উপন্যাস : আম্বরি
লেখিকা : সামিয়া খান প্রিয়া
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার “আম্বরি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া |
৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া (পর্ব - ০৯)
শব্দ করে মেঘেরা গর্জন করে উঠলো।উষ্ণ তন্দ্রায় মৃদু আন্দোলিত হলো মেহরী।চোখ খুলতে ইচ্ছে করছেনা মটেও।পরক্ষণে খিচুড়ির ভালো ঘ্রাণ পেয়ে তৎক্ষনাৎ উঠে বসলো।গতকালের পরনের শাড়ীটা এখনও শরীর জড়িয়ে আছে।বিরক্তিতে মুখ তেতো হয়ে এলো মেয়েটির।এরোন রাত নয়টায় বাসায় দিয়ে গিয়েছে তাকে।এটা ওটা বলে সামলে নিয়েছে বাসার পরিবেশটাি।দরজায় করাঘাত হলে চোখ তুলে সামনে তাঁকালো।রিচির মা আলো দাঁড়িয়ে আছে।
"তোকে কী বিদঘুটে দেখাচ্ছে মেহরী।যা ফ্রেশ হয়ে আয়।তোর ভাবী খিচুড়ি করেছে।"
উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো মেহরী।অভিমানী সুরে বলল,
"বেশী খাচ্ছিলাম দেখে তো দিয়েই দিলে।অন্তত গোপনে আমাকে রিচি বলে ডাকতে পারো।মা কে খালামণি ডাকতে মটেও ভালো লাগেনা।"
আলো থমকে গেলো।দুঃখ গিলে অশ্রুসজল চোখে মেয়েটির দিকে তাঁকিয়ে রইলো।মেহরীর মধ্যিখানে রিচি বেঁচে থাকলেও তাকে বোঝানো হয়েছে সেদিন মেহরী মা রা গিয়েছিল।সেই ঘটনার এক মাস পর আলোর বোন মমতা ও তার স্বামী শফিক এক্সিডেন্ট করে মৃ ত্যু বরণ করে।সব হারিয়ে স্পর্শিয়া একদম একা হয়ে গিয়েছে বিধায় মেহরীর পরিচয়ে সে সমাজের কাছে পরিচিত হচ্ছে।মানে শফিকের মেয়ে হিসেবে তাকে দত্তক নেওয়া হয়েছে।এটা রিচির নিজস্ব চিন্তা ভাবনা থাকলেও ভেবেছিল পরিবার মানবেনা।কিন্তু নিজের মা,বাবা বিষয়টা কতো সহজে মেনে নিয়েছে সেটা দেখে রিচি স্বত্তা ভীষণ অভিমান করে আছে।আলো মলিন হেসে বলল,
"গোসল করে নে।কাল ভেজা কাপড়েই শুয়ে ছিলি।"
"আমিও তাই ভাবছি।একটু আগের কথায় মন খারাপ করো না হ্যা।"
"স্পর্শিয়া সকাল থেকে অনেকবার ফোন করেছে।ঢাকা ফিরে যাওয়ার জন্য।"
"কালকে চলে যাবো।"
স্যুটকেস থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো মেহরী।শূন্য ঘরে বিছানায় বসলো আলো।কী দারুণ কষ্ট হচ্ছে তার।রিচিকে যেদিন নির্জীব দেখেছিল সেদিনের অনুভূতিগুলো মনে হলে এখনও কেঁপে উঠে অন্তঃকরণ।তাছাড়া মেয়েটা ছিল ধ র্ষি তা।বেশী কষ্টের ছিল একেক জনের মুখে একেকটা ধ র্ষ ণের কাহিনি ছড়িয়ে পড়া। সেসব অতীত।বিভীষিকাময় অতীত।
শরীরে পানির স্পর্শ পেয়ে নিজেকে স্নিগ্ধ লাগছে মেহরীর।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমে কাওকে খুঁজে পেলো না।ফোনটা অনেক খুঁজে খাটের নিচে পেলো।ভাগ্যিস কাল বৃষ্টির জন্য যন্ত্রটি কাছে ছিলনা।স্পর্শিয়ার নাম্বারটা ডায়ালে থাকলেও মেহরী রাফসানকে ফোন করে বসলো।ছেলেটির সাথে বহুদিনের ভালোবাসার সম্পর্ক তার।কিন্তু প্রত্যেকবার ফোন কলে দুরুদুরু করে অন্তঃকরণ কেঁপে উঠে।
"হ্যালো রিচি।কোথায় ছিলে তুমি?কতোবার ফোন করেছিলাম আমি জানো সেটা।"
প্রাানের পুরুষের অভিযোগ মন ভরে শুনলো মেহরী।ছেলেটা তাকে খুশি করতে রিচি বলে সম্বোধন করে।
"একটু ব্যস্ত ছিলাম।"
"কাল না শাড়ী পরবে বলেছিলে।ছবি দিলেনা কেন?"
"পরিনি তো।তাহলে ছবি কীভাবে দিবো?খেয়েছিলে?"
"ম্যাডাম এখন বারোটা বাজে।আর জানেন ব্রাঞ্চ করিনা আমি।তুমি নিশ্চয় এখন ঘুম থেকে উঠলে।
মেহরী লাজুক হেসে, " গতকাল রাতে দেরীতে ঘুমিয়ে ছিলাম।"
"কেন?আমাকে নিয়ে ভাবছিলে?"
"ভীষণ বাচ্চামো কথাগুলো।ভালোবাসলে তাকে নিয়ে সারাক্ষণ কেউ ভাবতে পারে?তাহলে টেনশন বলে কোনো শব্দের উদ্ভব ঘটতো না।"
"ভুল বললে মেহরী।ভালোবাসলে সর্বদা মনে না রাখলে সব টেনশন শেষে সেই প্রিয় মানুষটার কাছে গিয়ে ঠেকে।তোমার এমন হয়না মেহরী?"
বাক্যের সমাপ্তিতে হকচকিয়ে উঠলো মেহরী।এরকম কোনো অনুভূতির সঙ্গে এখনও পরিচয় ঘটেনি তার।কিন্তু সে তো রাফসানকে ভালোবাসে তবে?ছেলেটা অধীর আগ্রহে জবাবের আশায় বসে আছে।এখন সম্বোধনটাও মেহরী দিয়ে শেষ করেছে।যদি হ্যা বোধক জবাব হয় তবে সব ভেঙেচুরে স্পর্শিয়াকে জানিয়ে দিবে মেহরী সবটা দিয়ে তাকে ভালোবাসে।সবটা।রাফসানের মন ভাঙতে ইচ্ছে করলো না মেহরীর।ক্ষীণ সুরে বলল,
"আমি তোমাকে ভালোবাসি রাফসান।"
প্রহেলিকা জুড়ে আছে বাক্যে।কিন্তু ওপাশের মানুষটির অন্তঃকরণে সহস্র গোলাপ ফুঁটে আম্বরি ছড়াতে লাগলো। ভালোবাসার আম্বরি(সুগন্ধ)।
হসপিটালের ফিনাইলের গন্ধে বমি আসছে কাফির।বহু ক্ষণ চেষ্টা করলো নিজেকে সামলানোর জন্য।শরীর ধণাত্মক কোনো সংকেত না দেওয়ায় তৎক্ষনাৎ ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করে দিলো।ছোটবেলা থেকে ভরা পেটে সে কখনো হসপিটালে থাকতে পারেনা।চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হয়ে এলো।বেডে গতকাল এরোন যার উপর গু লি চালিয়েছিল সেই মেয়েটা বসে আছে।নামটা খুব মিষ্টি।নাবা কিন্তু কাফির মুখ দিয়ে সবসময় বাবা বের হয়।
নাবা বিছানায় বসে সমানতালে চোখের জল মুছে নিচ্ছে।মেদুর গালে রঙিন মেঘ জমেছে।কাফি বিরক্ত হয়ে বলল,
"তোমার চোখের পানি দিয়ে কী লবণ তৈরী করা হয়?না মানে যে হারে লবণাক্ত পানি বের করছো।তাই ভাবলাম।"
"শাট আপ।"
সকাল থেকে এই দুটো শব্দ গুনে গুনে ত্রিশ বার বলেছে নাবা।কাফির কানটা পঁচে গেলো মনে হচ্ছে।ধৈর্য্য ভেঙে যেতো যদি না এরোন মেয়েটাকে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব না দিতো।নাবার বাবা এরোনের হয়ে কাজ করে।তার মায়ের সাথে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে বছর চারেক আগে।সেই থেকে বাবার সাথেই থাকে নাবা।কয়েকদিন আগে একদিন রাতে এরোন গিয়েছিল তাদের বাসায়।বাহ্যিক বেশভূষা ও বিদেশিদের মতো চেহারা দেখে বেশ লেগেছিল মেয়েটির।কাছেপিঠে তাই ঘুরঘুর করছিলো।তখন অ স্ত্র পাচারের বিষয়টি জেনেছে।বাবার সাথে এই নিয়ে তুমুল ঝ গ ড়া লাগলে একসময় সে পু লি শ কে সব জানানোর কথা বলে।নাবার বাবা সোহান বিষয়টি এরোনকে জানালে গতকাল তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।নিজের বাবার এহেন হীন আচরণে ক্ষত বিক্ষত হয়ে গিয়েছে ছোট্ট নাবার মন।তাইতো চোখের জলের আজ কোনো বাঁধা নেই।ভেবেছিল ম রে গিয়েছে।কিন্তু রাত দুটোয় চোখ খোলার পর পাশে কাফি নামক তরুণের দেখা মিললো।এখনও জানেনা কী হবে তার সাথে।
গতকাল চলে যাওয়ার কথা থাকলেও মেহরী আজই চলে যাচ্ছে।ফোনে একটু আগে এরোনের ম্যাসেজ এসেছে।তাকে চট জলদি ট্রেন স্টেশনে ব্যাগ নিয়ে চলে যেতে বলেছে।আজ তারা ঢাকায় ফিরবে একসাথে।আলোর থেকে বিদায় নিয়ে রিক্সায় করে স্টেশনের সামনে এসে থামলো মেহরী।ভাড়া মিটিয়ে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনে উঠলো সে।তাকে একটি কেবিনে যাওয়ার নির্দেশ করা হয়েছে।নিজেকে কেমন বন্দি পাখির মতো লাগছে মেহরীর।এরোনের সবকথা মেনে নিচ্ছে শুধু একটা কারণে।আর সেটা হলো শাওন।
গতকাল রাতে বাড়ী ফেরার সময় এরোন তাকে জানিয়েছে ভিক্টোরিয়ার খোঁজ মিলেছে আর সেটা শাওনের কাছে আছে।যদি তার কথামতো না চলে তাহলে শে ষ করে দিবে স্পর্শিয়া সহ।মেহরীর মনে বাস করা রিচি একথা কখনো বিশ্বাস করতো না যদি এরোন তাকে ছবি দেখাতো।যেখানে ভিক্টোরিয়ার সাথে শাওন আছে।তখুনি তার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে।এর মানে তার নিকট যেটা আছে সেটা নকল ভিক্টোরিয়া।স্পর্শিয়াকে সে ভীষণ ভালোবাসে।আপনজনের প্রতি এই দায়বদ্ধতার কারণে এরোনের শর্ত মেনে নিয়েছে।বেশী কিছু না শুধু ছয়টা মাস এরোনের সাথে সাথে থাকতে হবে তার।ছেলেটা নাকী এতে সংযম শিখবে।মেহরীকে দেখে মনে ভ য়ং ক র চিন্তা ভাবনার উত্থান ঘটে বলে।কেবিনের কাছটায় এসে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো মেহরী।রাফসানের থেকে বিষয়টা গোপন থাকবে সেই আশ্বাস দিয়েছে ছেলেটা।দরজা ধাক্কা দিতে যাবে তখন ভেতর থেকে এরোনের গলার সুর পেলো।
ইংরেজিতে কাওকে বলছে,
"মাত্র ছয় মাস।এরপর তো চলে আসবো তোমাদের কাছে সব ছেড়ে।এই সময়টা নিজের বাবার সাথে শান্তিতে থাকতে দাও।আর হ্যাঁ রাফসানকে কখনো কল দিবেনা।ও জানেনা আমি আপন ভাই হই ওর।"
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার বাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শখের বশে লিখালিখি করলেও ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি বই এবং ইবুক প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।তরুণ এই লেখিকা সম্পর্কে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন