উপন্যাস : আম্বরি
লেখিকা : সামিয়া খান প্রিয়া
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার “আম্বরি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া |
1111111111111111111111
১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া (পর্ব - ০২)
অকস্মাৎ আলিঙ্গনে কেঁপে উঠলো মেহরী।এই মাত্র বাসায় ফিরেছে সে।মস্তিস্কে এরোনের চিন্তাভাবনা বিক্ষিপ্তভাবে ছুটোছুটি করছে।এহেন সময় স্পর্শিয়ার ভয়মিশ্রিত ছোঁয়ায় ভ্রু ক্রুটি করে শুধালো,
"কী হয়েছে আপু?"
"তোর ট্র্যাকার অফ কেন?লকেটটা কোথায়?"
মেহরী হতভম্ব হয়ে বলল,
"তুমি ট্র্যাকারের কথা জানলে কীভাবে?"
"কারণ আমিই শাওনকে লকেটটা দিতে পরামর্শ করেছিলাম।এখন বল কই ছিলি?"
স্পর্শিয়া মৃদু হাঁপাচ্ছে।পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্তা হওয়ায় খুব স্বাবধানে থাকে।এক বার যেহেতু মি স ক্যা রে জ হয়েছে।মেহরী তাকে স্বান্তনা দিলো।সোফায় পাশাপাশি নিয়ে বসিয়ে দিলো।
"শাওন ভাইয়া কোথায়?"
স্পর্শিয়া মৃদু ধমক দিয়ে বলল,
"আমার প্রশ্নের উত্তর আগে দে।"
"দিবো রে আপু।শাওন ভাইয়া আসুক আগে।তুমি এতো প্যানিক হবেনা।গরম চায়ের কিন্তু ক্ষতি হয়ে যাবে।"
মেহরী নিজের বোনের অনাগত সন্তানকে গরম চা বলে ডাকে।বিশেষ কারণটি হলো স্পর্শিয়া কনসিভ করার পর থেকে সারাক্ষণ ঘামে।এমনকি এসির নিচেও নিস্তার নেই।
"আচ্ছা চল মেহরী।খেতে যাই।দুই ঘন্টা ধরে কিছুই খাইনি তোর চিন্তায়।ভালোভাবে বাসায় ফিরে এলি এটাই অনেক।"
"আমার মনের কথা বললে আপু।খুব খিদা লেগেছিল।কী আছে?"
"রামেন।"
এক আকাশ চিন্তা নিয়ে বাসায় ফিরে শাওন দেখলো দুবোন গাল ফুলিয়ে ড্রয়িং রুমের মেঝেতে বসে রামেন খাচ্ছে।উষ্ণ শ্বাস ফেললো সে।মনে মনে সে খুব করে চায় একটা ছেলে হোক তার।বাই এনি চান্স এই দুই উ দ্ভ ট নারীর সঙ্গে আরো একজন মিললে কী হবে ভাবতেই গলা শুকিয়ে উঠে ।কণ্ঠে গভীরতা এনে সে শুধালো,
"মেহরী।কোথায় ছিলে?"
শাওনকে বসতে জায়গা করে দিলো স্পর্শিয়া।মুখে থাকা খাবার গিলে মেহরী বলল,
"মি.এরোন কে ভাইয়া?"
"তুমি তাকে চিনলে কীভাবে?"
"ওই লোকটাই তো আমাকে নিয়ে গিয়েছিল।ক্লাস শেষে বাসায় আসবো এমন সময় একজন মেয়ে এসে বলল কেউ ডাকে।আমিও গর্দভের মতো গিয়েছি।পরে ধরে বেঁধে গাড়ীতে বসিয়ে দিলো।তখন দেখা মি.এরোনের সঙ্গে।জানো মনসুর মামাও ছিল।"
মেহরী একে একে সব ঘটনা বর্ণনা করলো।কিঞ্চিত পরিমাণেরও বাদ রাখলো না।সব শুনে শাওন হেসে বলল, "আর আমি ভাবছিলাম খা রা প কেউ ধরেছে।ট্র্যাকারটা তোমার সেফটির জন্য লাগানো ছিল।আমার অন্য মতলব ছিলনা।"
"সেটা আমি আগেই বুঝেছি আপু যখন জিজ্ঞেস করলো।আচ্ছা ভাইয়া ল্যাবের কাহিনী কী?মি.এরোন বা কে?"
স্পর্শিয়া মৃদু সুরে ধমক দিয়ে বলল,
"চুপ থাক মেহরী।আচ্ছা শাওন এটা সেই এরোন?"
"হ্যাঁ।ওরা মূলত ভিক্টোরিয়া খু্ুঁজছে।খুব অদ্ভূত লাগলো এটা দেখে যে সন্দেহের তালিকাতে আমিও আছি।"
মেহরী চুপ থাকতে পারলো না।সে হালকা চঞ্চল স্বভাবের।বোন বকবে তাও জিজ্ঞেস করলো,
"আচ্ছা এই এরোনটা কে বলো না?নাম যেন কেমন।দেখতেও বিদেশী লাগে।"
শাওন হাই তুলে বলল, "অনেক লম্বা কাহিনী।শুনবে?তাহলে দৌড়ে এক মগ কফি বানিয়ে নিয়ে এসো।"
মেহরী সময় নষ্ট না করে দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।সে খুব অলস প্রকৃতির।এজন্য শাওন বিভিন্ন বাহানায় তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়।এরোনের সমন্ধে হালকা নয় অনেক বেশী কৌতুহলী সে।এজন্য সময় নষ্ট করেনি।একরাশ উচ্ছাস নিয়ে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে দেখলো শাওন কিংবা স্পর্শিয়া কেউ নেই সেখানে।নিশ্চয় রুমে চলে গিয়েছে।বিষয়টা বুঝতে পারলো মেহরী।শাওন চাচ্ছে না এরোন বিষয়ে সে কিছু জানুক।তবে মেহরী তা মানবে?কফির মগটা নিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো।আনমনে নিজের সাথে বলতে লাগলো,
"এরোন তোমার সম্পর্কে এতো কৌতুহল হচ্ছে কেন আমার?রহস্যময় পাথর মানব।আমার সোনার গয়নাও ফেরত দিলেনা।হু,ডাকাত একটা।"
সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করে এরোন দেখতে পেলো আশি বছর বয়সী জাহানারা সোফায় বসে মৃদু দুলে দুলে তসবি গুণছে। শুদ্ধভাবে সালাম দিলে তার উত্তর দিলো বৃদ্ধা।এরোনের বাহ্যিক চেহারায় যে কেউ তাকে ব্রিটিশ বলে আখ্যায়িত করতে পারে।উন্নত দেহের গঠণ,সাদা চামড়া,মাথায় মসৃণ বাদামী চুল।পুরোদস্তুর মায়ের মতোন দেখতে।শুধু চোখ দুটো দেখে বোঝা যায় বাবার ছোঁয়া আছে তাতে।জাহানারা কাছে ডাকেন।বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে এরোনের মাথায় ফুঁ দিলেন।
"এতো বাহিরে থাকিস তুই খুব চিন্তা হয় আমার।দেখ আয়নায় গিয়ে।এখনও কতো সুন্দর দেখাচ্ছে।কখন কোন পরীর নজরে এসে পড়িস।"
এরোন হেসে উঠলো।জাহানারাকে এক হাত দিয়ে আগলে ধরে বলল,
"ম্যাম,তুমি মানুষ পরীর কথা বললে নাকী অদৃশ্য পরীর?"
"দুটোর কথাই বলেছি।এতো সুন্দর কে হতে বলেছিল তোকে?সেই ছোট্ট বেলায় বোম্বাইতে একবার সাহেব দেখেছিলাম।তুই ঠিক তাদের মতো।শুধু হাতে চাবুক নেই এই যা।নামটাও তো তাদের মতোন এরোন।"
জাহানারা উচ্চারণ করে বলল নামটি।আক্ষেপের সুরে বলল,
"তুই ছোট বেলা থেকে আমাদের বাড়িতে থাকিস।কিন্তু আমাদের একটা গুণও তোর মধ্যে নেই।তাও ভালো নেই।তা নয় দেখা যেতো এই বাড়ীর প শু গুলোর ছায়া হয়ে উঠতি।"
"এভাবে বলো না ম্যাম।সে কী করেন?"
"সে তো অনেকজন।কার কথা বলিস?"
এরোন ইতস্ততবোধ করছে।তবুও পূর্বের হাসি বজায় রেখে বলল,
"তাবিয়া কী করেন?"
"একটু আগে কাঁদলো।এখন ঘুমাচ্ছে বোধহয়।যা ওর কাছে যা।"
জাহানারা পুনরায় জিকিরে মন দিলো।এরোন উঠে দাঁড়িয়ে গা থেকে ব্লেজারটি খুলে নিলো।এ বাড়ীতে অনেকগুলো মানুষের বসবাস।কিন্তু ইদানীং ঘর ছাড়া বাহিরে কাওকে দেখা যায়না।বড়সড় একটা রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো এরোন।ভেতরে মৃদু গুঞ্জন করে কাঁদছে কেউ।দরজা ঈষৎ ফাঁক থাকায় ভেতরে বসে থাকা বিশ বছর বয়সী তরুণীর মুখটা খুব সহজে দেখা যাচ্ছে।এরোন থমকে দাঁড়ালো।কী মায়া মুখটায়।বেদনাভরা শ্বাস ফেললো সে।দুনিয়া বড় অদ্ভূত এই স্বল্প ভাষী এরোনের নিকট।ভেতরে না গিয়ে বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।হঠাৎ পকেট থেকে কিছু একটা নিচে পড়ে যাওয়ায় তা হাতে উঠিয়ে নিলো।অধরে মৃদু হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো লকেটটি দেখে।ফোন বের করে কাওকে কল করে বলল, "খুঁজে বের করো মেহরী নামক ছোট্ট কবুতরের বাচ্চা কোথায় পড়াশোনা করে।কাল তার জন্য এক বস্তা দানা নিয়ে যাবো।কবুতরকে খেতে দেখতে আমার বেশ ভালো লাগে।"
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার বাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শখের বশে লিখালিখি করলেও ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি বই এবং ইবুক প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।তরুণ এই লেখিকা সম্পর্কে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন