উপন্যাস : পিটুনিয়া
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “পিটুনিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
পিটুনিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি |
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
পিটুনিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ০৩)
মিটমিটে টেবিল লাইটের নিচে বই খোলে রাখা। রাত ভীষন মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে। বইটা জাফর ইকবাল স্যারের কোয়ান্টাম মেকানিক্স। প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ রাত বইয়ে মগ্ন। তবে একসময় সেই মনোযোগ বিঘ্ন ঘটে একটা ফোনকলে। রাত আনমনে পাশ থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরে। কেউ কথা বলছে না, তবে রিং বাজছে। বন্ধ হচ্ছে না। রাত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফোন চোখের সামনে ধরল। বই পড়ায় এতটাই ডুবে গিয়েছিল যে, রাত ফোনটা রিসিভই করেনি। রাত লজ্জা পেল। পুনরায় ফোন রিসিভ করে কানে ধরে সচরাচরের মত বলল, ' হ্যালো, মুস্তাকিন হোসেন রাত স্পিকিং! '
ওপর পাশ থেকে একটা মেয়ের খিলখিল করে হাসি ভেসে এলো। ঐ হাসিতে যেন মুক্ত ঝরে। রাতের বইয়ের নেশা কেটে গেল। সে জিজ্ঞেস করল, ' কে আপনি? এত রাতে কাকে চাই? '
মেয়েটা এবার কথা বলল। খুশি খুশি বলল, ' আমি একটা মেয়ে। এত রাতে একটা ছেলেকে চাইছি। সেই ছেলে হচ্ছো তুমি। কেমন আছো? '
রাত মেয়েটাকে চেনে না। অথচ মেয়ে কি সাবলীল ভাবে রাতের সঙ্গে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মেয়েদের সম্পর্কে ধারণা রাতের এই কদিনে একদম পাল্টে গেছে। এরা খুবই মারাত্মক সাহসী হয়। এই যে এত রাতে কল করে সকল নিয়মের বাইরে গিয়ে একটা মেয়ে একটা ছেলেকে বিরক্ত করছে। এটা তো অসম্ভব সাহসের জোরেই। রাত কঠোর হবার চেষ্টা করে বলল,
' আপনি কিন্তু আমার পড়াশোনায় বিরক্ত করছেন। বারবার কেন কল করছেন? আর কল করবেন না। '
মেয়ে আবারও হাসলো। রাত হঠাৎ করেই উপলব্ধি করল, এ যাবৎ যত মেয়ের হাসি রাত শুনেছে, এই মেয়ের হাসি সেসব থেকে সম্পূর্ন আলাদা, একদম অন্যরকম। রাত চুপ থাকল। মেয়ে বলল,
' তুমি কি সারাদিন শুধু পড়াশোনা কর? প্রেম করো না? '
রাত বিরক্ত হয়ে বলল, ' বুঝলাম না। পড়াশোনা ছাড়াও মানুষের অনেক কাজ থাকে। পড়াশোনা না করলে, প্রেমই কেন করতে হবে? আমি এটা ছাড়া বাকি কাজ করি। '
মেয়ে বলল, 'তুমি কি জানো, তুমি ভীষন অভদ্র একটা ছেলে।'
রাত অবাক হল। সে সারাজীবন ভদ্রতার খেতাব পেয়ে এসেছে। এই প্রথম কেউ তাকে অভদ্র বলে আখ্যায়িত করল। রাত বলল,
' আপনার সঙ্গে আমি কি অভদ্রতা করলাম? আপনার সঙ্গে আমার মাত্র দুইদিন কথা হয়েছে। মিথ্যা বলছেন কেন? '
মেয়ে কিছুক্ষণ নীরব থেকে তারপর থেমে থেমে বলল, ' অভদ্র বলেই তো সারাক্ষণ মাথায় ঘুরতে থাকো। আজকে মাথার উপর বসে থাকা তোমাকে কত করে বললাম, নেমে যাও। আমি আর সহ্য করছি না তোমার এসব। তুমি কি বললে? বুক ফুলিযে ঠাস করে বলে দিলে, 'আমি তোমার মাথায় বসেছি তোমার মাথা খেয়ে খেয়ে ঝাঁজরা করে ফেলতে। মাথা খেয়ে আমি তোমার মনটাও খেয়ে ফেলব।' এই যে আমার সঙ্গে অভদ্রতা করলে, এটা কি ঠিক? তুমি বলো।
রাতের মাথা ঘুরাতে লাগল এই মেয়ের কথা শুনে। রাত মনে করার চেষ্টা করল, সে আদৌ এমন কিছু করেছে কি না। একটু ভাবার পর মনে হল, মেয়েটা মজা করছে। রাত কখনোই কারো মাথা খায় না। আর মাথা কিংবা মন এটা কি খাবার জিনিস? এসব কি কেউ আদৌ কখনও খেয়েছে? রাত এবার ভ্রু কুচকে বলল,
' আপনি খুব বাজে বকছেন। আমার পঁয়ত্রিশ মিনিট দশ সেকেন্ড সময় আপনি নষ্ট করেছেন। আর না! আর কখনো আমাকে কল করবেন না। নাহলে আমি আপনার বিরুদ্ধে হয়রানির মামলা করব। পাগল-ছাগল মেয়ে একটা! '
রাত চট করে ফোন কেটে দেয়। মেয়ে কি বলতে চায়, সেসব শোনার প্রয়োজন বোধ করে না এতটুকু।
___________________________
রাত আজকেও লাইব্রেরীতে এসেছে। কদিন পর ফাইনাল এক্সাম। গতরাত পড়াশোনা ভালো করে হয়নি। সারারাত ওই মেয়ে কল করে বিরক্ত করেছে। রাত ভাবছে, এবার সত্যি সত্যি একটা হয়রানির মামলা করতে হবে। মেয়েটা আজকাল খুব জ্বালাচ্ছে। মেয়েরা কি সাধারণত এতোটা নির্লজ্জ হয়? রাত পড়াশোনার মধ্যে আবারও ওই মেয়ের কথা মনে করল। পরপরই নিজেকে সামলে উঠে। মাথার মধ্যে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
' মাথা থেকে সকল ময়লা উড়ে যাও। পড়াশোনায় মনোযোগ দাও। '
রাত সকল মনোযোগ ঢেলে দেবার চেষ্টা করে পড়াশোনার মধ্যে।
' এই ছেলে, চশমা খুলো। '
রাত বই থেকে মুখ তুলে সামনে তাকাল। তার পাশে মেয়েদের চার পাঁচ জনের একটা গ্যাং দাড়িয়ে। রাতের পাশের চেয়ার টেনে বসল সেদিনের সুপর্ণা। মাথায় ছেলেদের মত ক্যাপ, গায়ের জামাটাও কেমন ছেলে ছেলে ধরনের। চেক শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরনে মেয়েটাকে রাতের কাছে বড্ড অদ্ভুত দেখাচ্ছে। রাত ভাবছে, মেয়েদের ড্রেসআপ এমন কেন হবে? মেয়েরা পড়বে শাড়ি! তার মা চাচী সবাই শাড়ি পড়তেন সবসময়। শুধু ক্লাসমেট মেয়েরা পরত স্যালোয়ার কামিজ। সব মেয়েরাই তো এমন। শুধুমাত্র এই মেয়েই কেন এত অদ্ভুত? রাত বলল,
' চশমা খুলব কেন? চশমা ছাড়া আমি কিচ্ছু দেখতে পাইনা। '
সুপর্ণা তার গ্যাং এর দিক তাকাল। একটা মেয়ে সুপর্ণার গায়ে হাত দিয়ে ঠেলে বলল,
' সপুরে, কার পেছনে কষ্ট করছিস? এ বেচারা তোর জন্যে না। একটু বেশিই ভদ্র। '
সুপর্ণা হাসল। আড়চোখে রাতের দিকে চেয়ে বলল,
' ভদ্রগিরি ছুটাচ্ছি আমি। জাস্ট দেখে যা। '
রাত এদের কথার কিছুই বুঝতে পারছে না। সে হঠাৎ এদের আগমনে বড্ড বিরক্ত। দুদিন পর ফাইনাল এক্সাম। কোথায় ভেবেছিল লাইব্রেরীতে এসে পড়াশোনা করবে। সেটাও পণ্ড করে দিল এই মেয়েছেলেগুলো। সুপর্ণা তাকাল। মাথার ক্যাপ রাজকীয় ভাবে খুলে টেবিলে রেখে রাতের দিকে বেশ ভাব নিয়ে তাকাল। বলল,
' চশমা খুলবে। কারণ আমি তোমার চোখ দেখব। '
বাংলাদেশের মেয়েদের সম্পর্কে রাত আর কত অবাক কিছু জানবে? এরা এমন কেন? রাত অবাক হয়ে বলে,
' চোখ কি দেখার জিনিস? এটা সবারই আছে। নিজেরটা আয়নায় দেখো, যাও। '
সুপর্ণা আবারও বিরক্ত হল। এই ছেলে এমন কেন? কিচ্ছু বুঝে না। ব্যাপার না। সুপর্ণা সব শিখিয়ে দেবে। সুপর্ণা এবার রাতের দিকে ঝুঁকে গেল। তীব্র পুরুষ পারফিউমের গন্ধ ছড়িয়ে গেল রাতের আশেপাশে। রাত খানিক পিছিয়ে গেল। সুপর্ণা হাত বাড়িয়ে রাতে চোখ থেকে চশমা খুলে ফেলল। তারপর নির্নিমেষ চেয়ে থাকল রাতের চোখের দিকে। রাত বিস্ময় নিয়ে এখনো সেভাবে পিছিয়ে বসে আছে। সুপর্ণা রাতের চোখের দিকে চেয়ে বলল,
' চোখ এসব চশমা দিয়ে ঢেকে রাখবে না। নেক্সট টাইম পাওয়ারফুল লেন্স ইউজ করবে। কালো রঙের নয়, ছাই রঙের লেন্স পরবে। মন থাকবে? '
রাত কিছু বলে না। তার মাথায় আপাতত একটাই চিন্তা, মেয়েটা এত কি দেখে তার চোখের মধ্যে?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে …
০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন