উপন্যাস       :        তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান - Bangla Golpo - Kobiyal - কবিয়াল
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

1111111111111111111111

২৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ২৬)

নূর মেহরাব আরাফ একটা জংগল এর কাছে এসে পৌছায়।জংগল থেকে অদূরে রাতের আধারে ঝাপসা ঝাপসা একটা রাজপ্রসাদ দেখা যাচ্ছে।আরাফ নূরকে রেখেই মেহরাব রাজপ্রসাদটার দিকে এগিয়ে যায়।
আরাফঃআমরা এখানে এসে কোনো ভুল তো করি নাই?
নূরঃজানিনা বাবাই।হয়তো মেহের এর শক্তি গুলো আবারো সক্রিয় হচ্ছে।আমাদের উনার সাথেই  থাকতে হবে।
আরাফঃহুম।

নূর এগিয়ে যেয়ে মেহরাব এর হাত ধরে। হাত ধরতেই মেহরাব কেপে উঠে।নূর খেয়াল করে মেহরাব এর চোখ দুটো নীল বর্ন ধারন করা ছিলো।নূর এর হাত ধরতেই মেহরাব স্বাভাবিক হয়ে যায়।

মেহরাবঃনূরপাখি।আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এতো সুন্দর রাজ্যের রাজা আমি।
আরাফঃআমাদের বেশীক্ষন বাইরে থাকা ঠিক হবে না।তাড়াতাড়ি ভেতরে চলো।
মেহরাব নূর আরাফ লুকিয়ে রাজ প্রসাদে প্রবেশ করে।প্রাসাদে ঘুরতে ঘুরতে নবনিকে যে ঘরে রাখা হয়েছিলে সেটার কাছে চলে আসে তারা।
আরাফঃএই রুমটাতে তোমার আম্মুকে রেখেছিলো।
নূরঃওয়াও। খুব সুন্দর তো ঘরটা।

মেহরাবঃশিইইসস।কারো পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
সবাই লুকিয়ে পড়ে।আর পরি আসে সেখানে।
পরিঃমনে হলো কেউ এসেছে এখানে!কিন্তু এখানেতো সাধারন কোনো জ্বীন প্রবেশ করতে পারবে না।আমি হয়তো আরাফ নবনির চিন্তায় একটু বেশিই ভাবছি।আমার মেহরাব এর খোজ নিতে হবে।আজকে তো ওর ২২ বছর হয়ে গিয়েছে।

পরী পৈশাচিক হাসি দিয়ে নিজের রুমের আয়নার সামনে যেয়ে দাড়ালো।তারপর আয়নায় হাত রাখতেই আয়নার মধ্যে এক জন নীল হুডি পড়া লোকের চেহারা ভেসে উঠলো।লোকটার চেহারা ঠিকমতন দেখা যাচ্ছে না।

নূর কিছু বলতে নিলে মেহরাব মুখ চেপে ধরে।আরাফ চোখ দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে।
পরিঃকি অবস্থা ওখানের?মেহরাব আদ্রিতা কোথায়?এই শুক্রবারেই মেহরাবকে শয়তান রাজ্যের সিংহাসনে বসতে হবে।ওর ভিতরের শয়তানি শক্তি জাগ্রত করতে হবে মনে আছে তো?
_হ্যা।সব মনে আছে আমার।জান আমার।
পরি উচ্চস্বরে হেসে দিলো।

পরিঃকেউ ভাবতেও পারবে না।তুমি এত বছর ওদের মাঝে থেকেও আমাকে সাহায্য করেছো।কিন্তু কেন?কেন তুমি মেহরাবকে ঠকাচ্ছো??মেহরাবতো তোমার খুব কাছের। 
_আমি মেহরাবকে না আরাফাত চৌধুরীকে ঠকিয়েছি।তার সাথে শত্রুতা খুব পুরানো তো তাই।আর বাকি রইলো মেহরাব। মেহরাব আজও আমার খুব কাছের। এজন্যই তো আমি চাই মেহরাব রাজা হউক।

পরিঃতোমার মতো মাস্টার মাইন্ড আর একটাও নেই।তুমি নিজের স্ত্রীকে পযর্ন্ত ঠকিয়েছো।আমার সাথে সর্ম্পক রেখে সন্তান পর্যন্ত এনেছো দুনিয়ায়।আর সেই সন্তানকে আরাফ নবনির হাতে বড় করেছো।হা হা হা।
_আরাফাত চৌধুরীর কাছে আমার সন্তানকে রাখার কারন ছিলো কোনোদিন যদি আরাফ নবনি জানতে পারে বাচ্চাটা তোমার তখন কোনো কিছুই করতে পারবে না।কারন ততদিনে সেই বাচ্চার প্রতি তাদের মায়া জন্মে যাবে।

আর আমার স্ত্রীতো আমাকে তা দিতে পারে নাই যা তুমি দিয়েছো।তুমি আমার কষ্ট গুলো বুঝেছো।আমার সকল প্রয়োজন পূরন করেছো।আর ও সব সময় আমাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে রাখতো আর তুমি আমাকে কতো ভালোবাসো।আমি কি আর তোমাকে রেখে ওর কাছে যেতে পারি বলো।

আর ওই মেয়ে তো এত বোকা যে তোমার আর আমার সন্তানকে নিজের মনে করে এতো বছর লালন পালন করেছে।কিন্তু সত্যতো তো এটা আমাদের মরা বাচ্চা হয়েছিলো।তুমি মরা বাচ্চাকে সরিয়ে তোমার আর আমার সন্তানকে রেখেছিলে।

পরিঃহ্যা।কারন আমি চেয়েছিলাম ও মেহরাব এর কাছে চলে আসে।আমার সন্তানকে এইবার আমার কাছে ফিরতেই হবে।
_হুম।আচ্ছা পরে কথা বলি।আমার বোকা স্ত্রীটা চলে আসবে এখনই।
পরিঃএতো ভয় পাও নাকি ওকে?
_না।কিন্তু শেষ মূহুর্তে এসে আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না।
পরিঃআচ্ছা।কিন্তু আমার সাথে দেখা করে যেও।মিস করছি খুব।
_তোমার কাছেই তো ছিলাম এতো দিন।১ ঘন্টা হলো  বাসায় আসলাম আবার ডাকছো।এতো মিস করছো?
পরিঃআচ্ছা যাও যাও। তোমার স্ত্রী এসে পড়বে।
_হুম।
পরী আবারো আয়নাতে হাত রাখতে আয়নাটি স্বাভাবিক হয়ে গেলো।

পরীঃবোকা তোমার স্ত্রী না বোকা তো তুমি।তোমাদের মরা বাচ্চা হয় নাই আমি মেরে ছিলাম সেই বাচ্চাকে।কারন আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম এই বাচ্চার জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো আমি আরাফকে হারিয়েছি তোমাকে হারাতে পারতাম না।তাই তোমার বাচ্চাকে মেরে ফেলি।আর আমার আর তোমার বাচ্চাকে তোমার স্ত্রীর কাছে দিয়ে দেই।যাতে এই বাচ্চা বড় হলে মেহরাবকে বশ করতে পারে।আর বাচ্চাটার কেন মেহরাব এর কাছের হতে হবে তা কারন ডায়রির শেষ পাতাটায় ছিল।যা আমি সেই রাতে তোমার কাছে হাসিল করে নিয়েছিলাম যেই রাতে তোমার সাথে আমার শারীরিক সর্ম্পক হয়।তোমার সব থেকে কষ্টের সময় আমি তোমার পাশে দাড়াই আর তুমি আমার মায়ায় পড়ে তোমার স্ত্রীর সাথে প্রতারনা করো।

এতো দিনের করা সমস্ত প্ল্যান সফল হওয়ার সময় এসে পড়েছে।শুক্রবারে সব ঠিক মতো হলেই হলো।
পরি লাইট অফ করে ঘুমাতে চলে গেলো।কিছুক্ষন পরী ঘুমাতেই অন্ধকার এর মাঝে পা টিপে টিপে নূর মেহরাব আরাফ বেড়িয়ে আসলো।
আরাফ মেহরাব নূরকে নিয়ে নবনিকে যেই রুমে রাখা হয়েছিলো সেখানে যেয়ে দরজা আটকে দেয়।

আরাফঃ রাজপ্রসাদে এই রুমটাই শুধু নিরাপদ।মেহরাব অনেক দোয়া কালাম পড়ে রুমটা বন্ধ করেছিলো।যাতে নবনির পর্দায় কেউ ব্যাঘাত না ঘটাতে পারে।এই কথাগুলো এজন্য বললাম কারন নূর সে সময় কথা বলতে যাচ্ছিলে।জ্বিন পরিদের শ্রবনশক্তি সাধারণ মানুষ থেকে তীব্র।ওই সময় আমরা কথা বলায় পরি টের পেয়ে যায় যে রাজপ্রাসাদে কেউ আছে।পরীর রুমে থাকাকালীন যদি তুমি কথা বলে ফেলতে আমরা ধরা পড়ে যেতাম।
মেহরাবঃকিন্তু আব্বু আমাদের মাঝে পরীর সন্তান কে?
নূরঃআর না জানি কার স্বামী তাকে এতো বাজে ভাবে ঠকালো।
আরাফঃযেই করেছে সে আমার শত্রু।আমার সাথে প্রতিশোধ নিতে এতগুলো জীবন নিয়ে খেলছে।আমি ভাবছি ওই বাচ্চাটার কথা যে এতো বছর এক মার কাছে বড় হয়েছে কিন্তু বাস্তবে তার মা পরী।ওর মন এর উপর দিয়ে কি যাবে।
মেহরাবঃআব্বু।তোমার কাছে বড় হওয়ার সন্তানগুলো তো নূর তিথি আদ্রিতা।আবার আমি আর আদ্রিয়ান ও হতে পারি।কারন আমি আর আদ্রিয়ান দেশের বাইরে ছিলাম ৪ বছর কিন্তু বাকিটা সময় তোমার কাছেই বড় হয়েছি।তাহলে আমাদের মাঝে পরির সন্তান কে হতে পারে?

আরাফঃজানি কোথায় আছে এই সকল প্রশ্নের উত্তর।এখন শেষ আশা ঐ ডায়রিটা যেটা নবনি আনতে গিয়েছে।কারন পরির কথা মতো ডায়রির শেষ পাতাতে লিখা আছে কেন ওই বাচ্চাটার তোমার কাছের হতে হবে।
মেহরাবঃআমার কাছের তো সবাই।না জানি কার সংসার ভাংতে চলেছে।
নূরঃবাবাই পাতাটা যদি এতো জরুরি হয় তাহলে পরী সেটা আগের জায়গায় কেন রাখবে?সেটা তো এখানে কোথাও থাকার কথা।
আরাফঃহ্যা।ঠিক বলেছো।আমাদের এখানে ডায়রিটা খোজা দরকার।হতেই পারে ডায়রিটা এখানে কোথাও।
মেহরাবঃকিন্তু আমরা খুজবো কি করে?পরী টের পেয়ে গেলে?
আরাফঃতোমরা খুজো।পরিকে আমি হ্যান্ডেল করছি।
মেহরাবঃকিন্তু আব্বু!!
আরাফঃহয়তো এই পার আর নাইলে ওই পার।কোনোভাবে শয়তানকে জিততে দেয়া যাবে না।নূর মেহরাব এর সাথে থেকো।
নূরঃআচ্ছা।বাবাই।নিজের খেয়াল রেখো।
আরাফ মুচকি হেসে বেড়িয়ে গেলো।
নবনি আদ্রিতা আরিয়ান আরাফের বড় দাদুর সারা ঘড় তন্নতন্ন করে খুজেও ডায়রিটা পায় নাই।

নবনিঃএটা কি করে সম্ভব?ডায়রি কোথায় যেতে পারে?
আরিয়ানঃআমার মনে হয় আমাদের বাকি ঘর গুলো চেক করা উচিত।
আদ্রিতাঃআম্মু।আমার মধ্যে ও তো শক্তি আছে।তাহলে আমি কি ডায়রিটা খুজতে পারবো না?
নবনিঃহ্যা।এভাবে তো ভাবি নাই। আমি তোমার হাতে তজবিরটা খুলতে যাচ্ছি আদ্রিতা।নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রেখো।
আদ্রিতাঃহুম।

নবনি তজবির খুলতেই আদ্রিতার চোখ গুলো গাড়ো  নীল আকার ধারন করলো।গায়ের রং আগের থেকেও উজ্জ্বল হয়ে গেলো।ঘন কালো চুল গুলো কোমরের নিচ পর্যন্ত ছড়ালো।
আরিয়ান হা করে আদ্রিতাকে দেখছে।
আদ্রিতা চোখ বন্ধ করে ডায়রিটা  খুজতে লাগলো।খুজতে খুজতে ডায়রিটা অন্য রুমে পেলো।
নবনিঃএই রুমে তো কেউই আসি নাই কখনো। ডায়রিটা এই রুমে কি করে আসলো?
আরিয়ানঃআম্মু ডায়রিটা খুলেন।
নবনি সাথে সাথে ডায়রি খুলে চেক করতে লাগলো।ডায়রিটা শেষ পাতা দেখে নবনি আশ্চর্য হয়ে গেলো।

আদ্রিতাঃকি হয়েছে আম্মু?
নবনিঃএই পাতা আগে ছিলো না।আমি যখন পড়েছিলাম তখন এই পাতা ছিলো না।
আরিয়ানঃতাহলে এখন কি করে আসলো?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন