উপন্যাস : আম্বরি
লেখিকা : সামিয়া খান প্রিয়া
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার “আম্বরি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া |
৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া (পর্ব - ১০)
ক্ষণপূর্বের শোনা বাক্যগুলো কোনোভাবে বিস্মৃত করতে পারছেনা মেহরী।রাফসানের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার দরুণ সে কিছুটা জানে এরোনের ব্যাপারে।সেখানে আশ্রয় পাওয়া বোহেমিয়ান ব্যতীত কিছু নয় ছেলেটি।অথচ ব্যক্তিটা কীনা বলছে সে রাফসানের আপন ভাই?বিষয়টা দুইয়ে দুইয়ে চার মিললে খুব সহজ।কোনো মানুষ কেন বা কোহিনূর ভিলার গেটে একটা বিদেশীদের মতো দেখতে বাচ্চাকে রেখে যাবে?যদি না সংযোগ থাকে কোনো?মেহরী আনমনে সামনের সীটে গা এলিয়ে রাখা সুপুরুষটির পানে তাঁকালো।চোখ দুটো মুদে আছে।আলো আঁধার খেলা করছে মুখবিবরে।মেহরীর অন্তঃকরণে মৃদু কম্পন উঠলো।অপরদিকে একটু একটু মাথা ব্যাথাও করছে তার।সাহস করে ডাকলো,
"মি.এরোন।"
"ইয়েস।"
"একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।আপনার নানার ব্যাপারে কিছুটা হলেও জানি।তিনি কেন আপনাকে বাংলাদেশে রেখেছে?"
"জেরা করছো?"
মেহরীর চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে এলো।এরোন তাকে তুমি ডাকছে কেন?
"কী ভাবছো তুমি কেন ডাকছি?"
"জি।"
"আপনিতে আনকম্ফোর্টেবল অনুভব হয়।"
"ফ্লার্টিং ফ্লার্টিং?"
"নো।যেহেতু তুমি আমার ছয় মাসের গার্লফ্রেন্ড।"
আৎকে উঠলো মেহরী।মৃদু চিৎকার করলো।যা পাখির কিচিরমিচিরের অনুরুপ শোনালো।
"আপনি বলেছেন জিএফ বিএফ টাইপ কিছুনা।ভুলে যাবেন না আমি আপনার ভাইয়ের প্রেমিকা।"
এরোন বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলল,"রাফসান আমার স্যারের ছেলে।ফ্রেন্ড।ভাই হয়না।পরবর্তী সময়ে একথা কখনো বলবেনা।"
"ঠিক আছে।আপনি কেন শাওন ভাইয়ার কাছ থেকে ভিক্টোরিয়া নিয়ে জেরা করছেন না?যেহেতু প্রুভ আছে।"
মেহরীর প্রশ্নে এরোনের মুখবিবরে প্রহেলিকা দেখা গেলো।মৃদু হেসে বলল,"তাতে কিন্ত শাওনের উপর খা রা প কিছু যেতে পারে।"
"তাহলে থাক।আর হ্যাঁ জিএফ বা ছয় মাস শব্দটা কখনো ব্যবহার করবেন না এরপর থেকে।আমার অস্বস্তি হয়।মনে থাকবে?"
এরোন ছোট্ট করে জবাব দিলো,
"থাকবে।"
মেহরী নানাকিছু চিন্তা করছে নিজের সীটে বসে।দেয়ালে মাথা ঠেকালো।শরীরে যন্ত্রণা আরো বেশী হারে প্রকট হচ্ছে।চোখ দুটোও খুলে রাখা দায়।ধীরে ধীরে চারিধার কুয়াশায় ডুবে গেলো তার নিকট।শরীরটা মুচড়ে ঘামতে লাগলো।এরোন অবস্থা বুঝতে পেরে চট জলদি মেয়েটার পাশে এসে বসলো।মেহরী মেহরী সম্বোধনে পুরো কক্ষ গুঞ্জিত হতে লাগলো।মিনিটখানেক বাদে মেহরী ধীরে ধীরে চোখ খুলতে আরম্ভ করছে।চোখের সামনে ধোঁয়াগুলো ক্ষণে ক্ষণে সরে গিয়ে শ্বেতকায় এক পুরুষের মুখমণ্ডল দৃশ্যমান উঠলো।স্বপ্ন পুরুষটির দৃষ্টিতে কী যে মায়া।এরোনের তপ্ত দুহাতের ত্বকের মেহরীর মেদুর গালে ডুবে যাচ্ছে।সম্বিৎ ফিরে পেলো সে।মনে পড়ে গেলো রিক্সায় থাকার ঘটনাগুলো।এরপর কী হয়েছে?তড়িঘড়ি করে এপাশ ওপাশ দেখতে লাগলো।এরোনকে এখনও সে ঠিকঠাক চিনতে পারছেনা।কিন্তু পেটে মোচড় দিয়ে উঠতেই আশ্চর্য হয়ে বলল,"মি.এরোন।"
এরোন শশব্যস্ত হয়ে শুধালো,
"তুমি ঠিক আছো?"
ক্ষণ মুহুর্ত নিশ্চুপতার চাদরকে অবলম্বন করলো মেহরী।ভেতরে ভেতরে বিমূঢ় হয়ে উঠলো।সে জানে তার অনেক মুহুর্ত ভুলে যাওয়ার রোগ আছে।এখন নিশ্চয় সেটা ঘটলো।তবে ভুলে যাওয়ার আগে কী হয়েছে সেটা মনে করতে পারছেনা।এরোনের সাথে কী সম্পর্ক তা খুব করে মনে করতে চাচ্ছে।অন্তঃকরণের কোথাও আওয়াজ উঠে এলো।এক বিশেষ সম্পর্কের কথা বলছে মনটা।নিজের অপারগতা কিংবা রোগের কথা এরোনকে জানাতে চায়না মেহরী।এজন্য বলল,
"আমি ঠিক আছি।একটু খারাপ লাগছে।পানি খাবো।"
এরোন পানি এগিয়ে দিলো মেয়েটার দিকে।ঢকঢক করে পুরোটা খেয়ে নিলো মেহরী।পাশ থেকে ফোনটা বের করে বাহিরে চলে এলো।ট্রেনে তারা কোথায় যাচ্ছে আগে সেটা জানা প্রয়োজন।স্পর্শিয়ার নাম্বারে কল দিতে দেরী ওপাশে রিসিভ হতে সময় লাগেনি।
"আপু।"
"কী ব্যাপার মেহরী?সকাল থেকে কতোবার কল দিয়েছি জানিস?একটুও খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিস না।শুনলাম আজ ফিরে আসছিস রাঙামাটি থেকে।তাও রাত করে।"
মেহরী উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।তার মানে এতোসময় সে রাঙামাটিতে ছিল।
"আপু আস্তে প্রশ্ন করো।তবে একটা কথা বলো তো।সেদিন কী আমি কেক নিয়ে বাসায় গিয়েছিলাম?মনে করতে পারছিনা।"
বাক্যটি শুনে স্পর্শিয়া বড়সড় একটি শ্বাস ত্যাগ করলো।এর মানে মেহরী আবার নিজের স্বত্তায় ফিরে এসেছে।কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে শুনতে পেলো,
"আপু মি.এরোন আমার কী হয়?"
"এরোন?হঠাৎ এই প্রশ্ন?"
"আরে আমি তো কিছু মনে করতে পারছিনা।কিন্তু মি.এরোন ও আমি একই কেবিনে ঢাকায় ফিরছি।তার সাথে কী আমার গভীর কোনো সম্পর্ক আছে?"
স্পর্শিয়া থমকালো।অচেনা একটা ছেলের সাথে এতোসময় একা থাকবে দেখে ভয় পাচ্ছে।
"তুই কী মেহরী?অন্য আরেকটা কেবিনে যা।ওখানে থাকার দরকার নেই।হয়তো কো-ইন্সিডেন্সের জন্য।"
"আপু মনে তো হলো না।লোকটার সাথে আমার বন্ধুত্ব মনে হচ্ছে তুমি করে বলছিলো।প্লিজ বকো না আপু।তাকে আমার ভালো লাগে।"
"কাকে এরোনকে?"
"হ্যাঁ।"
বোনের সাথে মেহরীর খুব নিকটের সম্পর্ক।এজন্য নিজ ভালোলাগা অকপটে স্বীকার করে গেলো।স্পর্শিয়া কিছুসময় নিশ্চুপ থেকে বলল,"আচ্ছা৷ভালোভাবে আসবি।স্টেশনে নেমে কল দিবি শাওন গিয়ে নিয়ে আসবে।একা আসার চেষ্টাও করবিনা।নাহ থাক ঢাকার কাছাকাছি এসে কল দিবি।"
"আচ্ছা।"
স্পর্শিয়া কলটা কেঁটে দিলে গভীর নিশ্বাস ফেলে ভেতরে প্রবেশ করলো মেহরী।দুরুদুরু কম্পিত হচ্ছে তার বুকখানা।এরোনকে সে পছন্দ করে।খুব,খুব খুব করে।লোকটাও কী বিপরীতে তাই?এদিকে পেটে খুদা অনুভব হলো।
"শুনছেন?"
এরোন ভ্রু কুঞ্চিত করলো।মৃদু হেসে মেয়েটির উদ্দেশ্যে শুধালো,"এ ডাক টিপিক্যাল বাঙালী রমণীদের মতোন শোনাচ্ছে।"
"আমার খুদা লেগেছে।"
"এখন?তোমার ব্যাগে কিছু নেই?"
"দেখছি দাঁড়ান।"
পুরো ব্যাগ খুঁজেও কিছু পেলো না মেহরী।হতাশ হয়ে উঠলো।এমন নয় সে ব্যাগে কিছু রাখেনা।অতিরিক্ত খুদা লাগে বিধায় সবসময় নিজের সাথে কিছু না কিছু রাখে।
"নেই?"
"নাহ।"
"আচ্ছা।কোনো স্টেশনে থামলে কিনে এনে দিবো।"
মেহরী মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।এই বাক্যের মাধ্যমে বুঝতে পারলো দুজনের মধ্যে চেনাজানা আছে।খুদা খুব কম সহ্য করতে পারে মেয়েটা।তার ছটফট করা এরোন বুঝতে পারলো।এতো সময় সে বই পড়ছিলো।সেটা সরিয়ে রাখলো।
"মেহরী এসো গল্প করি।সময় কেঁটে যাবে।"
"কী বিষয়ে?"
"দুনিয়ায় এতো মানুষ।দিনে কতো ধরণের ঘটনা ঘটে আর তুমি টপিক খুজে পাওনা?স্ট্রেঞ্জ।"
"ভালোবাসা নিয়ে আসেন আলাপ করি।"
এরোন শব্দ করে হাসলো।এক পায়ের উপর আরেক পা তুলে বলল,
"আমি তুমি প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষ।ভালোবাসার কথা বললে ভালোবাসা হবে।Because love is a bitter infectious disease।"
এরোনের কথায় সে শিওরে উঠলো।মনের কোথাও বলে উঠলো ভালোবাসা হোক।মেহরী খুব করে চাচ্ছে এই শ্বেতকায় বলিষ্ঠ হালকা ধূসর চোখের ছেলেটির সঙ্গে ভালোবাসা নামক সংক্রমণ রোগ হোক তার।বাহিরে অবশ্য সেটা প্রকাশ পেলো না।স্মিত হাসলো শুধু মেয়েটি।কেবিনে মৃদু সমীরণ বইছে।পরিবেশটা সুন্দর।কিন্তু একটি ঘটনার রুপ বদলে গেলো মেহরীর নিজস্ব স্বত্তা ফিরে আসায়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার বাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শখের বশে লিখালিখি করলেও ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি বই এবং ইবুক প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।তরুণ এই লেখিকা সম্পর্কে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন