উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
৩৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ৩৪)
'নাতবউ! আমার পাশে আইয়া বহ।'
প্রিয়ন্তি মাহতিমের দাদীর কথা শুনে নম্রভাবে মাথা দুলিয়ে তার পাশে এসে বসে। দাদির নজর সবার প্রথমে প্রিয়ন্তির ভেজা চুলে পরে। তিনি প্রিয়ন্তির ভেজা চুল দেখে মনেমনে কিছুটা স্বস্তি পান। তিনি শুরুতে শুনেছেন বটে। তার নাতি কতটা পাগল এই মেয়ের জন্য। দিনরাত ঘুরে বেড়াত এই মেয়ের পেছনে, এই খবরও তিনি পেয়েছেন। বাড়িতে অশান্তি সৃষ্টি করে এই মেয়েকে তার নাতি বিয়ে করেছে শুনে কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিলেন তিনি। যতটুকু বর্ণনা শুনেছেন, তাতে তার মনে হয়েছে মাহতিম বোধহয় একাই এই মেয়ের জন্যে পাগল। মেয়েটা বোধহয় মাহতিমকে পছন্দ করে না। কিন্তু আজকে বিয়ের পরদিন সকালে প্রিয়ন্তির ভেজা চুল দেখে তার সমস্ত অসন্তুষ্টি মিটে গেল। দুজনের মনের মিল হয়েছে সেটা দেখে তিনি কিছুটা তৃপ্তি পেলেন। দাদি প্রিয়ন্তির হাত ধরে নিজের কোলে রাখলেন। প্রিয়ন্তির খুব নার্ভাস লাগছে। দাদি নিজের কোমরের বাঁধা ব্যাগ থেকে এক জোড়া স্বর্ণের বালা বের করে প্রিয়ন্তির হাতে পরিয়ে দিলেন। প্রিয়ন্তি চোখ নামিয়ে ফেলল। দাদি আঙ্গুলের ডগা দিয়ে প্রিয়ন্তির থুতনি ধরে মুখ উচু করলেন। আদর কণ্ঠে বললেন,
' আমার বিয়ের সময় আমি শুধু দুইখান বালা'ই পাইসিলাম। পরে বিয়ের পর যখন তোমার দাদু শ্বশুরের টাকা পয়সা হইল তহন তাইন আমারে আরো বালা বানাই দিসিলেন। আমি তার মধ্যে থেকে এক জোড়া বালা নয়নারে দিসি যহন ওই পয়লা বিয়া হইয়া এই ঘরে আইসিল। কিন্তু আইজ আমি তোমারে আমার বিয়ের বালা জোড়াই দিলাম। কারণ তুমি যার বউ হইয়া আইস, হে আমার পরদ্দান নাতি। আমারে সবার থেকে হেই বেশি মায়া করে। বাকিরাও করে। কিন্তু হে আমি বলতেই পাগল। তোমার থেকে হে কিন্তু আমার লাইগা বেশি পাগল। তুমি কিন্তু হের পাগলামি আমার থাইকা কাইরা নিবা না। তাইলে কিন্তু বললাম বালা ওইব না। বুঝবার পারস? '
কি সুন্দর অভিমানী আবদার। প্রিয়ন্তি মৃদু হাসে। নম্র কণ্ঠে বলে,
' কেড়ে নেব না, দাদি। আপনি তার প্রথম পাগলামো সবসময়ই থাকবেন। '
দাদি শুনে খুশি হলেন। তবে মুখে সেটা খুব একটা প্রকাশ করলেন না। বরং আড়ালেই রাখলেন। তারপর প্রিয়ন্তির ঘোমটা চুল থেকে একটু সরিয়ে আবার জায়গায় রেখে দিলেন। প্রিয়ন্তি এতে কিছুর অবাক হল। দাদি প্রিয়ন্তির কানের কাছে এসে বললেন,
' ঔষুধ টুওশুধ খাইস নাকি? ঔষুধ টুওশুধ খাইও না কইলাম। বিয়ের পরপরই বাচ্চা হইয়া যাওয়া বালা। স্বামীর ভালোবাসা আরো বাইরা যায়। বুঝবার পারস?'
প্রিয়ন্তি এবার অস্বস্তিতে রীতিমত জমে যায়। মাথা নত করে মনেমনে দোয়া করতে থাকে এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্যে। প্রিয়ন্তি এবার খুঁজতে লাগল মাহতিমকে। দেখা গেল পরমুহূর্তেই মাহতিম চট করে কোথা থেকে দাদির কোলে মাথা রেখে মাটিতে হাঁটু মুড়িয়ে বসে গেল। দাদি আচমকা মাহতিমের আগমনে চমকে উঠলেন। মাহতিমের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
' কি ব্যাপার দাদুভাই? আমাগো মাঝখানে তুমি ক্যান আইলা? কথা বলতেছিলাম না আমরা?'
মাহতিম মাথা একটু তুলে দাদির মুখের দিকে তাকাল। মিষ্টি হেসে বলল,
' সেটাই তো শুনতে আসছি। বিয়ে তো ও একা করে নাই। আমিও করেছি। তাই সকল টিপস অ্যান্ড ট্রিকস ও একা কেন জানবে? আমাকেও জানাও। ওর একা অভিজ্ঞতা বেড়ে কি হবে? আমারও বাড়ুক। '
দাদি মাহতিমের একটুখানি অপেক্ষায় অধৈর্য্য হওয়া বুঝতে পেরে হেসে উঠলেন। মাহতিমের চুল টেনে দিয়ে বললেন,
' কিছু লাগবে? সোজাসুজি বইলা দাও। ঘুরাইও না এত। আমি সব বুঝি। '
মাহতিন দাদির কোলে মাথা রেখে প্রিয়ন্তির দিকে তাকায়। লজ্জায় তখন প্রিয়ন্তির মরিমরি অবস্থা। এতগুলো কথা শুনে প্রিয়ন্তি ঠিক কোথায় মুখ লুকাবে বুঝতে পারছে না। মাহতিম আসলেই ঠিক বলেছিল। বিয়ের পরদিন অনেক কথা সহ্য করতে হয় নতুন বউদের। তাছাড়া মাহতিমের দাদি শুধুমাত্র প্রিয়ন্তির ভেজা চুল দেখেই তাকে পছন্দ করে বালা দিয়েছেন। নাহলে দেখা যেত, তিনি হয়ত ভেবে বসতেন তার নাতির সঙ্গে প্রিয়ন্তির কিছুই ঠিক নেই। মাহতিম তাকে এই যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছে। মাহতিম প্রিয়ন্তির মুখ দেখে বুঝে ফেলেছে, প্রিয়ন্তিকে ইতিমধ্যেই লজ্জাজনক কথা বলা হয়ে গেছে। সেটা জেনেই মাহতিম দ্রুত এসে তাদের কথা থামিয়েছে। দাদি চুল টেনে দিচ্ছেন মাহতিমের। মাহতিম দাদির কোল থেকে মাথা তুলে ঘাড় কাত করে খুব নিষ্পাপ কণ্ঠে বলল,
' ওকে একটু লাগবে। নিয়ে যাই? '
দাদি ভ্রু কুঁচকে মাহতিমের দিকে তাকালেন। মাহতিম তখনো ভীষন নিষ্পাপ চোখে চেয়ে আছে দাদির দিকে। প্রিয় নাতির এমন নিষ্পাপ মুখখানা দেখে হেসে ফেললেন তিনি। প্রিয়ন্তি হাত টেনে মাহতিমের হাতের উপর রেখে বললেন,
' যা, নিয়ে যা। '
মাহতিম হেসে ফেলে। দাদির মুখ দুহাতে ধরে উনার কপালে চুমু খায়। ধন্যবাদ জানিয়ে প্রিয়ন্তিকে নিয়ে সেখান থেকে নিজের ঘরে চলে আসে।
নিজেদের ঘরে এসে মাহতিম দরজা হালকা ভিড়িয়ে দেয়। একেবারেই লক করে না। ভরদুপুরে বউকে নিয়ে দরজা বন্ধ কর বসে থাকা মাহতিম-প্রিয়ন্তি দুইজনের জন্যে লজ্জাজনক। প্রিয়ন্তি বিছানায় বসে আছে। নিঃশ্বাস ফেলছে ক্রমাগত। মাহতিম প্রিয়ন্তিকে অস্থির হতে দেখে প্রিয়ন্তির পাশে এসে বসে। কিছুক্ষণ প্রিয়ন্তিকে সূক্ষ চোখে পর্যবেক্ষণ করে। তারপর মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে,
' দাদি কি বলছে তোমাকে? '
প্রিয়ন্তি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে,
' তেমন কিছু না। ঐ তো সংসার জীবনের টুকিটাকি বোঝাচ্ছিলেন। '
মাহতিম বুঝতে পারল, প্রিয়ন্তি কথা এড়িয়ে গেছে। আচ্ছা, যাক। লজ্জা পেলে বলার দরকার নেই। মাহতিম জোর করবে না প্রিয়ন্তিকে। মাহতিম জিজ্ঞেস করে,
' খেয়েছ কিছু? '
প্রিয়ন্তি উত্তর দেয়, ' হ্যাঁ। পোলাও আর গরুর মাংস। '
মাহতিম বলল,' আমি জানি আজকে সকালে কি রান্না হয়েছে। জিজ্ঞেস করছি, তুমি খেয়েছ কি না। সত্যি বলবে। '
প্রিয়ন্তি মিনমিন করে বলে, ' খুব একটা খেতে পারিনি। সবার সামনে বসে খেতে কেমন অস্বস্তি লেগেছিল। ভাবি আর তুমি ব্যতীত কাউকে তেমন একটা জানিনা। বিয়ের ভেজালের কারণে তোমার আম্মুর সঙ্গেও কথা হয়নি ভালো করে। তাই অপরিচিত পরিবেশে খেতে পারিনি ভালো করে। '
মাহতিম শুনে। প্রিয়ন্তির পাশ থেকে উঠে যায়। রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে প্রিয়ন্তিকে বলে যায়, এই ঘরে চুপচাপ বসে থাকার জন্যে, মাহতিম খাবার নিয়ে আসছে।
একটু পরই মাহতিম খাবার প্লেটে করে নিয়ে ঘরে ঢুকে। পানি ভর্তি গ্লাস আর প্লেট টি টেবিলে রেখে বাথরুম থেকে হাত ধুয়ে আসে। তারপর প্লেট নিয়ে প্রিয়ন্তির র পাশে বসে। মাহতিমকে নিজের হাত দিয়ে ভাত মাখাতে দেখে প্রিয়ন্তির দ্রুত বলে উঠে,
' আমি নিজের হাতে খেতে পারব। '
মাহতিম এক লোকমা ভাত প্রিয়ন্তির মুখের সামনে ধরে বলে,
' হা করো, খাইয়ে দিচ্ছি। '
প্রিয়ন্তি বিস্মিত মুখে চেয়ে থেকে হা করে। মাহতিম একের পর এক লোকমা তুলে দিতে থাকে প্রিয়ন্তির দিকে।
এই একটা মানুষের ধৈর্য্য আর ভালোবাসার পরিমাপ করে প্রিয়ন্তি কখনও শেষ করতে পারে না। মাহতিমকে গত চারটা বছর প্রিয়ন্তি নানাভাবে অপমান করেছে। প্রিয়ন্তি ভেবেছিল, মাহতিমকে অপমান করলে হয়ত মাহতিম প্রিয়ন্তির পিছু ছেড়ে দেবে। অথচ প্রিয়ন্তি ভুল ছিল। মাহতিম তার ধৈর্য্য ক্ষমতা দিয়ে শেষ অব্দি প্রিয়ন্তিকে ঠিকই জয় করে নিয়েছে।
কিভাবে পারে মাহতিম একটা মেয়েকে এতটা, এতটা ভালোবাসতে? ক্লান্ত হয়ে যায় না সে? প্রিয়ন্তি কি কখনো মাহতিমকে ঠিক মাহতিমের মতই অফুরন্ত ভালোবাসতে পারবে? এটা কি সম্ভব হবে কখনো? প্রিয়ন্তি জানে না। সত্যি জানে না।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৩৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন