উপন্যাস       :        আম্বরি
লেখিকা        :         সামিয়া খান প্রিয়া
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার “আম্বরি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া Bangla Golpo - Kobiyal
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া

1111111111111111111111

০৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া (পর্ব - ০৪)

আজও এরোনের চোখে মেহরীর জন্য বিশেষ অনুভূতি দেখা যাচ্ছে।প্রথম দেখায় যে চাওয়াকে শারীরিক লাভের নামও দিয়েছিল দ্বিতীয় দেখাতে সেই সিদ্ধান্তে বহাল রইলো।পড়ন্ত বিকেল।মিষ্টি রোদ এসে লাগছে মেহরীর শুভ্র মুখটায়।খরগোশের মতোন ছোট্ট সাইজের শসা কা ম ড়ে খাচ্ছে সে।মেয়েটির ঠোঁটের কোমলতা পরিমাপের বড় ইচ্ছা হলো এরোনের।মেহরীর প্রতি অহেতুক এই কামনাতে ক্রমশ হতবিহ্বল হয়ে যাচ্ছে সে।
"আরো কিছু খাবে মেহরী?"

মেহরী মাথা দুলিয়ে না করে।এরোনের সাথে জেদ করে আজ বহু খেয়ে ফেলেছে।ভাগ্যিস বুদ্ধি ছিল মাথায়।তাইতো সব সালাদ আইটেম অর্ডার করেছিল।আহা,লোকটা নিজে বিল পে করবে জানিয়ে বড় উপকার করেছে।একটু উসখুস করে সে শুধালো,
"মি.এরোন স্যার।একটা কথা জিজ্ঞেস করি।"
বাচ্চাদের মতো আবদার।কিন্তু এরোনের খুব ভালো লাগে।এইতো ঘন্টা খানেক আগেও নিজের খাবার নিয়ে ঝগড়া করছিলো মেহরী।তবে এখন সব স্বাভাবিক।যেন অনেক দিনের পরিচয়।

"জি করেন।"
"আমাকে সেদিন কেন ওভাবে আঁটকে রেখেছিলেন?শাওন ভাই বলেনি কারণটা।"
"ভিক্টোরিয়ার জন্য।"
মেহরী নড়েচড়ে বসলো।ভিক্টোরিয়ার ব্যাপারে সে সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক চর্চা হতে দেখেছে।কিন্তু এসব বিষয় ভালো লাগেনা তার নিকট।এজন্য গভীরে দেখার প্রয়োজনবোধ করেনি।মেহরী নিজেকে বকলো।সেদিন তো শাওনও ভিক্টোরিয়া নিয়ে আলাপ করছিলো।
"আচ্ছা ভিক্টোরিয়ার ব্যাপার কী আসলে?"
"নর্থ আফ্রিকান বোহেমিয়ানদের(যায়াবর) তৈরী ছোট্ট একটি পাথরের খন্ড।প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরোনো সেটি।আমাদের তত্ত্ববধানে থাকাকালীন চু রি হয়েছে।মানে কোহিনূর জুয়েলার্সের নাম শুনেছো?"
"হ্যাঁ।তাদের গয়নার ডিজাইন গুলো ইউনিক হয়।দেখেন আমার গলায়ও একটা লকেট আছে।"

মেহরী অবুঝের মতোন লকেটটা উঁচু করে দেখালো।বেখেয়ালি কন্যা। তার ফর্সা মসৃণ গলা দেখে এরোনের ভেতর কাঁপুনি উঠে গিয়েছে।কেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।নিজেকে আরো নিয়ন্ত্রণ করা শিখবে।লাভ তাতে কী আদৌ হবে?"
"বুঝেছি মেহরী লকেট নামান।"
"তাদের সাথে ভিক্টোরিয়ার সম্পর্ক কী বললেন না।"
"ভিক্টোরিয়ার বর্তমান প্রাইস অনেক।এবং ওনার হচ্ছেন মি.ফিলিপ।সে কোহিনূর জুয়েলার্সের সাথে ভিক্টোরিয়া দিয়ে সুন্দর একটি ক্রাউন তৈরী করার ডিল করেন।এসময় পুরো নিরাপত্তার ব্যাপারটাও আমাদের উপর ছিল।আমি কোহিনূর জুয়েলার্সের সাথে সম্পৃক্ত একজন।"
"আপনারা নিরাপত্তা দিতে পারেননি?"
এরোন উষ্ণ শ্বাস ফেললো।তার শুভ্র মুখখানায় ব্যর্থতার রঙ লেপে আছে।হালকা সমীরণে মৃদু আন্দোলিত হচ্ছে চুল।মেহরীর গা শিরশির করে উঠলো।
"অনেক কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও চু রি হয়েছে।ভিক্টোরিয়াকে পাওয়ার জন্য একজন সায়েন্টিস্ট প্রচুর মরিয়া।ভাগ্যক্রমে শাওন চারমাস ধরে তার সঙ্গে খুব যোগাযোগ করছে।সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক।"

"এহ,আমার শাওন ভাইয়া খুব ভালো।ও কিছু করেনি।"
এরোন মাথা দুলিয়ে বলল,
"জি।সেটা পুলিশ বুঝবে।আপাতত সন্দেহের তালিকায় আছে।"
বেশী কৌতুহল ভালো নয় মেহরী।মেয়েটির এবারের প্রশ্ন ঘটনার সম্পূর্ণ বিপরীত।তবুও নিজেকে দমন করতে না পেরে শুধালো,
"আপনি এতো সুন্দর কেন?আগে এটা বলেন।"
এরোন মাথা নিচু করে হাসলো।মেহরীর বাচ্চামো খারাপ লাগছেনা তার।এতো সিরিয়াস বিষয়ের মধ্যে এই প্রশ্নটা কোন যুক্তিতে করলো অবশ্য সেই ব্যাখা খুঁজে পেলো না।
"কী হলো বলছেন না কেন?"
"জবাব নেই আমার কাছে।বাই দ্য ওয়ে তোমাকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে।"
"প্রশংসা করলেন?"
"না।বদনাম করলাম।"

এরোন উঠে দাঁড়ালো।মেহরীর পাশের চেয়ারটাতে গিয়ে বসলো।কী দারুণ হাসি মুখে লেপ্টে আছে।ধীরে ধীরে মেহরীর নিকট আসতে লাগলো।পূর্ব দিনের অনুভূতি ফিরে এলো যেন।মেহরী ভ্রু ক্রুটি করে শুকনো ঢোক গিললো।এই পুরুষটিকে নিয়ে সে একদিনেই খুব ভাবছে।যার দরুণ মনে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।মেহরীর হঠাৎ ভয়ংকর এক ইচ্ছা হলো।দুঃসাহসিক কাজ করে বসলো সে।এরোনের চোখের উপর চট জলদি ফু দিয়ে চেয়ার থেকে উঠেই দৌড়ে চলে গেলো বাহিরে।ভাগ্যিস ফোন ও ব্যাগগুলো আগেই নিজের কাছে নিয়ে রেখেছিল।অকস্মাৎ ঘটনায় কিঞ্চিত পরিমাণও হতভম্ব হলো না এরোন।উল্টো তার অধরে সবথেকে গোপন হাসি বিদ্যমান।মেহরীর মনে অনুভূতি তৈরী হচ্ছে।ফোন বের করে কাওকে দ্রুত টাইপ করে লিখলো,
"রাফসানকে আজ বলবে মেহরী এরোনের সাথে পুরো বিকেল কাঁটিয়েছে।"
(***)


কোহিনূর ভিলায় বহুদিন পুর খুশির আমেজ দেখা যাচ্ছে।বাড়ীর বড় গিন্নী রাহনুমার কাছে সকলে এটা ওটা আবদার করতে ব্যস্ত।বিশেষ করে তার ছেলে রাফসান ও রাগিনী কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসেছে।
"আম্মু মানবো না।আমার এবার দুটো বিড়াল ছানা চাই।"
রাগিনীর কথাটি শুনে রাফসান ব্যঙ্গ করে বলল,
"বিড়ালে কামড় দিলে বাচ্চা হয়।পরে সকলে তোকে বিড়ালের আম্মা বলবে আর আমাকে মামা।"
"বলুক ভালো হবে।তবুও বিড়াল চাই আমার।"
রাহনুমা বিরক্ত হয়ে বলল,
"এই বাসায় কোনো বিড়াল আসবেনা।এমনিতেও তোদের দাদী মনে করে এরোন বাদে সবাই প শু।"
রাফসান তৎক্ষনাৎ প্রসঙ্গ বদলে বলল,
"তাবিয়া কোথায়?"
"ওর আব্বু ফোন করেছে।কথা বলছে তার সঙ্গ।নে জলদি সন্দেশটা মুখে নে।নিজের হাতে বানিয়েছি।"

রাহনুমা ভালো রান্না জানে।ছেলে মেয়েদের জন্য মাঝেমধ্যে এটা ওটা তৈরী করে।এমনিতে রান্না ঘরের ধারের কাছেও যায়না।ক্লান্ত পরিশ্রান্ত এরোন এসময় নিজের রুম থেকে নিচে নেমে এলো।সদ্য গোসল করার দরুণ কপালে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।তাকে দেখেই রাহনুমার মুখটা থমথমে হয়ে গেলো।রাফসান এরোনের নাম ধরে বলল,
"জলদি আয় এরোন।মা সন্দেশ বানিয়েছে।"
রাহনুমা চিল্লিয়ে বলল,
"রাফসান নিজের বাটি শেষ কর আগে।আমি অতিরিক্ত কারো জন্য বানায়নি।"

এরোন মুচকি হাসে।ইশারায় রাফসানকে না করে দেয়।অহেতুক তর্কে বা ঝগড়ায় সে কখনো যায়না।খুদা লাগলেও এখন রান্নাঘরে গেলো না সে।পথ পাল্টে বাগানের দিকে চলে এলো।বেতের চেয়ারটায় শরীর এলিয়ে দিয়ে আকাশ পানে তাঁকালো।মাঝেমধ্যে এরোনের নিজের মা এলিসার কথা খুব মনে হয়।বছর বছর আগে তাকে দেখেছিল সে।মা মা সুগন্ধ যুক্ত নারীটি।
"এরোন।"
ঘাড় ঘুরিয়ে এরোন দেখতে পেলো তাবিয়া দাঁড়িয়ে আছে।সে কোহিনূরের ছোট ভাই পারভেজের মেয়ে।গায়ের রঙ শ্যামলার থেকেও নিচে।কালো বলা চলে।পৃথিবীর সব মানুষ মায়াবী।এজন্য তাবিয়াও মায়াবী।এগিয়ে এসে ছেলেটির সামনে একটা বাটি ধরলো।যেখানে রাহনুমার তৈরী সন্দেশ।

"আমি পুরোটা খেতে পারিনি।তুমি শেষ করে দাও।"
"তোমার সন্দেশ খুব পছন্দ তাবিয়া।"
"তাই কী?আচ্ছা বলো তো কেন এখনও এই বাড়ীতে পড়ে আছো?অর্থ কম আছে তোমার?ফিলিপ আঙকেল আজও কল করেছিলো আমাকে।"
এরোনের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।নিজের নানাকে পছন্দ করেনা সে।বিশেষ করে কোহিনূরের উপর কেস করার পর থেকে।
"তার ফোন ধরবেনা।আর এতো কান্নাকাটি করো কেন?নীলয় এই অবস্থায় দেখলে খুশি হতো?"
তাবিয়া উদাস হয়ে বলল,
"খুশিই তো।এজন্য হারিয়ে গেলো।নাও খেয়ে বাটিটা ফেলে দিও।তোমার হাতে দেখে বাংলার বিহারী খুব রাগ করবে।"
এরোন হেসে ফেললো।অজানা কারণে রাহনুমাকে সে বাংলার বিহারী বলে ডাকে।তাবিয়া কিন্তু তার সাথে যোগ দিতে পারলো না।মেয়েটার চোখের কোণায় জল চকচক করছে।এরোন দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তাবিয়া সেই মানুষ যার জন্য সে সর্বহারাও হতে পারে।অথচ আজ কারো জন্য মেয়েটা স্বামীহীন।ভিক্টোরিয়া এবং নীলয় কার কাছে আছে তা খুব শীঘ্রই বের করবে এরোন।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার বাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শখের বশে লিখালিখি করলেও ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি বই এবং ইবুক প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
তরুণ এই লেখিকা সম্পর্কে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন