উপন্যাস : আম্বরি
লেখিকা : সামিয়া খান প্রিয়া
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার “আম্বরি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া |
1111111111111111111111
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া (পর্ব - ০৩)
"আজ থেকে ঠিক তিন মাস পূর্বে ভিক্টোরিয়া হারিয়ে গিয়েছে।হন্য হয়ে খুঁজেও এতোদিনে কোনো সূত্র পাওয়া যাচ্ছে না।এদিকে তাবিয়ার অবস্থা খারাপ।আমি কিছুই জানিনা দুই মাসের মধ্যে সব ঠিক করতে হবে আপনাদের।আব্বুর জামিনের মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে।"
আহমেদ সাহেব মাথা নিচু করে বসে আছে।তার সামনে এরোন ও শেখ কোহিনূরের একমাত্র ছেলে রাফসান বসে।অতিরিক্ত হাইপার হওয়ার দরুণ তামাটে বর্ণের পুরুষ রাফসানের ত্বক ঈষৎ রক্তিম হয়ে উঠেছে।এরোন তাকে শান্ত করার নিমিত্তে বলল,
"রাফসান শান্ত থাক।আহমেদ সাহেব অন্তত আস্থাভাজন একজন পুলিশ কর্মকতা।তিনি নিজের বেস্ট দিয়ে চেষ্টা করছেন।"
"এরোন আব্বু কিংবা তাবিয়া কারো কষ্ট সহ্য হচ্ছে না।তার উপর নীলয় নামের একটা মানুষ চোখের পলকে হাওয়ায় মিশে গেলো?বোন আমার সধবা নাকী বিধবার বেশ ধরবে এটাও যেন একটা ধাঁধা।"
নিশ্চুপ থেকে সামনে তাঁকালো এরোন।পর্দায় দেখা যাচ্ছে হাসৌজ্জ্বল একজন পুরুষ একটা বাক্সের পাশে হেঁটে হেঁটে ফোনে কথা বলছে।মুখে আলাদা ধরণের খুশি বিদ্যমান।নিশ্চয় ফোনের ওপাশের মানুষটা তাবিয়া ছিল।অনতিদূরে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডরাও মৃদু হেসে কিছু একটা আলাপ করছে।এই সুখ কিংবা খুশি শেষ হয়ে গেলো পলকের মধ্যেই।সিসিটিভি ফুটেজের সাথে সব অন্ধকারে ডুবে গেলো।এমনকি বাক্সে থাকা ভিক্টোরিয়াও।
বলিষ্ঠ আঙুল গুলো দিয়ে পুনরায় ফুটেজ চালিয়ে দিলো এরোন।কতোবার সে এই কয়েক মুহুর্তের ভিডিওতে ক্লু খোঁজার চেষ্টা করেছে তার ইয়ত্তা নেই যেন।তবে পরিশেষে হাত দুটো শূন্যতায় ভরে যায়।মাঝ বয়সী আহমেদ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
"আমরা কতো ধরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি সেটা জানো রাফসান।সমস্যা হলো ভিক্টোরিয়া যে বাক্সটাতে ছিল পরবর্তীতে তা কোহিনূর স্যারের গাড়ীতে পাওয়া গিয়েছিল।এখন দেখো কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না।হতেও তো পারে যা সত্য সেটাই প্রকাশ পেয়েছে।"
নিজের পিতার উপর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অপবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গে জ্ব লে উঠলো রাফসান।কিছু বলার পূর্বে এরোন তার হাত দুটো শক্ত করে ধরলো।ছেলেটা মাথা নিচু করে ফোনে একটা কিছু করছে।রাফসান জানে এরোনের শান্ত থাকা মানে নীরব যন্ত্রণার পূর্ভাবাস।ফোনের স্ক্রিনে চোখ রেখে মৃদু হাসলো এরোন।ঘন হয়ে থাকা ডান পাশের ভ্রু ঈষৎ উঁচু করে বলল,
"মি.আহমেদ।বছর বছর পূর্বে আপনার সঙ্গে শেষবার গাড়ী নিয়ে বের হওয়া এক পুলিশ অফিসারের ম র দে হ নদীর ধারে পাওয়া গিয়েছিল।ধারণা করা হয় তার প্রাক্তন স্ত্রী প্র তি শো ধে র নেশায়..।"
বাক্যটি সম্পূর্ণ করলো এরোন গলার কাছটায় আঙুল দিয়ে স্লাইড করে।মুখে সেই মৃদু হাসি।এরোনকে হাসতে দেখে রাফসানের নিজেরও বড় হাসি পেলো।
"সকলে বলে সেই পুলিশ অফিসারকে শেষবার দেখা গিয়েছিল প্রাক্তনের সাথে।কিন্তু সত্য হলো আমি একটু আগে যা বললাম সেটা।কী বলবেন এই ব্যাপারে?"
আহমেদ মৃদু ঘামলো।রুমে তার অধীনস্থ অন্য অফিসাররাও আছে।যারা এতোদিন তাকে সততার প্রতীক হিসেবে ভেবে এসেছে।টিস্যু দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নিলো আহমেদ।
"এরোন।আমি বুঝেছি।তোমরা যাও আজকে আমি আবার নতুন করে শুরু করবো সবটা।কোহিনূর স্যারকেও টেনশন মুক্ত থাকতে বলবে।"
রাফসান একটু ঝুঁকে টেবিলে মৃদু শব্দ করে বলল,
"আব্বু নিশ্চিন্ত আছেন।কিন্তু টেনশন করতে হবেনা আশা করি।"
"নো রাফসান।টেনশনের কিছু নেই।এরোন আমার উপর ভরসা রাখো।"
এরোন জবাব দিলো না।চেয়ার থেকে উঠে বাহিরে চলে গেলো।রাফসানও তৎক্ষনাৎ উঠে হাঁটা ধরেছে।আহমেদ সাহেবের মুখে এতোক্ষণে বিতৃষ্ণা ফুঁটে উঠলো।একমাত্র টাকা থাকলে যে কড়ির পুতুলও নাচে সেই বিষয়ের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়তো বড় বড় পয়সাওয়ালা লোকেরা।আর তার মতো জনগণ হলো কড়ির পুতুল।এতোক্ষণ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অফিসার জয়নব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
"স্যার,এরোন লোকটা মটেও সুবিধার না।কিন্তু শান্ত মেজাজের।তার ভাই রাফসান ভালো কিন্তু উ গ্র একটা।একে অপরের বিপরীত।"
আহমেদ ধ ম কে বলল,
"ওরা দুজন একে অপরের ভাই নয়।এরোনকে মি.কোহিনূর রাস্তা থেকে উঠিয়ে এনে বড় করেছে।দেখতে বিদেশিদের মতো দেখো না?"
"আমি ভাবলাম তাদের মা ভিন্ন।"
"নাহ।এই রাফসানের আকীকার দিন এরোনকে কোহিনূর ভিলার গেটে কে যেন ফেলে রেখে গিয়েছিল।তখন সবকিছুর মালিক কোহিনূর স্যারের মা জাহানারা।সাদা ধবধবে বাচ্চা দেখে ভদ্রমহিলার মন গলে গেলো।বাচ্চার সাথে সিনেমার কাহিনীর মতো চিঠি ছিল।পুরোটা ইংলিশে লেখা।সেখানে ওর নাম এরোন রাখতে বলে।এছাড়া কোনো ক্লু ছিলনা।সেদিন থেকে এরোন কে বড় করেছে জাহানারা।যদিও বংশ পরিচয় দিতে নারাজ ছিলেন কোহিনূর।কিন্তু মায়ের কাছে হার মানতে হয়।"
"ওহ বুঝলাম।তাও কী তেজ ছেলেটার।"
"কারণ ওর আসল পরিচয় আঠার বছর বয়সেই পেয়ে গিয়েছিল সবাই।পাওয়ার,মানি আছে দেখেই এতো তেজ।জানো ওর নানা কে?"
জয়নব কৌতুহলী সুরে বলল,
"কে?"
"মি.ফিলিপ।নিশ্চয় চিনো।ধুরন্ধর সেই ফ্রিডম ফ্যামিলিয়ার প্রধান।সহজ ভাষায় বললে কুখ্যাত মা ফি য়া গ্যাং ফ্রিডমের প্রতিষ্ঠাতা।আমি মাঝেমধ্যে বড় শুকরিয়া আদায় করি যে মি.ফিলিপের দেশের পুলিশ হওয়ার দূর্ভাগ্য হয়নি।"
(***)
মেহরী বর্তমানে ঢাকার নামকরা এক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছে।এমনিতে সে ভালো ছাত্রীই বলা চলে।কিন্তু অলসতার জন্য পড়াশোনা কম অন্য কাজ করে বেশী।আজ প্রচন্ড রোদ উঠেছে।শাওন গাড়ী পাঠানোর কথা বললে মেহরী নিজে না করে দেয়।নিজে নিজে রিক্সা ভ্রমণ করবে।বোনকে অবশ্য সেটা বলেনি।কিছুদূর আসার পর পেটে খুদা অনুভব করলো সে।ফোন বের করে নিজের সবথেকে কাছের রেস্ট্রুরেন্টের ঠিকানা জেনে সেদিকে পা বাড়ালো।নির্বোধ এই কন্যাটি যদি পিছন ফিরে দেখতো তাহলে টের পেতো এক জোড়া কৌতূহলী দৃষ্টি অনেকক্ষণ ধরে তাকে অনুসরণ করছে।
খাবার টেবিলের উপর নিজের পার্স ও ফোন বের করে রাখলো মেহরী।অন্য চেয়ারে কাঁধের ব্যাগটা।খেতে ব্যস্ত তখন হুট করে কেউ টেবিলের উপর রাখা জিনিস গুলো উঠিয়ে নিলো।হৈ হৈ করে উঠলেও থমকে গেলো কন্যাটি।এরোন প্রচন্ড অস্থিরতা নিয়ে তার সামনের চেয়ারে বসেছে।মেহরী শুকনো ঢোক গিললো।শ্বেতকায় এই পুরুষটিকে নিয়ে গতরাতে খুব ভ য় ং ক র চিন্তা ভাবনা করেছে সে।তবে হুঁশ ফিরলো তাদের পাশের লোকটা যখন তার জিনিস গুলো নিয়ে হাঁটা আরম্ভ করলো।মেহরী চিল্লিয়ে বলল,
"আরে আমার ফোন ও ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?"
জবাবটি এরোন দিলো,
"মেহরী ভদ্রভাবে টেবিলে বসুন।সময় হলে ফেরত পাবেন সবকিছু।"
"দেখেন মি.এরোন।"
"মি.এরোন?"
মেহরী কপাল ঈষৎ কুঞ্চিত করে বলল,
"স্যার দেখেন।"
"আমি বিবাহ বহির্ভূত দেখাদেখিতে বিশ্বাস করিনা মিস.মেহরী।দুঃখিত।"
"আরে আপনি ভুল বুঝবেন না।আমি তো আমার সাথে সবসময় এমন না করার জন্য বলতাম।বেশী বেশী হচ্ছে।সমস্যা থাকলে শাওন ভাইয়ার সাথে কথা বলেন।এখন আমার খাওয়া শেষ অবধি অপেক্ষা করেন।বাকী কথা পরে হবে।আমি খাবার নিয়ে খুব পজেসিভ।"
মেহরী পুনরায় নিজের খাবারে মনোযোগ দিবে এর পূর্বে তা কেঁড়ে নিলো এরোন।মেয়েটা সব সহ্য করতে পারলেও মুখের সামনে থেকে খাবার নিলে তা মানতে পারেনা।
"আমার খাবার।দেন ফেরত দেন।"
এরোন উষ্ণ শ্বাস ফেলে শুধালো,
"টাকা আছে যে বিল পে করবেন মেহরী?"
"আছে।ওইতো ব্যাগে।আপনার লোক যেটা নিয়ে গেলো।"
"না ফেরত দিলে বিল পে করবেন কীভাবে?কোনো উপায় নেই।খাবারটা আমার পছন্দ হয়েছে।তাই চুপচাপ খেতে দেন।"
এরোন এক চামচ মুখে পুরে দিতেই মেহরী জ্ব লে উঠলো।চিল্লিয়ে প্লেট নিতে গেলো বাঁধাপ্রাপ্ত হলো।আশেপাশের লোকগুলো তাদের দেখছে।অগত্যা মেহরী একটু ঝুঁকে গিয়ে দুহাত দিয়ে প্লেটের সব খাবার মুখে পুরে নিলো।খাবারের জন্য গালটা ফুলে গেছে তার।ফর্সা বোচা নাকে মেয়েটাকে এহেন অবস্থায় দেখে অনেক জোরে হেসে ফেললো এরোন।আঙুল দিয়ে নাক টিপে বলল,
"আহারে, আমার পজেসিভ ছোট্ট পান্ডাটা।"
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার বাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শখের বশে লিখালিখি করলেও ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি বই এবং ইবুক প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।তরুণ এই লেখিকা সম্পর্কে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন