উপন্যাস       :        প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা        :         আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি Bangla Golpo - Kobiyal
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি

৩২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ৩৩)

আজ সকাল সকাল মাহতিম গোসল সেরে নিয়েছে। এত ভোরে গোসল করার কারণে আপাতত সে শীতে কাপছে। শীতের কারণে কোমরে একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে, অন্য টাওয়াল দিয়ে গা ঢেকে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। প্রিয়ন্তি তখন ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রাতে খুলে রাখা গহনা থেকে অল্প কিছু গহনা পরে নিচ্ছে। প্রিয়ন্তি গোসল করে নি দেখে মাহতিম অবাক হল। হেঁটে এসে প্রিয়ন্তির পেছনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
' গোসল করো নি? '


প্রিয়ন্তির গহনা পড়া শেষ। নতুন বউ হিসেবে একটু সাজগোজ না করলেই নয়। প্রিয়ন্তি চোখে হালকা করে কাজল দিতে দিতে বলল,
' না, বিকেলে করব। এখন শীত লাগছে। '
মাহতিম বাঁকা চোখে চেয়ে বলল,
' তুমি এভাবেই আজ রুমের বাইরে যাবে? '
প্রিয়ন্তি কাজল দেওয়া বন্ধ করে ভ্রু কুচকে আয়না দিয়ে মাহতিমের দিকে চেয়ে বলল,
' কেন? কি হয়েছে? আমি তো মোটামুটি নতুন বউয়ের মতই সেজে রুম থেকে বের হচ্ছি। এখন কি আবার আবার নতুন করে কনে সেজে ঘর থেকে বের হতে হবে? '

মাহতিম ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়ল। বসে থাকা প্রিয়ন্তির দিকে ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বলল,
' তোমার সেন্স অব হিউমার ভালো। কিন্তু মাঝেমধ্যে এটাকে কাজে লাগাও না কেন? '
প্রিয়ন্তি বাঁকা চোখে তার বাম ঘাড়ের পাশে ঝুঁকে থাকা মাহতিমের দিকে তাকাল। প্রিয়ন্তি বুঝতে পারছে না, মাহতিম আসলে কিসের কথা বলছে। প্রিয়ন্তি প্রশ্ন করল,
' মানে? ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সোজাসুজি বলো না কি হয়েছে। '


মাহতিম আবারও আগের ন্যায় গলার স্বর নামিয়ে ফিসফিস করে বলল,
' অ্যাজ ইউ নো। আমাদের গতকাল বাসর রাত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের মধ্যে কিছু না হলেও বাইরের মানুষ সেটা জানে না। বাসর রাতে কিছু হওয়া নরমাল, কিছু না হওয়াটাই এবনরমাল। বাইরে দাদু আছেন, দাদুর বোন আছে, আরো কিছু বৃদ্ধ মহিলা আছেন। তুমি যদি এখন ভেজা চুলে বাইরে বের না হও, তারা সেটাকে ভালো চোখে দেখবে না। তিল থেকে তাল বানাবে। শেষ অব্দি লজ্জাটা তুমিই পাবে, আমি না। সো….'

প্রিয়ন্তির চোখ বড়বড় হয়ে এল। মাহতিম যে কথাগুলো এত সহজে স্বাভাবিভাবে বলে ফেলল, প্রিয়ন্তি ততটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারল না কথাগুলো। লজ্জা লেগেছে বটে তবে লজ্জার চেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছে।

 মাহতিম নিজের মত করে এসব কথা বলে মৃদু হেসে সরে এলো। গা থেকে টাওয়াল খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে প্রিয়ন্তির ঠিক পাশে দাড়াল। আয়নার দিকে তাকিয়ে ভেজা চুল ঝাড়তে লাগল। মাহতিমের ভেজা চুল থেকে পানির ফোঁটা ছিটকে পরতে লাগল প্রিয়ন্তির চোখেমুখে। তাতেই চোখ মুখ কুঁচকে গেছে প্রিয়ন্তির। প্রিয়ন্তি উঠে দাঁড়াল। মাহতিমের থেকে কিছুটা সরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
' সিরিয়াসলি মাহতিম। এই যুগে এসব চিন্তা কে করে? যুগ পাল্টেছে। সবার মানসিকতাও পাল্টেছে। বিয়ের পরের দিন সকালে গোসল না করা এখন আর মানুষ খারাপ চোখে দেখে না। '


মাহতিম ঘুরে তাকাল। সঙ্গেসঙ্গে প্রিয়ন্তি আঁতকে উঠল। মাহতিমের গৌড় বর্ণের প্রশস্ত বুক মেলে রাখা প্রিয়ন্তির সামনে। এতক্ষণ ভেজা গায়ে মাহতিমকে লক্ষ্য করেনি প্রিয়ন্তি। কিন্তু এখন ভুলবশত চোখ পরাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রিয়ন্তির জন্যে। বুকের ভেতর নিজের অজান্তেই ধড়ফড় করছে। প্রিয়ন্তি ঢোক গিলে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে উত্তর পাবার আশা নিয়ে মাহতিমের দিকে চেয়ে রয়। মাহতিম এগিয়ে আসে। দুহাত বাড়িয়ে প্রিয়ন্তির ঘাড়ে রাখে গলা জড়িয়ে ধরে। মাহতিমের এমন কাছে আসায় প্রিয়ন্তি থতমত খেয়ে যায়। ভেজা গায়ে, অর্ধ পোশাকে মাহতিমকে নিজের এতটা কাছে দেখে সারা অঙ্গ শিরশির করে উঠে প্রিয়ন্তির। তবে মুখের মধ্যে নিজের এই অস্থিরতা প্রকাশ করে না প্রিয়ন্তি।

 স্বাভাবিক ভাবেই চেয়ে থাকে মাহতিমের দিকে। মাহতিম বুঝায়,
' তুমি, আমি, ভাইয়া, ভাবি এই যুগের হলেও, আমাদের দুই যুগ আগের হলেন দাদু। এই যুগের সঙ্গে নিশ্চয়ই দুই যুগ আগের মানুষের মানসিকতার তুলনা চলে না। তারা বিয়েতে সাধারণত এসবই দেখে। বুঝো না, আগের মানুষ। সংস্কার, কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা এসব তাদের মধ্যে একটু বেশি। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। আমার কথা মানো। নাহলে এমন লজ্জায় পড়তে হবে, আমার বুক ছাড়া কোথাও মুখ লুকানোর জায়গা পাবে না। '


প্রিয়ন্তির অস্থিরতা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছ। মাহতিমের ভেজা হাতের স্পর্শ প্রিয়ন্তির ঘাড়ে লাগতেই প্রিয়ন্তি কেমন যেন ঝিম ধরে যায়। এ কেমন অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে প্রিয়ন্তির সঙ্গে? আগে এমন কখনো হয়নি। একদম নতুন এই অস্থির অনুভূতি প্রিয়ন্তির কাছে ভালো লাগছে না। প্রিয়ন্তি নত কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলে,
' আ-আমার থে-থেকে স-সরে দা-দাঁড়াও মাহতিম। '

মাহতিম ভ্রু কুচকে তাকায়। পরপরই উচ্চস্বরে হেসে উঠে। বাম চোখ টিপে বলে,
' কেন? কিছু হয় নাকি? '
প্রিয়ন্তি লজ্জায় থতমত খেয়ে যায়। মাহতিমের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তাকে। মাহতিম দু পা পিছিয়ে আবারও হাসতে থাকে। প্রিয়ন্তি রাগান্বিত চোখে একপল সেদিকে চেয়েই শাড়ি নিয়ে বাথরুমে চলে যায়। মাহতিম তখনো প্রাণখুলে হেসে যাচ্ছে।


সত্য সত্য প্রিয়ন্তি গোসল করে মাথায় শাড়ির আঁচল তুলে ঘর থেকে বেরিয়েছে। মাহতিম তখন বসার ঘরে বসে বিয়েতে আসা বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিল। প্রিয়ন্তিকে ভেজা চুলে দেখে ওয়াহিদের চোখ ছানাবড়া। সে মাহতিমের একটু কাছে ঘেঁষে ফিসফিস করল,
' ভাই, প্রথমদিনেই ছক্কা মারলি? প্রিয়ন্তি ছুঁইতে দিল? হায় আল্লাহ। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না ভাই। একটা চিমটি দে আমারে। '


মাহতিম বাঁকা চোখে ওয়াহিদের দিকে চায়। বিরক্ত হয়ে বলে,
' শালা, আগের দিন গেছে। এখন ও ভাবি হয় তোর। ওকে নিয়ে অশ্লীল কথা ছাড় এখন। '
ওয়াহিদ হাসি চেপে রেখে ঠোঁটে আঙ্গুল দেয়। মাহতিম মাথা ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই আবারও খিলখিল করে হেসে উঠে ওয়াহিদ। মাহতিম চমকে উঠে তাকায়। ওয়াহিদকে বেকুবের মত হাসতে দেখে মাহতিম তেড়ে আসে। ওয়াহিদ সরি, সরি বলেও আবারও বেহায়ার মত হাসতে থাকে। মাহতিম ওয়াহিদের পিঠে কয়েক ঘা বসিয়ে উঠে চলে আসে সেখান থেকে। সবসময় এই ওয়াহিদ ওর পিছু লাগে। খচ্চর একটা।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন