উপন্যাস : তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ
লেখিকা : মাধুর্য মাধুরী
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা মাধুর্য মাধুরীর “তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১৬ই নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ || মাধুর্য মাধুরী |
1111111111111111111111
১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ || মাধুর্য মাধুরী (পর্ব - ০২)
সামনে থেকে পান পাতাটা সরাতেই আরণ্যার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো আর্য। বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথিরা ততক্ষনে কানাকানি শুরু করে দিয়েছে। কীভাবে যে আরণ্যাকে আর্যর বাড়ি থেকে পছন্দ হল সেটাই সবার মূল আলোচনার বিষয়। আরণ্যার মুখশ্রী সাধারণ, তার উপর গায়ের রং কালো। আরণ্যা যে অমন বড়োলোক বাড়ি শশুরঘর করবে, সেটাই পাড়ার মহিলাদের হিংসার কারণ হয়ে উঠলো। একে তো তারা সবে সবে বাড়ি ভাড়া নিয়ে এসেছে এই এলাকায়, তার উপর এসেই মেয়েকে সুপাত্রস্থ করতে পেরেছে। আর্যর মুখ ফিরানো দেখে আরণ্যার চোখগুলো টলমল করে ওঠে। দাঁতে দাঁত চিপে কান্নাটা গিলে নেয় সে। নিজের একান্ত আবেগ কাউকে দেখাতে চায় না আরণ্যা। কিছুটা নিজের মাঝেই লুকিয়ে রাখা ভালো। আরণ্যার সন্দেহ হয়, আর্য কি তবে তাকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেনি? প্রশ্নগুলো ভিতরে দলা পাকিয়ে ওঠে। নিজের লাইফ পার্টনার নিয়ে কতো শত স্বপ্ন ছিল তার। আর্য কি তার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারবে? আদৌ সে কি পূরণ করার দায়ভার নিতে চাইবে?
সিঁদুরদান শেষ হতেই আর্য হয়ে যায় একান্তই আরণ্যার। আরণ্যা লজ্জায় লাল হয়ে আর্যর পাশে বসে থাকে। সে আশা করেছিল, আর্য হয়তো তাকে একটা বাহু দিয়ে আগলে ধরবে। সে আর্যর বুকে মাথায় গুঁজে তার লজ্জা লুকোবে। কিন্তু আর্য তেমন কিছুই করলো না। সিঁদুরদান শেষেই সে উঠে গেলো ফোন হাতে নিয়ে। আরণ্যা দেখলো এক কোণে দাঁড়িয়ে সে এতক্ষনে কারোর সাথে ফোন কলে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। নববধূর দিকে কোনো খেয়ালই নেই তার। আরণ্যা আবারও উঠে আসা কান্নাটাকে গিলে নেওয়ার চেষ্টা করলো।
বাসর রাত্রে আর্য বাসর জাগার জন্য রুমে কাউকে এলাউ করলো না। আরণ্যার ছোটো ছোটো বোন গুলো মুষড়ে পড়লো। তাদের ভীষণ ইচ্ছা ছিল আর্যর সাথে আলাপ করার। আর্য রুমের দরজা আটকে আরণ্যার দিকে ফিরে বলল,
-'আমার আসে-পাশে ঘুরঘুর করে নিজেকে আমার স্ত্রী প্রমান করার করার চেষ্টা করবেন না। নিশ্চই এতক্ষনে বুঝতেই পেরেছেন, বিয়েটা আমার নিজের ইচ্ছাতে হয়নি। বাবা-মা'র চাপে করতে বাধ্য হয়েছি। আমার স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আপনার স্ট্যান্ডার্ড ম্যাচ করে না। আমি আপনাকে এখনো আমার বেটার-হাফ বলে ভাবতেই পারছি না! সো, কিপ্ আ কোয়াইট ডিসটেন্স ফ্রম মি!'
আরণ্যার এতক্ষনের চেপে রাখা কান্নাটা যেন হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসতে চাইলো। আর্য ব্যালকনিতে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াতে লাগলো। আরণ্যা ওভাবেই শুয়ে পড়লো বিছানায়। উপুড় হয়ে শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। বিড়বিড় করে উঠলো,
-'আপনাকে আমি ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নেবো আর্য। এমন একদিন আসবে, যেদিন আপনি আমাকে ছাড়া আর কিছুই বুঝবেন না। আমার বিহনে দম বন্ধ হয়ে আসবে আপনার। এটা আরন্যার নিজের কাছেই নিজের চ্যালেঞ্জ।'
স্নান সেরে ব্যালকনিতে তোয়ালে মেলতে এসে আরণ্যা দেখে আর্য সেখানে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। ইজি চেয়ারটা হালকা দুলছে। মুখ দেখে মনে হচ্ছে, এনার মত ভালো মানুষটি আর দ্বিতীয় হয় না। হালকা সোনালী রোদের ঝাপটা এসে পড়েছে তার চোখে-মুখে। তবুও সে ঘুমিয়েই আছে। আরণ্যা আরও একবার প্রেমে পড়ে গেলো আর্যর। মুচকি হেসে ব্যালকনির পর্দাটা লাগিয়ে রোদটা আড়াল করে দিল।
চোখ মেলে তাকাতেই আর্য বুঝতে পারলো, সে ব্যালকনিতেই পুরো রাতটা কাটিয়ে দিয়েছে। ধীরে ধীরে উঠে ফ্রেশ হয়ে আর্য রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আরণ্যার রুমেই তাদের বাসরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঘরের প্রতিটা আনাচে-কানাচে তার স্পর্শ লেগে। এই রুমে আর এক মুহূর্তও থাকতে চায় না আর্য।
আরণ্যার কণে বিদায়ের সময় মা'কে জড়িয়ে ধরে কান্না দেখেও দেখলো না আর্য। এসব কিছুই তার ঢং মনে হচ্ছে। এরকম চিপ ফ্যামিলির মেয়েদের সবটাই লোক দেখানো। বড়োলোক ছেলেদের গলায় ঝুলে পড়াই এদের একমাত্র উদ্দেশ্য।
আরণ্যার বাবা মেয়ের হাত'টা ধরে আর্যর হাতে তুলে দিলেন।
-'বাবা, আমার একটা মাত্র এই মেয়ে। খুব আদর-যত্নে বড়ো করেছি। ফুলের টোকাও পড়তে দিইনি ওর গায়ে। তুমি ওকে একটু দেখে রেখো। তোমার ভরসাতেই ওকে আজ তোমার জন্য ছেড়ে দিলাম।'
আর্য ভদ্রতামূলক একটু হেসে গাড়িতে উঠে পড়লো, আরণ্যাকেও ওর পাশে উঠিয়ে দেওয়া হল। গাড়ি চলতে আরম্ভ করলো। বাঁকটা ঘুরতেই গাড়ি সবার চোখের আড়ালে চলে গেলো।
গাড়িটা আড়াল হতেই আরণ্যার বাবা হালকা হেসে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলেন,
-'তোমার লক্ষ্যে তুমি সফল হও মা।'
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মাধুর্য মাধুরী তার সামাজিক মাধ্যম প্রফাইলে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন - “নিজেকে প্রকাশ করতে চাই না। পৃথিবীর সব রহস্যের মধ্যে আমি অধিকতর রহস্যময়।” এছাড়া তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন