উপন্যাস : তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ
লেখিকা : মাধুর্য মাধুরী
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা মাধুর্য মাধুরীর “তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১৬ই নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ || মাধুর্য মাধুরী |
1111111111111111111111
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ || মাধুর্য মাধুরী (পর্ব - ০৩)
ফুলসজ্জার পর আজ তিন দিন কেটেছে। আর্য প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা কথা বলেনি আরণ্যার সাথে। তাকে বিছানায় শোওয়ার অনুমতিও দেয়নি। ঘরের সাথে লাগোয়া লাইব্রেরি রুমে যে সিঙ্গেল বেড আছে, আরণ্যা সেটাতেই শোয়। বাবা-মা'র সাথে আর্যকে বিশেষ কথা না বলতে দেখে বেশ অবাকই হয়েছে আরণ্যা। এই বাড়িতে যেন নিঃশব্দে সবার মধ্যে একটা ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে। শশুর-শাশুড়ি যথেষ্ঠ অমায়িক, প্রায় আপন করে নিয়েছে আরণ্যাকে। বিশাল বড়ো এই বাড়িটার তেমন কোনো কাজই করতে হয় না তাকে। শুধু আর্যর অজান্তেই তার সকালবেলার কফিটা করে সে। কফি করে কাজের মেয়েটার হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেয় উপরের ঘরে। সময়টা তার কেটে যায় লাইব্রেরির হাজারো বইয়ের পাতার ভাঁজে।
আর্য সকাল-সকাল বেরিয়ে যায়, ফেরে সেই রাতের বেলা। অফিসে তার হাজিরা পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু সেটা সাময়িক। বাকি সময় যে কোথায় থাকে, কেউ জানে না। অফিসের বস হওয়ার জন্য কেউ তাকে কৈফিয়ত চাওয়ার সাহস করে না। বেশ মেজাজি মানুষ সে।
আর্য আজ বাড়ি ফিরেছে বেশ তাড়াতাড়ি। এসেই হুকুমনামা জারি করেছে, রাতে বাড়িতে তার কিছু বন্ধু-বান্ধবী আসবে। বিয়েতে আসতে না পারার কারণে আজ আর্যর বউয়ের সাথে আলাপ করবে তারা। আরণ্যা যেন রেডি হয়ে থাকে। সোফায় একটা শপিং ব্যাগ ফেলে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায় সে। চিৎকার করে বলে দেয়,
-'জয়া, উনাকে ড্রেসটা পড়ে ইভিনিং -এ রেডি থাকতে বলো। আমার কথার যেন নড়চড় না হয়।'
আরণ্যা ব্যাগ খুলে দেখলো, ভিতরে একটা নীল রঙের ডিপ নেক পার্টিওয়্যার ড্রেস। তার এসব পড়ার অভ্যাস নেই। ড্রেসটা লাইব্রেরি রুমে গিয়ে লাগেজে তুলে রেখে সে রান্না ঘরে গিয়ে ঢুকলো।
সন্ধ্যাবেলা আর্যর সাত জন বন্ধু আর দু'জন বান্ধবী এলো। আর্য হেসে হেসে তাদের ওয়েলকাম করলো। ব্যালকনি থেকে আর্যকে দেখে আরণ্যা তো অবাক। আর্য এমন সুন্দর করে হাসতেও পারে?
কপালে টিপটা পড়তেই নীচ থেকে জয়ার ডাক শোনা গেলো।
-'বৌদিমণি আপনাকে নীচে ডাকছে। আর্য দাদার বন্ধুরা এসে পড়েছেন সব।'
নীল আঁচল উড়িয়ে আর্যর বন্ধুদের সামনে দাঁড়ালো আরণ্যা। কপালে নীল টিপ, পরণে নীলচে মেঘরঙা শাড়ি, হাত ভর্তি বিয়ের পাওয়া চুড়ি। ওই চুড়ি যে এক বছরের আগে খুলতে নেই। তাহলে নাকি নতুন বউকে বউ-বউ লাগেই না। পুরোপুরি বাঙালী বধূর সাজ। তবুও আর্য ওকে দেখে যেন রাগে স্তব্ধ হয়ে গেলো। আর্যর বন্ধুরা হাঁ করে চেয়ে দেখতে লাগলো আরণ্যাকে।
গমগমে কণ্ঠে আর্য বলে উঠলো,
'এখানে শাড়ি পড়ে এসেছেন কেনো আপনি? আপনি জানেন না, আজ আমি বন্ধুদের ওনারে পার্টি অর্গানাইজ করেছি। পার্টিতে কোন মেয়ে এই টাইপ শাড়ি পড়ে আসে? কোনো ড্রেসিং সেন্স নেই আপনার? তাছাড়া ড্রেস তো এনে দেওয়া হয়েছিল। সে'টা পরেননি কেন?'
আরণ্যা কুন্ঠিত স্বরে বলল,
-'আসলে আমার ঐরকম ড্রেস পড়ার অভ্যাস নেই।'
আর্য তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
-'ওহ, তা অভ্যাস না থাকাটা আশ্চর্যের কিছু না। কোন ফ্যামিলি থেকে উঠে এসেছেন দেখতে হবে তো। কোনোদিন তো চোখেও দেখেননি বোধহয় এই ধরণের ড্রেস।'
বাইরের মানুষদের সামনে এভাবে অপমান করায় আরণ্যা যেন কুঁকড়ে যায়। আর্যর বন্ধুরা আর্যকে এভাবে নিজের স্ত্রী'র উপর চ্যাঁচাতে দেখে বেশ মজা পেয়েছে। আরও উত্তক্ত করতে তাদের মধ্যেই মোহিনী বলে ওঠে,
-'আর্য, তুই এমন একটা আনস্মার্ট গাঁইয়া মেয়ে বিয়ে করেছিস? তোর তো যা ইগো, কখনো কোনো মেয়ের ইমোশনকে পাত্তাও দিতিস না! তোর ঝোঁক তো সবসময়েই ছিল একটা ওয়েল এডুকেটেড সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করার। এই মেয়েটা তো তোর পাশে দাঁড়াবারই যোগ্য না। পড়াশোনা করেছে? নাকি সেটাও করেনি ওই মেয়েটা?'
আর্যর বন্ধুরা হো হো করে হেসে ওঠে। লজ্জায় আরন্যা এবার জড়োসড়ো হয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। টেবিলে মেয়েটা ততক্ষনে মটন বিরিয়ানি আর স্যালাড সাজিয়ে দিয়েছে। আর্যর বন্ধুরা খেতে বসে যায় পাশাপাশি। গরম বিরিয়ানির সুগন্ধি ভাপ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে।
আর্যর বন্ধু মিহিকা বিরিয়ানিটা টেস্ট করেই প্রশংসা করে উঠলো। কাজের মেয়ে জয়াকে ডেকে সে বলল,
-'জয়া তুমি দারুন রেঁধেছো তো বিরিয়ানিটা। একেবারে রেস্টুরেন্ট স্টাইল। আগেও তো তোমার রান্না খেয়েছি, কই এতো ভালো তো লাগেনি।'
-'আসলে দিদিমণি, আজ আমি নয়, বৌদিমণি রান্না করেছেন। আপনারা আসবেন শুনে সেই যে রান্না ঘরে ঢুকেছেন, বেড়িয়েছেন আপনারা আসার একটু আগে।'
সবাই একসাথে তাকালো দূরে দাঁড়ানো আরণ্যার দিকে তাকালো।
আরন্যা মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল,
-'আপনাদের সত্যিই ভালো লেগেছে বিরিয়ানিটা? আসলে আপনারা উনার বন্ধু বলেই আপনাদের কিছু খাওয়াতে ইচ্ছা করছিল। তাইই আর কি...'
আর্যর সব বন্ধুর আরণ্যাকে এবার বেশ মনে ধরলো। দেখতে যেমনই হোক, মেয়েটার গুন তো আছে। মোহিনী বাদে আরন্যার সাথে সবাই হেসে হেসেই কথা বলল এরপর। আর্য অবাক হয়ে গেলো বিরিয়ানিটা টেস্ট করতেই। সত্যিই মেয়েটার রান্নায় দক্ষতা আছে বলতে হবে। তবুও সে মুখ ফুটে আরণ্যার প্রশংসা করলো না।
রাতে শোওয়ার সময় আর্য লক্ষ্য করলো, আরণ্যার তেমন কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। বন্ধুরা চলে যাওয়ার পর সেই যে লাইব্রেরি রুমে গিয়ে পর্দা টেনে দিয়ে ছিলো, এখনো পর্যন্ত বের হয়নি। সে তো বোধহয় রাতের খাবারও খায়নি। আর্যর কৌতূহল হল। যদিও ওই মেয়েটাকে নিয়ে কৌতূহলের কোনো কারণ পেলো না সে। তবুও নিঃশব্দে গিয়ে দাঁড়ালো পর্দার আড়ালে। হালকা করে পর্দাটা সরিয়ে ঘরের দিকে চোখ রাখলো আর্য।
জানলা ধরে এই মেঘলা রাতে দাঁড়িয়ে আছে আরণ্যা। মেঘে ঢাকা আধখানা চাঁদের দিকে তার মুখ ফেরানো। চাঁদের রূপালী আলো আর তার মেঘরঙা শাড়ি, তাকে বেশ মায়াবী করে তুলেছে। এই চাঁদের রাতে হটাৎ যেন আরন্যার খুব কাছে দাঁড়াতে ইচ্ছে করলো আর্যর। মেয়েটা এক দৃষ্টিতে ওই আধখানা চাঁদের দিকে চেয়ে আছে। কী ভাবছে, কে জানে। হয়তো তার নিয়তিকে দোষ দিচ্ছে। না সে বড়োলোক বাড়ির বউ হত, আর না তাকে নিয়মিত উঠতে-বসতে তার স্ট্যান্ডার্ডের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হত। আরণ্যা জন্ম পরিচয়ের মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড বিচার করার কোনো যুক্তি খুঁজে পায় না, সে কর্ম পরিচয়ে আগ্রহী। একদিন সে আর্যকে স্ট্যান্ডার্ড আদপে কী, হয়তো তার যোগ্য জবাব দেবে।
রাতে একটা মহিলা কণ্ঠের চিৎকার, একই সাথে বজ্রপাতের শব্দ শুনে চমকে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো আর্য। বাইরের দিকে তাকাতেই দেখলো, প্রচন্ড জোরে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। শো শো করে হাওয়া বইছে। জানলার পর্দা গুলো ঝাপটাচ্ছে। বৃষ্টির ফোঁটা হাওয়ায় উড়ে ঢুকছে ঘরে। দ্রুত পদক্ষেপে গিয়ে জানলাটা বন্ধ করলো সে। মুখ ফিরাতেই নাইট ল্যাম্পের আলোয় দেখলো, কেউ একজন এলো চুলে কুঁকড়ে বসে আছে ঘরের এক কোণে। আর্য ভীতু না হলেও মাঝ রাতে এমন দৃশ্য দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেলো।
জড়িয়ে যাওয়া কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
-'কে, কে ওখানে?'
মেয়েটা মুখ তুলে তাকাতেই আর্য লক্ষ্য করলো, এটা আরণ্যা। কিন্তু সে লাইব্রেরি রুম ছেড়ে তার ঘরে কী করছে এই মাঝ রাতে?
আর্য এবার বেশ গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
-'আপনি এখানে? কী ব্যাপার?'
প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাওয়া স্বরে আরণ্যা উত্তর করলো,
-'আমার, আমার খুব ভয় করছে।'
আর্য অবাক হল। কিন্তু নিজের বিস্ময় আড়ালে রেখে সে ফের প্রশ্ন করলো,
-'কিন্তু এখানে ভয় পেয়ে যাওয়ার মত কী হয়েছে? এই রাত-দুপুরে কে ভয় দেখাতে এসেছে আপনাকে?'
-'বাজ, বাজ পড়ছে বাইরে।'
হটাৎ আবার বাজ পড়ার শব্দে চেঁচিয়ে উঠলো আরণ্যা। আর্য দু'হাত দিয়ে কান চেপে বলল,
-'উফ, চুপ করুন। বাড়িসুদ্ধু সবাইকে জাগিয়ে দেবেন নাকি?'
আরণ্যা তবুও কেঁপে কেঁপে ওঠে। আর্য এগিয়ে গিয়ে আরণ্যার পাশে একটা বেডশীট আর বালিশ ফেলে দেয়।
-'ক'দিন এখন নিম্নচাপ চলবে। রোজই প্রায় ঝড়-বাদল থাকবে, শুধু এই ক'দিনের জন্য আপনাকে এই ঘরে শোওয়ার পারমিশন দিলাম। তবে ভুলেও বিছানায় আসার কথা ভাববেন না।'
আরণ্যা যেন কৃতার্থ হয়ে গেলো। এই মানুষটাও কি তবে তার কথা ভাবেন? চাদরটা বিছিয়ে বালিশ নিয়ে সে শুয়ে পড়লো মেঝেতে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মাধুর্য মাধুরী তার সামাজিক মাধ্যম প্রফাইলে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন - “নিজেকে প্রকাশ করতে চাই না। পৃথিবীর সব রহস্যের মধ্যে আমি অধিকতর রহস্যময়।” এছাড়া তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন