উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৭১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৭২)
ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসে তার পাশে বসা সাড়ে তিন বছরের বাচ্চা মেয়ে নাদিয়ার সাথে বিল্ডিং ব্লক টয় দিয়ে খেলছে নিশা। তাদের দুজনকে দেখলে কেউ বলবেই না যে তাদের আজকে সকালেই পরিচয় হয়েছে। নিশা ভার্সিটির দ্বিতীয় ইয়ারে উঠতেই জব করতে চায়। কিন্তু নীলা রাজী হয় না। বলে লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে। ভার্সিটি শেষ হলে জব করতে। তাই আর জবের চেস্টা করেনি সে। কিন্তু নীলার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে ও কাউকে না জানিয়ে জব খুঁজতে শুরু করে সে। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও তার বোন নিজের বেতনের বেশিরভাগ টাকা তাদের দিয়ে দেক তা সে চায় না। আর যখন জানতে পারে যে তার বোনের বিয়ে রিশানের সাথে ঠিক হয়েছে, তখন আরও জোর দিয়ে চাকরির খোঁজ শুরু করে। বিয়ের তিনদিন আগে বেস্ট ট্রাভেল নামক এক ট্রাভেল এজেন্সিতে ইন্টারভিউ দিয়ে আসেছিল সে। বিয়ের পরের দিন মেইল পায়, যে তার জবটা হয়েছে। তার খালাতো বোনের চাচাতো ঝা জুঁই তার দুই মেয়ে সাদিয়া, নাদিয়াকে নিয়ে ঢাকায় একা থাকে। সাদিয়ার বয়স সাত বছর সে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখা পড়ে আর ছোট মেয়ে নাদিয়া বাসার পাশের অক্সফোর্ড ফাউন্ডেশন স্কুলে পড়ে। স্বামী সৌদি আরবের প্রবাসী। বাবার বাড়ি, স্বামীর বাড়ি নোয়াখালী হলেও, তার বাবার বাড়ির সবাই ঢাকাতেই থাকে। যদিও তার এক ননদ ছাড়া শশুড় বাড়ির সবাই নোয়াখালীই থাকে। তবে মেয়েদের লেখাপড়া করানোর জন্য সে ঢাকাতেই থাকে। একা একটা দুই বেড রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। সেখানেই আজকে সকালে সাবলেট উঠেছে নিশা। হঠাৎ যান্ত্রিক পাখির শব্দ হয়। এটা নাদিয়ার কোন খেলনার শব্দ না। এটা কলিংবেলের শব্দ। নিশা নাদিয়াকে বললো
- তুমি বসো আমি দরজা খুলে দিয়ে আসি।
নাদিয়া মাথা নাড়ালে নিশা মিষ্টি হেসে দরজা খুলতে চলে যায়। দরজা খুলে আগন্তুককে দেখে অবাক হয়ে নিশা বললো
- তোয়া তুই!
কোন কথা না বলে ঠাস করে নিশার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় তোয়া। থাপ্পড়টা বেশ জোরেই লেগেছে, সাথে সাথে হালকা লাল বর্ণের আভা ফুটে উঠে শ্যামারঙা মেয়েটার গালে। গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তোয়ার দিকে তাকায় নিশা। তোয়ার চোখ দুটোও আর্দ্র। নিশা শ্যামলা বলে তার গালের লাল আভাটা এতোটা স্পষ্ট হয়নি। তবে তোয়ার ফর্সা মুখ রাগে লাল টকটকে হয়ে আছে। তোয়ার গালে নিশার চড় মারা দেখে ছোট নাদিয়াও ভয়ে কান্না করে দেয়। সাদিয়া ঘুমিয়ে গিয়েছে, নাদিয়ার জন্য রান্নাঘরে দুধ গরম করতে থাকা জুঁই কলিংবেলের শব্দ শুনেই ড্রয়িংরুমে এসেছিল। নিশা তো তার পরিচিত সবাইকে চিনে না। তাই কে এসেছে তা সে দেখতে এসেছিল। নিশার তোয়াকে থাপ্পড় মারা দেখে, সেও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মেয়ের কান্না শুনে তার ধ্যান ভাঙে। দ্রুত পায়ে মেয়ের কাছে গিয়ে তাকে কোলে নিয়ে, অবাক হবে তোয়ার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল
- কে তোমরা আর তুমি নিশাকে এমন করে মারছো কেন?
তোয়া কোন উত্তর দেয় না। তোয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে রিশান, অভি। কিন্তু তারা কেউ কিছু বলে না। সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কাঁদো-কাঁদো কন্ঠে তোয়া বললো
- তুই একটা স্বার্থপর। চরম স্বার্থপর মেয়ে তুই।
নিশা কিছু বলে না চুপচাপ আগের মতো গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তোয়া পুনরায় বললো
- আচ্ছা, বাসা ছেড়ে যে একা একা চলে এলি বাকি সবার কথা না হয় বাধই দিলাম, একবার নিজের মা বোনের কথাও ভাবলি না। তাদের কি তোর জন্য কোন টেনশন হয় না?
নিশা গাল থেকে হাত নামিয়ে শক্ত কন্ঠে উত্তর দেয়
- আমি মাকে টেক্সট করে দিয়েছি।
হঠাৎ কোন কথা মনে পড়লে মানুষ যেমন মুখ লভঙ্গি করে, তোয়াও ঠিক তেমন মুখভঙ্গি করে বললো
- ওহ হ্যাঁ। সারাদিন পর এই রাত দশটার সময় তুই আন্টিকে টেক্সট করেছিস যে, তুই ঠিক আছিস, তোকে নিয়ে আন্টি যেন চিন্তা না করে, খোজাখুজি যেন না করে, তোর জব হয়েছে, সামনের মাসে নতুন বাসা নিয়ে আন্টিকে নিয়ে আসবি আর তুই রিশান স্যারের সাথে সংসার করতে চাস না। সারাদিন তো আন্টি তোকে নিয়ে কোন চিন্তাই করেনি, না! আর তোর এই মেসেজ পাওয়ার পর তো আন্টির চিন্তা করার কোন মানেই হয় না। তার মেয়ে ঠিক আছে কিন্তু কোথায় আছে তা তো তার না জানলেও চলে। আর রিশান স্যার তো অনেক বড় অপরাধী। আর তার আপরাধটা হচ্ছে, সে নিজেকে কষ্ট দিয়ে তার যে মা তাকে একা হাতে মানুষ করেছে তার কথা ভেবেছে। তার বাবা যেমন তার মাকে রেখে চলে গিয়েছে, তারও উচিত ছিল তার মাকে রেখে তোকে নিয়ে চলে যাওয়ার। তাই না!
নিশা তোয়ার কথা শুনে অবাক হয়। সে শুনেছে তার শশুড় তার শাশুড়িকে রেখে চলে গিয়েছে। কিন্তু রিশান যে তার মাকে খুশি করার জন্য তার বোনকে বিয়ে করার জন্য রাজী হয়েছে, তা সে জানতো না। কিন্তু এতে তার রিশানের উপর রাগ একটুও কমে না। রিশান সব কিছু তাকে খুলে বলতে পারতো। কিন্তু সে তা না করে তাকে ,,,,, সেই স্মৃতি মনে করতে চায় না সে। শান্ত কন্ঠে তোয়াকে বললো
- আমি এসব কিছুই জানি না।
তোয়া তাচ্ছিল্যের কন্ঠে বললো
- জানবি কি করে। জানতে হলে মানুষকে কথা বলার সুযোগ দিতে হয়। দিয়েছিলি?
নিশা নিজের ডান হাত রিশানের দিকে উচিয়ে, তোয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
- উনাকে এতো ভালো মনে করিস না। উনি আমার সাথে কি করেছে জানিস তুই।
তোয়া শান্ত কন্ঠে বললো
- আমি সব জানি।
নিশা চোখে তোয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
- তারপরও তোর ওনাকে ভালো মনে হয় কিভাবে?
তোয়া নম্র কন্ঠে বললো
- আমরা সবাই মানুষ। রাগ, অভিমান, ভয় প্রতিটা মানুষেরই আছে। তোকে খুব ভালোবাসে স্যার। হারিয়ে ফেলা ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে আবার হারিয়ে ফেলার ভয়, নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের ভালোবাসা বোঝাতে না পারার ব্যর্থতার রাগে উনি ভুল করেছে। খুব বড় ভুলই করেছে। তার জন্য উনি যথেষ্ট অনুতপ্ত।
তোয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো
- হে অনুতপ্ত। তা ওনার অনুতপ্ত কি পারবে আমার সেদিনের কষ্ট, যন্ত্রণাময় স্মৃতি মুছে দিতে?
তোয়া শক্ত কন্ঠে বললো
- এই কষ্টটার জন্য তো তুই নিজেও দায়ী।
তোয়া কথা শেষ হতে না হতেই, এতোক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা রিশান দু'পা এগিয়ে নিশার ঠিক সামনে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে অপরাধীর কন্ঠে বললো
- আমি জানি নিশা আমি যা করেছি তা অনেক বড় অপরাধ। তুমি যা শাস্তি দেও আমি তা মাথা পেতে নিবো। কিন্তু প্লিজ তুমি আমার থেকে আমার প্রিয় দুজন মানুষকে দূরে সরিয়ে দিও না। আমি বাবা ছাড়া বড় হয়েছি। আমি বুঝি বাবা না থাকার কষ্ট। তুমি জীবনে বাবার আদর পাওনি। তুমিও বুঝো। প্লিজ নিশা আমি প্রয়োজন হলে তোমার পায়ে ধরবো। প্লিজ আমাদের সন্তানকে বাবা আদর থেকে দূরে সরিয়ে দিয় না।
কথাগুলো বলতে বলতে কন্ঠস্বর কেঁপে উঠে বয়স উনত্রিশের শক্তপোক্ত যুবক রিশানের। চোখ দুটো দিয়েও গড়িয়ে পড়ে বেশ কয়েক ফোঁটা জল। একটু থেমে রিশান আবার বললো
- প্লিজ নিশা, প্লিজ। আমাকে আর একটা সুযোগ দেও। প্লিজ নিশা আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দেও।
রিশানকে এমন আসহায় রুপে দেখে আর তার কাতরোক্তি শুনে নিশা যেমন কষ্ট হয়, ঠিক তেমনি রিশানের বলা "আমাদের সন্তান" কথাটা শুনে তার কৌতুহল হয়। অবাক হয়ে প্রশ্ন করল
- আমাদের সন্তান মানে!
তোয়া নিশার কাধে হাত রেখে ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- আমি খালামনি হতে যাচ্ছি জানু, তুই পেগনেন্ট।
নিশা চোখ দুটো বড় বড় করে তোয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- সত্যি?
ঠোঁটে হাসির রেখা বজায় রেখেই তোয়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। নিশার সমস্ত শরীর যেন কাঁপতে শুরু করে। নিজের কম্পনরত হাত দিয়ে আলতো ভাবে স্পর্শ করে নিজের পেটে। অনুভব করার চেষ্টা করে তার আর তার ভালোবাসার মানুষটা অংশটাকে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৭৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন