উপন্যাস : তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৫১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৫২)
আদ্রিয়ান ঘুম থেকে উঠে তিথিকে আশেপাশে দেখে না।নূর নাস্তার জন্য ডাকতে আসে আদ্রিয়ানকে।
নূরঃআদ্রিয়ান। খেতে আসো।
আদ্রিয়ানঃআচ্ছা।
আদ্রিয়ান ভাবে তিথি হয়তো নিচে আছে।তাই আর কিছু জিজ্ঞেস ও করে না।রেডি হয়ে নিচে চলে আসে।নাস্তার টেবিলে মিরা নূর আরিয়ান আদ্রিতা আগে থেকে বসে আছে।তিথি আর মেহরাব মিসিং।
আদ্রিয়ানঃভাইয়া কই?
মিরাঃচলে গিয়ছেন নাস্তা করে।আপনার মতো ১২ টা বাজে উঠেন না।ভাইয়া খুব লক্ষি আছেন।
আদ্রিয়ানঃএই একটা জিনিসই বুঝি না ভাবীপু।সব মেয়ের প্রথম আমার জন্য পাগল থাকে। যেই মেহরাব ভাইয়ার সাথে দেখা হয় আমাকে ভুলে উনাকে নিয়ে মাতাল হয়ে পড়ে।কেমনটা লাগে বলো?
মিরাঃমেয়েরা প্রথমে ভালো কিছু না পেয়ে আপনাকে চুজ করে।আর যখন বেস্ট মেহরাব ভাইয়াকে দেখে তখন ভালো বাদ দিয়ে বেস্টটাতে মনোনিবেশ করে।এস সিম্পল এস।
আদ্রিয়ান গাল ফুলিয়ে ব্রেড খাচ্ছে।তাকাচ্ছে না পর্যন্ত মিরার দিকে।আদ্রিতা আদ্রিয়ান এর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে
আদ্রিতাঃতিথি কোথায় আদ্রি?
আদ্রিয়ান পানি খাচ্ছিলো সেই সময়।মিরা পা দিয়ে আদ্রিয়ান এর পায়ে স্লাইড করে।আদ্রিয়ান কাশতে শুরু করে।নূর পিঠে থাপি দেয়।আদ্রিতা উঠে এসে মাথায় হাত রাখে।
আরিয়ান পাশেই বসেছিলো আদ্রিয়ান এর।
আরিয়ানঃধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেলো।রিল্যাক্স।আদ্রিয়ান এর চোখ মুখ লাল হয়ে যায় কাশতে কাশতে।মিরা বেচারির মুখ ছোট হয়ে যায়।ও বুঝতেই পারে নাই আদ্রিয়ান এমন রিয়েক্ট করবে।
মিরার দিকে তাকালে আদ্রিয়ান এর খুব হাসি পেয়ে যায়।খুব কষ্টে হাসি চেপে মুখ গম্ভীর করে রেখেছে।বেচারি কাদো কাদো মুখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান এর দিকে।এই যেন সুযোগ পেলেই কেদে দিবে।
আদ্রিয়ান এর মাথায় এইবার দুষ্টু বুদ্ধি ভর করলো।
আদ্রিয়ানঃমিরাকে তো কখনোই কাদতে দেখে নাই আমি।এই শক্ত স্থির মানুষটার মাঝের কোমল মনটাকে দেখার তীব্র ইচ্ছা চেপে রাখা তো বড্ড অন্যায় আদ্রিয়ান।
ইচ্ছেটা চেপে না রাখতে পেরে আদ্রিয়ান ভয়ানক কান্ড ঘটায়।
আদ্রিয়ানঃমিরায়ায়ায়ায়ায়া। বলে ধমক দিয়ে উঠে।
মিরার অন্তর আত্মা কেপে উঠে আদ্রিয়ান এর ধমকে।মিরা নূর এর পিছনে চলে আসে।
আদ্রিয়ানঃবেশি সাহস দিয়ে দিয়েছি?আমার সাথে ফাইজলামী করছেন!!আদ্রিয়ান চৌধুরীর সাথে?
কে আমি আপনার হ্যা!কে?যে আমার সাথে ফাইজলামী করেন?বেশি বাড় বাড়ছেন দেখছি।
মিরা এইবার ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিলো।নূর মিরাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
আদ্রিতাঃএভাবে কথা বলে মেহমানের সাথে?আদ্রিয়ান।
মিরার কান্না দেখে আদ্রিয়ান উচ্চস্বরে হেসে দিলো।উপস্থিত সবাই হতবাক আদ্রিয়ানকে হাসতে দেখে।
মিরা কান্না থামিয়ে ভেজা ভেজা চোখের আদ্রিয়ান এর হাসি দেখছে।কান্নার রেশ যায় নাই বেচারীর।এখনো হিচকি তুলছে।
আদ্রিয়ানঃছিচকাদুনি।এইবার শান্তি লাগছে আমার।যাই একটু হাওয়া বাতাস খেয়ে আসি।
আদ্রিয়ান সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলো।আদ্রিতা রেগে আগুন হয়ে আছে।
আদ্রিতাঃবেয়াদ্দপ।আসিস তুই বাসায় তোর খবরই আছে।এটা কোন ধরনের ফাজলামী।
মিরা হিচকি তুলতে তুলতে বললো
মিরাঃতোর দেবর এত ফাজীল দোস্ত?একে আমি ভালো ভাবছিলাম।
নূরঃআরে ফাজিল না একটু দুষ্টু।তুই ও একটু বেশিই করিস।এতটুকু ধমকে কেদে ভাসিয়ে দিতে হয়?
মিরাঃআসুক আজকে।মেহরাব জিজু।তোকে আর তোর দেবরকেও এমনি ধমক খাওয়াবো তারপর দেখবো তুই কাদিস কি না।
মিরা কথাটা বলে থম থম পায়ে চলে গেলো।
আদ্রিতাঃসরি নেহা।আদ্রিয়ানটা একটু এমনি।তোমার বান্ধুবি মাইন্ড করেছে। না।আমি সরি বলবো?
নূরঃনা আপুনি।তুমি রাওনা দাও।দেরি হচ্ছে তোমার।
মাঝখান থেকে আরিয়ান টপকা দিয়ে উঠলো।
আরিয়ানঃতোমার ভাইটা বাদর হয়ে যাচ্ছে তোমাদের আদরে আদরে।
আদ্রিতা রেগে তাকায়।
আদ্রিতাঃআপনি কোন শাসনটাই করেন?উলটো সুযোগ পেলে আশকারা দেয়া শুরু করেন।
আরিয়ানঃএকটা মাত্র শালাতো তাই একটু।
আদ্রিতাঃতাহলে আমাকে দোষ দিচ্ছেন কেন?
আরিয়ানঃরাগলে যে তোমাকে লাল টমেটো মনে হয়।ভাল্লাগে দেখতে।
আদ্রিতাঃদেখে নিবো আপনাকে।
আরিয়ানঃআমি তো চাই তুমি আমাকে দেখো। আশমিন আর কত কাল একা থাকবে?ওর ও তো খেলার সাথীর দরকার আছে নাকি?
আদ্রিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
আদ্রিতাঃঅসভ্য লোক।নেহা আশমিনকে দেখো।আমি আসি।
নূরঃআচ্ছা আপু।আল্লাহ হাফেজ।
আরিয়ান আদ্রিতা চলে যায়।
নূর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।সন্ধ্যায় মিরা আশমিনের সাথে খেলছে।এমন সময় আদ্রিয়ান এর বাইকের শব্দ শুনতে পায়।আদ্রিয়ান সারাদিন পর বাসায় ফিরে।মিরার মধ্যে প্রতিশোধ প্রবনতা চেপে বসে।
মিরা দৌড়ে এসে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতলটা নিয়ে নূরের রুমের বারান্দায় চলে আসে।নূরের ঘরের বারান্দার নিচে বাগান। আর বাগান হয়েই বাসার মেইন গেইটে ঢুকতে হয়।আদ্রিয়ান সিটি বাজাতে বাজাতে বাসার মেইন দরজার কাছে আসছিলো।
বারান্দার নিচে আসতেই মিরা টুস করে বোতলের মুখ খুলে গর গর করে সব ঠান্ডা পানি আদ্রিয়ান এর মাথায় ঢেলে দেয়।আদ্রিয়ান পিলকে চমকে উঠে উপরে তাকায়।মিরা ঝট করে বারান্দা থেকে সরে আসে।আদ্রিয়ান উপর তাকিয়ে শুধু মিরার ওড়নাটা দেখতে পায়।
আদ্রিয়ানঃএই শীতে এই কাজটা না করলেও পারতে মায়বিনী।
মিরা ঝটপট পানির বোতলটা লুকিয়ে আশমিন এর সাথে খেলতে থাকে।আদ্রিয়ান এসেই সোজা আশমিন এর রুমে যায়।সেখানে আশমিন মিরাকে খেলতে দেখে নূর এর কাছে চলে আসে।
আদ্রিয়ানঃভাবীপু?কি করো?
নূরঃহুম।বলো।আরে এই কি! ভিজলে কি করে?ঠান্ডা লেগে যাবে তো।মাথা মুছো।
মিরা আদ্রিয়ান এর পিছু পিছু এসেছিলো।
আদ্রিয়ান খপ করে মিরার ওড়নার আচল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বলে।
আদ্রিয়ানঃআর বলো না ভাবীপু।এই ওড়নাটাই আমাকে ভিজিয়েছে।
মিরা অবাক হয়ে যায় আদ্রিয়ান এর কথা শুনে।
মিরাঃএই যা টের পেয়ে গেলো নাকি![মনে মনে]
নূরঃওড়না কি করে ভিজাতে পারে?
আদ্রিয়ানঃআমি কি করে জানবো বলো দেখি?
আমি তো দেখলাম তোমার রুমের বারান্দা থেকে কেউ বরফ মেশানো ঠান্ডা পানি আমার উপর ঢেলে দিলো।কতো নিষ্ঠুর ভাবো পানি ঢাললেও ঠিক ছিলো বরফ যুক্ত পানি ঢেলেছে।
উপরে তাকিয়ে আমি এই ওড়নাটাই দেখলাম শুধু।তারপর তোমার রুমে যেয়ে দেখি কেউ নেই।
আশমিনের রুমে যেয়ে এই ওড়নাটা দেখলাম একজনের গায়ে জড়িয়ে আছে।
নূরঃমিরা।এটা কেমন আচরন?এই শীতে ওকে ভেজালি কেন?ওর এমনেই ঠান্ডার দোষ আছে।অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায়।
নূরের বলতে দেরি আদ্রিয়ান এর হাসি দিতে দেরি না।আদ্রিয়ান একের পর এক হাচি দিয়েই যাচ্ছে।
নূরঃদেখলি তো?
মিরা এইবার নিজেই ওড়নার আচল দিয়ে আদ্রিয়ান মাথা মুছে দিচ্ছে।আদ্রিয়ান ওড়নার পিছনে মুচকি মুচকি হাসছে।
মিরাঃতোমার দেবর এত ছুই মুই কেন?কিছু করলেই লাল নীল হলুদ হয়ে যায়।আর আমাকে কাদালো সেটার কি?সেটার বিচার তো করলি না। এখন আমি কিছু করায় বিচার নালিশ শুরু হয়েছে।
আদ্রিয়ানঃআমি কবে বিচার দিলাম?আমি তো বললাম ওড়নাটা ভিজিয়েছে।
মিরাঃনা না। বিচার কেন দিবেন।আপনি তো এমনিতেই নূরকে দেখাতে এসেছিলেন রান্নাঘরে যে ওড়না হেটে এসে পানি ঢেলে দিলো আপনার উপর।
আদ্রিয়ানঃওইটাইতো।
মিরাঃধ্যাত।ভাল্লাগেনা।
মিরা চলে যায়।মিরা যেতেই নূর প্রশ্ন করে।
নূরঃতিথি কোথায় আদ্রিয়ান?
আদ্রিয়ানঃকোথায় মানে?তিথিকেতো আমি সকাল থেকেই দেখছি না।
নূরঃআমি তো ভাবলাম তোমার সাথে বাইরে গিয়েছে।
আদ্রিয়ানঃনা তো।আমি জানি না ও কোথায়।
নূরঃকি বলছো ও সকাল থেকেই বাসায় নাই।
আদ্রিয়ান চেঞ্জ না করেই বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
নূর মেহরাবকে কল দিচ্ছে।মেহরাব হয়তো মিটিং এ।কল ধরছে না।মিরা আদ্রিয়ান এই বাইক চলে যাওয়া শব্দ শুনে নিচে নেমে আসে।
মিরাঃদোস্ত।কি হলো?আদ্রিয়ান না মাত্রই আসলেন আবার কই গেলেন?
নূরঃতিথিকে পাওয়া যাচ্ছে না।কোথায় যেতে পারে মেয়েটা।ওর তো আর যাওয়ার জায়গাও নেই।
মিরাঃআরে আবার নতুন নাটক শুরু করছে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন