উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ২)


ভোররাতে বেশ খানিকক্ষণ বৃষ্টি হয়ে গেছে। সোঁদা মাটির গন্ধ চারদিকে। বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দে তরুর ঘুম ভেঙে গেছে। পাশে রাবেয়া ঘুমাচ্ছে।
তরুর ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। রাতে মা মেয়ে কেউ-ই খায় নি।
এখন অবশ্য খাওয়ার মতো কিছুই নেই তরুর।তবুও উঠে এক গ্লাস পানি খেলো তরু।
সকাল বেলা তরু আর বের হলো না রুম থেকে। গতরাতে পড়া হয় নি,পড়তে হবে।
রাবেয়া রুটি আর আলু ভাজি এনে মেয়েকে দিলেন খেয়ে স্কুলে যেতে।গত রাতে না খাওয়া তরু পেটে ক্ষুধা নিয়ে ও খেতে পারলো না।পেটের ক্ষুধার চাইতেও অপমানের জ্বালা যখন বেশি হয়ে যায় তখন পেটের ক্ষুধাও ফিঁকে লাগে।তরু ব্যাগ গুছিয়ে বললো, "খেতে ইচ্ছে করে না মা।"
রাবেয়া চিরুনি এনে মেয়ের চুলের ঝট ছাড়াতে ছাড়াতে বললেন, "মা রে,মন খারাপ করে থাকিস না মা।শুধু শুধু রূহরে কষ্ট দিয়ে কি লাভ!রূহের বদদোয়া লাগবো।"
"রূহের বদদোয়া যদি লাগেই মা,তাইলে চাচীর উপরে লাগতো সব কিছুর আগে।এসব বদদোয়া বলে কিছু হয় না মা।এই দুনিয়া বড় নিষ্ঠুর।এইখানে এতিমের বদদোয়ার ও দাম নাই,এতিমের জীবনের ও দাম নাই।"
রাবেয়া মেয়ের চুলে বিনুনি করতে করতে বললো,"এভাবে বলে না মা।আল্লাহ নারাজ হইবো।আল্লাহ সব অন্যায়ের বিচার করে। আমরা মানুষ হয়তো বুঝি না।সবার পাপের শাস্তি সবাই পাবে।হাশরের মাঠে সব কিছুর বিচার হইবো মা।আমার রাসূল এতিম ছিলেন,এতিমরে তিনি ভালোবাসতেন।মন খারাপ করিস না মা।আয় খেতে বস।"
তরু মায়ের কথা শুনে একটা রুটি খেলো।তারপর ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেলো। লতা আগেই তৈরি হয়ে ছিলো। তরুকে বের হতে দেখে নিজেও বের হয়ে এলো। তরুর পাশাপাশি হাটতে হাটতে বললো, "জানিস তরু,আমার প্রাইভেট পড়তেছি এখন।"
তরু জবাব দিলো না নলতার উপর রেগে আছে তরু।গত রাতে লতা যদি এই কাজ না করতো তাহলে তরু মায়ের কাছে বিচার দিতে যেতো না আর তাহলে মাছ ভাজা নিয়ে এতো কাহিনি হতো না।
লতা ব্যাগ থেকে একটা ডেইরি মিল্ক বের করে বললো, "ডেইরি মিল্ক খাবি তরু?এটা অরিজিনাল ডেইরি মিল্ক।আব্বা পাঠিয়েছে আমাদের জন্য। এতো টেস্ট জানিস।দোকানে ৫ টাকার যেই ডেইরি মিল্ক কিনে খাস তোরা ওগুলো তো চকোলেট না,বিষ এক প্রকার। আসলটার টেস্ট অন্য রকম। তুই কখনো খেয়েছিস তরু?"
তরুর ভীষণ হাসি পেলো শুনে। নিজের রাগ চেপে বললো, "শোন লতা,তোর আব্বাকে বিদেশে আমার আব্বা নিয়েছে। তাই মনে রাখিস তোর আগে এসব বিদেশি চকোলেট আমি দেখেছি,আমি খেয়েছি।"
লতা মুখ কালো করে বললো, "তুই আমাকে খোঁটা দিচ্ছিস?আমার আব্বাকে তোর আব্বা বিদেশ নিয়েছে বলে তুই খোঁটা দিচ্ছিস আমাকে? বিদেশ না গেলে কি তুই মনে করস আমার আব্বা আমাগোরে খাওয়াতে পারতো না? "
"পারতো লতা,কিন্তু এই অরিজিনাল ডেইরি মিল্ক না,৫ টাকা দামের ডেইরি মিল্ক খেতি।"
লতা তরুর বিনুনি ধরে টান দিয়ে বললো, "বড় বড় কথা বলছিস যে তুই? এতো সাহস ক্যান তোর?শরম করে না আমাগো খাস আবার আমার লগে বড় বড় কথা কস।"
তরুর মাথা ফুল গরম হয়ে গেলো। লতার চুলের মুঠি ধরে বললো, "না লজ্জা করে না।কেনো করে না জানিস তুই?তোরা যেই ঘরটাতে থাকছিস না ওটা আমার আব্বার করা ঘর।আমার আব্বা ওই ঘর করেছে তোরা তো থাকতি ভাঙা একটা ঘরে। আমার আব্বা মারা যাওয়ার পর তোর জোর করে আমাদের ঘর দখল করেছিস।আমার আব্বার জায়গা জমি সব তোরা দখল করেছিস।বাজারের যেই দোকানগুলোর নাম এখন লতা এন্টারপ্রাইজ ওগুলো আগে ছিলো রাবেয়া এন্টারপ্রাইজ নামে।আমাদের সব তোরা জোর করে দখল করেছিস। আমার মা বোকা মানুষ, ভীতু মানুষ তাই সব চুপচাপ মেনে নেয়।তাই বলে আমি সারাজীবন মেনে নিবো এটা ভাবিস না লতা।আমার মাথা যদি একবার গরম হয়ে যায় তবে খুব খারাপ হবে।"
লতা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তরুর দিকে। তরু এতো কথা বললো তাকে?সব আজকে গিয়ে মা'কে বলতে হবে।মা তরুর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবে।
তরু বেঞ্চে বসে মাথা নিচু করে রাখলো।মাথার দুই পাশের রগ দপদপ করছে তার রাগে।আর সহ্য করতে পারছে না তরু।আর কতো সইবে এসব সে?এটা কোনো জীবন হলো?
ক্লাস শেষ করে বাড়িতে ফিরে তরু মায়ের খপ্পরে পড়লো। লতা টিফিন পিরিয়ডে স্কুল থেকে চলে এসেছে। তরু আর লতা দুজনে একই ক্লাসে পড়ে একই স্কুলে।লতা কমার্সে আর তরু সায়েন্স।
রাবেয়া তরুর দুই গালে কষে দুইটা থাপ্পড় বসালেন।তারপর চোয়াল চেপে ধরে বললেন, "খুব চোপার জোর হইছে তোর না?শরীরে চিকনাই বাড়ছে তোর?কি বলছস লতারে তুই এসব?লায়েক হইছস তুই?"
তরু চুপ করে রইলো। লতা সব চাচীকে বলেছে নিশ্চয়, আর চাচী এরপর মা'কে চূড়ান্ত অপমান করেছে। তরুর নিজের উপর নিজের রাগ হলো।কেনো মাথা গরম করে এতো কথা বললো লতাকে?কেনো ভুলে গেলো সব ঝাল সবাই মায়ের উপর মেটাবে।
রাবেয়া মেয়েকে কিছুক্ষণ চড়থাপ্পড় দিয়ে ক্ষান্ত হলেন।বাহিরে উঠানে দাঁড়িয়ে লতা মিটিমিটি হাসতে লাগলো তরুর অবস্থা দেখে। বেশ লাগছে লতার।তরুর ভীষণ অহংকার। গায়ের চামড়া ফর্সা বলে, রোল নম্বর ১ বলে ধরাকে সরা জ্ঞান করে না।এবার কেমন মজা লাগছে!"
বিকেলে ফাইজান এলো লতাকে পড়াতে।লতা আজকে আগেই সেজেগুজে বসেছে।চোখে ইউটিউব দেখে স্মোকি আই করেছে ঠোঁটে ন্যুড লিপস্টিক।
ফাইজান এক নজর তাকিয়ে হতবাক হয়ে বললো, "তুমি চোখের উপর কালি মেখেছো কেনো?"
লতা বিব্রত হয়ে বললো,"কালি মাখবো কেনো?এটা মেক আপের একটা অংশ। স্মোকি আই এটা ভাইয়া।"
ফাইজান মাথা নাড়িয়ে বললো, "তুমি কি সবসময় সেজেগুজে পড়তে বসো?পড়ালেখার সাথে মেক আপের কি কোনো হিডেন রিলেশন আছে? গতকাল ও দেখলাম পড়ার মাঝখানে উঠে গিয়ে সেজে এসেছো।"
লতা ভীষণ লজ্জা পেলো শুনে। ফাইজান বুঝতে পেরেছে লতা যে লিপস্টিক দিয়েছে?
এতো লজ্জা লাগছে কেনো লতার।লতা যে ফাইজানকে অনেক আগে থেকেই মনে মনে পছন্দ করে বুঝে গেলো না-কি!
তরুর বিকেল কাটলো কান্না করে। মায়ের উপর রাগ করে সারা বিকেল বিছানা থেকে উঠলো না তরু।
মা কেনো এতো বোকা তরু বুঝে না।কিসের আশায় এভাবে পড়ে আছে?নিজের ভালো ও মা বুঝে না!
মা কেনো সবকিছু এভাবে ছেড়ে দিলো চাচার উপর!
ভালো লাগছে না তরুর।
আগে তরু ছোট ছিলো বুঝতো না।এখন অনেক কিছু বুঝে তরু।আশেপাশের মানুষ অনেক কিছু বলে তরুকে।কেউ ভালো বুদ্ধি দেয় কেউ খারাপ বুদ্ধি। তরুর ভালো খারাপের পার্থক্য বুঝে।
বুঝে বলেই তরু জানে চাচা যতই চালাকি করুক,কাগজ পত্রে সব সম্পদ তরুদের।
তরু স্বপ্ন দেখে একদিন সব হিসেব বুঝিয়ে দিবে সবাইকে।মা'কে দেওয়া সব আঘাত তরু একদিন মুছে দিবে তরু।
রাতে আমেনা স্বামীর সাথে কথা বলার সময় তরুর বলা সবকিছু বললো আলমগীরকে।আলমগীর তরুর বড় চাচা।সব শুনে বললেন,"অপেক্ষা কর লাভলীর মা,আর মাত্র ২৫ দিন।এরপর আমি তো আইতেছি দেশে।তরু ছোট মানুষ ওর কথা শুনে বাড়িতে রাগারাগি করিও না তুমি।"
আমেনা বিরক্ত হলেন।কি বলতে চায় এই মানুষটা কে জানে!
এসব ঝামেলা সেঁধে কাঁধে নেওয়ার কি দরকার!
লাথি দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলেই তো হয়।আদিখ্যেতা যত্তসব!

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন