উপন্যাস        :         ভিলেন
লেখিকা        :          মনা হোসাইন
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         

লেখিকা মনা হোসাইনের “ভিলেন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০১৯ সালে লিখেছেন।
ভিলেন || মনা হোসাইন Bangla Golpo - Kobiyal
ভিলেন || মনা হোসাইন

1111111111111111111111

১৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

ভিলেন || মনা হোসাইন (পর্ব - ১৭)

কেটে গেছে ৩ টা বছর মেঘলা এবার একটু একটু সুস্থ হতে শুরু করেছে...
অবাক করা বিষয় এই ২ বছর নীরব মেঘলাকে ছেড়ে যায় নি মেঘলার পাশেই ছিল। মেঘলার দেখাশুনা করেছে,যত্ন নিয়েছে...
নীরবের মেঘলার প্রতি মায়া পড়ে গিয়েছে...
মেঘলাও নীরব কে ভরসা করতে শিখেছে।
৩ বছর পর আজ মেঘলা দেশে ফিরবে,
ডাক্তার বলেছে আত্মহত্যা করার চেষ্টাটা মেঘলার সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম। সে এর আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল ভবিষ্যতেও করতে পারে তাই যেন ওকে সব সময় খুশিতে রাখা হয়।

নীরব নিজেই নিজেকে কথা দিয়েছে মেঘলাকে সবসময় হাসিখুশি রাখবে...
মেঘলারা রেডি হয়ে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল আর দেখতে দেখতে পোঁছেও গেল।
নীরবঃ তো তুমরা এবার যাও মেঘলা আমি বাসায় যায় অনেক দিন পর ফিরলাম তো বাবা মা ক্ষেপে আছে নাহলে বাসায় পৌছে দিতাম।
মেঘলাঃ আমার জন্য এতকিছু না করলেও পারতে নীরব শুধু শুধু কষ্ট করলে। 
নীরবঃ কি যে বল না...

আর শোনো স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু করে না বুঝলে  তোমাকে আমার ভাল লাগে তোমার জন্য কিছু করতে পেরেছি এটা ভেবেই মন টা খুশিতে ভরে যায়।যা করেছি নিজের সেটিস্ফেশনের জন্য করেছি তোমার জন্য নয়।
মেঘলাঃ তুমি খুব ভাল তাই করেছে আর  যার করার কথা ছিল সে তো...
নীরবঃ আবার শুরু করলে..এমন করলে আমি কিন্তু আর তোমার সাথে কথা বলব না...
যা হয় নি তা নিয়ে কথা বলা বোকামি।
মেঘলাঃ ঠিকি বলেছো, আচ্ছা এবার তাহলে যাই...
নীরব মেঘলাদের বিদায় দিয়ে দিল।
মেঘলার মাঃ ছেলেটা বেশ ভাল তাই না?
মেঘলাঃ হুম খুব কেয়ারিং।
মেঘলার মাঃ হ্যা ও না থাকলে তো আমি সব সামলাতেই পারতাম না তোর বাবা সেই যে আসল আর গেল না শুধু টাকা দিলেই মনে হয় দায়িত্ব পালন হয়ে যায়।কি যে করে না...
মেঘলা; ছাড়ো মাম্মাম বাবা অনেক বদলে গিয়েছে বলে লাভ নেই।
মেঘলা আর মেঘলার মা বাসায় ঢুকে অবাক হয়ে গেল।তাদের পায়ের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেছে কারন মেঘলার বাবা বিয়ে করেছেন।
মেঘলার মাঃ এসবের মানে কি..??

মেঘলার বাবাঃ যা দেখতে পাচ্ছো তাই.. তোমাদের জন্য ত আমি আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পারি না তাই না তোমার যে সাইকো মেয়ে কবে সুসাইড করবে কে বলতে পারে আগেও সুসাইড এটেম্পট করেছে এরপর হয়ত আবার করবে আমার বংশের প্রদীপ জ্বালানোর জন্য তো কাউকে চাই তাই না? তাই বিয়ে করেছি।
মেঘলার মাঃ একদন এক্সিউজ দিবে না আমি আগেই বুঝেছিলাম আমার আড়ালে কিছু একটা ঘটছে যা আমি জানি না এখন বুঝলাম এই হল তোমার বদলে যাওয়ার কারন..
মেঘলার বাবা মেঘলার মাকে থাপ্পড় মেরে বলল আমার সাথে গলা উঁচু করে কথা বলার সাহস হয় কি করে? এ বাড়িতে থাকতে হলে এভাবে কথা বলা যাবে না।তোদের যে এখুনো বাসা থেকে বের করে দেই নি এই তো অনেক।চোখের সামনে থেকে দুর হ বলছি...
কথাগুলি বলেই নতুন বউ কে নিয়ে বাইরে চলে গেল।মেঘলার বিষয়টি খারাপ লাগলেও নিজেকে সামলে নিয়ে তার মাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। 
মেঘলাঃ মাম্মাম কেঁদো না প্লিজ।

মেঘলার মাঃ আমি কি করে এসব মেনে নিব মা..?? 
মেঘলাঃ প্রিয়জন হারানোর কষ্ট আমি বুঝি মাম্মাম তাই তুমাকে আর কি সান্ত্বনা দিব (মনে মনে)
মাম্মাম মামাবাড়ি যাবে? চলো কটা দিনের জন্য ঘুরে আসি...
মেঘলার মাঃ কোন মুখে যাব ওই বাড়ি.. যা যা পাওনা ছিল সব নিয়ে এসেছি শুধু তাই নয় বাবার সমতুল্য ভাইদের আমি আদালতে টেনে নিয়ে গেছি সবার সামনে অপমান করেছি।যত প্রকার কষ্ট দেয়া যায় দয়েছি এর পরে পারব না ওদের দাঁড়াতে। 



দিন এভাবেই কাটতে লাগল দেখতে দেখতে মেঘলা আর মেঘলার মা বাসার কাজের লোকে পরিণত হল।
মেঘলার নতুন মা মেঘলার উপড় নানারকম অত্যাচার করে মেঘলার মা প্রতিবাদ করতে গেলে তার বাবা তার মার উপড় অত্যাচার করে।
নীরব যথাসম্ভব চেষ্টা করে মেঘলাকে বাঁচানোর কিন্তু পেরে ওটে না।
নীরব সবার বিরুদ্ধে গিয়ে একপ্রকার জোর করেই মেঘলাকে আবার স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে এমনিতেই ৩ বছর গ্যাপ ছিল তাই আর গ্যাপ যাতে না হয় তাই ভর্তি করে দিয়েছে।
নীরবঃ চোখের সামনে তোমার সাথে এত অন্যায় হচ্ছে আমি কিছুই করতে পারছি না যদি পারতাম আজকেই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে যেতাম কিন্তু তুমি তো আকাশ কে ভালবাসো তাই চাইলেও আমার কিছু করার নেই তোমাকে এখানেই থাকতে হবে যতদিন না আকাশ ফিরছে (মনে মনে)

মেঘলার মা মানুষিক ও শারীরিক ২ ভাবেই ভেংগে পড়েছেন আস্তে আস্তে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে গেলেন।
এদিকে নাবিল আর মেঘলার কোন খোঁজ নেই নি।এমন কি আকাশের সাথেও সে কোন যোগাযোগ রাখে নি।
আকাশ নিজের ক্যারিয়ারের প্রতি মনযোগী হয়ে উঠেছে।
আকাশঃ যে ক্যারিয়ারের জন্য মেঘলাকে হারালাম আমি সেটাতে সাকসেস হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিব আর তোকেও দেখিয়ে দিব মেঘলা...
অন্যদিকে সময়ের ব্যবধানে মেঘলা রাজকুমারী থেকে কাজের মেয়েতে পরিণত হল এখন তার একমাত্র ব্যাক সাপোর্ট নীরব।
নীরব প্রায় প্রতিদিন মেঘলার স্কুলে গিয়ে মেঘলার সাথে দেখা করে আসে কারন মেঘলা অনেক ডিপ্রেশন এ চলে গিয়েছে নীরব তাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করে মেঘলাকে মাঝে মাঝে বাইরে খেতে নিয়ে যায় কারন সে জানে বাসায় মেঘলাকে ঠিক মত খেতেও দেয় না তার নতুন মা।

খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে মেঘলার দিন কাটছিল সেই খারাপ অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেল যখন একদিন ঘুম থেকে উঠে মেঘলা তার মাকে ডাকতে গেল...
সেদিন,মেঘলার হাজার আর্তচিৎকারেও তার মায়ের ঘুম ভাংলো না কারন তিনি পরপারে পাড়ি দিয়েছেন।মায়ের মৃত্যুর সাথে সাথে মেঘলা পুরোপুরি একা হয়ে গেল এই পৃথিবীতে তার আপন বলতে আর কেউ রইল না।
মেঘলার মার মৃত্যুর খবর পেয়ে নাবিল রা হতবাক হয়ে গেল। তারা সেদিন এসে জানতে পারল মেঘলার বাবা আবার বিয়ে করেছেন।এর আগে জানত না।



মেঘলার মার দাফনের সবাই যখন চলে যাচ্ছে মেঘলা তখন বসে বসে কাঁদছে...
সবার মত নাবিলের পরিবার ও ফিরে যাচ্ছিল,
নাবিলরা যখন ফিরে যাচ্ছিল তখন,
মেঘলার নতুন মা (মিসেস শাহেলি বেগম)ঃ কোথায় যাচ্ছেন?দাঁড়ান বলে  মেঘলার দিকে আংগুল তুলে বলল এই আপদ টাকে কোথায় রেখে যাচ্ছেন এটাকে নিয়ে যান...
আকাশের বাবাঃআজব কথা বলছেন আমরা কেন নিয়ে যাব। আমরা কেন ওর দায়িত্ব নিব? 
শাহেলি বেগমঃ আপনাদের বোনের মেয়ে তাই দায়িত্ব আপনাদেরেই আমি কোন জঞ্জাল রাখব না।

আকাশের মাঃ আমরাই বা কোন জঞ্জাল নিজেদের ঘাড়ে নিতে যাব কেন।আর যে বোন ভাইদের ভাই মনে করে না সবার সামনে অপমান করতে পারে তা সে বোন হতে পারে না।নেহাৎ মারা গিয়েছে তাই এসেছি তা নাহলে ওর মুখ ও দেখতাম না।আর এই বেয়াদব অসভ্য মেয়েটাকে তো নেয়ার প্রশ্নই উঠে না।আমরা একে নিতে পারব না।
মেঘলা সবার মুখের দিকে দেখছে আর মনে মনে ভাবছে সে আজ কতটা অসহায়...যাদের সে আপন ভাবত সবাই আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
আকাশের মা, বাবা, চাচা এমনকি ছোট মাও মুখ ঘুরিয়ে যখন চলে যাচ্ছে ঠিক তখন, 
একজন দৃড় কন্ঠে বলে উঠল কিরে বসে আছিস কেন চল উঠ মেঘলা যাবি না?
সবাই অবাক হয়ে তাকাল,সবার সাথে মেঘলাও অবাক হল তাকিয়ে দেখল 
কথাটা নাবিল বলেছে....

আকাশের বাবাঃ কি হচ্ছে নাবিল? ও কোথায় যাবে? 
নাবিলঃ অবশ্যই আমাদের সাথে যাবে...
আকাশের মা (রুবিনা বেগম)ঃ তোর মাথা ঠিক আছে নাবিল..বুঝতে পারছিস কি করতে চাইছিস?তুই ওর দায়িত্ব নিতে চাচ্ছিস..???
নাবিলঃ প্রতিটা ভাই জন্মগত ভাবে বোনের দায়িত্ব পায় নতুন করে নিতে হয় না।হাজার হোক ও ফুফিমনির মেয়ে, আমার বোন ওর সাথে আমার আত্মার বন্ধন আছে আমি চাইলেও সেটা অস্বীকার করতে পারি না...

আকাশে বাবাঃ তুই নিজেই তো বাবার টাকায় চলিস তুই আবার দায়িত্ব কিভাবে নিবি..???
নাবিলঃ ওর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য যদি ইনকাম করতে হয় করব আমার কোনো আপত্তি নেই .. কিন্তু ওকে এই মহিলার কাছে রেখে যাব না।
রুবিনা বেগমঃ আমি ওকে কিছুতেই আমার বাসায় এলাউ করব না। 
নাবিলঃ ঠিক আছে করো না তবে শুনে নাও মেঘলার জায়গা যদি ওই বাসায় না হয় তাহলে আমিও বাসায় থাকব না ওকে নিয়ে আমাদের মহল্লার কোন বাসাতেই ভাড়া থাকব কোন রকম লিগ্যাল রিলেশন ছাড়াই থাকব সবাই বলবে আমরা লিভিং করছি সেটা তোমাদের জন্য সম্মানজনক হবে তো?
নাবিলের মাঃ ভাবি নিয়ে যাই না মেয়েটাকে... ও নাহয় বাসার কাজে হেল্প করবে তবুও নিয়ে যাও প্লিজ।
নাবিলের জোরাজোরিতে সবাই রাজি হলেও মেঘলাকে নিতে কেউ রাজি ছিল না।
রুবিনা বেগমঃ আগে আকাশের মাথাটা চিবিয়ে খেয়েছিল এবার নাবিলের উপড় নজর দিয়েছে... 

আকাশের বাবাঃ একটা আজাইরা জঞ্জাল ঘাড়ে চাপল...
নাবিলের বাবাঃ নাবিল টা বাড়াবাড়ি করল এতে তো মেঘলা তার বাবার সবকিছু থেকে বঞ্চিত হলো মেঘলার নিজের অধিকার বুঝে নেয়া উচিত ছিল...
মিলিঃ ভাইয়া আমদের জন্য তো কখনো এত প্রতিবাদ করে না।
দেখেছিস আপু মেঘলা কিভাবে সবাইকে হাত করে ফেলে...
নেহাঃ ঠিক বলেছিস একজন ভাগিদার বেড়ে গেল ভালো লাগে না যতসব।
নাবিলের মাঃ চল মেঘলা কারোর কথায় কান দিস না আমি আছি তো...
নাবিল এসে মেঘলার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল...

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মনা হোসাইনের মূল নাম গাজী পিংকি হোসেন। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে ছদ্মনাম হিসেবে ‘মনা হোসাইন’ নামটি বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা এই লেখিকা অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন