উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৮৫তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৮৬)
এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি বলে এখন আর মসজিদে নামাজ পড়তে যায় না কাব্য। বাসায়ই এশারের নামাজ পড়ে গায়ের সাদা পাঞ্জাবি, পায়জামা, মাথায় টুপি না খুলে, সেগুলো পরেই চাঁদ তারা বিহীন আকাশের দিকে স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। চোখে ভাসছে লতিফ চাচার স্মৃতি। এই চালচুলোহীন লোকটা তাকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসাতো। "কাব্য বাবা" ছাড়া কোনদিন তাকে নাম ধরে ডাক দেয়নি। নিজের বেতন থেকে টাকা জমিয়ে নানান উপলক্ষে তাকে উপহার দিত। এই তো সেদিন তাদের বিয়ে উপলক্ষে তাকে একটা সাদা পাঞ্জাবি আর কুহুকে একটা খুব সুন্দর লাল পাড়ের সাদা সিল্ক শাড়ি উপহার দিয়েছে। একা কিরণ বাদ যাবে কেন, তাই কিরণকেও একটা শার্ট কিনে দিয়েছে। কিন্তু কে জানতো এই দেওয়াই তার শেষ দেওয়া হবে। যে লোকের সাহায্য নিয়ে কাব্য দরিদ্র মানুষদের খাওয়াবে ভেবেছিল, আজকে সেই লোকের জন্য দোয়া পড়ার জন্য দরিদ্র লোকদের খাওয়ানোর লিস্ট করতে হলো। কাব্যের ধ্যান ভাঙে কুহুর কন্ঠস্বর শুনে। কুহু বারান্দায় এসে, কাব্যের পাশে দাঁড়িয়ে শান্ত, ক্ষীণ কন্ঠে ডাকল
- কাব্য।
কাব্য ঘাড় ঘুরিয়ে তার পাশে দাঁড়ানো কুহুর দিকে তাকায়। কুহু কাব্যের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে নম্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- লতিফ চাচার কথা ভাবছো?
কাব্য কুহুর কাজল বিহীন মায়াভরা চোখের দিকে তাকিয়ে, আহত কন্ঠে বললো
- আমাকে বাঁচাতে গিয়ে লতিফ চাচা মারা গেল। আমি যদি খেয়াল করতাম তাহলে আজকে লতিফ চাচা আজ বেঁচে থাকতো।
কুহু স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- তুমি শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ করছ। শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ করা বন্ধ কর তো। বাঁচা মরা সব আল্লাহর হাতে, এতে আমাদের কোন হাত নেই।
কাব্য ধরা গলায় বললো
- তারপরও ,,,,,
কাব্য আর কিছু বলার আগেই কুহু শক্ত কন্ঠে বললো
- তারপরও যদি কারো দোষ থেকে থাকে তাহলে তা হলো সেই ট্রাক ড্রাইভারের। তোমরা তো আর রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলে না। ফুটপাতের ছিলে। ওই ড্রাইভারের ইচ্ছে করে এই কাজ করেছে।
- কিন্তু তাও।
- নিজেকে দোষারোপ করা বাদ দিয়ে চাচার জন্য দোয়া কর আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করে।
কাব্য আর কথা না বাড়িয়ে একটা শ্বাস ফেলে বললো
- হুম্ম।
তারপর পুনরায় ঘাড় ঘুরিয়ে আকাশের দিকে তাকায়। কুহু একটা নীল রঙের খাম কাব্যের চোখের সামনে ধরে। কাব্য খামটার দিকে একনজর তাকিয়, তারপর ভ্রু কুঁচকে কুহুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- এটা কি?
কুহু উত্তর দিল
- তোমার জন্য আসা লাভ লেটার।
কাব্য ভাবে তার মন ভালো করার জন্য কুহু তার জন্য চিঠি লিখেছে, তাই ঠোঁট দুটো হালকা প্রসারিত করে বললো
- লাভ লেটার! এগুলো মানুষ বিয়ের আগে দেয় আর তুমি আমাকে বিয়ের পড় লাভ লেটার দিচ্ছো।
- আজ্ঞে না, আমি দেইনি। প্রিতি দিয়েছে।
কুহুর কথা শুনে কাব্য আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল
- প্রিতি! প্রিতি কে?
কুহু ঘুরে বারান্দার গ্রিলে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়, তারপর কাব্যের দিকে তাকিয়ে বলল
- ছাদে একটা মেয়ে উঠেছিল তার কথা মনে আছে। দশ তলার আজিজ সাহেবের মেয়ে।
- ওই, বাচ্চা মেয়েটা।
- জ্বী আজ্ঞে তোমার সেই বাচ্চা মেয়ে, তোমাকে প্রেমপএর পাঠিয়েছে।
- ছোট মানুষ। তাই না বুঝে বিবাহিত ছেলেকে চিঠি দিয়েছে।
- তোমার বেবি এই চিঠিটা এখন না আমাদের বিয়ের আগেই পাঠিয়েছে।
কাব্য বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- এতো আগে আমাকে এই চিঠি পাঠিয়েছে কিন্তু আমি পাইনি!
কুহু চোখ দুটো ছোট ছোট করে প্রশ্ন করল
- কেন, বিয়ের আগে এই চিঠি পেলে কি ওই প্রিতিকে বিয়ে করতেন নাকি?
কাব্য হেসে বললো
- কি যে বলো না তুমি। তা তুমি এতোদিন পর এটা পেলে কোথা থেকে?
কুহু স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিল
- এখন না আমি অনেক আগেই পেয়েছি। ওই মেয়ের সাথে ছাদে দেখা হওয়ার কিছুদিন পরে, তুমি সেদিন সকাল সকাল এম্বাসি গিয়েছিলে। তাই জিম করতে ছাদে যাওনি। আমি ছাদে যাই গাছে পানি দিতে, গাছে পানি দিয়ে কি মনে করে জানি তোমার জিম রুমে ঢুকি। জিম রুমে ঢুকতেই দেখি তোমার ট্রেড মিলের উপর এই নীল খামটা রাখা। কৌতুহলী হয়ে আমি খামটা নিয়ে খুলে দেখি, এটা তোমাকে লেখা প্রিতির চিঠি। কি সাহস এর ভাবা যায়। আমি আজ পর্যন্ত আমার বরকে প্রেমের কবিতার একটা লাইন শোনালাম না, আর এই মেয়ে আমার বরকে আস্ত একটা প্রেমপত্র পাঠিয়ে দিল!
কাব্য হেসে বললো
- আসলেই অনেক সাহস। তা তুমি ওকে বকনি তো আবার?
কুহু ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে উত্তর দিল
- না তোমার বেবিকে আমি একদম বকিনি। শুধু সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেছি, এই ছেলে আমার কলিজা একে নিয়ে যেন টানাটানি না করে।
একটু থেমে পুনরায় মলিন কন্ঠে বললো
- তুমি কি জানে, তোমার যখন রক্তের প্রয়োজন হয়েছে তখন রক্ত খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না দেখে আমি পাপন ভাইয়াকে ফোন করি। ভাইয়া ঘন্টার মধ্যে চার জনকে নিয়ে আসে। এদের মধ্যে একজন পাপন ভাইয়ার কাজিন, একজন বুয়েটের স্টুডেন্ট, একজন টিচার আর একজন হলো তৃপা।
কাব্য ম্লান কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- তৃপার রক্ত দেওয়াতে তুমি রাগ করেছ। সরি।
কুহু মাথাটা হালকা না সূচক নেড়ে বললো
- উহু, রাগ না আফসোস হচ্ছে। কেন আমার রক্তের সাথে তোমার রক্ত এক হলো না। তাহলে আমিও রক্ত দিতে পারতাম। ওই পেত্নী মনে হয় তোমাকে অনেক ভালবাসে। না হয় তোমাকে রক্ত দিতে চলে আসতো না।
কথাটা বলে ভ্রু যুগল কুঁচকে কুহু আবার বললো
- এই এতো মেয়ে তোমাকে পছন্দ করে কেন? দূর কেন যে তুমি মেয়ে আর আমি ছেলে হলাম না। তাহলে তোমাকে সব সময় বোরকা পরিয়ে রাখতাম। যাতে করে আমার জিনিসের দিকে দেউ নজর দিতে না পারে।
কাব্য শব্দ করে হেসে দেয়। সেকেন্ডের মধ্যে টোল পড়া গালের হাসিটা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে, কুহুর ডান হাত টেনে ধরে নিজের একদম কাছে এনে বললো
- কুহুকে বলে দিও, তার কলিজাকে সবাই দেখতে পারবে, চাইতে পারবে। কিন্তু স্পর্শও করতে পারবে না। আমার কুহুরানীর কলিজাটা শুধুমাত্র তার নিজের।
অনেক দিন পর আজকে আবার কুহুকে তার সেই হাতছাড়া লজ্জাটা ঘিরে ধরে। লজ্জায় ফর্সা গাল নাক লাল হয়ে যায়। লজ্জায় লাল বর্ণ ধারণ করা লম্বা নাকের দিকে তাকিয়ে, সেখানে টুপ করে ভালোবাসার পরস এঁকে দেয় কাব্য। ঠিক সেই সময়ই রুমের বিছানায় থাকা কুহুর ফোনটা বেজে উঠে। কুহু একছুটে রুমে চলে যায়। সে ঠুসঠাস কাব্যের দেহে ভালোবাসার পরস এঁকে দিলে তার লজ্জা লাগে না। কিন্তু কাব্য ভালোবেসে তার হাতটা ধরলেই কোথা থেকে যে এই হতছাড়া লজ্জাটা তাকে ঘিরে ধরে। শালার লজ্জা, শান্তিতে তার একমাত্র বরের সাথে রোমান্স করতে দেয় না। একে তো গুলি করে মারা উচিত। কথা গুলো মনে মনে বলতে বলতে বিছানার উপর থেকে ফোন নিয়ে, ফোনের স্কিনের দিকে তাকায়। স্কিনে ভেসে আছে দীপ্তি আপু লেখাটা। সে অবাক হয় না। কারণ দীপ্তি কাব্যের কেসটা নিয়ে কাজ করছে, তাই প্রয়োজনে যখন তখন কল করে। কল রিসিভ করে কুহু বললো
- আসসালামু আলাইকুম দীপ্তি আপু।
ফোনের ওপাশ থেকে দীপ্তি বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছো কুহু?
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?
- আলহামদুলিল্লাহ। কাব্যের কি অবস্থা?
- আগের থেকে অনেকটা ভালো।
দীপ্তি নিজের গলার স্বরটা আরও একটু শান্ত করে বললো
- কুহু সেদিন কাব্যের কোন এক্সিডেন্ট হয়নি। কাব্যকে মার্ডার করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে কাব্য বেঁচে গিয়েছে।
কুহু অবাক হয় না, সে এমনই সন্দেহ করেছিল। সে শান্ত, শক্ত কন্ঠে প্রশ্ন করল
- কে করেছে আপু?
দীপ্তি উত্তর দিল
- তোমার সন্দেহই ঠিক।
কুহু মুখে চাচার ফ্যামিলির কথা বললেও, মনে মনে খুব করে চাইছিল তার ধারণাটা মিথ্যা হোক। যতই হোক তার বাবার আপন ভাই, তার চাচার ফ্যামিলি বলে কথা। ধরা গলায় সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- চাচা নাকি নিরব ভাইয়া।
দীপ্তি পুনরায় উত্তর দিল
- তোমার নিরব ভাইয়া ওই ট্রাক ড্রাইভারকে টাকা দিয়েছে কাব্যকে মারার জন্য।
কুহু ঘৃণার কন্ঠে বললো
- ছিঃ এতো নিচে কিভাবে নামলো।
কাব্য বারান্দা থেকে রুমে ঢুকতে ঢুকতে কুহুর শেষ কথাটা শুনে প্রশ্ন করল
- কি হয়েছে কুহু?
কুহু মলিন মুখে কাব্যের দিকে তাকায়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৮৭তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন