উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৭৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৭৪)
দরজা খুলে মিষ্টার আফরানের স্টাডি রুমে ঢুকে অভ্র। কালকে রাতে মিষ্টার আফরানই ফোন করে বলেছে সকালে জগিং করার সময় বাসায় এসে তার সাথে দেখা করতে। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে, সকালে আসলেই জানতে পারবে। অভ্র আর কথা বাড়ায় না। সে জানে খুব দরকারী কথা না হলে মিষ্টার আফরান তাকে কখনোই এভাবে ডাকতো না। তাই সকালবেলা জগিং করতে না গিয়ে এখানে এসেছে সে। স্টাডি রুমের ভিতরে ঢুকে রুমের ভিতরে মিষ্টার আফরানের পাশে নিজের বাবাকে বসে থাকতে দেখে কপালে ভাঁজ ফেলে অভ্র। ভ্রু কুঁচকে মিষ্টার আসাদকে প্রশ্ন করল
- বাবা তুমি, এখন এখানে কি করছো?
সব সময় হাস্যোজ্জ্বল থাকা মিষ্টার আসাদ গম্ভীর কণ্ঠে বললো
- আমিই আফরানকে বলে তোকে এখানে ডাকিয়েছি।
অভ্র নিজের কুঞ্চিত ভ্রু আরও কুঁচকে পুনরায় প্রশ্ন করল
- কেন?
মিষ্টার আফরান আগের নেয় গম্ভীর কন্ঠেই উত্তর দিল
- তুই কালকে যে প্রশ্ন করেছিলি তার উত্তর দিতে।
অভ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- তার মানে তোমরা জানো যে দাদাভাইদের মার্ডার করা হয়েছে!
মিষ্টার আসাদ ছোট করে উত্তর দেয়
- হ্যাঁ।
অভ্র দ্বিগুণ অবাক হয়ে বললো
- তাহলে তোমরা অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে চুপ করে বসে আছো কেন? আর কেনই বা আমাদের এই সত্য কথাগুলো জানাওনি। বিষেশ করে খালু আপনি, আমি হান্ডেট পার্সেন্ট শিউর আপনি জানেন যে দীপ্তি দাদাভাইদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য লীস্থ এ জয়েন করেছে আর এখন ছদ্মবেশে এস কে কোম্পানিতে আছে। তারপরও কেন আপনি আমাদের কাউকে কিছু বলেননি?
মিষ্টার আফরান ভারী কিন্তু নিম্ন স্বরে বললো
- কারণ বাবা আর আংকেল নিষেধ করে গিয়েছে।
অভ্র কৌতুহলী হয়ে বললো
- দাদাভাইরা না করে গিয়েছিল, কিন্তু কখন আর কিভাবে? আমি যতটুকু জানি তাদের স্পট ডেড হয়েছে। তাহলে কি তারা আগে থেকেই জানতো যে তাদের মেরে ফেলা হবে? যখন তারা আগে থেকেই জানতো তাহলে সেরকম প্রটেকশন নিলো না কেন?
মিষ্টার আসাদ উত্তর দেয়
- প্রতিটা ভালো কাজ করতে গেলে বাধা আসে। আর সেই বাধা অতিক্রম করে সামনের দিকে আগালেই জন্ম নেয় শত্রুর। বাবা আর আংকেলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তাদের এতো ভালো কাজের ফলে জন্ম নিয়েছে বেশ কিছু শত্রুর। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তি আর তারা সবসময় তাদের মারার জন্য ওঁতব পেতে থাকতো। কয়জনের কাছ থেকে কতক্ষণ প্রটেকশন নিতো তারা! তারা মারা যাওয়ার বেশ কয়েক বছর আগেই আমাকে আর আফরানকে প্রমিজ করায়। তাদের হঠাৎ মৃত্যু হলে, আমরা যেন তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করি। তাদের মৃত্যুটা যেন স্বাভাবিক ভাবে নেই। অন্যথায় আমাদের বংশ নির্বংশ হয়ে যাবে।
অভ্র প্রশ্ন করল
- তার মানে দাদাভাইদের মৃত্যুতে শিমুল খন্দকার ছাড়াও আরও অনেকে জড়িত আছে?
মিষ্টার আফরান উত্তর দিল
- শিমুল খন্দকার তো মাঠ পর্যায়ের একটা গুটি মাএ। আসল মাথা ছিল অন্য কেউ।
অভ্র পুনরায় প্রশ্ন করল
- কে সে?
মিষ্টার আফরান পুনরায় উত্তর দিল
- মন্ত্রী রাশিদ তাজওয়ার আর আর্মি অফিসার আনসার পাটোয়ারী।
অভ্র কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- মন্ত্রী রাশিদ তালুকদার! যিনি দুই বছর আগে মারা গিয়েছেন।
মিষ্টার আফরান স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো
- হে আর আনসার পাটোয়ারীও রিটায়ার্ড নিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছে। তাই আমি তোমাদের কোন প্রকার বাধা দেইনি। তবে শিমুল খন্দকারও কিন্তু কম না।
মিষ্টার আফরানের কথায় সায় দিয়ে মিষ্টার আসাদও বললো
- হ্যাঁ, তোদের আরও সাবধানে থাকা উচিত।
অভ্র চোখ দুটো ছোট ছোট করে মিষ্টার আফরান আর মিষ্টার আসাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- রোদ ভাইয়া সম্পর্কেও তোমরা সবকিছু জানো, তাই না?
মিষ্টার আফরান ছোট করে উত্তর দিল
- হ্যাঁ।
অভ্র কপাল কুঁচকে বললো
- কোথা থেকে জেনেছ? তোমাদের হায়ার করা ডিটেকটিভ এর পক্ষে তো রোদ ভাইয়ার আসল পরিচয় জানা সম্ভব না।
এতক্ষণ গম্ভীর মুখ করে রাখা মিষ্টার আসাদ গাম্ভীর্যের খোলস থেকে বের হয়ে, হাস্যজ্জ্বল মুখ করে বললো
- তোর কি মনে হয় মুরাদের থেকে তুই একাই ইনফরমেশন পেতে পারিস?
অভ্র বাকা চোখে মিষ্টার আসাদের দিকে তাকিয়ে বললো
- তুমি আবার ছেলেটাকে ব্লাকমেইল করেছ।
মিষ্টার আসাদ হেসে বললো
- আমার হসপিটালের ডাক্তারের প্রেমে যেহেতু পড়েছে, তখন আমার জন্য তো কিছু করতেই হবে।
মিষ্টার আসাদের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মিষ্টার আফরান কৌতুহলী হয়ে অভ্রকে জিজ্ঞেস করল
- কিন্তু রোদের সম্পর্কে সবকিছু জানার পরও তুমি দীপ্তিকে এই সম্পর্কে কিছু বলনি কেন?
অভ্র স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- কারণ রোদ ভাইয়া না করেছেন। উনি চায় দীপ্তি নিজের ব্রেইন ইউজ করে তার পরিচয় জানুক।
মিষ্টার আসাদ বললো
- এটা আমাদের দীপ্তি জন্য কোন ব্যাপারই না। কিছুদিন যেতে দে দেখবি ঠিক বের করে ফেলেছে।
দেয়াল ঝুলানো বড় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অভ্র বললো
- আমি আসি। তূবার আজকে এক্সাম আছে, ওকে নিয়ে যেতে হবে।
বলেই অভ্র ঘুরে দরজার দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে মিষ্টার আফরান বললো
- তোমার আর রোদের ভরসাতেই কিন্তু আমি দীপ্তিদের বাধা দেইনি।
অভ্র ঘুরে মিষ্টার আফরানের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললো
- আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, আমরা থাকতে ওদের কিছু হবে না।
কথাটা বলে আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় অভ্র।
ফর্সা গায়ে ফরমাল ড্রেস। সোনালী রঙের চুলগুলো বাম দিকে সিঁথি করা। দেখলে কেউ বলবেই না যে এই শুভ্র। বলবে এ কোন বিদেশি ছেলে। অবশ্য ছন্দবেশও নিয়েছে তাই। গেটাপের পাশাপাশি পরিচয়ও চেন্স করেছে। নাম রিওমা এচিজেন। বাবা ননজিরো এচিজেন আর মা লায়লা সুলতানা পলি। বাবা জাপানিজ আর মা বাংলাদেশী। লায়লা সুলতানা পলি জাপানে যায় এমএসসি করতে। সেখানে তার পরিচয় হয় তার সিনিয়র ননজিরো এচিজেনের সাথে। বন্ধুত্ব, ভালোবাসা তারপর বিয়ে করে দুজনে। দুজনে বাংলাদেশে এসে নিজেদের শান্তির নিবাস গড়ে তুলে। একদিন দুপুরে রিওমা স্কুলে ছিল আর তার বাবা ছিল অফিসে। তখন রান্না করতে গিয়ে আগুন লেগে মারা যায় লায়লা সুলতানা পলি। বছরে খানেক আগে ননজিরোও মারা যায়। একাই থাকে রিওমা এচিজেন। আর এই হলো এই কোম্পানিতে শুভ্রের জীবন কাহিনি। শুভ্রের থেকে কিছুটা দূরেই একটা টেবিলে বসে নিজের কো-ওয়ার্কারদের সাথে লাঞ্চ করছে আর কথার ছলে এস কে কম্পানির সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করে চন্দ্রা। তাকে দেখেও কেউ বুঝতেই পারবে না যে এ চন্দ্রা। কোমর পর্যন্ত লম্বা চুলের পরিবর্তে কাধ পর্যন্ত চুল। চোখে হালকা খয়েরী রঙের চোখের মনি আড়াল করে রেখেছে কালো লেন্স। হালকা গোলাপি রঙের ঠোঁটের উপর বাম দিকে একটা ছোট নকল তিল বসানো, যা তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েকগুণ বেশি। তিলটা অবশ্য যাতে চন্দ্রাকে বাজে দেখায় তাই এঁকেছিল দীপ্তি। বেচারী দীপ্তি এস কে কোম্পানিতে ক্লিনার হিসেবে জয়েন করেছে। চন্দ্রা বেশি পরিষ্কার, এই ক্লিনারের কাজ তাকে দিয়ে হবে না। আর আইটি ডিপার্টমেন্টে ঝুঁকিটা বেশি, সেখানে স্ট্রং জনকে থাকা প্রয়োজন। সেজন্য সেখানে শুভ্রকে দেওয়া হয়েছে। এক প্রকার বাধ্য হয়েই দীপ্তিকে এই ক্লিনারের কাজ করতে হচ্ছে। তাছাড়াও চন্দ্রা ভালোবাসা সম্পর্কে এক্সপার্ট। সবাইকে ভালোবাসা সম্পর্কে বিভিন্ন টিপস দিতে খুব ভালো পারে সে। আর তার এই গুন দ্বারা খুব সহজেই মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে নিতে পারে। তাই চন্দ্রার জন্য হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে জয়েন করাই পারফেক্ট। আজকে দুই সপ্তাহ ধরে তারা এই কোম্পানিতে আছে। দীপ্তি ক্লিন করার নাম করে বিভিন্ন যায়গায় ক্যামেরা বসিয়েছে। তার মাধ্যমে তারা অনেক প্রমাণও যোগার করেছে। কিন্তু একটা ইনফরমেশনই পাচ্ছে না তারা। তা হলো শুভ্রের বাবা যে এই অফিসে চাকরি করতো বা এই অফিসে আগুন লেগে মারা গিয়েছে সেই সম্পর্কে কোন ডকুমেন্ট নেই।
শুধু অভ্রের বাবারই না, আগুন লাগার আগের কোন এমপ্লয়িরই ইনফরমেশন নেই। সব নাকি আগুনে পুড়ে গিয়েছে। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরও যেহেতু শুভ্রের বাবার বন্ধু ইমতিয়াজ মিঞা এখানে বেশ কিছু মাস চাকরি করতো, তাই তার কিছু ডিটেইলস পেয়েছে তারা।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৭৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন