উপন্যাস       :        তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

৩৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৩৭)

আশমিন ঘুমিয়ে পড়েছে। নেহা আশমিনকে আদ্রিতার রুমে রাখা দোলনায় শুইয়ে কপালে চুমু খায়।তারপর রান্নাঘরে যেয়ে এক কাপ কফি বানায় মেহরাব এর জন্য।
নেহাঃবানিয়ে তো ফেললাম।এখন এটা মেহরাব চৌধুরীকে দিতে হবে।ইয়া আল্লাহ রক্ষা করো।

নেহা দোয়া কালাম পড়ে মেহরাব এর রুমে দিকে পা বাড়ায়।মেহরাব চোখ বুঝে বিছানায় শুয়ে আছে।
নেহাঃআসবো?
মেহরাবঃনা।চলে যান।
নেহাঃকফিটা নিন। চলে যাচ্ছি।
মেহরাবঃআই ডোন্ট নিড দিস।গো ব্যাক।
নেহা মেহরাব এর রুমে ঢুকে পড়ে।

নেহাঃশুনেন আপনার এসব না নক্কর শোনার জন্য আমি এই চাকরিতে আসি নাই।আমার কাজ আমাকে করতে দিন।আর আমি এতো কষ্ট করে বানিয়েছি ফেলে দেয়ার জন্য?
মেহরাবঃফেলবেন কেন?আপনি খেয়ে নিন।
নেহাঃএটা ব্ল্যাক কফি।আমি ফ্ল্যাট ওয়াইট খাই।

মেহরাব চোখ বড় বড় করে নেহার দিকে তাকালো।নূর এর ফেভারিট কফিও ফ্ল্যাট ওয়াইট ছিলো।

মেহরাব ব্ল্যাক কফি খেতো বলে নূর মেহরাবকে ব্ল্যাক মেহের বলে ডাকতো।আর মেহের বলতো ফর্সা একটা ছেলেকে ব্ল্যাক ডাকলে জাতি মানবে না।নূর এটা শুনলে খিলখিল করে হেসে দিতো।


আগের দিনগুলো মনে করে মেহরাব এর মুখে হাসি ফুটলো।মেহরাব নেহার কাছে থেকে কফির কাপটা নিয়ে নিলো।নেহা চলে যেতে নিলে মেহরাব ডাক দেয়।
মেহরাবঃআপনি কি করে জানেন আমি ব্ল্যাক কফি পান করি?

নেহার ব্রেনটাতেও জম ধরলো।কারন সে নিজেও জানে না ও কেন এই কফি বানিয়েছে।আর তার থেকে বেশি যে জিনিস নেহাকে ভাবতে বাধ্য করেছে তা ছিলো রান্নাঘরে কফি পাউডার রাখার জায়গাটা নেহা খুব ভালো করে চিনে।কিন্তু কি করে চিনলো।কারন নেহা তো এখানে এর আগে কখনো আসে নাই।

নেহা নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখলো।কারন এগুলো মেহরাবকে বললে মেহরাব তাকে চাকরি থেকে বের করে দিতে পারে যা নেহা  কখনোই চায় না।একতো টাকার প্রয়োজন তারপর আশমিনকে ছেড়ে যেতে পারবে না।বাচ্চাটা নেহার মনে ওতোপ্রোতো ভাবে জায়গা করে নিয়েছে।

নেহাঃআদ্রিয়ান স্যার বলছিলো।
মেহরাবঃওহ।আচ্ছা শুনেন।আমার রুমের বাম দিকে কর্নারের রুমটা গেস্ট রুম।আপনি সেখানে যেয়ে বোরখা খুলে নামায পড়তে পারবেন।
নেহাঃধন্যবাদ।আমি বলতে চেয়েছিলাম যে আমি একটু নামায পড়বো কিন্তু সাহস করতে পারি নাই।

মেহরাবঃপারবেন কি করে?ভালো কাজে সাহস হয় না আর আজাইরা কাজে ঠিকই কেচির মতো মুখ চলে।
গেট আউট নাউ।
নেহা মাথা নিচু করে চলে গেলো।


নেহা যেতেই মেহরাব কফিতে চুমুক দেয়।কফির টেস্ট একদম নূরের মতো।মেহরাব চমকে যায় উঠে।নিজের সন্দেহ দূর করতে মেহরাব আর এক চুমুক দিবে তখনই ইম্পটেন্ট কল আসে।মেহরাব ফোন নিতে যেয়ে কফিটা পাশে বেডে রাখে।মোবাইলে কথা বলতে বলতে মেহরাব এর হাত লেগে কফিটা পড়ে যায়।
মেহরাবঃওহ শিট শিট শিট।এটা কি হলো ধ্যাত।

কফিটার টেস্ট নূরের মতো ছিলো।আমার আবার টেস্ট করে কনফর্ম করা হলো না।ড্যাম।
নেহার হাতের কফি কেন নূরের মতো হবে?আজকে সকাল থেকে নেহা আমাকে এতোটা পাগল করে দিয়েছে নূর এর জায়গা দখল করে করে যে এখন ওর কফিতেও আমি নূরকেই দেখছি।মাথাটাই নষ্ট হয়ে গেছে আমার।

আমার আসলে ঘুমের প্র‍য়োজন।কিন্তু বেডতো নষ্ট হয়ে গেলো।আদ্রিতার রুমে চলে যাই।
মেহরাব আদ্রিতার রুমে যেয়ে শুয়ে পড়ে।নেহা চোখের মোটা ফ্রেমের চশমা নিকাব হিজাব খুলে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।

নেহাঃকতো কঠিন সারাদিন বোরখা পড়ে থাকা।সব এই মেহরাব চৌধুরীর জন্য।উনি না থাকলে আমি পুরো বাসায় বোরখা ছাড়াই ঘুরতে পারি। আদ্রিয়ান স্যারও বলছিলো কেউ থাকবেনা।আর এখন আসতেনা আসতেই মেহরাব চৌধুরীর বাসা ফেভারিট হয়ে গেলো।যাচ্ছেই না বাইরে।


তাও আল্লাহ কম সেন্স দিয়েছে উনার মধ্যে। এই জন্য এটলিস্ট একটা গেস্ট রুম অফার করেছে আমাকে।
এখন থেকে এখানেই বোরখা নিকাব খুলে নামায পড়ে নিবো।

নেহা নামায আদায় করে বোরখা নিকাব আর চশমাটা পড়ে নিলো।তারপর আশমিন এর কাছে গেলো।
আদ্রিতার রুমে মেহরাবকে দেখে চমকে যায় নেহা।মেহরাব বেঘোর ঘুম।নেহা আর সেখানে এগোয় না।দুপুরের রান্না করতে চলে যায়।

আদ্রিয়ান তিথির সাথে কক্সবাজারের একটি নামকরা হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
তিথিঃতোর এখনও মনে আছে? 
আদ্রিয়ানঃহুম।
তিথিঃসিরিয়াসলি আদ্রিয়ান। আমি নিজেও ভুলে গিয়েছি।

আদ্রিয়ানঃতুই তো কত কিছুই ভুলে গেলি তিথিপাখি।কিন্তু আমার সব মনে আছে।আমার স্পষ্ট মনে আছে এই কিছুদিন আগেই তুই আমাকে বলেছিলি হানিমুনে কক্সবাজার এ নিয়ে আসতে হবে তোকে।
তিথিঃকিছুদিন না ৩ বছর আগে।


আদ্রিয়ানঃওই একই। আমি তো এখনো ৩ বছর আগের সময়টাতেই আটকে আছি।ঠিক আগের মতো। কিন্তু তুই আমাকে রেখেই ৩ বছর এগিয়ে গেলি।তাই না?
তিথিঃএমনটা না।তুই আমাকে কেন মিথ্যে বলে গিয়েছিলি?তুই তো যাওয়ার সময় বলেছিলি ২ বছরেই ফিরে আসবি।তাহলে আসলি না কেন?
আদ্রিয়ানঃআসার মতো সিচিউশনে ছিলাম না আমি।

মিশন সাকসেসফুল হয়েই গিয়েছিলো আমাদের যেই আসতে নিবো তখনই মিরাকে ওরা বন্দি করে ফেলে।

মিরার বদলে তারা আমাকে দাবী করে।কারন আমি আর্মীর ক্যাপ্টেন হিসেবে লিড দিচ্ছিলাম।আমাকে পেলে আমার মুখ থেকে দেশের অনেক গোপন তথ্য বের করতে পারবে তারা।
তিথিঃমিরা কে?

আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো।
আদ্রিয়ানঃমিরা খুবই চঞ্চল আর দুষ্ট একটা মেয়ে।কানাডা থেকে ঘুরতে এসেছিলো জাফলং এ।সাহস দেখিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বর্ডার এর কাছ চলে আসে।আর শত্রুর কাছে ধরা পড়ে।যেহেতু বাংলাদেশি ছিলো শত্রুরা তাকে বন্দী করে নেয়।
তিথিঃতাতে তোর কি?তুই কেন যাবি?

আদ্রিয়ানঃআমি যাবো না মানে!একজন আর্মী হয়ে নিজের জীবন বাচাতে সাধারন মানুষ এর ক্ষতি কি করে হতে দিতাম?আমি রাজি হয়ে যাই তাদের প্রস্তাবে।


তারা আমাকে পেয়ে কথামতো মিরাকে ছেড়ে দেয়।ছেড়ে দেয়ার আগে মিরার সাথে আমার ৫ মিনিট কথা হয়েছিলো।তখনই এতটুকু জানলাম যে সে বন্ধুদের সাথে বাংলাদেশ ভ্রমন করতে এসে বিপদে পড়েছিলো।
তারপর ও চলে যায়।আর আমি আটক হয়ে যাই।

তিথিঃমেয়েটা কত স্বার্থপর।নিজেকে বাচাতে তোকে বিপদে ঢেলে দিলো।
আদ্রিয়ানঃনা রে।ও স্বার্থপর ছিলো না।ও বার বার আমাকে বলছিলো আমি যাতে এমনটা না করি।ওকে ওখান থেকে একপ্রকার জোর করেই পাঠিয়েছিলাম আমি।যাওয়ার পথে তার চোখে অনুশোচনা দেখেছিলাম আমি।

তিথিঃতোর দরদ উতলে পড়ছিলো ওর প্রতি?
আদ্রিয়ানঃওকে নিয়ে যাওয়ার পর শত্রুরা আমাকে অনেক টর্চার করে।আমার সারা গায়ে 
তিথিঃআমি আর কিছুই শুনতে চাই না।তোর উপর।যা অত্যচার ওরা করেছে তা তোর প্রাপ্য ছিলো। কি দরকার ছিলো মহান হওয়ার?

একটক বার ও ভাবলি না তুই না ফিরে আসলে আমার কি হবে?
তোকে বিয়ে করাটা আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিলো।

তিথি কথাটা বলে চলে যায়।আর ফিরেও তাকায় না আদ্রিয়ান এর দিকে।তাকালে হয়তো আদ্রিয়ান এর চোখে ছলছল করা পানিটা দেখতে পেতো।

আদ্রিয়ানঃশেষ কথাটা না বললেও পারতি তিথি।আমি তো তোকে জোর করি নাই বিয়ে করতে তুই আমাকে জোর করে বিয়েটা করেছিলি। আর এখন আফসোস করছিস তা নিয়ে। (মনে মনে)

আদ্রিয়ান লম্বা একট দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
রান্নার কাজ প্রায় শেষ তখনই আশমিন জেগে কান্না করতে থাকে।নেহা চুলা অফ করে আশমিনের কাছে ছুটে যায়।আশমিনের কান্নার শব্দে মেহরাব এর ঘুম ভেঙে যায়।মেহরাব চোখ কচলাতে কচলাতে আশমিনকে কোলে নেয়।মেহরাবকে দেখে আশমিন শান্ত হয়ে যায়।
নেহা যেয়ে দেখে ঘুম পুরা না হওয়ায় মেহরাব এর চোখমুখে বিরক্তি ফুটে উঠেছে।মেহরাব আশমিনকে নিয়ে হাটাহাটি করছে।


নেহাঃসরি।আমাকে দেন।আপনি ঘুম পুরা করেন যেয়ে।
মেহরাবঃআসার পর থেকে একটা সেকেন্ড শান্তি দিলেন না আপনি আমাকে।ঘুমটাতো ভেঙেই গেলো এখন আর কি করে ঘুমাবো?
নেহাঃআমি তো আশমিনকে ওর রুমেই রেখেছিলাম।আপনি নিজের রুম ছেড়ে এখানে কেন আসলেন?
মেহরাবঃসব কিছুতে আপনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে? স্টুপিড।
মেহরাব আশমিনকে নেহার কোলে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন