উপন্যাস        :         বৌপ্রিয়া
লেখিকা         :          আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ                :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল      :          ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি

২৪তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২৫)


সেদিনের পর থেকে কুসুম উচ্ছ্বাসের সামনে এলে লজ্জায় আলুথালু হয়ে থাকে। উচ্ছ্বাসের নিজেরও এখন কুসুমকে লজ্জা লাগে। দুজন যতবার মুখোমুখি হয়েছে ততবার কুসুম মৃদু হেসে সরে যায়, উচ্ছ্বাসও মাথা চুলকে হেসে উঠে। ব্যপারটা নতুন নতুন প্রেমে পরার মতই সুন্দর। আগামীকাল তারা দুজন কক্সবাজার যাবে। রাত থেকেই দুজনের প্যাকিং শেষ করে সবকিছু তৈরি করা হয়েছে।
চলে যাবে দেখে উচ্ছ্বাস আগের দিন রাতে সব কাজ শেষ করে বেশ দেরি করেই বাড়ি ফিরেছে। উত্তেজনায় কুসুম নিজেও ঘুমায় নি। দুজন সারারাত গল্প করছিল। দুজনের আগ্রহ, খুশী তাদেরকে ঘুমাতে দেয়নি। উচ্ছ্বাস অবশ্য কয়েকবার বলেছে ঘুমানোর কথা। তবে কুসুম ঘুমিয়ে গেলে তো? কথার ফুলঝুরি যেন উপচে পরেছিল তার। কুসুমকে এত খুশী দেখে উচ্ছ্বাসও বাঁধা দেয় নি আর। কুসুমের হাসিহাসি অন্যরকম উচ্ছল চেহারা দেখতে বেশ লাগছিল তার।

বিকেলের ফ্লাইট ধরে সন্ধ্যার দিকে তারা কক্সবাজার এসে পৌঁছে। হোটেলের সমস্ত ফর্মালিটিজ পূরণ করে সবে তারা রুমে ঢুকেছে।

হোটেল রুমে ঢোকার পরপরই দুজনের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। সম্পূর্ণ বাসর ঘরের মত বিছানা সাজানো। রুমটাও মোমবাতি, বেলুন, লাল গোলাপ দিয়ে সজ্জিত করা। লাভ শেপের বিছানা, সম্পূর্ণ রুম সাদা এবং লাল রঙের আবরণে সাজানো। কুসুম পলক ঝাপটে ঝাপটে সম্পূর্ন রুম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। উচ্ছ্বাস প্রথমে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছিল। পরপরই তার মনে হল, টাফ হানিমুন প্যাকেজ নিয়েছে। তাই তাদের হানিমুন স্টাইলে ঘর সাজানো হয়েছে। উচ্ছ্বাস মাথা হালকা নিচু করে মৃদু হাসল। চোখ তুলে তাকাল কুসুমের দিকে। কুসুম এখনো এসব হজম করতে পারে নি। উচ্ছ্বাস বলল,

‘ আমরা হানিমুন প্যাকেজ নিয়েছি না? তাই হানিমুন প্যাকেজে এই রুম সাজানো হয়েছে। তুমি কি ডিসকমফোর্ট ফিল করছ কুসুম?রুম কি পরিষ্কার করিয়ে দেব? ”

কুসুম নিজেকে সামলে নিল। পরপরই লজ্জিত আভা কণ্ঠে ঢেলে বলল, ‘ না,থাক। ভালো লাগছে দেখতে। ‘

উচ্ছ্বাস ঘরটা আরো একবার দেখে নিয়ে বলল, ‘ গোসল করে নাও। গোসল করে সমুদ্রে যাব। ‘

‘ এই রাতে? আর রাতের খাওয়া? ‘

‘ খাবার খেয়েই যাব। আর রাগের সমুদ্র দেখেছ কখনো? অসম্ভব সুন্দর হয়। গেলেই বুঝবে। সমুদ্র থেকে মধ্যরাতে হেঁটে হেঁটে ফিরব। তখন আরো বেশি ভালো লাগবে। ভেজা মাটি যখন পায়ে লাগে, উফ! জাস্ট মারাত্মক লাগে। কাদা ডিঙিয়ে চলা আমার কাছে খুব ভালো লাগে। অনেকের কাছে ঘেন্না লাগে। তবে আমার কাছে ভালোই লাগে। মাটির খুব কাছের মনে হয় লাইক মাটির মানুষ। ‘

কুসুম এতক্ষণ মুগ্ধ হয়ে উচ্ছ্বাসের কথা শুনছিল। কুসুম প্রশ্ন করল,

‘ কবার এসেছেন এখানে? ‘

উচ্ছ্বাস আঙ্গুলে গুনে নিয়ে বলল, ‘ আব…পাঁচবার। দুবার কলেজ ট্যুরে। আরো দু বার ফ্রেন্ডের সঙ্গে। আর একবার একা একা। ‘

‘ একা একা? একা একা এরকম জায়গায় এসে ভালো লেগেছিল? ‘

‘ লাগবে না কেন? আর তাছাড়া আমি তখন রেগে ছিলাম। তাই একা থাকতেই এখানে এসেছি। ‘

‘ কিসের জন্যে রাগ? ‘

‘ ডাক্তারি পড়ব না তাই। ‘

‘ কিহ? ‘

উচ্ছ্বাসের বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। চোখ বুজে ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,

‘ ছোটবেলা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ব ইচ্ছে ছিল। সে অনুযায়ী প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম উচ্চ মাধ্যমিক শেষ। মেডিকেল এক্সাম এলো। বন্ধুরা অনেকেই এক্সপেরিয়েন্সের জন্যে এক্সাম দিয়েছে। তাই আমিও দিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত ঢাকা মেডিকেলে চান্স হয়ে যায়। তারপর পুরো ব্যাপারটি বদলে যায়। আমি মেডিকেল পড়ব না, আম্মু রীতিমত যুদ্ধ করা শুরু করল আমার সঙ্গে। বাসার কেউই আমাকে বুঝে নি। তাই রাগে কক্সবাজার চলে এসেছিলাম। ‘

‘ পরে? মেডিকেলে ভর্তি হলেন কিভাবে? ‘

উচ্ছ্বাস আঙুল দিয়ে নিজের কপাল দেখিয়ে বলল,

‘ অল অ্যাবাউট লাক। এখানে এসে সবার কথা ভাবার চেষ্টা করেছিলাম। পরে মনে হল, ফ্যামিলির বিরুদ্ধে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আর ডাক্তারি পড়া ইজ নট দ্যাট ব্যাড। তাই আর ভাবিনি। দুদিন পর বাসায় গিয়ে মেডিক্যালে পড়ব জানিয়ে দিলাম সবাইকে। তুমি ভাবতেও পারবে না, সবাই কি খুশি হয়েছিল সেদিন। এখন মনে হয়, ওই খুশি দেখার জন্যে হলেও আমি শ’বার মেডিকেলে পড়তে রাজি। কি অদ্ভুত ব্যাপার। ‘

কুসুম হেসে ফেলল। উচ্ছ্বাসও হালকা হাসল। পরপরই উচ্ছ্বাস তাড়া দেখিয়ে বলল,
‘ দ্রুত গোসলে যাও তো। তুমি এলে আমি যাব। তুমি গোসল করার সময়টায় আমি চা অর্ডার করে রাখি? চা তো? নাকি কফি? ‘

‘ চা, দু চামচ চিনি দিয়ে। ‘
‘ ওকে। যাও এখন। দেরি হচ্ছে আমাদের।’

কুসুম তাড়াহুড়ো করে শাড়ি নিয়ে বাথরুমে যাবে, তবে পেছন থেকে উচ্ছ্বাস মোবাইলে ওয়াইফাই কানেক্ট করতে করতে বলল,

‘ শাড়ি আর সেলোয়ারের কামিজ পড়ার দরকার নেই। ওয়ান পিস, বা কুর্তি এনেছ না? সেসব পরো। সমুদ্রে কেউ শাড়ি পরে যায় না। ‘

কুসুম নিজের বোকামিতে দাত দিয়ে জিহ্বা কামড়ে ধরল। লং কুর্তি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
দুজন গোসল করে পরিপাটি হয়ে চা খেয়ে খানিক গল্প করল। ডিনারের সময় একবারে সমুদ্রে যাবার জন্যে তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলো।
হোটেলে সি ফুড পাওয়া যাচ্ছে। উচ্ছ্বাস দেখে দেখে খাবার টেবিলে সব সি ফুড অর্ডার করল। কুসুম প্রথম প্রথম ইতস্তত করল সি ফুড খেতে। পরে উচ্ছ্বাস অনেক বুঝিয়ে দু একটা আইটেম ট্রাই করাল। তাতেই কাজ হল। কুসুম পরের খাবারগুলো স্বতঃস্ফূর্ত খেতে লাগল। উচ্ছ্বাস বুঝতে পারল, কুসুমের খাবার মজা লেগেছে।
_______________________
রাতের সমুদ্রের তীর নীরব, নিস্তব্ধ। হাতে গোনা কয়েকজন দেখা যাচ্ছে। উচ্ছ্বাস দেখে দেখে বেশ দূরের এক জায়গায় এলো। এখানে মানুষের শোরগোল একদম নেই। শুনশান জায়গা। তুমুল বাতাস, সেই সঙ্গে সমুদ্রের উত্তাল পাত্তাল গর্জন। কুসুম মুগ্ধ দৃষ্টিত চেয়ে আছে সমুদ্রের দিকে। একটু এগিয়ে গিয়ে কুসুম সমুদ্রের পানিতে পা ভেজাল। উচ্ছ্বাসও কুসুমের পেছনে পেছন আসছে। কুসুম ভয়ে বিয়ে আরো একটু এগিয়ে এল। আরো একটু গভীর পানিতে পা নামাল। উচ্ছ্বাস এসব দেখে হাসল। হুট করে এগিয়ে এসে কুসুমকে কোলে তুলে যতটা গভীরে যাওয়া যায় গেল। কুসুম ভয়ে দুবার চিৎকার দিল। উচ্ছ্বাস আঙুল দিয়ে কুসুমের ঠোঁট বন্ধ করে ফিসফিস করে বলল,

‘ সাইলেন্ট অ্যান্ড ইনজয় দিস ম্যাজিকাল মোমেন্ট। ‘

কুসুম চুপ হয়ে গেল। উচ্ছ্বাসের বুক বরাবর পানি। উচ্ছ্বাস সেখানে কুসুমকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। কুসুম পানিতে নেমে পায়ে কোনো ঠায় পেল না। এতেই ভয়ে চিৎকার দিয়ে বলল,

‘ আমি নামব না, ডুবে যাব,ডুবে যাব। ধরেন আমাকে। ‘
‘ শান্ত হও। আমি থাকতে তুমি ডুববে না। আমার কাঁধে ধরে রাখো। আমি তোমার ঠায় হচ্ছি। ‘

উচ্ছ্বাস কুসুমের কোমর দুহাতে জড়িয়ে ধরে ওকে উচু করে ধরল। সমুদ্রের পানি কুসুমের বুক বরাবর এসে ঠেকল। কুসুম শান্ত হল এবার কিছুটা। চারপাশ দেখল। যেদিকে চোখ যায় পানি আর পানি। এত এত পানি দেখে খুশিতে কুসুমের দম বন্ধ হয়ে আসছে। কুসুম হারিয়ে যাচ্ছে অতল মুগ্ধতায়। উচ্ছ্বাস মৃদু স্বরে বলল,

‘ ক্লোজ ইউর আইজ। ‘

কুসুম চোখ বন্ধ করল। উচ্ছ্বাস নিজেও চোখ বন্ধ করল। কুসুমের কানে এখন শুধু সমুদ্রের তীব্র গর্জন ভেসে আসছে। পানির শব্দ, সামনে গা ঘেঁষে থাকা উচ্ছ্বাসের নিঃশ্বাসের শব্দ, আকাশের নিচে রাতের নিস্তব্ধতার শব্দ, সব মিলিয়ে কুসুম সম্মোহিত হয়ে যাচ্ছে। উচ্ছ্বাস বলল,

‘ এবার আমার কাঁধ থেকে হাত সরাও। দুহাত দুদিকে স্বাধীনভাবে ছড়িয়ে দাও। এমনভাবে নিজেকে ছেড়ে দাও সমুদ্রে, যেন তুমি উড়ছ। পানিতে পাখির ন্যায় উড়ার চেষ্টা করো। ‘

কুসুম তাই করল। আস্তে আস্তে উচ্ছ্বাসের কাধের উপর থেকে নিজের হাত সরাল। এবার যেন কুসুম একটুও ভয় পেল না। সমুদ্রের গভীরতা আপাতত কুসুম ডুবে। নির্দ্বিধায় দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে দিল। পানির ঝাপটা এসে দোল খেল কুসুমের দুহাতে। ভিজিয়ে দিয়ে গেল শরীরের সঙ্গে কুসুমের মন। উচ্ছ্বাস বলল,

‘ এবার মাথা আকাশের দিকে তুলো। ‘

কুসুম মাথা আকাশের দিকে তুলে ধরল।

উচ্ছ্বাস নিজেও আকাশের দিকে তাকাল। সম্মোহনের ন্যায় বলল,
‘ এবার চোখ ধীরে ধীরে খুলে তাকাও। ‘

কুসুম ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাল। এ কেমন অনুভূতি? উপরে আকাশ, নিচে সমুদ্রে, সমুদ্রে পাখির ন্যায় উড়ে বেড়ানো ওরা দুজন। আশপাশে কিচ্ছু নেই, কিচ্ছু না। পুরো পৃথিবী এই মুহূর্তে কুসুমের কাছে অদৃশ্য হয়ে গেছে। চোখের সামনে ভাসছে রাতের তারাময় বিশাল কালো আকাশ, কানে আসছে সমুদ্রের গান। কুসুমের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল,

‘ ই-ইটস ম-ম্যাজিকাল। ‘ ‘

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২৬তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন