উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৬১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৬২)
ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে আছে রিশান। মাথায় ঘুরছে কালকের ঘটনা। নিজের উপর এখন রাগ, ঘৃণা হচ্ছে তার। ছিঃ সে কিভাবে পারলো তার মায়াবিনীর সাথে এমন করতে। তার ভাবনার মাঝেই ওয়াসরুমের দরজা খোলার শব্দ হয়। ওয়াসরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে নিশা। হা করে মায়াবিনীর সদ্য স্নান করা রুপ দেখতে থাকে। নিশা ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় চলে যায়। মাথায় পেঁচানো গামছা খুলে, চুল ঝেরে গামছাটা রশিতে মেলে দিয়ে রুমে ঢুকে। রিশানের দিকে না তাকিয়ে, ড্রেসিং টেবিল সামনের টুলে বসে চুল আঁচড়াতে থাকে সে। রিশান বিছানা থেকে নেমে নিশার পিছনে দাঁড়িয়ে অপরাধীর কন্ঠে বললো
- কালকে রাতের জন্য সরি, নিশা।
নিশা কোন কথা বলে না। আগের মতো চুল আঁচড়াতে থাকে। রিশান পুনরায় বললো
- বিশ্বাস কর। আমি ইচ্ছে করে তোমার সাথে এমন করিনি। তুমি বার বার ডিভোর্স দেওয়া কথা বলছিলে, তাই রাগে এমন করে ফেলেছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি নিশা।
নিশা চুল আঁচড়ানো শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। ঘুরে তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রিশানের দিকে তাকিয়ে, তাচ্ছিল্যের সুরে বললো
- ভালোবাসেন আমাকে! আমি তো জানতাম যাকে ভালোবাসা যায়, তাকে কষ্ট দেওয়া যায় না। বাকি সব কিছুর মতো কি আজকাল ভালোবাসার সংজ্ঞাটাও চেন্স হয়ে গিয়েছে স্যার।
রিশান কোন কথা বলে না। অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রুমের দরজায় কেউ নক করে। নিশা গায়ে জড়ানো লাল শাড়ির আঁচলটা ভালো করে মাথায় দিয়ে দরজার দিয়ে পা বাড়ায়।
কুহুদের ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে কিরণ। মূলত সে কুহুর জন্য অপেক্ষা করছে। সকাল সকাল এসে সেই কুহুকে খবর দেয় যে, কাব্য তাকে বিয়ে করবে না বলেছে। তা শুনেই কুহু ছাদে যায় কাব্যের সাথে কথা বলতে। কিরণও বাসায় যেতে চায়। কিন্তু মিসেস মায়া তাকে আটকে দেয়। নাস্তা করে যাওয়ার জন্য। সে ভাবে একবারে ভাই যে বিয়েতে রাজি হয়েছে এই খুশির খবরটা নিয়েই সে বাসায় যাবে। তাই সে মিসেস মায়ার কথায় আর দ্বিমত না করে, রাজী হয়ে যায়।
ঠাস শব্দ করে দরজা খুলে বাসায় ভিতরে ঢুকে কুহু। কোন দিকে না তাকিয়ে গটগট করে হেটে নিজের রুমে দিকে যাচ্ছে সে।
কুহুকে এভাবে নিজের রুমের দিকে যেতে দেখে অবাক হয় কিরণ। তার তো এখন খুশি হয়ে, কিরণের কাছে এসে খুশির খবর দেওয়ার কথা। তা না করে সে রেগেমেগে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে কেন? তারমানে কি তার ভাই এখনো বিয়েতে রাজী হয়নি! কিরণও কুহুর রুমের দিকে যায়। কিন্তু সে রুমের কাছে যাওয়ার আগেই, রুমে গিয়ে ঠাস করে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয় কুহু। রুমের দরজা বন্ধ করে রুমের এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে পড়ার টেবিলের উপর রাখা সিরামিকের মগটা নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারে সে। আবার টেবিলের উপর চোখ বুলিয়ে মাটির কলমদানিটা হাতে তুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। পড়ার টেবিলের পাশে ছিল প্লাস্টিকের সাদা আর গোলাপি রঙের চেরি ফুল ভর্তি মাটির মাঝারি সাইজের একটা টপ। সেই টপটা দুই হাতে উপরে তুলে একটা আছার মারে। আশে পাশে তাকিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে চাদর টেনে, চাদর বালিশ সব ফ্লোরে ফেলে দেয়। ফ্লোর থেকে বালিশ তুলে কভার ছিড়ে বালিস ছুড়ে সামনে তাকাতেই ড্রেসিং টেবিলের উপর নজর যায় তার। ফর্সা চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে, বেনি করা চুলগুলোও এলোমেলো। ধ্বংসাত্মক রুপ নিয়ে আগাতে থাকে ড্রেসিং টেবিলের দিকে।
কুহুর রুমের সামনে দাঁড়াতেই, রুমের ভিতর থেকে আসা ভাংচুরের শব্দ কানে যায় কিরণের। দরজায় নক করতে করতে সে বললো
- আপু, দরজা খোল আপু।
কিরণের ডাক শুনে রুমের ভেতরের ভাঙার শব্দের কোন পরিবর্তন হয় না। আগের তালেই শব্দ হতে থাকে। মিসেস মায়া রান্নাঘরে সকালের নাস্তা বানাচ্ছিল। এমন ভাঙ্গা ভাঙ্গির শব্দ আর কিরণের ডাক শুনে মেয়ের রুমের দিকে ছুটে আসেন তিনি। মিষ্টার সফিকও নিজের রুম বসে পেপার পড়ছিল। জিনিসপত্র ভাঙার শব্দ শুনে সেও ছুটে আসে কুহুর রুমের দিকে। কিরণকে এভাবে দরজা ধাক্কাতে দেখে মিসেস মায়া বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে কিরণ? কুহু এমন করছে কেন?
কিরণ কাঁদো কাঁদো মুখে উত্তর দিল
- ভাইয়া আপুকে বিয়ে করতে রাজী হয়নি শুনে, আপু ভাইয়ার সাথে কথা বলতে গিয়েছিল। আর এসেই রুমে ঢুকে, রুমের দরজা বন্ধ করেই ভাঙচুর করা শুরু করে দেয়।
মিসেস মায়ার ভয় হয়। মেয়েটা আবার রাগের মাথায় উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলবে না তো? এলোমেলো হাতে দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বললো
- কুহু দরজা খোল। দরজা খোল মা। আমার কথা শোন মা। শান্ত হো।
মিষ্টার সফিকেরও অনেক চিন্তা হয়। একটা মাএ মেয়ে তার। এই মেয়েকে হারালে যে তারা সব থাকতেও নিঃস্ব হয়ে যাবে। দরজার কাছে গিয়ে, উদ্বিগ্ন কন্ঠে মেয়েকে ডাকেন তিনি
- কুহু মা, মা আমার দরজা খোল মা। বাবার কথা শোন মা।
এতো ডাকাডাকির পরও কুহুর রুমের ভিতর থেকে আসা ভাঙার শব্দ বন্ধ হয় না। আর না দরজা খুলে। মিসেস মায়া, মিষ্টার সফিক আর কিরণ ডাকতেই থাকে। কিন্তু কুহু দরজা খুলে না। বেশ কিছুক্ষণ পর ভিতর থেকে ভাঙার শব্দ আসা বন্ধ হয়ে যায়। ভিতরে এখন সব কিছু নিরব। এতোক্ষণ মিসেস মায়ার ভয় ছিল, এই ভাঙচুর করতে গিয়ে মেয়ে না আবার হাত-পা কেটে ফেলে। কিন্তু এখন মিসেস মায়ার ভয় হচ্ছে বড় কিছু ঘটার আসোংখায়। মিসেস মায়া কান্না করে দেয়। মিষ্টার সফিকের মেয়েকে হারানোর ভয়ে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তিনি দরজা খোলার চেষ্টা না করে, শুধু ছলছল চোখে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলতে থাকে
- দরজা খোল মা। বাবার কথাটা শোন না, মা।
কিরণ বুঝতে পারলো তার ভাই ছাড়া কুহু এখন কারো কথাই শুনবে না। তাই সে দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। লিফট বি ফ্লোরে দেখে লিফটের জন্য আর দাড়ালো না। সিঁড়ি দিয়েই ছাদের দিকে দৌড়ালো।
আহাম্মেদ ভিলার ডাইনিং রুমের পাশেই কিচেন। ডাইনিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে তোয়া আর নীলা। একসাথেই খাওয়া শুরু করেছিল তারা। নীলার খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু তোয়ার খাওয়া এখনো অর্ধেকও শেষ হয়নি। হবেই বা কিভাবে, তার হাতে ঠিকই আছে ব্রেড আর ওমলেট। মুখেও চিবাচ্ছে ব্রেড আর ওমলেট। কিন্তু চোখ আর মস্তিষ্কে আছে, খাবারের প্লেটের পাশে রাখা সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন বইটার বারো নাম্বার পাতার উপর। মিসেস সোনালী ট্রে'তে করে দুই কাপ চা নিয়ে কিচেন থেকে ডাইনিং রুমের আসে। ডাইনিং টেবিলে তোয়াকে খাবার ছেড়ে বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকতে দেখে, শক্ত কন্ঠে বললো
- তোর বাবাকে ডাকবো, তোয়া।
তোয়া মায়ের দিকে তাকিয়ে বেজার মুখে বললো
- পুরো দু দুটো দিন আমি বই পড়তে পারিনি, মা। প্লিজ একটু বুঝার চেষ্টা কর।
মিসেস সোনালী চোখ বড় করে তাকিয়ে বললো
- এখনই বই রেখে খাওয়া শেষ কর বলছি।
তোয়া মুখটা কালো করে বই রেখে চুপচাপ খেতে থাকে। মিসেস সোনালী চেয়ারে বসে ট্রে থেকে এক কাপ চা নিজের সামনে রাখে। অন্য এক কাপ চা নীলার সামনে রাখতে রাখতে বললো
- এটা তোমার।
নীলা মাথা নিচু করে ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- মা একটা কথা ছিল।
চা'য়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুকটা দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। ছেলের বউয়ের কথা শুনে, চা'য়ের কাপে চুমুক না দিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি কথা?
নীলা আমতা-আমতা করে বললো
- আসলে মা, আমি না কোন রান্না করতে পারি না। চা কফি বানাতে পারি। কিন্তু কিছু রাঁধতে পারি না।
মিসেস সোনালী কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- এটা এতো আমতা-আমতা করে বলার কি হলো! এই যে তোমার পাশে যে বসে আছে, তোমার এই ননদ। তাকে জিজ্ঞেস করতো রান্নাঘরের দেয়ালের রঙ কি।
তোয়া মুখ তুলে মা'র দিকে তাকায়। মনে মনে, মনে করার চেষ্টা করে রান্নাঘরের দেয়ালের রঙ কি? কিন্তু মনে পড়ে না। শেষ কবে সে রান্নাঘরে ঢুকেছিল তাও মনে পড়ে না। আর নীলা তাকায় তোয়ার দিকে। মিসেস সোনালী আবার বললো
- বলতে পারবে না। কিভাবে বলব, সে কবে রান্নাঘরে ঢুকেছিল তাই তো তার মনে নেই। আর তোমার যে বড় ননদ, তাকে জিজ্ঞেস করো। সেও বলতে পারবে না। তবে এই দিক দিয়ে আমার ছেলে আর ছোট মেয়েটা অনেক ভালো আছে। সব রান্না তারা পারে।
ড্রয়িং রুমে থাকা টেলিফোনটা বেজে উঠে। মিসেস সোনালী চা'য়ের কাপ হাতে উঠে যায়, কল রিসিভ করার জন্য। তোয়া নীলার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো
- ভাইয়া ছিল লেখাপড়ায় ফাঁকিবাজ। মা'কে সাহায্য করার নাম করে যতটুকু সময় লস করতে পারতো, যতোটুকুই তার লাভ ছিল। আর এভাবেই মা'য়ের সাথে থাকতে থাকতে, মায়ের রান্না দেখতে দেখতে রান্না শিখে গিয়েছে। আর তূবা অভ্র ভাইয়াকে ইমপ্রেস করার জন্য, খালামনির কাছ থেমে রান্না শিখেছে। আসলে বান্দর আমরা চারজনই বুঝেছ, যাস্ট ধরন আলাদা।
তোয়ার কথা শুনে নীলা হেসে দেয়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৬৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন