেখছে। '

মাহতিম শুনে না সে কথা। নাকের নথ সুন্দর করে ঠিক করে দেয়। সরে আসার সময় কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
' আগাগোড়া অবিশ্বাস্য সুন্দর লাগছে। কল্পনায় এতদিন যে বধূর ছায়া বুনেছিলাম, ঠিক সেরকম। নাকের নথ কি খুলে ফেলবে? অস্বস্থি হচ্ছে বোধহয়। '
মাহতিম সরে যায়। প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে ভ্রু উঁচু করে আবারও ইশারায় একই প্রশ্ন করে। প্রিয়ন্তি চোখের ইশারায় মানা করে। মাহতিম সোজা হয়ে বসে। একে একে সবাই ছবি তুলতে আসে। ছবি তোলা শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ হল। কাজি এসে বসেছেন দুজনের পাশে। দুজনেই প্রস্তুত হচ্ছে। হঠাৎ পাশ থেকে কেউ ডেকে উঠে,
' হাই প্রিয়ন্তি। '

প্রিয়ন্তি পাশ ফেরে তাকায়। অনুরাগ হাতে গিফটের প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনুরাগকে দেখে মাহতিমের হাত শক্ত হয়ে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। বসা থেকে উঠে গিয়ে উত্তম মধ্যম দিতে চায় অনুরাগে। তবে পেছনে মাহতিমের শেরওয়ানি চেপে ধরে ওয়াহিদ। মাহতিম রাগান্বিত চোখে তাকায় ওয়াহিদের দিকে। ওয়াহিদ চোখের ইশারায় মাহতিমকে শান্ত হয়ে বসতে বলে। মাহতিম বসে। রাগে ফুঁসছে সে। বিয়ের এই অন্তিম মুহূর্তে অনুরাগের বাচ্চা অনুরাগ এসে কি ঝামেলা পাকাতে চাইছে! শালা একবার উল্টাপাল্টা কিছু করুক। মাহতিম মে/রে মে/রে তার হাড্ডি মাংস এক করে দেবে। শা/লার ঘরের শা/লা। 
মনেমনে এভাবেই অনুরাগে গা/লাগা/লি করছে মাহতিম। প্রিয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে অনুরাগের দিকে তাকায়। অনুরাগ এগিয়ে আসে। হাতে থাকে গিফটের প্যাকেট প্রিয়ন্তির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
' শুভকামনা নতুন জীবনের জন্যে। বিয়ে কি হয়ে গেছে? '
প্রিয়ন্তি উত্তর দেবার আগে পাশ থেকে মাহতিম কর্কশ স্বরে উত্তর দেয়, ' হ্যাঁ, হয়ে গেছে। '
অনুরাগ চমকে উঠে। মাহতিম খুব আনন্দ পায় অনুরাগের এই চমকে যাওয়া চেহারা দেখে। অনুরাগ কাজী সাহেবের দিকে একপল চেয়ে বলে,
' কাজী তো মাত্র এলেন দেখলাম। বিয়ে কখন পড়ালেন? '

প্রিয়ন্তি উত্তর দিবে ভেবেছিল। কিন্তু তার আগেই প্রিয়ন্তির হাত শক্ত করে চেপে ধরে মাহতিম উত্তর দেয়,
' আমাদের গতকাল বাসায় আকদ হয়ে গেছে। এখন জাস্ট ফটোশুটের জন্যে বিয়ে পড়ানো হবে। প্রিয়ন্তিকার সঙ্গে একবার কেন, হাজারবার বিয়ে পড়ালেও ক্লান্ত লাগবে না আমার। '
প্রিয়ন্তি বিস্মিত চোখে মাহতিমের দিকে তাকায়। মাহতিম চোখে ইশারায় প্রিয়ন্তিকে চুপ থাকতে বলে। প্রিয়ন্তি তাই কিছুই বলে না আর। এখন বলেই বা আর কি হবে। বিয়ের সব অনুষ্ঠান, সব নিয়ম-রীতি সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন শুধু কবুল বলার অপেক্ষা। আর প্রিয়ন্তি ভেবেচিন্তেই এই বিয়েতে হ্যাঁ বলেছে। তাই অনুরাগকে দেখে গলে যাবার মত মেয়ে সে নয়। প্রিয়ন্তি তাই অনুরাগের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলে, ' দুঃখিত স্যার। পারিবারিক ভাবে খুব দ্রুত বিয়ের কাজ সব করা হয়েছে। নিমন্ত্রণ দেবার সময় পাইনি। তবে আজকে আপনি বিয়েতে আসায় খুব খুশি হয়েছি আমি। থ্যাংক ইউ।'

প্রিয়ন্তির সম্মতি আছে এই বিয়েতে শুনে অনুরাগ ব্যথিত নয়নে কিছুক্ষণ প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে রইল। তারপরই নিজেকে সামলে নিল। বড্ড দেরি হয়ে গেছে। এতটা দেরি হয়ে যাবে অনুরাগ সেটা আশা করেনি। এখন হাতে কিছুই করার নেই একমাত্র আফসোস ব্যতীত। 

অনুরাগ মৃদু হেসে বলে,
' বিয়েতে তো আমার আসতেই হত। আফটার অল, তোমার বিয়ে বলে কথা। যাই হোক। আমার পক্ষ থেকে দুজনের জন্যে অঢেল শুভকামনা। সারাজীবন ভালো থেকো দুজন। '
প্রিয়ন্তি প্রতিউত্তরে মৃদু হাসে। পাশ থেকে মাহতিম এই কথা শুনে বিড়বিড় করে আওড়ায়, ' সারাজীবন সুখে থাকব আমরা। কারণ দুঃখ থাকলেই তোর পিনিক উঠব আমার বউকে কেড়ে নেবার। এই শালা এখনো যাচ্ছে না কেন এখান থেকে? আমার সুখের সময়ই সকল শকুনের নজর পরে। রিডিকিউলাস। '

অনুরাগ আর দাঁড়ায় না একমুহুর্ত। দ্রুতপদে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। অনুরাগ যেতেই মাহতিম শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। প্রিয়ন্তি এবার মাহতিমকে জিজ্ঞেস করে,
' উনাকে মিথ্যা বললে কেন? '
মাহতিম উত্তর দেয়, ' মিথ্যা না বললে আমার কপালের সুখ সে কেড়ে নিত। ওকে মিথ্যা বলেছি দেখে কি তোমার কষ্ট হচ্ছে? '

মাহতিকের ত্যাড়া উত্তর শুনে প্রিয়ন্তি বিরক্ত হয়ে বলে, ' সবসময় শুধু আজগুবি কথা। আমার কষ্ট কেন হবে? নাকি তুমি জেলাস? বিয়ের সব অনুষ্ঠান হয়ে যাবার পরও একটা ছেলে কি করে অন্য কাউকে নিয়ে জেলাস হতে পারে?'
মাহতিম উত্তর দেয়, ' আমি জেলাস নই। আমি শুধু বিরক্ত হয়েছি। তোমাকে নিয়ে এখন আর জেলার হবার মত কিছু নেই। তুমি এখন আমার বউ। '
প্রিয়ন্তি শুধরে দেয়, ' বউ হইনি, হব। '
প্রিয়ন্তির কথা শুনে মাহতিমের ভ্রু কুঁচকে যায়। সে তাৎক্ষণিক বলে,
' আমার বউ হওয়া নিয়ে তোমার কোনো সন্দেহ আছে? '
প্রিয়ন্তি উত্তর দেবার আগেই মাহতিম কাজী সাহেবের দিকে চেয়ে বলে , ' চাচা, বিয়ে কখন পড়াবেন? আমাদের কি আর বাড়িঘর নেই। সারাদিন হলেই পরে থাকব নাকি? '
প্রিয়ন্তি শুধু দেখে যায় মাহতিমের জ্বলে পুড়ে যাওয়া চেহারা। মনেমনে বেশ মজা পায় প্রিয়ন্তি। সে মৃদু হেসে চেয়ে রয় মাহতিমের দিকে। 

কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। সময়ের পালা ধরে তিন কবুল বলে দুজনের বিয়ে হয়ে গেল। প্রিয়ন্তি এখন মাহতিম ইয়ানের বৈধ স্ত্রী। মাহতিম ইয়ান যে মেয়ের জন্যে এতটা বছর নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে, আজ সে সেই মেয়েকেই নিজের জন্যে বৈধ করে নিয়েছে। মাহতিম এক বুক তৃপ্তি নিয়ে প্রিয়ন্তির দিকে তাকায়। প্রিয়ন্তি একহাতে চেপে ধরে মাহতিমের কম্পিত হাত। হাতে মৃদু চাপ দিয়ে আশ্বাস দেয়, ' হ্যাঁ, আজকে থেকে এই প্রিয়ন্তি জাহান মাহতিম ইয়ানের সহধর্মিণী, অর্ধাঙ্গিনী এবং একজন হালাল প্রেমিকা। '

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন