উপন্যাস       :        আম্বরি
লেখিকা        :         সামিয়া খান প্রিয়া
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার “আম্বরি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া Bangla Golpo - Kobiyal
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া

1111111111111111111111

০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া (পর্ব - ০৫)

একঘেয়ে সুরে কলিং বেল ক্রমাগত বেজে চলেছে।বাসায় স্পর্শিয়া ব্যতীত অন্য কেউ নেই।অসময়ে কারো আগমনে বিরক্তিতে মুখ তেতো হয়ে উঠলো তার।ধীর পায়ে হেঁটে দরজা খুলে দিলো।রাফসান বিবর্ণ মুখে দাঁড়িয়ে আছে।স্পর্শিয়াকে দেখে মলিন হেসে বলল,
"ও বাসায় নেই।এজন্য এসেছি।ভেতরে আসতে দিবি?"
"আয়।"

দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো স্পর্শিয়া।রাফসান ভেতরে ঢুকে ছন্দহীন পায়ে সোফায় গিয়ে বসলো।মাথা নিচু করে আছে ছেলেটা।
"তোর কী হয়েছে রাফসান?এমন দেখাচ্ছে কেন?"
"তিনদিন আগে এরোনের সাথে পুরো বিকেল কাঁটিয়েছে মেহরী।তুই জানিস ওকে নিয়ে কতোটা প জে সি ভ আমি।"
স্পর্শিয়া চমকে বলল,
"আবার এরোন?"
"এরোনকে মেহরী চিনে।বিষয়টা তুই জানিস?আমাকে তবে বলিসনি কেন?"
রাফসানের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো।হাত দুটো মুঠো করে সোফায় গা এলিয়ে দিলো।
"ঠিক চিনেনা।কয়দিন আগে এরোন মেহরীকে কি ড ন্যা প করেছিল।"
"ক্লিয়ার কর বিষয়টা।"
স্পর্শিয়া রাফসানকে পুরো বিষয়টা খুলে বলল।তারা দুজন একসময় ভালো বন্ধু ছিল দেখে মধ্যেকার তুই সম্পর্ক বজায় আছে।পুরো বিষয়টা শুনে রাফসান স্বস্ত্বির নিশ্বাস ফেলে বলল,
"আমি অন্য কিছু ভেবেছিলাম।কবে যে মেহরী স্বাভাবিক হবে।তিনমাস ধরে কিছু ঠিক হচ্ছে না।"

বাক্যটি শুনে চিৎকার করে উঠলো স্পর্শিয়া।শক্ত কণ্ঠে বলল,
"যা তোর কাছে স্বাভাবিক তা আমাদের কাছে অস্বাভাবিক রোগ।আমার অসুস্থ বোনটার সাথে তুই যা করছিস মটেও ভালো না।"
আহত কণ্ঠে রাফসান জবাব দিলো,
"আমি ভালোবাসি মেহরীকে।"
"নাহ।তুই ভালোবাসিস মেহরীর মধ্যে বাস করা রিচিকে।একজন ডিআইডিতে(ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার) ভোগা মানুষের সাথে কীভাবে তার অগোচরে অসুস্থ স্বত্ত্বার থেকে ভালোবাসা কাম্য করিস আমার বোধগম্য হয়না।"
(নোট-ডিআইডি এর অপর নাম মাল্টিপল ডিসওর্ডার।পুরোটা জানতে হলে গুগল করুন)
পৃথিবীতে কোনো প্রেমিকের কাছে সবথেকে দুঃখের বিষয় হয়তো এটাই যে সে কেন ভালোবাসা কাম্য করে এই প্রশ্ন শোনা।মানুষ কী রুপ,গুণ,দৈর্ঘ্য,সুস্থতা বিচার করে অনুরাগ করে?যারা করে তাদের কাতারে নেই রাফসান।

"মানছি আমার রিলেশন মেহরীর সাথে তখন সক্রিয় হয় যখন ও রিচি হয়ে উঠে।এ ব্যতীত স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে আমাকে চিনেনা অবধি।কিন্তু স্পর্শিয়া..।"
"মেহরী কখনো সুস্থ হলে তখন কী করবি?তাছাড়া যার ব্যবহার, আচারণকে পছন্দ করিস সে দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে পাঁচ বছর আগে।মৃ ত ব্যক্তি ছাড়া কিছু নয়।"
রাফসান বিরোধাভাস করে বলল,
"আমি মেহরীকে দেখেছি।ওকে বুঝেছি।রিচির প্রশ্ন আসছে কেন?"
"কারণ যে তোর সাথে সম্পর্কে আছে সে বাহ্যিকভাবে মেহরী হলেও হাবভাব অনুভূতি ব্যক্ত করাতে কিংবা ভালোবাসায়ও পুরোদস্তুর রিচি।তর্ক করেও লাভ হবেনা রাফসান।আমি শুধু চাই আমার বোনটা সুস্থ হোক।"
ধরা গলায় বলল স্পর্শিয়া।চোখের কার্ণিশে অশ্রু টলটল করছে।রাফসান মৃদু হেসে বলল,
"স্বা র্থ প রের মতো কথা।"
"তুই যা করিস তবে সেটা কী?কেমন মানুষ যে সবসময় চাস মেহরী সুস্থ না হোক।তিনমাসের অধিক হয়ে গেলো মেহরী স্বাভাবিক।চাইনা আর রিচি হয়ে উঠুক।তুই ফিরে যা।"
"একটু ওর রুমে সময় কাঁটাতে চাই।থাকতে দিবি?"
স্পষ্ট কণ্ঠে স্পর্শিয়া জবাব দেয়,
"না।আবেগ নিয়ন্ত্রণ কর।"
রাফসান উঠে দাঁড়ালো।বারংবার মেহরীর রুমের পানে তাঁকাচ্ছে।মেয়েটা তার ক্ষণিকের প্রেমিকা।যখন নিজ স্বত্ত্বা ভুলে যায় মেহরী তখুনি কেন রাফসানের হয়ে উঠে।
(***)

অনেকক্ষণ ধরে বান্ধুবীর জন্য রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে মেহরী।আজকে ঘুরতে যাওয়ার কথা আছে।কিন্তু মনটা একেবারে সায় দিচ্ছে না।সকাল থেকে মুখে দুটো দানাও তুলেনি।খাওয়ার প্রতি হুট করে অনীহা চলে আসছে।ক্লান্ত ফ্যাকাশে মুখখানা দূর থেকে দৃষ্টিভরে রাফসান দেখে নিচ্ছে।স্পর্শিয়ার সাথে কথা বলে বের হয়েছে ক্ষণপূর্বে।হুট করে চোখে জ্বা লা শুরু হলো ছেলেটির।ভালোবাসা এমন কেন?মেহরীর মুখে নিজের নামটা শোনার জন্য অস্থির হয়ে যাচ্ছে সে।তবে রাফসানকে যে প্রেমিক হিসেবে মেনে নিয়েছে সেই স্বত্তাটি হচ্ছে রিচি।বহু বছর আগে গণ ধ র্ষ ণের স্বীকার হয়ে মৃ'ত্যু বরণ করেছে।কিন্ত মেহরী ভুলতে পারেনি।তাইতো নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছে।মেহরীর পাশে তার সমবয়সী একজন এসে দাঁড়ালো।দুজনে সামান্য কথা বলে হাঁটা আরম্ভ করলো।রাফসান উষ্ণ শ্বাস ফেলে গাড়ী স্টার্ট দিলো।ছেলেটির মনে বারংবার প্রশ্ন আসে মেহরী সুস্থ থাকাকালীন কখনো কী তার সঙ্গে প্রণয় মহল সাজাবে?জবাব নেই কোনো।

(***)

টিংটিং শব্দের সঙ্গে রিক্সা এগিয়ে যাচ্ছে।এখন বাজে রাত নয়টা।মেহরী নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে।গাড়ী নষ্ট হয়েছে গতকাল।তাই রিক্সা নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।সারাটা দিন ধরে মাথার মধ্যে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে মেহরীর।সে ধরে নিলো গত রাতে এরোনকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে ঘুম হয়নি তাই অসুস্থবোধ হচ্ছে।শ্বেতকায় বলিষ্ঠ পুরুষটির কথা ভেবে শিহরিত হয়ে মেহরী।অধরে এক চিলতে হাসি ফুঁটে উঠে।সরু লতার ন্যায় আঙুল গুলো দিয়ে কানের পিঠে চুল গুঁজে দেয়।ভাবনায় মত্ত্ব থাকার সময় হুট করে রিক্সা জোরে ঝা কি দিয়ে উঠে।নিজেকে সামলে নেয় মেহরী।রিক্সা চালক একজন বয়স্ক লোক।মাথায় টুপি পড়া।নির্জন পথ দেখে জোরে রিক্সা টেনেছে।মেহরী ঈষৎ চিল্লিয়ে বলল,
"আস্তে যান চাচা।"
দেহের একপাশ বেঁকিয়ে লোকটি জবাব দেয়,
"আম্মা রাস্তাডা বালো না।দুইদিন আগে এইহানে একজন মাইয়ার লগে কতোগুলা পুলা খা রা প কাম করছিলো।আমনে আমার রিক্সায় উঠছেন।দায়িত্ব আছেনা?তাই তাড়াতাড়ি করতাছি।"
মেহরী ছোট্ট করে জবাব দিলো,
"আচ্ছা।"

রাস্তাটা অতিক্রম করে মেহরীকে গন্তব্যে নামিয়ে দিলো লোকটি।এখান থেকে বাসা চার মিনিটের পথ।তবে স্পর্শিয়ার জন্য চকলেট কেক নিতে হবে বিধায় এখানে নেমেছে।বৃদ্ধ লোকটির তখনকার কথা সে বিস্মৃত করতে পারছেনা।মাথার যন্ত্রণা আবার বেড়ে গেলো।আশেপাশে মৃদু কোলাহল আছে।হুট তার শরীরটা আন্দোলিত হলো। চিৎকার দিয়ে নিচে বসে পড়লো।মুখ দিয়ে ভয় মিশালো কণ্ঠে বারংবার বলে যাচ্ছে,
"আমাকে ওরা ধ র্ষ ণ করেছে।শেষ করে দিয়েছে।মা,মা।"
কথাটি শুনে আশেপাশের মানুষ দাঁড়ালো।একটা মেয়ের মুখে এসব শুনে তারা সত্যি বলেই ধরে নিলো।মেহরীর শরীরে কাঁপুনি বের গেলো।অকস্মাৎ তার নাকে চন্দন কাঠের গন্ধ পেলো।বলিষ্ঠ হাত দুটো আকড়ে ধরেছে তাকে।পৃথিবীর সবথেকে আদুরে কণ্ঠে বলল,
"মেহরী।শান্ত হও।কী হয়েছে?"

পথচারীরা অবাক হয়ে দেখছে এরোনকে।একজন বিদেশীর মুখে এমন শুদ্ধ বাংলা দেখতে পাওয়া দুষ্কর।মেহরী বিরবির করে ধ র্ষ ণের বর্ণনা করছে।চোয়াল দৃঢ় হয়ে গেলো এরোনের।সকলকে উপেক্ষা করে মেয়েটিকে কোলে তুলে নিলো।গাড়ীর দিকে হাঁটা ধরেছে এমন সময় মেহরী নিজের শব্দ বদলালো।আর্তনাদ করে ডাকছে কাউকে।চেতনা প্রায় হারিয়ে ফেলেছে।নামটা শোনার জন্য মেয়েটির মুখের কাছে কান এগিয়ে  নিলো এরোন।
"রাফসান,রাফসান।"
এরোনের শুভ্র মুখে বেদনা ফুঁটে উঠলো।গাড়ীর দরজা একহাতে খুলে পেছনের সীটে প্রায় ছুঁ ড়ে মারলো মেহরীকে।এমনকি সামনে বসে থাকা ড্রাইভারকেও তোয়াক্কা করলো না।মেহরী এখনও অনবরত রাফসানকে ডেকে যাচ্ছে।এরোনের তা সহ্য হচ্ছে না।
"আঙকেল গাড়ী স্টার্ট করুন।"

গাড়ী চলা শুরু করলো।এরোন বোতল হাতে নিয়ে মেহরীর মুখে দিতে লাগলো।উহু,কোনো মায়া নেই তাতে।অনেকটা জোরে জোরে দিচ্ছে।তবুও চেতনা আসছে না।রেগে গেলো এরোন।হাতে থাকা বোতল ফেলে মেহরীকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।দুহাত দিয়ে মুখটা তুলে ধরলো।এরোনের মুখ নিঃসৃত উষ্ণ শ্বাস মেহরীর মুখে লুটোপুটি খেতে লাগলো।গা গরম হয়ে গিয়েছে ছেলেটির।তবুও তেজী কণ্ঠে বলল,
"আর একবার রাফসান বললে সা য়া না ই ড খাইয়ে মেরে ফেলবো। রা স কে ল।"
মেহরী নিভে যাওয়া কণ্ঠে বলল,
"রাফসান,রাফসান।"
"না।বল এরোন।শুধু এরোন বল।"
"রাফসান।"
"এরোন বল মেহরী।"
নিজের নাম শুনে ঝাপসা দৃষ্টিতে চোখ মেললো মেহরী।অধরযুগলের মধ্যে ঈষৎ দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।গভীর দৃষ্টিতে এরোন তাকিয়ে আছে তার দিকে।কী মায়াময় পরিবেশ।মনের কোণে কোথাও ভায়োলিন বেজে উঠলো।মেহরী আস্তে আস্তে বলল,
"এরোন।এরোন।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

০৬ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার বাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শখের বশে লিখালিখি করলেও ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি বই এবং ইবুক প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
তরুণ এই লেখিকা সম্পর্কে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন