উপন্যাস       :        আম্বরি
লেখিকা        :         সামিয়া খান প্রিয়া
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার “আম্বরি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া Bangla Golpo - Kobiyal
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া

1111111111111111111111

৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া (পর্ব - ০৬)

অন্তঃকরণে তীব্র খড়া চলছে মেহরীর।পাশে বসে থাকা পুরুষটির তপ্ত স্পর্শ মেদুর গালে ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে।অল্প অল্প করে চোখ খুলছে সে।এরোনের উষ্ণ শ্বাস মেহরীর অধরে লাগছে।দীপ্তিময় কণ্ঠে এরোন ডাকলো।
"মেহরী,চোখ খুলেন।খুব অসুস্থ লাগছে?"
"হু।"
"হসপিটালে পৌঁছে যাবো একটু পরে।অপেক্ষা করুন।"

সামনে বসে থাকা ড্রাইভার লোকটি আপনমনে গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছে।পিছনে ঝড় বয়ে গেলেও তার বিন্দুমাত্র গতি কমবেনা যেন।ঈষদুষ্ণ আলোতে মেহরীকে দেখে এরোনের গায়ের উত্তাপ বেড়ে চলেছে।অকস্মাৎ নেত্রপল্লব মেললো মেহরী।সামনে ঝুঁকে থাকা শ্বেতকায় পুরুষটি অচেনা হয়ে গেলো তার নিকট।বিস্ময়ের সঙ্গে "এরোন" নামটি উচ্চারণ করেই ছিটকে সরে গেলো তার থেকে।তার ডাকটি মৃদু চিৎকারের মতোন শোনালো।জানালার দিকে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে।শুভ্র মুখবিবর ভয়ে রক্তিম হয়ে উঠেছে।এরোন ভ্রু কুঁচকে শুধালো,
"মেহরী।কী হলো?"
নিজেকে ধাতস্থ করে কোনোমতে জবাব দিলো মেহরী,
"আমি বাসায় যাবো।"
"আগে ডক্টরের কাছে যাবেন।মাঝ রাস্তায় কেমন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।তাছাড়া এতো রাতে বাহিরে আসার খুব জরুরি কারণ ছিল?"
"না।আমাকে প্লিজ বাসায় দিয়ে আসুন।প্লিজ এখন একটু মুখটা ওপাশে ঘুরান।"
"কেন?"
"প্লিজ।"
এরোন মুখটা ওপাশে ঘুরালে চট জলদি গায়ে থাকা ওড়না দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে নিলো মেহরী।ছোট ছোট চুলগুলো কপালে মিশে আছে।ঘেমে-নেয়ে একাকার সে।এরোন ক্ষণবাদে মেহরীর পানে মুখ ঘুরিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।সে নিশ্চয় ওমন পুরুষ নয়?ওইযে কামনা করা পুরুষ।তবে কেন এতো রক্ষা করছে মেহরী নিজেকে?

"আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন স্যার।"
"ইন্টারেস্টিং।এতোদিন মুখ থেকে স্যার বের হতো না।কিন্তু আজ হঠাৎ ভিন্ন হলো কেন?"
পড়ন্ত ঘুড়ির ন্যায় মেহরী আবারও বলল,
"আমার বাসায় যেতে হবে।এ বাদে অন্য কোনো ধরণের কথা শুনতে চাইনা।আপনি তো মেয়েদের থেকে খুব সংযম করে চলেন।তাহলে আমাকে কেন গাড়ীতে নিয়ে এলেন?"
"সেটার উত্তর নেই মেহরী।আমাকে নিয়ে খুব জানেন দেখছি।"
সামনে চালককে উদ্দেশ্য করে এরোন বলল,
"যেখান থেকে একে উঠিয়ে এনেছি সেখানে চলুন আঙকেল।"
এরোনোর বাক্যে নিজেকে তুচ্ছ অনুভব হলো মেহরীর।সবকিছু যেন সে নতুন করে দেখছে।এমনভাবে আশেপাশে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো।নানা আশংকায় সে হতবিহ্বল।শুকনো ঢোক গিলে শুধালো,
"আজ কতো তারিখ?"
"২০ জুলাই।"
হাতে গুণে কিছু একটা হিসেব করে কপালে ভাঁজ পড়লো মেহরীর।অস্পষ্ট সুরে নিজেকে তিনমাসের বেদনা শুনিয়ে দিলো।এরোন পুরোটা সময় ধরে পলকে বদলে যাওয়া মেহরীকে দেখছে।মেয়েটির কণ্ঠ সুরে ঈষৎ পার্থক্য করতে বেগ পেতে হলো না।বেশী দূরত্ব অতিক্রম করেছিলো না তারা।এজন্য চট জলদি পূর্বের জায়গায় পৌঁছে গেলো। গাড়ী থামতেই দরজা খুলে মেহরী ছুটে চলে গেলো।এরোন দ্রুত হাত ধরতে গিয়ে পারলো না।মেহরী বলে ডাকলো বার দুয়েক।পিছন ফিরে একবার আলো আঁধারে এরোনের  মুখটা দেখলো মেহরী।মন ভরে শ্বাস নিয়ে বলল,
"কী নিদারুণ যন্ত্রণা আপনি এরোন।"


(***)
শাওন সবেমাত্র বাসায় ফিরেছে।স্পর্শিয়াকে মনমরা হয়ে থাকতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলে জবাব দিলো না।তাই ধরে নিলো মুড সুইং চলছে।সারাদিন একদমই খাওয়া হয়নি ছেলেটির।দ্রুত খাচ্ছে দেখে স্পর্শিয়া স্বাবধান করলো।
"আস্তে খাও।"
"মেহরী কোথায়?"
"বিকেলে প্রেমার সাথে বের হয়েছে।দশটা বাজে চলতো ফিরলো না তো।"
"কল করেছিল?"
"হ্যাঁ।বলল তো আসছি।"
"এতো রাত অবধি বাহিরে থাকা ঠিক নয়।ও কিন্তু সুস্থ হচ্ছে খেয়াল করেছো?"
স্পর্শিয়া উদাস হয়ে বলল,
"অসুস্থ হতে কতোক্ষণ?"
"তুমি নিশ্চয় এটা নিয়ে টেনশন করছো।আসলে দিনশেষে যা হওয়ার সেটাই হবে।বিশ্বাস রাখো অসীম ক্ষমতাধরের উপর।"

কলিং বেলের শব্দ হলে স্পর্শিয়া গিয়ে দরজা খুলে দিলো।তড়িৎ গতিতে মেহরী প্রবেশ করে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।ডাইনিং টেবিল থেকে শাওন বার দুয়েক ডাকলো তবে থামলো না।মেয়েটির অবস্থা দেখে মুখটা থমথমে করে ফেললো স্পর্শিয়া।কষ্ট হওয়া স্বত্ত্বেও আচ্ছন্ন হয়ে উপরে উঠে এলো।সে মনে মনে বারংবার নিজের আশংকাকে ভুল প্রমাণ করতে চাচ্ছে।দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখলো পুরো রুম অন্ধকার করা।সুইচ টিপে দিলো সে।মেহরী হাঁটুগেড়ে নিচে বসে আছে।অসুস্থ কণ্ঠে স্পর্শিয়া ডাকলো,
"মেহরী।আমার কেক কোথায়?"
নরম কণ্ঠে জবাব দিলো মেহরী,
"আমার মনে ছিলনা কাজলা দিদি।"
সম্বোধন শুনে শিউরে উঠলো স্পর্শিয়া।তার আঁখিঠারে অশ্রুতে টইটম্বুর।ততোক্ষণে শাওনও দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
"স্পর্শিয়া একটু আসো তো।দরকার আছে।"
অনেকটা জোর করেই স্পর্শিয়াকে নিয়ে নিচে নামলো শাওন।স্বামীকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে মেয়েটি।অকস্মাৎ কেঁদে ফেললো স্পর্শিয়া।
"রিচি ফিরে এলো শাওন।আমার বোনটা কী কখনো ঠিক হবেনা?রিচি ম রে ও ম র লো না।অথচ আমার বোনটা..।"
(***)

গাড়ী চলছে আপন গতিতে।রাস্তার হলদেটে আলোতে বাহিরে তাঁকিয়ে আছে এরোন।নিজের গন্তব্যে প্রায় পৌঁছে গিয়েছে সে।দুইতলা মলিন বাড়ীর সামনে এসে গাড়ী থামলো।বড় বড় পা ফেলে বাহিরে এসে দাঁড়ালো।বৃষ্টি নামবে দেখে জোরে জোরে সমীরণ বইছে।অন্ধকারময় বাড়ীতে ঢোকার সময় দরজায় শিহরণ জাগানো শব্দ করলো।ভেতরের ঘর থেকে দুজন নারী পুরুষের শব্দ আসছে।এরোন বাকা হাসলো।ছেলেটির পিছনে ইতিমধ্যে তার সবথেকে বিশ্বস্ত লোক কাফি এসে দাঁড়িয়েছে।ইশারায় থামতে বলল এরোন।ভেতরে চরম মুহুর্তের শব্দ আসছে।কাফি ছেলেটা এরোনের থেকে বছর দুয়েক ছোট।বলিষ্ঠ সাবলীল পুরুষ।এমন ভয়ংকয় পরিস্থিতি আগেও পড়েছে।ভীষণ বিব্রতবোধ করছে এখন।অথচ তার সামনে দাঁড়ানো লোকটা কী পাথর?হয়তোবা।
রাতের আধারে গহীনে নির্জনতা নামলে এরোন সোজা হয়ে দাঁড়ালো।মৃদু সুরে বলল,
"তাবিয়া আজকের পর থেকে সত্যিই বিধবা হয়ে যাবে।ওর জন্য ভালো মানের সাদা শাড়ী অর্ডার করেছো কাফি?"
"জি স্যার।তবে শেষ কাজটা আমাকে করতে দিবেন।"
"না।আমি নীলয়কে য ন্ত্র ণা দিতে চাই।যতোটা তাবিয়া পাচ্ছে।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার বাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শখের বশে লিখালিখি করলেও ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি বই এবং ইবুক প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
তরুণ এই লেখিকা সম্পর্কে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন