উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৬২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৬৩)
ছাদ থেকে নেমে, বাসায় সামনে দাঁড়িয়ে জুতো খুলছিল কাব্য। তখনই সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়ায় কিরণ। কাব্য হাতের জুতোটা পাশে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, ভায়ের দিকে তাকায়। ছেলেটার চোখে পানি, বাসায় পড়ার নরমাল জামা কাপড় তার গায়ে, কিন্তু পা খালি। দৌড়ে আসার ফলে হালকা হাপাচ্ছে সে। কাব্য কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার আগেই কিরণ একদমে বললো
- ভাইয়া কুহু আপু রুমের দরজা লাগিয়ে ভাঙচুর করছিল, কারো ডাকেই দরজা খুলছিল না। কিন্তু এখন, এখন ভাঙচুরের শব্দও পাওয়া যাচ্ছে না ভাইয়া। কিছু করো তুমি, ভাইয়া।
কাব্য মনে মনে ভাবে, কুহুকে সুখী করতে গিয়ে চিরদিনের মতো হারাবে না তো? "চিরদিনের মতো হারাবে" কথাটার অর্থ মস্তিষ্কে যেতেই অস্থির হয়ে উঠে কাব্য। আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে ঝড়ের গতিতে কুহুদের বাসার দিকে ছুটে সে। কাব্য কুহুর রুমের সামনে এসে দেখে, মিসেস মায়া আর মিষ্টার সফিক রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে। রুমের মধ্যে থেকে এখনো কোন শব্দ আসছে না। সব নিরব হবে আছে। এই নিরবতাই যেন সবার ভয় বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুণ। কাব্য ব্যাকুল কন্ঠে বললো
- কুহু দরজাটা খোলো। প্লিজ কুহু দরজা খোলো।
ভিতর থেকে কুহুর কোন শব্দ আসে না। এর মধ্যেই কিরণ এর সাথে সেখানে মিসেস কবিতা আর মিষ্টার আতিকও এসে উপস্থিত হয়। তারাও ডাকে। কিন্তু রুমের ভিতর থেকে কুহুর কোন উত্তর আসে না। কাব্য দরজার লক ঘুরিয়ে, দরজা ধাক্কা দিয়ে বুঝতে পারে দরজা লক করা। কাব্য আরও কয়েকবার কুহুকে ডাকলো। কুহুর কোন সারাশব্দ না পেয়ে, কাব্য এবার মিষ্টার সফিককে জিজ্ঞেস করল
- আংকেল রুমের চাবি আছে?
- হ্যাঁ আছে।
মিষ্টার সফিক উত্তর দিয়ে ছুটে গেলেন তাদের রুমের দিকে। টেনশনে এতোক্ষণ চাবির কথাটাই তার মাথায় ছিল না। আলমারির ড্রয়ের থেকে চারি নিয়ে গিয়ে কাব্যকে দেয় সে। কাব্য চাবি দিয়ে লক খুলে দরজা খুলতেই সবাই আঁতকে ওঠে। পুরো রুমের মধ্যে একমাএ খাটটা আর কাঠের তিন দরজার আলমারিটা নিজের অতিরিক্ত ওজনের জন্য রেহাই পেয়েছে। এই দুটো ফার্নিচারই শুধু নিজের জায়গায় আছে। বাকি সব কিছু উল্টেপাল্টে পুরো রুমময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। খাটের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে কুহু। চোখ মুখ লাল টকটকে। দৃষ্টি শূন্যে স্থির। এদিকের এতো চেঁচামেচি হইচই কিছুই যেন তার কানে যাচ্ছে না। শব্দ করে কান্না দেয় মিসেস মায়া। মিসেস মায়া আর মিষ্টার সফিক মেয়ের কাছে যেতে গেলেই, কাব্য তাদের বাঁধা দিয়ে বললো
- আন্টি আংকেল এখানে অনেক কাঁচা ভাঙা আছে। পায়ে লাগলে কেটে যাবে। আমি কুহুকে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসছি।
মিসেস কবিতাও ছেলের কথার সাথে সহমত জানিয়ে বললো
- হ্যাঁ মায়া, সফিক ভাইয়া চল, আমরা সবাই গিয়ে ড্রয়িং রুমে বসি। কাব্য কুহুকে নিয়ে আসুক।
মেয়ে কাব্যের জন্যই এমন করছে। এখন তাদের থেকে কাব্যের কথাই বেশি শুনবে সে। তাই মিসেস মায়া
দ্বিমত করলো না। বেপারটা বুঝতে পেরে মিষ্টার সফিকও রাজী হলো।
সবাই ড্রয়িং রুমের দিকে চলে যায়। কাব্য সাবধানে হেটে কুহুর কাছে গিয়ে, স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো
- বাচ্চাদের মতো এমন করে কেউ। জানো সবাই কতো টেনশনে পড়ে গিয়েছিল। চল ড্রয়িং রুমে সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
" আমি বাচ্চাদের মতো কাজ করছি। আচ্ছা ঠিক আছে আরও করবো। বাচ্চাদের মতো কাজ, হুম্ম।” কথাগুলো মনে মনে বলে আরও শক্ত হয়ে বসলো কুহু। কুহুকে আরও শক্ত হয়ে বসতে দেখে কাব্য ধপাস করে কুহুর পাশে বসে পড়ে। কুহুর চিন্তা হয় কাব্যকে এভাবে বসে পড়তে দেখে। ভয় হয়, কোন কাঁচ টাচ লাগলে। ইচ্ছে করে কাব্যকে বকে দিতে। এখানে এভাবে ধপাস করে বসে পড়ার কি ছিল! রাগ হয় নিজের উপরও। কেন সে এতো কিছু এভাবে ভাঙতে গেল। আরে দুই চারটা জিনিস কম ভাঙলে কি হতো। আহাম্মক মহিলা। কাটুক আজকে তার কাব্যের গা। তারপর তোর আহাম্মক গিরি ছুটাচ্ছি। বেয়াক্কেল মাইয়া। কাব্য কুহুর দিয়ে তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। কয়েক সেকেন্ড নিরব থেকে বললো
- তোমাকে আমি একটা গল্প শোনাই। একটা বাচ্চা ছেলের গল্প। যার কোন ফ্রেন্ড ছিল না। এমনকি তার সাথে কেউ বসতোও না। ম্যাম কাউকে বসতে বললেও, বসতে চাইতো না। ম্যাম জোর করে বসালে, কান্না করে উঠে যেত। বলতো এমন কালো ছেলের সাথে বসলে, সেও নাকি কালো হয়ে যাবে। কষ্ট পেত। জানতো তখন খুব কষ্ট পেত ছেলেটা।
কুহুর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে। এই ছেলেটা যে কাব্য নিজে তা বুঝতে সময় লাগে না তার। একটু থেমে কাব্য আবার বললো
- কিছুদিন পর একটা মেয়ে ট্রান্সফার হয়ে আসে তাদের ক্লাসে। মেয়েটার নাম ছিল তৃপা। ফর্সা, গোলগাল চেহারার মিষ্টি একটা মেয়ে।
কুহুর মাথায় বাজ পড়ে। এই তৃপাকে কাব্য আবার পছন্দ টছন্দ করতো না তো? এই পেত্নী আবার কাব্যের চাইল্ডহুড সুইটহার্ট ছিল না তো? আচ্ছা, এটা আবার কাব্যের ছ্যাকা খেয়ে বেঁকা হয়ে যাওয়ার গল্প না তো? মা'গো দেখে যাও তোমার মেয়ের জামাই, তোমার মেয়েকে তার ছ্যাকা খাওয়ার গল্প শোনাচ্ছে। কাব্য বলতে থাকে
- প্রথমদিন ক্লাসে এসে নিজের ইন্ট্রোডাকশন দেয়ার পর, ম্যাম যখন তাকে বসতে বললো। তখন মেয়েটা গিয়ে সেই কালো ছেলেটার পাশে বসে।
কাব্যর কথা শুনে কুহু মনে মনে বললো, "সুন্দরী একটা বাচ্চা মেয়ে পাশে বসছে দেখে তার প্রেমে গদ গদ হয়ে গিয়েছে। আর আমি যে পারলে তার কোলের উপর গিয়ে বসি, তা তার চোখে পরে না।" কুহুর ভাবনার মাঝেই কাব্য বলতে থাকে
- সবাইকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা সেই কালো ছেলেটার ফ্রেন্ড হয়। ছেলেটার হয়ে সবার কটু কথার প্রতিবাদ করে। এভাবেই চলে যায় চার-পাঁচ মাস। তারপর সবার কথা শুনতে শুনতে, মেয়েটা হাঁপিয়ে উঠে। বন্ধ করে দেয় তার সাথে চলা। ছিঁড়ে দেয় বন্ধুত্ব নামক সুতা।
এবার আর কুহু চুপ থাকতে পারলো না। পাশ ফিরে কাব্যের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- তা তোমার কি মনে হয়, আমিও ওই মেয়ের মতো মানুষের কথা শুনে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো?
কাব্য সামনে বারান্দার থাই গ্লাস বেদ করে আকাশ দেখতে দেখতে কথাগুলো বলছিল। কুহুর প্রশ্ন শুনে তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল
- না। আমি জানি তুমি আমাকে কখনোই কোন পরিস্থিতিতে ছেড়ে যাবে না। কিন্তু আমি চাই না আমার জন্য তুমি মানুষের কথা শুন। আর না নিরব ভাইয়ার মতো এতো সুন্দর ছেলেকে রেখে, আমার মতো কালো ছেলেকে বিয়ে করো।
কুহু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- নিরব ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে?
- হুম্ম। ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে। তোমার সাথে তার বিয়ের প্রপোজ পাঠিয়েছিল, তার মা কে দিয়ে। তুমি ভার্সিটিতে এডমিট হলেই, এই নিয়ে তোমার সাথে কথা বলা হতো। আমি চেয়েছিলাম তুমি নিরব ভাইয়াকে বিয়ে করে নেও। যাতে করে তুমি সারাটা জীবন শান্তিতে থাকতে পারো। মানুষের কটু কথা শুনতে না হয়।
কাব্য একটু থেমে অপরাধীর আবার বললো
- সরি কুহু আমি তোমার ভালো ভাবতে গিয়ে তোমার ভালোবাসাকে অপমান করেছি।
- এখন ড্রয়িংরুমে গিয়ে সবাইকে বলবে তুমি আজকে আমাকে বিয়ে করতে চাও।
কাব্য অবাক হয়ে বললো
- আজকে বিয়ে! কিন্তু আজকে বিয়ে কিভাবে সম্ভ ,,,,,,
কুহু কাব্যকে আর বলতে না দিয়ে বললো
- আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না।
কাব্য আর দ্বিমত প্রকাশ না করে বললো
- চল তোমাকে নিয়ে যাই।
- উহু তুমি যাও আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
- এখান থেকে একা একা যেতে ,,,,,,,,
কুহু আবারও কাব্যকে আর বলতে না দিয়ে বললো
- পারবো, তুমি যাও।
কাব্য উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো
- আচ্ছা।
কাব্য দরজার কাছে গেলেই কুহু ডাকলো
- শুনো।
কাব্য ঘুড়ে দাঁড়িয়ে বললো
- বল।
- এই স্পেশাল দিনে। তোমার প্রিয় রঙে আমি নিজেকে সাজাতে চাই।
কুহুর কথার মানেটা প্রথমে ধরতে পারেনি কাব্য। কয়েক সেকেন্ড পরে, কথাটার মানেটা বুঝতেই অবাক চোখে কুহুর দিকে তাকায় সে। কুহু লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরায়। কাব্য মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়। কুহুর এখনও লজ্জা লাগছে। ইস এই সামান্য কথাটা বলেই তার এতো লজ্জা লাগছে কেন? তাহলে কি সে কোন উপন্যাসের ন্যাকা নায়িকাতে পরিণত হচ্ছে? না এসোব ন্যাকামি ফ্যাকামি করলে হবে না। তাকে স্ট্রং হতে হবে। তাকে মানুষের কটু কথার প্রতিবাদ করতে হবে। কাব্যকে বুঝাতে হবে তার আশেপাশের মানুষগুলো তাকে কতো ভালোবাসে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৬৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন