উপন্যাস       :        আম্বরি
লেখিকা        :         সামিয়া খান প্রিয়া
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার “আম্বরি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া Bangla Golpo - Kobiyal
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া

1111111111111111111111

আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া (পর্ব - ০১)

প্রথম দেখায় মেয়েটির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করাকে শারীরিক চাওয়া পাওয়া বলে মেনে নিলো এরোন।সে ছাব্বিশ বছর বয়সী তেজী যুবক।বলিষ্ঠ সুঠাম দেহকে কখনো নারীর স্পর্শে রাঙায়নি।অবশ্য তার জীবনযাপন আর সব যুবকদের থেকে ভিন্ন।সেখানে কামনা,ভালোবাসার বিন্দুমাত্র অবস্থান আছে বলে মনে হয় না?উহু,একদম নেই।

চেয়ারের সঙ্গে মিশে আছে মেহরী।শুকনো ঢোক গিলছে বারংবার।উষ্ণ শ্বাস ফেলে নির্জীব চোখে চেয়ে আছে যুবকটির দিকে।আলো আধারের ছায়ায় এ কেমন কঠিন কায়া।ক্রমশ এগিয়ে আসছে তার পানে।চোখের দৃষ্টিতে কামনা স্পষ্টত।ক্রমে ক্রমে হাত বাড়াচ্ছে মেহরী নামক ফুলকে পি ষে শেষ করে দেওয়ার জন্য।চোখ বন্ধ করে ফেললো যুবতী।চিল্লানোর সুযোগ নেই।মুখে স্কচটেপ লাগানো।এক দুই তিন করে সময় এগিয়ে যাচ্ছে।অকস্মাৎ গলার নিকট উষ্ণ ত্বকের ছোঁয়া পেলো।শিরশির করে উঠলো তার শরীর।তবে হতভম্ব হলো তখন যখন গলায় থাকা স্বর্ণের লকেটটিতে টান পড়লো।পরমুহূর্তেই দূরে সরে গেলো যুবকটি।অসুস্থ চোখে তাঁকালো মেহরী।

লকেটটি হাতে নিয়ে চাপ দিতেই খুলে গেলো।ভেতরে এক জায়গায় লুকিয়ে থাকা বাটনটিতে টিপে দিলো এরোন।মৃদু কেঁপে অফ হয়ে গেলো যন্ত্রটি।এই প্রথম মুখ খুললো সে।কণ্ঠ নিঃসৃত বাক্যগুলো বড্ড সুমধুর শুনালো।
"মি.খান।ভেতরে প্রবেশ করুন।"

মেহরীর সামনে চেয়ার টেনে বসলো এরোন।বাম হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে নিলো।কতোগুলো লোক ঘরে প্রবেশ করলো এসময়।মুহুর্তেই আলোকিত হয়ে উঠলো পরিবেশ।আগুন্তকদের মধ্যে নিজের ছোট মামাকে দেখে অস্পষ্ট শব্দ করতে লাগলো মেহরী।এরোন নিজের লোকদের ইশারা করলো।মুক্ত হতেই কথার তীর ছুঁড়ে দিলো মেয়েটি।
"মামা,আমাকে এখানে ধরে নিয়ে এসেছে।দেখো এই লোকটা।"
ভাগ্নীকে মৃদু ধমক দিলো মনসুর।কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
"চুপ থাকো মেহরী।এরোন স্যার আপনি কিছু মনে করবেন না।"
আবার সেই কণ্ঠে কথা শুনতে পেলো মেহরী।
"আমি কিছু মনে করিনি মি.মনসুর।তার জায়গায় যে কেউ হলে এমন রিয়াক্ট করতো।মি.আহমেদ কোথায়?"
"তিনি আসছেন স্যার।"

পরক্ষণে পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা এসে নামলো।এরোন এখনও এক দৃষ্টিতে মেহরীকে দেখছে।অগোছালো কামনার অনুভবও মাথা থেকে যাচ্ছে না।চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।নিজেকে আরও নিয়ন্ত্রণ করবে বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো।পুলিশের পোশাক পরা একটি লোক ঘরের ভেতর ঢুকে এরোনকে সালাম দিলো।খুব সম্মানের সাথে বলল,
"এই মেয়েটা কে স্যার?"
"শাওনের স্ত্রীর বোন।"
"ওকে এখানে নিয়ে আসার বিশেষ কোনো কারণ আছে?"
"অবশ্যই আছে।মনসুর আপনার ভাগ্নীর কাছে জিজ্ঞেস করুন ও সহজভাবে আমাদের সব প্রশ্নের জবাব দিবে কীনা।তা নয়...।"
"না না স্যার।ও অবশ্যই সব বলবে।মেহরী স্যার যা যা জিজ্ঞেস করে তা সব বলবে।তাড়াতাড়ি বললে তাড়াতাড়ি বাড়ী যাবে।প্লিজ মা মিথ্যা বলিও না।"
মনসুরের কণ্ঠে আকুতি দেখে ঈষৎ ঘাবড়ে গেলো মেহরী।নিজেকে ধাতস্থ করে মাথাটি একপাশে দুলিয়ে সম্মতি দিলো।এরোন চেয়ার নিয়ে এগিয়ে এলো।তীব্র চন্দনের গন্ধ এসে লাগলো মেহরীর নাসা গহবরে।
"মিস মেহরী।গত পঁচিশে জুন আপনি আপনার বোন স্পর্শীয়া ও শাওন ধানমন্ডির একটা রেস্ট্রুরেন্টে লাঞ্চ করতে গিয়েছিলেন।সেখানে একজন কিছু কাগজপত্র আপনার ভাইকে দেখিয়ে আলোচনা করছিলো।পাশে বসেছিলেন নিশ্চয় শুনেছেন সেগুলো কী?"
মেহরী হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।এরোন হালকা উঁচু সুরে বলল,
"মুখে কথা বলতে পারেন না?"

"পারি।"
"তাহলে বলেন কাগজ গুলোতে কী লেখা ছিল?"
"আপুর বেবী হবে।সেই বাচ্চার জন্য যে নতুন বাসা তৈরী করবে তার ডিজাইন।"
"সত্যি?"
"হ্যাঁ।তারা সেসব আলোচনা করছিলো।খেয়াল করে দেখেন আমি বা আপু খাওয়াতে ব্যস্ত ছিলাম।"
মনসুর একটু বিরক্ত হয়ে বলল,
"স্যার ওরা দুবোন অনেক বেশী ফুডি।খেতে ভালোবাসে।খেয়াল না করা অস্বাভাবিক কিছুনা।"
এরোন বাদে রুমে উপস্থিত আর সকলে মৃদু হাসলো।ভারী লজ্জা পেলো মেহরী।সকলের উদ্দেশ্যে বলল,
"সত্যিই ওটা বাড়ীর ডিজাইন ছিল।আমি নিজে দেখেছি।বিশেষ করে আমার রুমটা কেমন হবে তা ভাইয়া দেখিয়েছে।"
"কী অদ্ভুত মেহরী।খেয়াল করলে দেখতে পেতেন ওটা আপনার বেডরুমের ডিজাইন নয়।বরং ল্যাব তৈরীর কাঠামো।"

"একদম না মি.এরোন।পুরোটা ছিল আমাদের নতুন বাসার ডিজাইন।"
মেহরীর মুখে নিজের নামে মৃদু হাসলো এরোন।একপাশের ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
"মি.এরোন?"
মনসুর ভাগ্নীকে ধমকালো।স্যার বলার নির্দেশ দিলো চট জলদি।
"সরি স্যার।কিন্তু আমার শাওন ভাইয়া অনেক ভালো।আপনি আসলে কী আশংকা করছেন?"
"সেটা নিশ্চয় আপনাকে বলবো না।মেহরী আপনি বড় বোকা।যাই হোক ভালো মানুষ নিশ্চয় ছোট বোনের মতো শ্যালিকার গলায় ট্র্যাকার লাগায় না।খুঁজে দেখেন নিজের রুমে হিডেন ক্যামেরাও পেতে পারেন।"
এরোন উঠে দাঁড়ালো।পুলিশকে বাহিরে আসতে বলে বের হয়ে গেলো।মেহরী অবাক দৃষ্টিতে লোকটির যাওয়া দেখলো।মনসুর বিরস মুখে বলল,
"লোকটা কে জানো?""
"উহু?কে?আর আমাকে ধরে কেন নিয়ে এলো?"
"চিনতে হবেনা।আমি তার অফিসে জব করি।জানিনা কেন নিয়ে এলো তোমাকে।কিন্তু শাওন কিছু একটা ভুল করেছে দেখে এভাবে পুলিশের নজরে এসেছে।আমার এখনও আফসোস লাগে।কী দেখে স্পর্শিয়া বিয়ে করলো ওই ছেলেটাকে।"

"আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম মামা।ভালোভাবে ডাকলে চলতো।এরকম ধরে বেঁধে কেন নিয়ে এলো?তাও দুটো কথা জিজ্ঞেস করলো।চলে যেতেও তো বলল না।"
"কারণ তুই সন্দেহের তালিকায় আছিস।এরোন স্যার বাকীটা জানে।এখন চল বাসায় দিয়ে আসি।শুন শাওনকে এসব কিছুই বলবিনা।আমাকে আগেই বলেছিল দশ মিনিট পর ছেড়ে দিবে।"

মেহরী উঠে দাঁড়ালো।ঘড়িতে দেখলো মাত্র আধা ঘন্টার জন্য লোকটা তাকে এখানে আঁটকে রেখেছিল।কিন্তু তার মনে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা চলে গিয়েছে।মনসুর যতোই নিষেধ করুক বাসায় ফিরেই সব শাওনকে বলে দিবে মেহরী।কারণটা খুব পরিষ্কার নিজের মামার থেকে শাওন বেশী ভরসার মানুষ।

লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে আসতেই বের হয়ে এলো মেহরী।বড্ড খুদা পেয়েছে তার।কিন্তু মামার সামনে তা বলার সাহস পেলো না।সে দেখতে আহামরি নয়।স্বাস্থ্যও খুব বেশী ভালো না।ত্বকের রঙ ফর্সা আছে মোটামুটি।প্রেমে পড়া টাইপ না।উষ্ণ শ্বাস ফেলে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো।তার থেকে অনতিদূরে গাড়ীতে বসে থাকা এরোনের পানে দৃষ্টি গেলো।মেহরীকে অবাক করে দিয়ে পুরুষটি হাত নাড়িয়ে মৃদু হাসলো।বিনিময়ে সে নিজেও হাসি ফেরত দিতেই বিব্রতবোধ করলো।সে কী দারুণভাবে ভুলে গিয়েছে এই লোকটা চল্লিশ মিনিট আগে তাকে কিডন্যাপ করে ছেড়েও দিয়েছে।মেহরী আড়চোখে আবার গাড়ীর দিকে তাঁকালো।এরোন তাকেই দেখছে।ফিসফিস করে মেহরী নিজেই নিজেকে বলল, "রহস্যময় পুরুষ।দূরে থাক মেহরী।বহুদূরে থাক।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার বাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শখের বশে লিখালিখি করলেও ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি বই এবং ইবুক প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
তরুণ এই লেখিকা সম্পর্কে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন