উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৭৬তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৭৭)
বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বসে পড়ছে তোয়া। তখনই ক্রিং ক্রিং শব্দ করে তার পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠে। পড়ার সময় কখনোই ফোনের স্কিনে দেখে কল রিসিভ করে না তোয়া। আজকেও কে কল করেছে তা না দেখেই, কলটা রিসিভ করে কানে দিয়ে বললো
- আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?
ফোনের ওপাশে থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। মহারানী আমি আপনার প্রেমিক বলছিলাম। আপনি কি দয়া করে আমার সাথে দুটো কথা বলবেন?
কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো
- না। আমি কোন প্রেমিক পুরুষ টুরুষের সাথে কথা বলবো না।
ফোনের ওপাশে থাকা অভির মুখটা মলিন হয়ে যায়। অভির মলিন মুখ কল্পনা করতে করতে তোয়া মুচকি হেসে পুনরায় বললো
- আমার মহারাজা আছে।
মুহূর্তেই অভির মলিন মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠে। আনন্দিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- তাহলে কি আপনি আপনার মহারাজের সাথে কথা বলবেন?
তোয়া একটু ভাবার অভিনয় করে বললো
- উম, বলতে পারি তবে একটা শর্তে।
অভি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি শর্ত?
তোয়া স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- মহারাজকে তার শশুড়ের কাছে বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে আসতে হবে।
শর্তের কথা শুনে অভি একটু চিন্তায় পরে গিয়েছিল। কিন্তু শুধু শশুড়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে হবে কথাটা শুনেই সে খুশি হয়ে বললো
- এটা তো খুব খুশির খবর।
অভির কথা শেষ হতে না হতেই তোয়া বললো
- এখনই এতো খুশি হয়োনা। আমার শর্ত এখনো শেষ হয়নি।
অভি মলিন কন্ঠে বললো
- আরও শর্ত আছে, আচ্ছা বল।
তোয়া একটু নড়েচড়ে আরও একটু আরাম করে বসে বললো
- বাবার কাছে বিয়ের কথা বলে, সাথে এটাও বলবে যে তুমি আলরেডি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছ।
অভি একটু জোরেই বললো
- কি! অসম্ভব। তোমার বাবা যে জল্লাদ। নিজের ছেলেকেই ছাড়ে না। সেখানে আমাকে তো ডায়রেক্ট শূলে চড়াবে।
তোয়া রাগী কন্ঠে বললো
- কি বললেন আপনি বাবাকে।
উত্তেজিত হয়ে শশুরকে তার মেয়ের সামনে জল্লাদ বলে ফেলেছে কথাটা বুঝতে পেরেই শান্ত নম্র কন্ঠে বললো
- না মানে বলছিলাম কি তোয়া, ওটা তো আমাদের প্রাইভেট বেপার না। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আবার তা মিটেও গিয়েছে। এখানে আমার শ্রদ্ধেয় শশুর মশাইকে আনাটা কি ঠিক হবে।
তোয়া দৃঢ় কন্ঠে বললো
- না এটাই আপনার শাস্তি।
অভি অনুনয় করে বললো
- প্লিজ তোয়া, তুমি আমাকে অন্য কোন শাস্তি দেও। এটা বললে তোমার বাবা আমাকে এই শাস্তি ওই শাস্তি দিবে। ফলে আমাদের বিয়ে আরও পিছিয়ে যাবে। যার ফলে তূবা আর অভ্র ভাইয়ার বিয়েটাও পিছিয়ে যাবে। তাদের কথাটাও একটু ভাবো।
অভির কথাটাও ঠিক, তাই তোয়া বললো
- আচ্ছা যান আপনাকে এটা বলতে হবে না। আপনাকে পরে আমিই শাস্তি দিবো।
অভি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আপাতত তো তার বিয়েটা হচ্ছে, তার মহারানী তার কাছে আসছে। পরের শাস্তি পরে দেখা যাবে।

দ্বিতীয়বারের মতো প্লেনে বসে আছে তিথি। প্রথমবার প্লেনে উঠেছিল বাংলাদেশ থেকে সুইজারল্যান্ডে আসার সময় আর এখন দ্বিতীয়বার উঠেছে সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য। একমাস দশদিন পর তারা দেশে ফিরছে। এই একমাস দশদিন তারা সুইজারল্যান্ডেরের ইন্টারলাকেন, লুসার্ন, জুরিখ, টিসিনো, জার্মাট, জেনেভা, বাসেল আর লাউসান্নে থেকেছে। প্রতিটা জায়গায় পাঁচদিন করে থেকে ঘুরে দেখেছে। তার মতো একজন সাধারণ ঘরের মেয়ের জন্য এই সবকিছু ছিল স্বপ্নের মতো। তার বাবা থাকলে আজ খুব খুশি হতো। বাবা সব সময় বলতো তার মেয়েকে রাজপুত্রের মতো ছেলের কাছে বিয়ে দিবে। সে তার মেয়েকে রাজরানী করে রাখবে। ঠিকই তার রাজপুত্রের মতো ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে, সেও রাজরানীর মতোই আছে। তবে আফসোস একটাই, তার এই সুখ দেখার জন্য তার বাবা বেঁচে নেই। বাবা-মা থাকলে আজকে কতো খুশি হতো। ধপাস করে তিথির পাশের সিটে বসে আয়ান। মুখটাকে দুঃখী দুঃখী করে বললো
- তিথি আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে।
তিথি বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কেন? শরীর খারাপ লাগছে তোমার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?
আয়ান তিথির দিকে তাকিয়ে, মুখটা বেজার করে বললো
- শরীর ভালোই আছে, তবে মনে কষ্ট হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডকে খুব মিস করছি। আমাদের কতো স্মৃতি আছে এখানে। আমরা সামনের মাসে আবার আসবো সুইজারল্যান্ডে হানিমুন করতে।
তিথি চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো
- মানুষ কয়বার হানিমুনে যায়।
- যতোবার ইচ্ছা।
কথাটা বলেই হেসে তিথির ডান হাত টেনে নিজের কোলের মধ্যে নেয়। তিথি কৌতুহলী চোখে আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি করছ?
আয়ান কোন উত্তর না দিয়ে, তার ফর্সা গায়ে কালো কোটের নিচে পরা সাদা শার্টের পকেট থেকে একটা খুব সুন্দর একটা ব্রেসলেট বের করে। খুব যত্নসহকারে কোলের উপর রাখা তিথির ডানহাতে পরিয়ে দেয়। তিথি ব্রেসলেটটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- এটা কখন কিনলে?
- তোমাকে রেখে ওয়াসরুমে গিয়েছিলাম না, তখন। পছন্দ হয়েছে?
- খুব সুন্দর। কিন্তু এতো কিছু কেনার পরও, তুমি আবার কেন এটা কিনতে গেলে?
- কি করবো সুন্দর কিছু দেখলেই মনে হয়, এটা আমার বউয়ের জন্যই বানানো হয়েছে আর আমার বউয়ের জিনিস কি আমি ফেলে রেখে আসতে পারি।
- পাগল একটা।
আয়ান মিষ্টি হেসে বললো
- হুম, শুধু আমার বউয়ের জন্য।

পিটপিট করে চোখ জোড়া খুলে দীপ্তি। চোখ খুলেই দেখে তার সামনের একটা চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে বসে আছে চন্দ্রা। চন্দ্রাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে, দীপ্তি অস্থির কন্ঠে তাকে ডেকে উঠলো
- চন্দ্রা, এই চন্দ্রা। চন্দ্রা উঠ। চন্দ্রা।
কিন্তু চন্দ্রার কোন সারাশব্দ নেই। দীপ্তি উঠে চন্দ্রার কাছে যাওয়ার জন্য উঠতে নিলেই খেয়াল করে তার হাত পা রশি দিয়ে বাধা। পাশে চোখ পড়তেই দেখে তার পাশে আরেকটা চেয়ারে একই ভাবে বাধা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে শুভ্র। তারা ঠিক কোথায় আছে তা বুঝতে আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলয় দীপ্তি। এটা কোন বন্ধ দোকান মনে হয়। কারণ দীপ্তির সামনের পুরো দেয়ালের জায়গায় আছে সাটার। বাকি তিনপাশেই আছে দেয়াল। ডানপাশের দেয়ালে আছে একটা জানালা, পিছনের দেয়ালে একটা দরজা আর বামপাশের দেয়ালে কিছু নেই। ঘরে মধ্যে শুধু চারটা কাঠের চেয়ার আছে। যার মধ্যে থেকে তিনটায় তারা তিনজন বাধা অবস্থায় আছে আর একটা চেয়ার খালি। ধুলো ছাড়া ঘরে আর কোন কিছু নেই। দীপ্তি মনে করতে থাকে তারা এখানে কিভাবে এসেছে? তার যতটুকু মনে পরে, তারা শুভ্রের বাবার বন্ধু মিষ্টার ইমতিয়াজের বাসায় গিয়েছিল। তাকে শুভ্রের বাবার মৃত্যুর রহস্য কথা জানিয়ে, তাদের সাহায্য করতে বলে। তিনিও কান্না জড়িত কন্ঠে তার বন্ধুর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি দিবে বলেন প্রতিজ্ঞা করে। তারপর তাদের জন্য নিজ হাতে চা বানিয়ে নিয়ে আসে। তারা গল্প করতে করতে চা খায়। তারপর! তারপর কি হয়েছে তা আর মনে করতে পারে না দীপ্তি। তাহলে কি তাদের চায়েই কিছু মিশানো ছিল? তাহলে কি মিষ্টার ইমতিয়াজও শিমুল খন্দকারে সাথে যুক্ত। ইস কতো বড় একটা ব্লান্ডার করে ফেললো তারা। না এখন এখানে বসে আফসোস করলে চলবে না। সময় নষ্ট না করে তাদের তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের হতে হবে। কথাটা ভেবেই দীপ্তি নিচু স্বরে তার পাশে থাকা শুভ্রকে ডাকতে থাকে
- এই শুভ্র, শুভ্র। এই শুভ্র।
দীপ্তির ডাক শুনে ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায় শুভ্র।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৭৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন