উপন্যাস : আরশি
লেখিকা : মৌসুমি আক্তার মৌ
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ'র “আরশি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। এই উপন্যাসে গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে এর কিছুই মিল নেই। এটি মূলত লেখিকার ‘প্রাণস্পর্শী’ উপন্যাসের চরিত্রদের কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে।
![]() |
আরশি || মৌসুমি আক্তার মৌ |
1111111111111111111111
আরশি || মৌসুমি আক্তার মৌ (পর্ব - ০১)
ঘড়িতে সকাল ছয়টা বেজে দশ মিনিট। খালি গায়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে আহির চৌধুরী। কোমর পর্যন্ত সাদা চাদরে ঢাকা। সাদা বেডশিটের বিছানায় আহির চৌধুরীর ধবধবে সাদা শরীর মিশে গিয়েছে।অ্যালার্ম-এর শব্দ কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই হাত দিয়ে হাতড়ে অ্যালার্মটা বন্ধ করে বিছানা ত্যাগ করল। বিছানা ত্যাগ করে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে ফ্রেশ হয়ে কালো ট্রাউজার আর কালো রঙের হুডি পরে সাদা কেডস নিয়ে রুমের বাইরে গেল। চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা তুলে কেডসের ফিতা বেঁধে মর্ণিংওয়াকে বের হলো। রাস্তায় বের হয়েই দেখল সাত সকালে স্কার্ট আর টপস গায়ে বেত লাফাচ্ছে আরশি। আহির হুডির পকেটে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আরশির দিকে তাকাল। তখনই আরশির চোখে পড়ল লম্বা-ফরসা গালে চাপ দাড়ির আহির চৌধুরীর দিকে। আপাদমস্তক তাকিয়ে দেখল– কালো ট্রাউজার আর কালো হুডি পরনে আহির চৌধুরীকে মারাত্মক সুদর্শন লাগছে। আরশি বেত ফেলে লাফাতে লাফাতে আহিরের সামনে এসে পেছনে হাত বেঁধে ঢুলছে আর অকারণ হেসে যাচ্ছে। আহির কপালের চামড়ায় কয়েকটা ভাঁজ ফেলে আরশির দিকে তাকাল। বেশ কৌতুহলভাবে জিজ্ঞেস করল, “এত খুশি খুশি দেখাচ্ছে! কাহিনি কী?”
আরশি খুব ছটফটে একটা মেয়ে। মাত্র ষোলো বছরের কিশোরী। অত ভাবনা-চিন্তা নেই তার মাঝে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে লজ্জামিশ্রিত একটা হাসি দিয়ে আশেপাশে তাকাল। ডানে-বামে কয়েকবার তাকিয়ে লক্ষ করল নীল রঙের কিছু একটা জঙলি ফুল দেখা যাচ্ছে। আরশি ফুলটা ছিঁড়ে এনে আহিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নিন, এটা ধরুন তো।”
আহির বেশ সন্দিহানভাবে বলল, “এটা নিয়ে কী করব?”
“আহা! আহির বাবু, এটা ধরুন না।”
আহির দারুণ অবাক হয়ে রিপিট করল,
“বাবু! হুয়াই ইউ কল মি বাবু?”
“উফফ! এত প্রশ্ন করেন কেন? আগে ধরুন না।”
“এই মেয়ে, মতলব কী তোমার?”
আরশি খুব অস্থির টাইপ মেয়ে। অপেক্ষা না করে হুডির পকেট থেকে আহিরের হাত হেঁচকা টান দিয়ে বের করে ফুলটা আহিরের হাতে ধরিয়ে দিল। আহির রিতীমতো অবাক বনে গেল। বিস্ময় বদনে তাকাল আরশির দিকে। আরশি সোজাসাপ্টা বলল, “নিন ফুলটা আমার কানের নিচে গুঁজে দিন তো।”
আহির ঠিক কী উত্তর দেবে বুঝে উঠতে না পেরে বলল, “এই মেয়ে! কী সমস্যা তোমার? রাতে উলটা-পালটা কিছু খাওনি তো?”
“আপনি শুধু প্রশ্ন করছেন কেন? একটু পরে লোকজন চলে আসবে রাস্তায়। তার আগে ফুলটা গুঁজে দিন, কুইক।”
“ফুল তুমি গুঁজে নাও। আমি দেব কেন?”
“আমি নিলে তো নিতাম-ই। আপনাকে বলতাম না তো। এটা আপনাকেই দিতে হবে, বুঝেছেন?”
“আমাকে দিতে হবে কেন? রিয়েলি বুঝতেছি না।”
“না বোঝার তো কিছুই নেই। একজন হবু প্রেমিকা তার হবু প্রেমিকার কানে ফুল গুঁজে দেবে। এতে বোঝাবুঝির কী আছে?”
“অ্যাহ! হবু প্রেমিক আবার প্রেমিকা!”
“হ্যাঁ, আর কিছুক্ষণ পর থেকে আমরা হবু থাকব না। আমরা কাপল হয়ে যাব। আমাদের কিন্তু মানাবে ভালো; বুঝেছেন? আমি হিসাব করেই দেখেছি; আপনি একটা লম্বা ছেলে আর আমিও অনেক লম্বা আমাদের বাচ্চাকাচ্চাও অনেক লম্বা লম্বা হবে।”
“হোয়াট! আর ইউ জোকিং উইথ মি নিব্বি?”
“আপনি তাহলে বিষয়টা বুঝতে পারছেন না তাই তো? শুনুন, খোলামেলাই বলি– আপনাকে আমার ভালো লাগে। আর আমি আপনাকে ভালোবাসি আহির বাবু। আমাদের বিয়ে হলে আমরা কত কিউট কাপল হব!”
আহির হতবিহব্বলের মতো তাকাল আরশির দিকে। এইটুকু একটা মেয়ে কি না তাকে এসে প্রপোজ করছে! মনে মনে খানিকটা বিড়বিড় করে করল, “দেশটা কি এমনি এমনি রসাতলে যাচ্ছে! নাক টিপলে দুধ পড়ে সেই মেয়ে এসে ট্রিপল বয়সে বড়ো একটা ছেলেকে প্রপোজ করছে।”
দুই বছর আগে এমনই একটি সকাল এসেছিল আহিরের জীবনে। দিনটা আহিরের জীবনের সব থেকে স্মরনীয় দিন।সেই মুহূর্তে একটা ষোড়শী কিশোরী হাসতে হাসতে আহিরের হৃদয় দখল করে নিয়েছিল। আহিরের আজও মনে পড়ে সেই দিনগুলো। আজ সেসব শুধুই স্মৃতি। হঠাৎ একটা ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায় সব কিছু। আহির কল্পনা থেকে বেরিয়ে এলো। ফোনের পাওয়ার বাটন চাপল। সাথে সাথে গজদতন্তী আরশির হাসি মুখটা ভেসে উঠল। ফোনের ওয়ালপেপারে চুমু দিয়ে বলল, “শূন্যতা অনুভব করা যদি ভালোবাসা হয়, তাহলে প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকে আমি ভালোবাসি প্রাণস্পর্শী।”
এর মাঝেই হইচই কানে ভেসে এলো।জানালা খুলে দেখল– বাইরে প্রচুর মানুষের ভিড়।
কাক ডাকা ভোরে মেইন রাস্তায় পড়ে রয়েছে অর্ধ-খণ্ডিত একটা লা'শ। লা'শের উপর বসে আছে একটি কাক। কা কা করে ডেকে চলেছে। কাকটা দেখতে কেমন অদ্ভুত। খু' নী খু' নী টাইপ চোখের আকৃতি। চোখের চাহনি অতি ভয়ানক। ভোরের আলো যত ফুটছে ততই মানুষ জড়ো হচ্ছে। ধীরে ধীরে লা'শটিকে ঘিরে গোলাকার আকৃতি ধারণ করল মানুষ জন। কী ভ'য়া'ন'কভাবে খু* ন করা হয়েছে তাকে! কোমরের মাঝখান থেকে দ্বি-খণ্ডিত করা, চোখ দু'টো তুলে ফেলা, পায়ের আঙুল হাতের আঙুল কেটে ফেলা। গলাও কা' টা। এত ভয়ানক মৃত্যু মানুষ মানুষকে কীভাবে দিতে পারে! লা'শটা শওকত গাজী নামক একজন ব্যবসায়ীর।শওকত গাজী এই ভ্রমানিপুর গ্রামের একজন বিত্তশালী মানুষ। গ্রামেই দো'তলা বিশিষ্ট একটা আলিশান বাড়ি আছে তার। সেই আলিশান বাড়ির নিচেই নির্মমভাবে তাকে কেউ খু''ন করে রেখে গিয়েছে। শওকত গনি এই গ্রামের মানুষের মধ্যমনি। গ্রামের চেয়ারম্যান। মানুষ তাকে ন্যায়পরায়ণ একজন মানুষ বলেই জানে। গ্রামের সকল বিচারকার্জ সে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে বলে গ্রামের মানুষের কাছে ভীষণ প্রিয় সে। মানুষের সাথে কোনো রকম অন্যায় সে করে না। একজন সৎ মানুষ। কথায় আছে দুনিয়ায় ভালো মানুষের কোনো দাম নেই। শওকত গাজীর স্ত্রী লা' শে' উপর পড়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। নাম এলিনা গাজী। শওকত গাজীর প্রথম স্ত্রী মারা গেলে এলিনাকে বিয়ে করেন।
মানুষের ভিড় ঠেলে এমন সময় ভেতরে প্রবেশ করল আহির। লা'শটার দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত রাখল। এমন মর্মান্তিক দৃশ্য এই গ্রামের কেউ আগে দেখেনি। চৌধুরী আর গাজীদের পারিবারিক সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। সে-দিক থেকে চৌধুরী ফ্যামিলির কাছে এটা বিশাল বড়ো ধাক্কা। আহিরের বাবাও এলাকার একজন বিত্তশালী মানুষ। শওকত গাজীর অত্যন্ত ঘনিষ্ট একজন মানুষ। চারিদিক থেকে নানান গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সবার ধারণা পলিটিক্যাল কোনো ইস্যুর জন্য এমন ভালো একজন মানুষকে খু*ন করেছে বিরোধী পক্ষের কেউ। এটা ছাড়া শওকত গাজীকে খু*ন করার মতো দ্বিতীয় কোনো কারণ কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।এই শওকত গাজীই আরশির বাবা। এত বড়ো একটা ঘটনা ঘটে গেল অথচ আরশি আশেপাশে নেই। হুট করেই আহির খেয়াল করল– আরশি ছাদের কোনায় বসে আছে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মৃত বাবার লা' শে' র দিকে। চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন