উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৮২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৮৩)
- আমি বড় হয়ে অনেক স্ট্রং হবো। যাতে কাব্য ভাইয়াকে প্রটেক্ট করতে পারি।
সেদিন অভ্রের করা প্রশ্ন, "বড় হয়ে কি হবে?” এর এই উত্তরই দিয়েছিল এগারো বছরের ছোট কুহু। সেদিনের কথা আজকে বারবার মনে পরছে তার। কুহু তার ইচ্ছে পূরণ করেছে, সে ঠিকই স্ট্রং হয়েছে। তা না হলে এমন একটা সময়ে কেউ ঠিক থাকতে পারে না। সেই জায়গায় একা হাতে মেয়েটা কতো কিছু সামলাচ্ছে। নিজের প্রাণঅধীক প্রিয় ছেলের এই অবস্থা দেখে মিসেস কবিতা নিজেকে সামলাতে পারে না, অজ্ঞান হয়ে যায়। ঘন্টা খানিক পর জ্ঞান ফিরলেও ছেলের কথা মনে হতেই, আবারও অজ্ঞান হয়ে যায়। তাই তাকে ঘুমের ঔষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে অন্য একটা কেবিনে। মিসেস মায়া আর মিসেস পদ্মা সেই কেবিনেই নামাজ পড়ছে। কাব্যের কেবিনের সামনে থ মেরে বসে আছে মিষ্টার আতিক। তার পাশে বসে বসে কান্না করছে কিরণ। মিষ্টার রাহুল চোখও শুষ্ক নেই। মিষ্টার সফিকের তো চিন্তায় পাগল প্রায় অবস্থা। কাব্যর কিছু হলে সে কষ্ট পাবে। খুব কষ্ট পাবে। কিন্তু তার মেয়ের কিছু হলে সে যে বাঁচবে না। তার মেয়েটা যে তার প্রাণ ভোমরা। নিজের মানুষের এমন অবস্থা দেখে যেখানে বড় বড় মানুষগুলো ঠিক নেই, সেখানে কুহু মাথা ঠান্ডা রেখে একা হাতে সবকিছু সামলাচ্ছে। সবাইকে শান্তনা দেওয়া, ডাক্তারদের সাথে কথা বলা। এমনকি রক্তের প্রয়োজন হলে কাব্যের কোন এক জুনিয়র, কি যেন নাম! হ্যাঁ মনে পড়েছে পাপন। পাপনকে ফোন করে ঘন্টা খানিকের মধ্যে চার জন ডোনাট নিয়ে আসে! মনে মনে কথাগুলো ভাবতেই অবাক হয় সে। মেয়েটা কাব্যকে খুব ভালোবাসে। সে মনে মনে খুব করে চায় কাব্য যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। তার যেটুকু করার সামর্থ্য ছিল সে করেছে। এর বেশি সামর্থ্য তার নেয়। থাকলে হয়তো সে এখনি কাব্যের জ্ঞান ফিরিয়ে নিয়ে আসতো। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কুহু আর তূবার কাছে যায় সে। তূবা অভ্রকে দেখেই জিজ্ঞেস করল
- কাব্য ভাইয়ার কি অবস্থা?
অভ্র তূবার দিকে তাকিয়ে একনজর তাকিয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো
- আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।

আজকে দীপ্তিদের ভার্সিটিতে র্যাগ ডে। শুধু মাস্টার্সের স্টুডেন্টদের নিয়ে ছোট করে হচ্ছে আজকের এই অনুষ্ঠান। অন্যান্য স্টুডেন্টদের রুটিন অনুসারে ক্লাস হচ্ছে। অনুষ্ঠানে মেয়েরা পড়েছে সাদা কামিজ, লাল সেলোয়ার আর লাল ওড়না। ছেলেরা পড়েছে সাদা টি-শার্টের সাথে নীল রঙের জিন্সের প্যান্ট। দীপ্তি, চন্দ্রা আর শুভ্রও এই রকমেরই জামা পরেছে। ভার্সিটির হলরুমে অনুষ্ঠানটা হচ্ছে। যাতে অন্য স্টুডেন্টদের অসুবিধা না হয়। স্টেজে অ্যাঙ্করিং করছে দীপ্তিদের সাথে পড়া সুমি আর আকিব। হাতে মাইক নিয়ে সুমি বললো
- এখন আমাদের সবার প্রিয় তিনজন স্টেজে আসবে। আমার মনে হয় না তাদের নাম বলতে হবে।
এতোটুকু কথা বলে তার পাশে দাঁড়ানো আকিবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি বল, বলতে হবে?
আকিব হাসি মুখে উত্তর দিল
- উহুম। সবাই জানে এখন স্টেজে কারা আসবে। আর আমার ধারনা সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে তাদের পারফরম্যান্স দেখার জন্য। সো আমরা তাদের আর অপেক্ষা না করাই।
সুমি পুনরায় স্টেজের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে আনন্দের সাথে বললো
- তাহলে আপনারদের আর অপেক্ষা না করিয়ে স্টেজে ডাকছি আমাদের সবার প্রিয় তিনজনকে।
স্টেজের লাইট বন্ধ হয়ে যায়। সুমি আর আকিব স্টেজ থেকে নেমে যায়। অন্ধকারে স্টেজে কে উঠেছে তা দেখা যায় না। শুধু বুঝা যায় একজন স্টেজে উঠেছে। ব্রেক স্টেজ থেকে মিউজিক ভেসে আসে। স্টেজে থাকা অবয়ব গেয়ে উঠলো
- নাসেক নাসেক।
স্টেজের লাইট জ্বলে উঠে। গলার ঢোল ঝুলিয়ে, তা বাজাতে বাজাতে গান করছে আর নাচছে শুভ্র। উপস্থিত স্টুডেন্ট সবাই আনন্দে চিল্লিয়ে উঠে। শুভ্র নাচতে নাচতে গাইতে থাকে
- হে! নাসেক নাসেক।
নাচতে নাচতে স্টেজে উঠে দীপ্তি আর চন্দ্রা। স্টুডেন্টদের চিল্লানো আরও দ্বিগুণ হয়ে যায়। ভি আই পি সিটে বসা রোদ অবাক চোখে দীপ্তির নাচ দেখছে। সে কোনদিন ভাবতেও পারেনি এই মেয়ে এতো সুন্দর করে নাচতে পারে। এই মেয়ের কতো গুণ আছে আল্লাহ জানে। শুভ্রর গান চলছে
- এই! দোল দোল দুলুনি রাঙা মাথার চিরুনি
এনে দেবো হাট থেকে, মান তুমি করো না
দোল দোল দুলুনি রাঙা মাথার চিরুনি
এনে দেবো হাট থেকে, মান তুমি করো না
শুভ্রের দুই পাশে খুব সুন্দর করে নাচছে দীপ্তি আর চন্দ্রা। তিনজনই গানের তালে তালে খুব সুন্দর করে নাচছে।
- নোটন নোটন খোপাটি, তুলে এনে দোপাটি
রাঙা ফিতায় বেঁধে দেবো, মান তুমি করো না
মান তুমি করো না, মান তুমি করো না…..
,
,
,
নাসেক নাসেক।
গান শেষে তিনজনই স্টেজ থেকে নেমে যায়। পুনরায় স্টেজে উঠে আসে সুমি আর আকিব। আকিব হাসি মুখে বললো
- শুভ্র, চন্দ্রা আর দীপ্তি ইউ গাইজ আর দা বেস্ট।
বলে আকিব চিল্লিয়ে উঠলো। সাথে চিল্লিয়ে উঠলো স্টুডেন্টরা। পাশ থেকে সুমি বললো
- আমি ভার্সিটির প্রতিটা অনুষ্ঠানে ওদের পারফরম্যান্স দেখার অপেক্ষায় থাকি। তবে আমি আজকে আরও একজনের পারফরম্যান্স দেখায় অপেক্ষায় আছি আর সে হলো আমাদের শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান স্যারের একমাত্র ছেলে আমাদের সবার প্রিয় রোদ স্যার।
সুমির কথা শুনে হলরুমে উপস্থিত দীপ্তি, চন্দ্রা, শুভ্র আর আকিব ছাড়া বাকি সবাই অবাক হয়ে যায়। এমন কি রোদ নিজেও। অবাক হওয়ারই কথা। রোদ নিজেও জানতো না, যে সে গান করবে। দীপ্তি রোদকে না জানিয়েই সুমিকে বলেছে রোদের নাম এনাউন্স করতে। সুমির পাশের দাঁড়িয়ে থাকা আকিব বললো
- হ্যাঁ আমিও আর অপেক্ষা করতে পারছি না। তাই আর সময় নষ্ট না করে মঞ্চে ডাকছি আমাদের সবার প্রিয় রোদ স্যারকে।
রোদ উঠে স্টেজে যায়। আকিব নিজের মাইকটা রোদের দিকে এগিয়ে দেয়। রোদ হাসি মুখে আকিবের হাত থেকে মাইকটা নিলে, আকিব আর সুমি স্টেজ থেকে নেমে যায়। একসেকেন্ড নিরব থাকার পর রোদ শান্ত কন্ঠে গান গাওয়া শুরু করল
- ও আমার দেশের মাটি,
তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
তোমাতে বিশ্বময়ীর,
তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।
ও আমার দেশের মাটি,
তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
এবার দীপ্তিসহ হলরুমে থাকা সবাই দ্বিগুণ অবাক হয়ে যায়। রোদ যে ছোট থেকেই লন্ডনে বড় হয়েছে সে এতো সুন্দর করে বাংলায় গান করতে পারে তা কেউ ভাবেনি। দীপ্তিও বিষয়টা জানতো না। তাই সুমিদের বলেছিল রোদকে গান করার জন্য স্টেজে ডাকতে। কিন্তু এখনও ,,,,, দীপ্তির ভাবনার মধ্যেই চন্দ্রা বললো
- ভাইয়া যে এতো ভালো গান করতে পারে তা তো তুই আমাদের বলিসনি!
দীপ্তি বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বললো
- আমি নিজেই তো জানতাম না। যদি জানতাম তাহলে কি ওনার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য ওনাকে স্টেজে ডাকতে বলতাম।
পাশ থেকে শুভ্র দাঁত কেলিয়ে বলল
- বলেছিলাম এতো ভোলা বালা ছেলেদের এভাবে তাড়াস না। তাহলে দেখবি তোর কপালে এমন একজন পড়বে যে তোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে। এবার মিললো আমার কথা।
দীপ্তি শুভ্রর পিঠে দড়াম করে একটা কিল দিয়ে বললো
- তোর অভিশাপ লেগেছে সয়তান।
শুভ্র নিজের পিঠ ঘষতে ঘষতে বললো
- ওমা, আমারে কি তোর পাঞ্চিং ব্যাগ মনে হয়।
এদিকে,
রোদ তার মিষ্টি কন্ঠে গান করছে
- তুমি মিশেছো মোর দেহের সনে
তুমি মিলেছো মোর প্রাণে মনে,
মিশেছো মোর দেহের সনে
তুমি মিলেছো মোর প্রাণে মনে,
তোমার ওই শ্যামলবরন
কোমল মূর্তি মর্মে গাঁথা।
সবাই মুগ্ধ হয়ে রোদের গান শুনছে। রোদ মাইকটা সামনের দিকে ঘুড়িয়ে সবাইকে গান করতে ইশারা করে। সবাই গাইতে শুরু করল
- ও আমার দেশের মাটি,
তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
,
,
,
তোমাতে বিশ্বময়ীর,
তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।
ও আমার দেশের মাটি,
তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৮৪তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন