উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান Bangla Golpo - Kobiyal - Romantic Golpo
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৭০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৭১)

রাঙামাটির আরণ্যক হলিডে রিসোর্টে শুভ্রের জন্য বুক করা রুমের টেবিলের সামনে থাকা কাঠের চেয়ারে বসে আছে শুভ্র। তার বরাবর সামনে রাখা সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে রোদ। তার পাশে খাটে বসে আছে দীপ্তি, চন্দ্রা আর আহান। দীপ্তির কিছুক্ষণ আগে বলা, " আমরা আজকেই ঢাকা চলে যাবো। " কথাটা শুনে আহান কপাল কুঁচকে বললো
- মানে কি! কালকে রাতে এসে ঘুমিয়েছি, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তোমরা তিনজন উধাও। এখন এই বিকেলে তোমরা কোথা থেকে এসে বলছো, এখন রেডি হয়ে নিতে ঢাকায় যাবে!

চন্দ্রা ছোট করে উত্তর দিল
- হ্যাঁ।
আহান আগের মতোই কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- আমরা এখানে পনেরো দিনের জন্য এসেছি, তা কি তোমাদের মনে আছে?
দীপ্তি উত্তর দিল
- হুম মনে আছে। আর আমরা এখানে হানিমুনে পনেরো দিন থাকবো।
আহান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- মানে?
রোদ বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি করতে চাও তোমরা, ক্লিয়ারলি বলবে?
দীপ্তি উত্তর দিল
- ওকে, প্রথম থেকে বলছি। আমাদের এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাজ্জাদকে ধরা।
আহান প্রশ্ন করল
- সাজ্জাদ কে?
দীপ্তি আবার উত্তর দিল
- আর্মি অফিসার মিষ্টার আহনাফ আর মিষ্টার ইফতেখার মানে আমার দাদা আর অভ্র ভাইয়ার দাদার খুনি।


আহান পুনরায় প্রশ্ন করল
- কিন্তু ওনাদের না এক্সিডেন্টে মৃত্যু হয়েছে?
শুভ্র শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল
- না। ওনাদের খুন করা হয়েছে।
আহান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কে করেছে?
এবার চন্দ্রা উত্তর দিল
- এস কে কোম্পানির মালিক শিমুল খন্দকার।
আহান কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কিন্তু কেন?
দীপ্তি উত্তর দিল
- এস কে কোম্পানি ইমপোর্ট এক্সপোর্ট বিজনেসের আড়ালে ড্রাগ আর অর্গান ট্রাফিকিং করে। একই কোম্পানিতে দুইদল এমপ্লয়ি আছে। একদল ইমপোর্ট এক্সপোর্টের করে আর অন্যদল ড্রাগ আর অর্গান ট্র্যাফিকিং করে। ইমপোর্ট এক্সপোর্টের কাজ করা এমপ্লয়িরা এইসব ইলিগাল বিজনেস সম্পর্কে কিছুই জানে না। কিন্তু শুভ্রর বাবা আসিফ সাহ এর ইলিগাল বিজনেস সম্পর্কে জানতে পেরে যায়। আসিফ আংকেল পরে দাদাভাইকে বলে। দাদাভাই বন্ধু দাদাভাইকে বলে।

রোদ প্রশ্ন করল
- বন্ধু দাদাভাই কে?
দীপ্তি উত্তর দিল
- অভ্র ভাইয়া দাদা আমার দাদাভাইয়ের বন্ধু ছিল দেখে তাকে আমরা বন্ধু দাদাভাই বলে ডাকতাম।
রোদ পুনরায় প্রশ্ন করল
- শুভ্রর বাবাকেও কি মারা হয়েছে?
দীপ্তি পুনরায় উত্তর দিল
- হ্যাঁ। শুধুমাত্র তাকে মারার জন্যই কম্পানিতে আগুন লাগানো হয়। যেখানে সে ছাড়া আরও ছয়জন এমপ্লয়ি মারা গিয়েছিল।


আহান কৌতুহলী কন্ঠে বললো
- শুভ্রর বাবা না হয় সাধারণ এমপ্লয়ি ছিল। কিন্তু মিষ্টার আহনাফ আর মিষ্টার ইফতেখার তো আর্মি অফিসার ছিল। তাদের মেয়ে ফেলা হয়েছে আর কেউ কিছু বললো না, এটা কিভাবে সম্ভব!
দীপ্তি শক্ত কন্ঠে বললো
- তারা আর্মি অফিসার ছিল, কিন্তু রিটায়ার্ড প্রাপ্ত। আর দেশে তো ঘুসখোরের অভাব নেই। নিশ্চয়ই শিমুল খন্দকার উপর মহলের কাউকে মোটা আঙ্কের ঘুস খাওয়ায়।
রোদ স্বাভাবিক কন্ঠেই জিজ্ঞেস করল
- তা তোমাদের এখন প্ল্যান কি?
চন্দ্রা উত্তর দিল
- আমরা এস কে কোম্পানিতে জয়েন করে প্রমাণ জোগাড় করবো।
আহান বিষ্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি! মাথা ঠিক আছে তোমাদের। ওখানে কতো বিপদ হতে পারো জানো তোমরা?
দীপ্তি কঠিন কন্ঠে উত্তর দিল
- আমার দাদাভাই আর বন্ধু দাদাভাইকে মেরেছে, শুভ্রের বাবাকে মেয়ে শুভ্রকে এতিম করেছে, ছয়জন জীবিত নির্দোষ এমপ্লয়িকে আরও কত কত মানুষকে মেরেছে এই শিমুল খন্দকার তার কোন হিসাব নেই। একে আমি এমনেই ছেড়ে দিব!

রোদ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল
- আমরা কি করবো?
দীপ্তি দাত বের করে হেসে বললো
- কিছুই না। যাস্ট আমাদের বসুন্ধরার ফ্লাটে লুকিয়ে থেকে সবাইকে বলবেন আপনারা হানিমুনে আছেন।


- এতোক্ষণে তো বাসায় এসে পরার কথা। আসছে না কেন? রাস্তায় আবার অজ্ঞান টজ্ঞান হয়ে পড়লো না তো? ফোন তো বন্ধ এখনো বলছে। কতো বার না করেছি আজকে ভার্সিটিতে যাসনা। কালকে জামায়ের সাথে যাস, কিন্তু শুনল না।
চিন্তিত হয়ে মিসেস শিখাকে কথাটা বললো মিসেস শান্তি। মিসেস শিখাও চিন্তিত কন্ঠে বললো
- ওর বান্ধবীকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস কর তো। নাম্বার আছে না?
- হ্যাঁ আছে, দাঁড়া দিচ্ছি।

কথাটা বলেই মিসেস শান্তি তোয়ার নাম্বারে কল করার জন্য নাম্বারটা বের করতেই কলিংবেলের শব্দ হয়। কলিংবেলের শব্দ শুনে মিসেস শিখা হাসি মুখে বললো
- ওইতো বউমা এসে পড়েছে। আমি গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে আসছি।
কথাটা বলেই মিসেস শিখা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দুই হাত ভর্তি মিষ্টির পেকেট নিয়ে খুশি মুখে বাসায় ঢুকে রিশান। ছেলেকে অফিস টাইমে বাসায় আসতে দেখে যেটুকু না অবাক হোন তিনি তার থেকে বেশি অবাক হোন ছেলেকে এতোগুলো মিষ্টির পেকেট নিয়ে বাসায় আসতে দেখে তার থেকে বেশি অবাক হোন। তার ছেলে মিষ্টি বেশি পছন্দ করে না আর না সে নিজে মিষ্টি খেতে ভালোবাসে। সে মিসেস শান্তির সম্পর্কে যতটুকু জানে সেও খুব একটা মিষ্টি খায় না। রইলো বাকি নিশা। সে জানে না নিশা মিষ্টি পছন্দ করে কি না। যদি করেও তাও এতো মিষ্টি নিশা খেতে পারবে না। তাহলে এতো মিষ্টি দিয়ে কি করবে? কৌতুহলী হয়ে তিনি ছেলেকে জিজ্ঞেস করল
- তুই এখন বাসায়? অফিসে যাসনি? আর এতো মিষ্টি এনেছিস কেন?

রিশান হাসি মুখে উত্তর দিল
- না আমি রিপোর্ট দেখিয়ে সোজা বাসায় চলে এসেছি।
মিসেস শিখা পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- রিপোর্টে কি এসেছে?
রিশান হাসি মুখেই পুনরায় উত্তর দিল
- নিশাকে ডাক বলছে।
মিসেস শিখা স্বাভাবিক কন্ঠে বললো 
- নিশা তো সকালে ভার্সিটির জন্য বের হয়েছে। এখনো বাসায় আসেনি আর ফোনও বন্ধ বলছে।


রিশান ভ্রু কুঁচকে বললো
- কি! কিন্তু নিশা তো আজকে ক্লাসে যায়নি।
মিসেস শান্তি রিশানের দু'পা এগিয়ে এসে বললো
- ও তো বললো ক্লাস করতে যাচ্ছে না, সেমিস্টার ড্রপ দিতে যাচ্ছে।
রিশান কোন কথা না বলে মিষ্টির পেকেটগুলো সোফার টেবিলের উপর রাখে। পকেট থেকে ফোন বের করে, কামাল লিখে সেভ করা নাম্বারে কল করে। একবার রিং হতেই কামাল নামের ব্যাক্তিটি কল রিসিভ করে বললো
- আসসালামু আলাইকুম রিশান স্যার।
ফোনের এপাশ থেকে রিশান বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালামু কামাল। কেমন আছো?
কামাল হাসি খুশি কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- ভালো স্যার। আপনি কেমন আছে?
রিশান স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আচ্ছা কামাল আজকে কি কোন স্টুডেন্ট সেমিস্টার ড্রপ করতে এসেছিল?

কামাল একটু সময় নিয়ে বললো
- না তো স্যার। আমার জানামতে তো আজকে কেউ সেমিস্টার ড্রপ করতে আসেনি।
রিশানের চিন্তা বেড়ে যায়। কলেজে যায়নি! তাহলে মেয়েটা অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় গিয়েছে? চিন্তিত কন্ঠেই কামাল বললো
- ওহ, আচ্ছা।
বলেই ফোন কেটে দিয়ে, তার মা আর শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- ও বাসা থেকে বের হয়েছে কখন?
মিসেস শিখা উত্তর দিল
- তুই বের হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই তো বের হয়েছে। এই ধর সারে নয়টার দিকে।
রিশান পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- ফোন বন্ধ বলছে কয়টা থেকে?
এবার মিসেস শান্তি উত্তর দিল
- ও বাসায় আসছে না দেখে, দুইটার দিকে ফোন দিয়েছিলাম। তখন থেকেই ফোন বন্ধ পাচ্ছি।

রিশান বিস্মিত কন্ঠে বললো
- মানে কি! দুইটা থেকে ফোন বন্ধ আর এখন বাজে সারে চারটা। তোমরা আগে আমাকে বললে না কেন?
মিসেস শান্তি শান্ত কন্ঠে বললো
- ভেবেছিলাম হয়তো ফোনে চার্জ নেই তাই বন্ধ, চলে আসবে এখনি।
মিসেস শিখা চিন্তিত কন্ঠে বললো
- এই শরীর নিয়ে মেয়েটা কোথায় গেল।


রিশান দরজার দিকে যেতে যেতে বললো
- আমি বাহিরে গিয়ে খুঁজে দেখছি। ও বাসায় এলে তোমরা আমাকে ফোন করে বল।
মিসেস শান্তি আর মিসেস শিখাও দরজার দিকে এগিয়ে যায়। রিশান লিফটের বাটনে চাপতে চাপতে তোয়াকে কল করে। লিফট চলে আসে, তোয়াও কল রিসিভ করে। রিশান লিফটে উঠতে উঠতে বললো
- হ্যালো তোয়া। নিশা ,,,,,, 

লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৭২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন