উপন্যাস : তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ
লেখিকা : মাধুর্য মাধুরী
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা মাধুর্য মাধুরীর “তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১৬ই নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ || মাধুর্য মাধুরী |
1111111111111111111111
৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ || মাধুর্য মাধুরী (পর্ব - ০৬)
আর্য দাঁড়িয়ে আছে রোড ক্রসিং -এ। অন্যমনস্ক হয়ে রোড ক্রস করতে গিয়ে প্রায় ট্রাকটার সাথে ধাক্কা লাগার আগের মুহূর্তে দুটো হাত আর্যকে পাশের দিকে ঠেলে দিল। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ইটে লেগে আর্যর কপাল চুঁইয়ে রক্ত পড়ছে তখন। সামনের দিকে ঝাপসা চোখে তাকাতে লক্ষ্য করলো, ট্রাকটা প্রায় সঠিক সময়ে ব্রেক কষে নিয়েছে। সামনে থাকা মেয়েটা ট্রাকের ধাক্কায় কিছুটা ছিটকে অদূরে জ্ঞান হারিয়েছে। মেয়েটা কে বুঝতে পারার আগেই, আর্য লুটিয়ে পড়লো ফুটপাথে। চারিদিকের লোকজনের আবারও চোখে পড়লো, ট্রাকের সামনে থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া ছেলেটাও একসময় জ্ঞান হারিয়েছে।
চোখ খুলতেই আর্য লক্ষ্য করলো, তার কপালে পুরু ব্যান্ডেড। সে শুয়ে আছে লোকাল হাসপাতালের রুমে জীর্ণ একটা বেডে পাশাপাশি আরও রোগীদের সাথে। হালকা ভর দিয়ে উঠে বসে সে অন্যান্য বেডের পেসেন্টদের মধ্যে কোথাও সেই মেয়েটাকে খুঁজে পেলো না। তাকে উঠে বসতে দেখে একজন নার্স এগিয়ে এলেন।
- 'আপনি কি এখন বেশ সুস্থ বোধ করছেন?'
- 'হ্যাঁ কিন্তু, একটা মেয়ে...'
- 'যেই মেয়েটাকে আপনার সাথে ভর্তি করা হয়েছে? তিনি তো পাশের মহিলা কামরায় আছেন। '
-'আমাকে কি এখন ছুটি দেওয়া যাবে? আমি কি বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রিয়েপেয়ার্ড?'
-'ডক্টর মুখার্জিকে ডাকছি। উনাকেই জিজ্ঞাসা করে নেবেন।'
ডক্টর আর্যর সাথে কথা বলে, হাসপাতালের ফর্মালিটি পূরণ করে, তাকে ছেড়ে দিলেন। ডক্টর যাওয়ার আগে আর্য প্রশ্ন করলো,
-'ম্যাম, আমার সাথে একটা মেয়েকেও শুনেছি অ্যাডমিট করা হয়েছে। তাকে কি একবার দেখার অনুমতি পাওয়া যাবে?'
-' যদিও এভাবে নন-ভিজিটিং আওয়ার্স-এ অপরিচিতদের দেখা করার অনুমতি নেই, তবুও, তিনি যেহুতু আপনাকে প্রটেক্ট করেছেন, তাই দেখা করার অনুমতি দিতেই পারি। তবে উনাকে ডিস্টার্ব করবেন না। উনার বেশ খানিকটা ইনজুরি হয়েছে। সুস্থ হওয়ার জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।'
- 'হ্যাঁ, ম্যাম অবশ্যই। আমি উনাকে কোনোভাবেই বিরক্ত করব না। শুধুমাত্র উনাকে একবার দেখে, মেডিসিন কিছু প্রয়োজন থাকলে কিনে দিয়ে আমি চলে যাবো। আর হ্যাঁ, উনার বাড়ির লোকের পরিচয় পাওয়া গেছে?'
-'নাহ, যেহুতু জ্ঞান ফেরেনি, তাই আমরা আপাতত কিছু জানি না। উনি কোনোরকম মোবাইল-ফোন হয়তো ক্যারি করছিলেন না। করলেও, সেটা জমা পড়েনি আমাদের কাউন্টারে। দেখি, উনার জ্ঞান ফিরুক, উনি কী বলেন। তারপর আমরা উনার বাড়িতে খবর দেবো।'
-' থ্যাংক ইউ ম্যাম। উনি কতো নাম্বার রুমে আছেন?'
-'বারো।'
আর্য মেয়েটার কাছে যেতেই তার মাথা ঘুরে উঠলো। এটা আর কেউ নয়, তার সবচেয়ে অপছন্দের মানুষ, তার বেটার-হাফ, আরণ্যা। মেয়েটা এত অবহেলা সহ্য করেও আজ তাকে সেভ করলো! কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো আর্য। আরণ্যার স্যালাইন লাগানো হাতটা স্পর্শ করতেই হালকা ভালোলাগাও যেন তার মনে দোলা দিয়ে গেলো। বেডে নিশ্চুপ ঘুমিয়ে আছে আরণ্যা। তার সাধারণ মুখশ্রীতে একটা সরল-সাধাসিধা ভাব ফুটে উঠেছে। আরণ্যাকে বড্ড ইনোসেন্ট লাগছে আজ। নাকি প্রতিদিনই লাগে? হয়তো, আর্যই কোনোদিন মন দিয়ে লক্ষ্য করেনি।
নাহ, এখানে এতো পেসেন্টদের মাঝে আরণ্যাকে রাখা যাবে না। ভালোমতো ট্রিটমেন্ট হবে এখানে, সে আশাও করা যায় না। সুতরাং, এখানের ফর্মালিটি শেষ করে, যত দ্রুত সম্ভব আরণ্যাকে শিফট করতে হবে। বাড়িতে কথা বলে আর্য একটা নার্সিংহোমে অ্যাডমিট করলো আরণ্যাকে।
বাড়ির সবাই দেখতে এসেছে আরণ্যাকে। তার জ্ঞান ফিরেছে। একটু পর পরই আর্যকে খুঁজছে সে। এক তোড়া সাদা ফুল হাতে রুমে ঢুকলো আর্য। ফুলের সুবাসে রুমটা ভরে উঠেছে। ভ্রু কুঁচকে আর্যর দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আরণ্যা।
-'আপনি ঠিক আছে আছেন তো?'
মুচকি হেসে আর্য বলল,
-'কেন? আমাকে দেখে কি খারাপ আছি বলে মনে হচ্ছে?'
-'তাহলে আপনার হাতে ফুল?'
-'কেন, তোমার জন্য আনতে পারি না?'
এই প্রথম আরণ্যাকে 'তুমি' সম্বোধন করলো করলো আর্য।
হটাৎ আর্যর কপালের ব্যান্ডেডে নজর পড়লো আরণ্যার।
-'আপনার কপালে ব্যান্ডেড? আপনাকে তো আমি ঠেলে দিয়েছিলাম...'
আরণ্যার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আর্য বলল,
-'একটা ইটে লেগে হালকা লেগেছে। তেমন কিছু ব্যাপার নয়।'
আরণ্যা তবুও যেন ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। হালকা চাপ দিয়ে উঠার চেষ্টা করতেই মৃদু চিৎকার করে উঠলো। আর্য দ্রুত এসে আরণ্যাকে বকে উঠলো,
-'তোমার কি বুদ্ধিশুদ্ধি কোনোদিনই হবে না? অসুস্থ অবস্থায় নিজেকে সামলানোর জায়গায়, বাচ্চা-কাচ্চাদের মতো লাফালাফি আরম্ভ করেছো?'
আরণ্যা মুখ কুঁচকে বলে উঠলো,
-'আমি মোটেও লাফালাফি করিনি। আর আপনার তো লেগেছে...'
-'তা, তুমি কি এখন ডক্টরি স্টার্ট করবে? বলছি তো তেমন কিছু লাগেনি। চুপচাপ শুয়ে থাকো।'
আর্যর ধমকে আরণ্যা ভয় পেয়ে শুয়ে আবারও শুয়ে পড়লো।
নার্স ইনজেকশন পুশ করতে এলেই আরণ্যা সত্যি সত্যিই লাফালাফি শুরু করে দিল। বিছানা থেকে এক ঝটকায় উঠতে গিয়ে হাতের স্যালাইনে আবারও টান পড়লো। আরণ্যার চিল-চিৎকার উপেক্ষা করে আর্য এসে চেপে ধরলো আরণ্যাকে। ইনজেকশনের নাম শুনে এমন ছটফট করা মেয়ে সে জীবনেও দেখেনি।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মাধুর্য মাধুরী তার সামাজিক মাধ্যম প্রফাইলে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন - “নিজেকে প্রকাশ করতে চাই না। পৃথিবীর সব রহস্যের মধ্যে আমি অধিকতর রহস্যময়।” এছাড়া তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন