উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৮৪তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৮৫)


কাব্যকে দেখতে তার কেবিনের দিকে যাচ্ছে তূবা। সেদিন কাব্যের জ্ঞান ফেরার পর, কুহু অজ্ঞান হয়ে যায়। এতোদিনের এতো টেনশন খাওয়া নেই, ঘুম নেই। শরীর প্রচন্ড দূর্বল হয়ে যাওয়ার ফলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল সে। জ্ঞান ফিরে ঘন্টাখানিক পর। কাব্যকে কেবিনে দিলে সেখানে কাব্যের সাথে দেখা করে, কথা বলে বাসায় চলে আসেছিল তূবা। তারপর আর গত তিনদিনেও হস্পিটালে আসেনি সে। শরীরটা তার ভালো ছিল না। হয়তো এতোদিন বাসা টু হস্পিটাল আবার হস্পিটাল টু বাসা দৌড়াদৌড়ি করার ফলেই শরীর খারাপ লাগছে তার। করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় তার কানে আসে একটা মেয়েলে কণ্ঠস্বরে বলা কথা। কথাটা শুনে সেখানেই দাঁড়িয়ে যায় তূবা। মেয়েলি কন্ঠস্বরটা বলছে
- এই শিল্পা ৫০২ নং কেবিনের পেশেন্টকে দেখেছিস? কি হ্যান্ডসাম দেখতে। যেমন লম্বা তেমন বডি। আজকাল তো এতো লম্বা ছেলে সচার আচার দেখাই যায় না।
৫০২ নং কেবিনটা কাব্যের। তার মানে তারা কাব্যকে নিয়ে কথা বলছে। তূবা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কেবিনের ভিতরে উঁকি দেয়। কেবিনের ভিতরে শিল্পা নামের একজন নার্স আর রত্না নামের একজন ক্লিনার সব কিছু পরিষ্কার করে গুছাচ্ছে আর কথা বলছে। এখানে আগে যে রুগি ছিল তার কিছুক্ষণ আগে রিলিজ হয়ে গিয়েছে। তাই তারা সব কিছু পরিষ্কার করে গুছাচ্ছে। শিল্পা নামের নার্সটা বললো
- হুম্ম দেখিছি একবারে হৃতিক রোশন। যাস্ট গায়ের রঙটা কালো।
রত্না নামের অল্প বয়সী ক্লিনারটা বললো
- আরে কালো দিয়ে কি করিস। জানিস এই ছেলে বুয়েটে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হয়েছে।
শিল্পা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল
- তুই কি করে জানিস?
রত্না উত্তর দিল
- প্রথম দিন যখন রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল, তখন কিছু লোক এসেছিল না রক্ত দিতে। ওদের কথা শুনেই জানতে পেরেছে। কিন্তু আফসোস ছেলেটা বিবাহিত।
শিল্পা আফসোসের সুরে বললো
- কেন যে হ্যান্ডসাম ছেলেগুলো এতো আগে আগে বিয়ে করে নেয়।
তূবা আর দাঁড়ালো না। মুচকি হেসে পা বাড়ালো কাব্যের কেবিনের দিকে।
এদিকে,
৫০২ নাম্বার কেবিনে। বেডে আধশোয়া হয়ে বসে আছে কাব্য। বেডের পাশে বসে ছুড়ি দিয়ে আপেল কাটছে কুহু। বাকি সবাই আপাতত বাসায় গিয়েছে। কুহুর দিকে তাকিয়ে কাব্য বললো
- কুহু তুমি একটু রেস্ট নেও। একবার জ্ঞান হারিয়ে পরে গিয়েছ। শরীর তোমার এখনো দূর্বল আছে। ঠিক মতো রেস্ট না নিলে আবার অসুস্থ হয়ে যাবে।
আপেল কাটা শেষ হলে, ছুড়িটা বেডের পাশের টেবিলের উপর রাখে কুহু। তারপর আপেলের প্লেটটা কাব্যের সামনে ধরে বললো
- আমার রেস্ট নিয়ে চিন্ত না করে, তাড়াতাড়ি তুমি সুস্থ হয়ে যান তো। তোমাকে বাসায় নিয়ে তবেই আমি রেস্ট নিবো। নেও এবার ফটাফট খাওয়া শুরু কর।
কাব্য অবাক চোখে কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো
- মাএ না আনাড়গুলো খেলাম!
কুহু কাব্যের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
- তো। অসুস্থ রুগীদের কাজই তো বেশি বেশি খেয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাওয়া!
কেবিনের অর্ধেক খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে তূবা বললো
- হুম, যত তাড়াতাড়ি পারিস ভাইয়াকে সুস্থ করে বাসায় নিয়ে যা। না হলে যে অবস্থা শুরু হয়েছে। কখন জানি কোন মেয়ে তোর একটা মাএ বরকে ব্যাগে ভরে নিয়ে পগারপার হয়ে যায়।
কুহু তূবার কথার অর্থ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল
- মানে?
তূবা কেবিনে থাকা সোফাতে বসতে বসতে বললো
- মানে। আসার সময় শুনে এলাম একজন নার্স আর একজন ক্লিনার বলাবলি করছিল কাব্য ভাইয়া কতো হ্যান্ডসাম, বিলিয়ান্ড সাথে ভাইয়া বিবাহিত বলে আফসোসও করছিল।
কুহু বাঁকা চোখে কাব্যের দিকে তাকিয়ে বললো
- এইজন্যই তুমি না খেয়ে এখানে পড়ে থাকতে চাইছেন না!
কাব্য অবাক চোখে কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো
- এসব কি বলছ কুহু। আমি তো ,,,,,
কাব্যকে কথা শেষ করতে না দিকে, কুহু শক্ত কন্ঠে বললো
- চুপচাপ খাওয়া শেষ কর।
কাব্য কোন কথা না বলে করুন মুখ করে কুহুর হাত থেকে আপেলের প্লেটটা নিয়ে আপেল খেওয়া শুরু করলো। কাব্যের করুন অবস্থা দেখে কুহু হেসে বললো
- সরি ভাইয়া।
কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে দীপ্তি তূবাকে বললো
- এখন সরি বললে কি হবে। বেচারারে তো ফাসায়ে দিলি।
কেবিনে থাকা তূবা, কুহু আর কাব্য দীপ্তির দিকে তাকায়। তূবা দীপ্তির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- আপুনি তুমি! তুমি না বলেছিলে কালকে আসবে।
দীপ্তি হেসে তূবাকে উত্তর দিল
- আজকে আর পড়তে ইচ্ছা করছে না। তাই চলে এলাম।
তারপর কুহু আর কাব্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কেমন আছো তোমরা? কাব্য কি অবস্থ তোমার?
কাব্য হাসিমুখে বললো
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
কুহু দীপ্তিকে বললো
- আপু বসো।
দীপ্তি তূবার পাশে বসে জিজ্ঞেস করল
- রিলিজ দিবে কবে?
কুহু উত্তর দিল
- ভালো থাকলে দুই তিনদিনের মধ্যে।
দীপ্তি কুহু আর কাব্যকে উদ্দেশ্য করে বললো
- কেসটা নিয়ে আমার কিছু কথা আছে।
একটু থেমে আবার জিজ্ঞেস করল
- তোমাদের কি ধারণা এটা কে করতে পারে? কারো উপর কোন সন্ধেহ আছে?
কাব্য সহজ সরল ভাবে উত্তর দিল
- না, নেই।
কিন্তু কুহু শক্ত কন্ঠে উত্তর দিল
- আমার চাচার ফ্যামিলি।
কাব্য অবাক কন্ঠে কুহুকে বললো
- কুহু ওরা তোমার আত্নীয়।
কুহু কাব্যের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বললো
- স্বার্থের জন্য সন্তান নিজের বাপ-মা'কে মেরে ফেলে, সেখানে এ তো আমার বাপের ভাই।
তখনই ব্যাগে থাকা দীপ্তির ফোনটা বেজে উঠে। দীপ্তি ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে, স্কিনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে।
💞
গোসল করে নিজের রুমের ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে শুভ্র। তখনই বাহির থেকে আসা মিষ্টার হাছিবের কন্ঠ তার কানে আসে। মিষ্টার হাছিব তার রাগী কন্ঠে মিসেস সম্পাকে জিজ্ঞেস করছে
- সম্পা, শুভ্র কোথায়?
মিসেস সম্পা স্বামীর রাগী কন্ঠেস্বর শুনে, চিন্তিত কন্ঠে উত্তর দেয়
- ঘরেই তো আছে। কেন, কি হয়েছে?
মিষ্টার হাছিব মিসেস সম্পার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, আদেশের সুরে বললো
- ডাক ওকে।
মিসেস সম্পা ডাকা আগেই শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে মিষ্টার হাছবের কাছে আসতে আসতে বললো
- জ্বি, চাচা।
মিষ্টার হাছিবের থেকে একটু দূরে দীপ্তি, চন্দ্রা, রোদ আর আহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কৌতুহলী হয়ে শুভ্র জিজ্ঞেস করল
- দীপ্তি, চন্দ্রা তোরা এখানে?
দীপ্তি, চন্দ্রা কিছু বলার আগেই মিষ্টার হাছিব শুভ্রকে প্রশ্ন করল
- তুই অনুকে ভালোবাসিস?
কথাটা কানে যেতেই অবাক চোখে মিষ্টার হাছিবের দিকে তাকায় শুভ্র। তারপর দীপ্তি আর চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বুঝে তারাই এই কথাটা মিষ্টার হাছিবের কাছে বলেছে। কোন ভাবে হয়তো তারা জেনে গিয়েছে যে অনুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তাই বন্ধুর ভালোবাসাকে বাঁচাতেই মিষ্টার হাছিবকে রিকোয়েস্ট করেছে। শুভ্র উত্তর দিচ্ছে না দেখে, মিষ্টার হাছিব পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি। উত্তর দিচ্ছিস না কেন?
শুভ্র শান্ত কন্ঠে নত মাথায় উত্তর দিল
- হ্যাঁ চাচা, আমি অনুকে ভালোবাসি।
ঠাস।
শুভ্রের কথা শেষ হতে না হতেই তার গালে সপাটে এক চড় বসিয়ে দিল মিষ্টার হাছিব। মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে থাকে শুভ্র। মিষ্টার হাছিব রাগী কন্ঠে পুনরায় বললো
- তোকে কিছু না বলে আমি মাথায় তুলে ফেলেছি।
মিসেস সম্পার ছুটে এসে শুভ্র আর মিষ্টার হাছিবের মাঝে দাঁড়িয়ে বললো
- কি করছেন ,,,,,,
মিসেস সম্পার কথা শেষ হওয়ার আগেই মিষ্টার হাছিব রাগী কন্ঠে শুভ্রকে বললো
- কোন সাহসে তুই আমার মেয়েকে কষ্ট দিয়েছিস? বল, কোন সাহসে তুই আমার ভাইয়ের ছেলেকে কষ্ট দিচ্ছিস?
শুভ্র কিছু বলে না। আগের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। মিসেস সম্পা শুভ্রের দিকে ঘুরে বললো
- নিজের সন্তানের থেকে কি কোনদিন তোকে কম আদর করেছি? তোর আর অনুর মধ্যে কোনদিন পার্থক্য করেছি? তাহলে কেন তুই আমাদের আপন মনে করে এই কথাটা বললি না। কেন আমাদের কথা না ভেবে, বাহিরের মানুষ কি বলবে তা নিয়ে ভাবলি বল।
আসলে, দীপ্তির কথা মতো অনু এতোক্ষণ রান্নাঘরে বসে তার আর শুভ্রর সব কথা বলেছে। তার থেকে মিসেস সম্পা সব কিছু জেনেছে। শুভ্র মাথা তুলে তাকায় মিসেস সম্পার দিকে। চোখ দুটো তার ছলছল করছে। ব্যথিত কন্ঠে বললো
- বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে তোমারাই আমার বাবা-মা। এক বাবা-মা'কে আমি হারিয়েছি। তোমাদেরকেও আমি হারাতে চাইনি। তাছাড়া আমি এতিম, আমার কিছু নেই। আমার থেকে সব দিক দিয়েই পারবেজ ভাই বেটার।
মিসেস সম্পা জলভরা চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- এই মাএ না বললি আমরা তোর বাবা-মা তাহলে তুই এতিম হলি কিভাবে! তুই আমাদের নিজের ছেলে, এই বাড়ির ছেলে তোর থেকে পাশের গায়ের দু'দিনের পরিচিত একটা ছেলে, কিভাবে ভালো হয়।
রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়ানো অনুর চোখ দিয়ে টপাটপ পানি পড়ছে। শুভ্রও চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বললো
- চাচি, আম ,,,,,
শুভ্রকে কথা শেষ করতে না দিয়ে, মিসেস সম্পা কান্না জড়িত কন্ঠে বললো
- জানিস আমি কতোদিন ধরে তোর মুখে মা ডাক শোনার জন্য অপেক্ষা করছি। এখন থেকে মা আমাকে ডাকবি।
শুভ্র মায়া ভরা কন্ঠে ডাকল
- মা। মা গো মা।
বলেই মিসেস সম্পাকে জড়িয়ে ধরে শুভ্র। মিসেস সম্পাও স্বস্নেহে আগলে নেয় শুভ্রকে। সেখানে উপস্থিত সকলের এমনকি গম্ভীর মিষ্টার হাছিবের চোখ দিয়েও জল গড়িয়ে পড়লো।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৮৬তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন