উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান Bangla Golpo - Kobiyal - Romantic Golpo
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৬৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৬৯)

একটা অন্ধকার রুমে চেয়ারের সাথে হাত, পা, মুখ বাধা অবস্থায় বসে আছে, বয়স পঞ্চাশ কি পঞ্চান্নর একটা লোক। নাম তার সাজ্জাদ। হাত পা কিছুই নাড়াতে পারছে না সে। শুধু চোখ দুটো এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে এখন সে কোথায় আছে। কিন্তু অন্ধকারর জন্য কিছুই দেখতে পারছে না। মনে করার চেষ্টা করে সে এখানে কিভাবে এসেছে। তার যতটুকু মনে পড়ে সে কাজ শেষ করে বাসায় যাচ্ছিল। বাসা থেকে তার কাজের জায়গার দূরত্ব খুব বেশি না হওয়ায়, প্রতিদিন হেটেই বাসায় যায় সে। আজকেও সে হেটে হেটে বাসায় যাচ্ছিল। হঠাৎ একটা মাইক্রোবাস এসে তার সামনে থামে। দুইজন মুখোশদারি লোক মাইক্রোবাস থেমে নেমে তাকে ঘিরে ধরে। একজন লোক তার মুখে কিছু একটা স্প্রে করলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর? তারপর চোখ খুলে নিজেকে এই অন্ধকার রুমে বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করে। কেউ রুমের দরজা খুলতেই তীব্র আলো এসে তার চোখে পড়ে। সাথে সাথে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে সে। কিচ্ছুক্ষণ পর চোখ পিটপিট করে তাকায় সে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে দীপ্তি, চন্দ্রা আর শুভ্র। দীপক এগিয়ে গিয়ে সাজ্জাদের মুখের বাঁধন খুলে দেয়। সাজ্জাদ দীপ্তি, চন্দ্রা বা শুভ্র কাউকে চিনে না। তাই তাদের তিনজনকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করল
- কে আপনারা? আর আমাকে এখানে ধরে এনেছেন কেন? ছাড়ুন আমাকে। জানেন কে আমি?

শুভ্র উত্তর দিল
- শুধু তোকে না, তোর পুরো পরিবারকে চিনি বজ্জাত থুক্কু সাজ্জাত হোসেন। তবে ভুলটা আমার না, তোর বাপ মতিনের, ছেলের নাম রাখার সময় ভুল করে ব এর জায়গায় সা রেখে ফেলেছিল।


সাজ্জাদ ভয় পেয়ে পুনরায় প্রশ্ন করল
- কে আপনারা? কি চান আমার কাছ থেকে?
দীপ্তি শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- আর্মি অফিসার মিষ্টার আহনাফ আর মিষ্টার ইফতেখারকে কেন খুন করেছিস?
সাজ্জাদ কৌতুহলী হয়ে আবার জিজ্ঞেস করল
- কে আপনারা?
শুভ্র কঠিন কন্ঠে উত্তর দিল
- তা তোর জানার কোন প্রয়োজন নেই, তোকে যা জিজ্ঞেস করা হয়েছে তার উত্তর দে।
সাজ্জাদ নিজেকে শক্ত করে উত্তর দিল
- আমি কাউকে মারিনি।

শুভ্র সাজ্জাদের আরও একটু কাছে গিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
- দেখ এখন ভালোয় ভালোয় তোকে জিজ্ঞেস করছি বল। না হয় কিন্তু ,,,,,
সাজ্জাদ ভীতু কন্ঠে বললো
- আমি মুখ খুললে আমাকে মেরে ফেলবে।
শুভ্র আগের অবস্থায় থেকেই পুনরায় বললো
- আর তুই এখন মুখ না খুললে, তোর অবস্থা এমন করবো যে তুই মরার জন্য প্রার্থনা করবি কিন্তু মরতে পারবি না। আর সাথে তোর পাঁচ বছরের ছোট মেয়ে রোজ আর তোর সুন্দরী বউ লতা ,,,,,,

শুভ্র কথা শেষ করার আগেই সাজ্জাদ আঁতকে উঠে বললো
- না। আমি বলছি। আপনারা দয়া করে ওদের কিছু করবেন না। আমি বলছি, আমি বলছি।
এতোক্ষণ চুপ করে থাকা চন্দ্রা এবার মুখ খুলে বললো
- বল তাহলে।
সাজ্জাদ শঙ্কিত কন্ঠে বললো
- এস কে কোম্পানির মালিক শিমুল খন্দকারের কথায় আমি তাদের খুন করেছি।


এস কে কোম্পানির কথাটা কানে যেতেই শুভ্রের চোখে ভেসে উঠে তার বাবার হাস্যজ্জল মুখ। তার বাবা মিষ্টার আরিফ সাহও এস কে কোম্পানিতে চাকরি করতো। আর এই এস কে কোম্পানিতেই আগুনে পুড়ে মারা যায়। চন্দ্রা এক ভ্রু উঁচু করে বললো
- কেন?
দীপ্তি কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- শিমুল খন্দকারের সাথে এদের সম্পর্ক কি?

সাজ্জাদ উত্তর দিল
- এস কে কোম্পানি অপরাধ মূলক কাজের সাথে জড়িত আছে। তারা ইমপোর্ট এক্সপোর্ট ব্যবসার আড়ালে ড্রাগ আর অঙ্গ পাচারের ব্যবসা করে। একই কোম্পানিতে দুইদল কর্মচারী থাকে। একদল কর্মচারী জনসম্মুখে ইমপোর্ট এক্সপোর্টের কাজ করে। আর অন্য একদল কর্মচারী সবার আড়ালে ড্রাগ আর অঙ্গ পাচারের কাজ করে। পাচারকারী দলটি সম্পর্কে জনসম্মুখে ইমপোর্ট এক্সপোর্টের কাজ করা কর্মচারীরা কিছুই জানে না। কিন্তু একজন কর্মচারী। তার নাম ছিল আশিক, না আসিফ। আসিফ শাহ।

শুভ্র বিস্মিত চোখে সাজ্জাদের দিকে তাকায়। সাজ্জাদ সেদিকে খেয়াল করে না। সে বলতে থাকে
- আসিফ শাহ গিয়ে বিষয়টা জানায় আর্মি অফিসার মিষ্টার আহনাফকে। মিষ্টার আহনাফ জানায় তার বন্ধু মিষ্টার ইফতেখারকে। আরিফের সাহায্য নিয়ে দুই বন্ধু মিলে নেমে পড়ে বিষয়টা তদন্ত করতে। কোন ভাবে শিমুল খন্দকার বিষয়টা জানতে পারে। আর তিনি আমাকে নির্দেশ দেয় মিষ্টার আহনাফ আর মিষ্টার খন্দকারকে মারার।
- আর আসিফ শাহ। ওনার ডেড কি এক্সিডেন্ট ছিল?
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করে শুভ্র।
সাজ্জাদ উত্তর দিল
- না তাকেও খুন করা হয়েছে। 


চন্দ্রা অবাক হয়ে বললো
- কিন্তু তিনি তো আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছেন! তার সাথে আরও ছয়জন কর্মচারীও মারা গিয়েছিল আর প্রায় একুশ জন কর্মচারী আহত হয়েছে।
সাজ্জাদ চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বললো
- না আসিফ শাহকে প্ল্যান করে খুন করা হয়েছে। আর তার খুনিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বাকিদের জীবন নেওয়া হয়েছে।
শুভ্র নিজের ফোন থেকে নিজের বাবার একটা ছবি বের করে, সাজ্জাদের সামনে ফোন ধরে জিজ্ঞেস করল
- তিনি কি এই আসিফ শাহ?

সাজ্জাদ মাথা উপর নিচে নাড়িয়ে উত্তর দিল
- হ্যাঁ।
স্থীর হয়ে যায় শুভ্র। সে কখনো ভাবেনি, এখানে বন্ধুদের দাদা, নানাদের খুনিকে খুঁজতে এসে, নিজের বাবার মৃত্যুর অজানা সত্য কাহিনি জানতে পারবে। শুভ্রের ডান কাধে চন্দ্রা আর বাম কাধে দীপ্তি হাত রাখে। কাধে প্রাণ প্রিয় বন্ধুদের স্পর্শ পেয়ে, চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় শুভ্র আর তার বন্ধ চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে দুফোঁটা নোনা জল। 



তোয়ার ভার্সিটির নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়েছে আজ তিনদিন হলো। তোয়া একা একা লাস্ট ক্লাস শেষ করে, ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে মেইন গেইটের দিকে যাচ্ছে। আজকেও নিশা ক্লাসে আসেনি। গত দু'দিনও ক্লাসে আসেনি সে। নিশার বিয়ে পর থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত, না তোয়া নিশাকে কল করেছে আর না নিশা তোয়াকে কল করেছে। নিশার বিয়ের আগের দিনের রাতের পর থেকে তাদের দুজনের মধ্যে আর কোন কথা হয়নি। তোয়া নিশাকে কল করেনি কারণ, সে নিশার কথা রাখতে পারেনি। রিশান, নীলা, মিসেস শান্তিসহ সবাইকে সে বলে দিয়েছে যে, নিশা আর রিশান একে অপরকে ভালোবাসে। যদিও সেটা সে নিজের বান্ধবীর ভালোর জন্যই করেছে, তবু্ও নিজেকে কেমন যেন অপরাধী আপরাধী মনে হয় তার। তাই ইচ্ছে করলেও, এতোদিন নিশার সাথে কথা বলতে পারেনি সে। কিন্তু প্রথমদিন বান্ধবীকে ক্লাসে উপস্থিত না দেখেই তাকে কল করেছিল সে। নিশাকে কল করতেই ফোনের ভিতর থেকে যান্ত্রিক মেয়েলি কন্ঠস্বর জানায় ফোনটা বন্ধ আছে। কালকে কল করলেও একই কথা বলেছিল। আজও ক্লাসে নিশাকে না দেখে আবার কল করে সে। কিন্তু এবারেও ফোনের ওপাশ থেকে একই উত্তর আসে। খুব চিন্তা হয় তোয়ার। একেই নিশার ফোন বন্ধ বলছে, তার উপর ক্লাসেও আসছে না। খুব সমস্যায় না পড়লে নিশা কখনোই ক্লাস মিস করে না। চিন্তিত হয়ে সে রিশানকে কল করে সে। দ্বিতীয়বার রিং হতেই কল রিসিভ করে রিশান। সালাম দিয়ে, রিশান কেমন আছে? বাসার সবাই কেমন আছে? এমন দুই-এক কথা জিজ্ঞেস করে নিশার কথা জিজ্ঞেস করলে, রিশান বলে নিশা ভালো আছে। নিশা ক্লাস করছে না কেন? এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে, রিশান কোন উত্তর না দিয়ে ক্লাস শেষে তার সাথে দেখা করতে বলে। কিন্তু কেন? কি এমন কথা বলবে রিশান যা ফোনে বলা যাবে না? এসব ভাবতে ভাবতে তোয়া ভার্সিটির মেইন গেইট পেরিয়ে ফুটপাতে এসে দাঁড়াতেই, তার সামনে দাঁড়িয়ে অভি শান্ত কন্ঠে বললো
- সরি তোয়া, আমি জানি আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দেও। 

তোয়া অভিকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে, অভি তার ডান হাত ধরে ফেলে। অসহায় চোখে তোয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
- সরি বললাম তো।
তোয়া রাগী কন্ঠে বললো
- ছাড়ুন আমাকে।
অভি তোয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে, দৃঢ় কন্ঠে বললো
- ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম। তবে তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ক্ষমা না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এখানে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো।


বলেই অভি কানে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। আশেপাশের কিছু লোক তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অভি বেশিক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আশেপাশের সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখবে, কেউ কেউ তার ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়েও দিবে। তারপর বিষয়টা তার বাবার কানেও যাবে। তা সে কোন ভাবেই চায় না। অভির সামনে দাঁড়িয়ে বললো
- কান ছাড়ুন। আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৭০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন