গল্প               :        ইন্টারভিউ
লেখক          :         নাজিম উদ দৌলা
গ্রন্থ              :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ৩রা মে, ২০২০ ইং

ইন্টারভিউ || নাজিম উদ দৌলা
ইন্টারভিউ || নাজিম উদ দৌলা
লেখক নাজিম উদ দৌলার “ইন্টারভিউ” শিরোনামের এই গল্পটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য এটি হুবহু প্রকাশিত হল। লেখক অনবদ্য এ গল্পটি ২০২০ সালের ৩রা মে লিখেছেন।

ইন্টারভিউ || নাজিম উদ দৌলা

পরীক্ষার হলে আধাঘণ্টা লেট, প্রেমিকার সাথে দেখা করতে দুই ঘণ্টা লেট, দাওয়াতে গিয়ে দেখি সব খেয়ে উঠে গেছে, কোনো পোগ্রামে গিয়ে দেখি পোগ্রাম শেষ হওয়ার পথে… সব জায়গায় দেরি হয়ে যায় আমার। আজ পর্যন্ত কোথাও সময় মতো পৌঁছাতে পারলাম না!
লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে এখন চাকরির চেষ্টা করছি। সেখানেও এখনই বিপত্তি! প্রত্যেকবার ইন্টারভিউতে দেরিতে পৌঁছাই। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়! যে ছেলে চাকরির ইন্টারভিউতেই দেরি করে উপস্থিত হয়, সে চাকরির পর সময়মতো অফিসে আসবে- এই ভরসা কি করা যায়?
সবসময়ই যে নিজের কারণে দেরি হয়, তা কিন্তু নয়। মাঝে মধ্যে সময়ের অনেক আগে বাসা থেকে বের হয়েও সময়মতো পৌঁছাতে পারি না। হয় অভিশপ্ত ট্রাফিক জ্যাম থাকে রাস্তায়, নইলে গাড়িই পাই না! আজ যেমন হলো- বাস, সিএনসি, উবার-পাঠাও, কিচ্ছু পাচ্ছিলাম না। শেষে বাধ্য হয়ে রিকশায় যতদুর সম্ভব হয়েছে এসেছি। তারপর বাকিটা পথ হেঁটে এলাম।
এই মুহূর্তে গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ যাওয়ার রাস্তায় হাঁটছি আর আশে পাশের বিল্ডিংগুলোর দিকে তাকাচ্ছি, ইস্ট-ওয়েস্ট ট্রেডিং সেন্টার এর হেড অফিসটা খুঁজছি। এদিকেই কোথাও হওয়ার কথা। আজ ওখানে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি পোস্টে ইন্টারভিউ আছে আমার। অলরেডি ১৫ মিনিট লেট হয়ে গেছে। শালার বিল্ডিংটা গেলো কই?
একটা বিল্ডিং এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। গুগল ম্যাপ বলছে এটাই ইস্ট-ওয়েস্ট ট্রেডিং সেন্টার। কিন্তু কোনো সাইনবোর্ড নজরে পড়ছে না। কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করবো? সব পথচারি হনহন করে হাঁটছে, চেহারায় বিরক্তি। জিজ্ঞেস করলে উত্তর পাবো কি না কে জানে! দারোয়ান টাইপের কোনো লোকও দেখছি না আশে পাশে। লোকজন সব ভেতরে ঢুকছে আর বের হচ্ছে। সবাই খুব ব্যস্ত।
“ইন্টারভিউ?”
প্রশ্নটা এলো ডান দিক থেকে। আমি ঘুরে তাকালাম। দেখলাম একজন ভিক্ষুক বসে আছে ফুটপাতে, টিনের থালা সামনে নিয়ে। বয়স পঞ্চাশের ঘরে হবে। গায়ে তালি মারা একটা পাঞ্জাবি আর ছেঁড়া লুঙ্গী। মাথায় বড় বড় অবিন্যস্ত চুল। লোকটাকে ভিক্ষুক কম, পাগল বেশি মনে হচ্ছে।
আমি হ্যাঁ-বোধক মাথা ঝাঁকালাম। জিজ্ঞেস করলাম, “এটা কি ইস্ট-ওয়েস্ট ট্রেডিং সেন্টার?”
ভিক্ষুক নিঃশব্দে হাসলো। বেরিয়ে পড়লো তার পোকায় খাওয়া কালো কালো দাঁত। “ঠিক যায়গাতেই এসেছিস। কিন্তু ইন্টারভিউ কে নেবে জানিস তো?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “না।”
ভিক্ষুক জ্ঞানী ব্যক্তিদের মতো ভাব করে বললো, “কোম্পানির বড় সাহেব। নাম দস্তগীর চৌধুরী। ৮০ বছরের বৃদ্ধ! তবে খুউববব চালাক লোক!”
“একটা ভিক্ষুক কীভাবে এসব জানে?” আমি কৌতূহলী হয়ে উঠলাম।
“শোন, তোকে তিনটা নিয়ম শিখিয়ে দেই। ইন্টারভিউতে কাজে লাগবে। তোর ভালো হবে…”
এমনিতেই লেট হয়ে গেছে। তারপরও আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম পাগল লোকটা কি বলে শোনার জন্য।
“…এক নম্বর নিয়ম- দস্তগীরের কোনো প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বলবি না।”
“কিহ?” আমি অবাক হয়ে গেলাম।
পাগল কিসিমের লোকটা বলে যাচ্ছে, “দ্বিতীয় নিয়ম- দস্তগীরের কোনো প্রশ্নের উত্তরে ‘ইয়েস’ বলবি না! মানে ইংরেজিতেও ‘হ্যাঁ’ বলবি না। বিশ্বের কোনো ভাষাতেই ‘হ্যাঁ’ বলবি না!”
আমি বুঝলাম লোকটা আসলে বদ্ধ উন্মাদ।
“তৃতীয় নিয়ম…” লোকটা মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলতে থাকলো, “দস্তগীরের কোনো প্রশ্নের উত্তরে এভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিবি না…”
একটা উন্মাদের প্রলাপ শুনে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। আমি বিল্ডিং এ ঢুকে পড়লাম। ধুপ ধাপ সিড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলাম।
***
ইন্টারভিউ সাত তালায়। আমি লিফট থেকে নেমে এলাম। বিশাল কাচে ঘেরা অফিস দেখতে পাচ্ছি। সামনেই রিসিপশন ডেস্ক। সুন্দরী রিসিপশনিস্ট সামনে ঝুঁকে একটা বই পড়ছে। আমাকে দেখে মুখ তুলে তাকালো।
আমি বললাম, “ইন্টারভিউ দিতে এসেছি।”
“আপনি মাহমুদ জামান?”
আমি হ্যাঁ-বোধক মাথা নাড়লাম।
“ইউ আর লেট।”
আমি লাজুক ভঙ্গিতে হাসলাম।
“আপনার ভাগ্য ভালো, পরের জন এখনও আসেনি। নইলে ইন্টারভিউ আর নেওয়া হতো না। আমাদের অফিসে খুব স্ট্রিক্টলি টাইম মেইনটেইন করা হয়।”
মেয়েটি বই বন্ধ করে ফোনের রিসিভার হাতে নিলো। বইয়ের নাম দেখলাম- মহাযাত্রা, নাজিম উদ দৌলার লেখা। এই বইটা আমি পড়া শুরু করেছিলাম। সাইকো থ্রিলার উপন্যাস। সিরিয়াল কিলারটা যখন একের পর এক খুন করতে শুরু করলো, আমি আর নিতে পারছিলাম না।
মেয়েটি ফোন কানে ডায়াল করলো। ঐপাশ থেকে রিসিভ হতেই নম্র গলায় বললো, “স্যার, একজন ক্যান্ডিডেট এই মাত্র এসেছেন।”
ঐ পাশ থেকে কিছু বলা হলো। মেয়েটি “ওকে স্যার” বলে ফোন রাখলো। তারপর ডেস্কে একটা সুইচ চাপলো। সম্ভবত কাউকে ডাকলো।
আমি দাঁড়িয়ে আছি, ঘামছি অল্প অল্প। নার্ভাস লাগছে।
মিনিট খানেক পর একজন পিয়ন বেরিয়ে এলো গ্লাসডোর ঠেলে। রিসিপশনিস্ট পিয়নকে বললো, “উনাকে স্যারের রুমে নিয়ে যাও।”
পিয়ন আমাকে ইশারা দিলো তার সাথে যাওয়ার জন্য। আমি তাকে ফলো করে গ্লাসডোর দিয়ে অফিসে ঢুকলাম।
সুবিশাল অফিস! ছোট ছোট কাঁচ দিয়ে ঘেরা ডেস্কে বসে কাজ করছে সবাই। পুরো ফ্লোরে অন্তত ২০০ মানুষ কাজ করছে। ডেস্কগুলোর পাশ দিয়ে পিয়নের পেছন পেছন হেঁটে যাচ্ছি আমি। সবাই একবার মুখ তুলে আমাকে দেখছে।
একটা দরজার সামনে এসে থামলো পিয়ন। দরজায় লেখা- দস্তগীর চৌধুরী, চেয়ারম্যান, ইস-ওয়েস্ট ট্রেডিং সেন্টার। পিয়ন আমাকে এক মিনিট দাঁড়াতে বলে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো।
আমি একটা বড় করে দম নিলাম। নার্ভাসনেস কাটানোর চেষ্টা করছি। রুমাল বের করে ঘাম মুছলাম কপালের। চারিদিকে তাকিয়ে সবাইকে খুব ফ্রেন্ডলি মনে হচ্ছে। দরজার কাছেই একটা ডেস্কে একজন মিষ্টি চেহারার মহিলা বসে আছেন। অল্প বয়সী একটা ছেলেকে তিনি কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। একটু দুরেই একজন পুরুষ ল্যাপটপের সামনে ঝুঁকে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন। ইস! যদি এমন একটা অফিসে সত্যিই আমার চাকরিটা হয়ে যেতো!
পিয়ন বেরিয়ে এলো। বললো, “ভেতরে যান। স্যার, ডাকছেন।”
আমি ভেতরে ঢুকে সালাম দিলাম।
বিশাল আকারের ডেস্কের পেছনে আরামদায়ক চেয়ারে বসে আছেন একজন হাসি খুশি মানুষ। আন্তরিক কণ্ঠে বললেন, “চলে আসুন, বসুন।”
আমি এগিয়ে এলাম। একটা চেয়ার টেনে বসলাম তার মুখোমুখি। অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। বাইরের ঐ উন্মাদ বলেছিলো দস্তগীর সাহেবের বয়স ৮০। কিন্তু আমার সামনে যিনি বসে আছেন তার বয়স বড়জোর ৪৫ থেকে ৫০ এর মধ্যে হবে, এর বেশি কিছুতেই না।
“কেমন আছেন, বলুন?”
আমি নার্ভাস ভঙ্গিতে হেসে বললাম, “জি স্যার। ভালো। আপনি ভালো আছেন?”
লোকটা চড়া হাসি দিয়ে বললো, “আমি সব সময় ভালোই থাকি। চা-কফি কিছু খাবেন?”
“না স্যার”।
“তাহলে কাজের কথায় আসি।” হাসি মুছে গিয়ে দস্তগীরের চেহারা গম্ভীর হলো, “দেখুন মিস্টার জামান, আমি আপনার প্রোফাইল দেখেছি ভালো করে। আপনার একাডেমিক রেজাল্ট খুব একটা ভালো না। কিন্তু আপনি স্টুডেন্ট লাইফে খুবই অ্যাকটিভ একজন পার্সন ছিলেন। অনেক সংগঠনের সাথে জড়িত, এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ… আমাদের এই পোস্টের জন্য এমনই একজন ইয়াং এনার্জেটিক মানুষকে দরকার। কিন্তু এখানে কাজের খুব প্রেসার আছে, আপনি কি মনে করেন আপনি প্রেসার নিতে পারবেন?”
আমি ভেতরে ভেতরে ঘাবড়ে গেলেও বাইরে ঠিক থাকার চেষ্টা করলাম। হাসি মুখে বলতে শুরু করলাম, “ডেফিনিটলি! আমি কাজ পছন্দ করি, কাজ করতে ভালোবাসি। প্রেসার থাক বা না থাক, আমি নিষ্ঠার সাথে আমার কাজটা করে যেতে পছন্দ করি…”
দস্তগীর হাত তুলে থামালেন আমাকে। “এসব মুখস্ত বুলি শুনতে চাইনা আমি। গিভ মি অ্যান ইয়েস অর নো আনসার।”
আমি হাসিমুখে ‘ইয়েস স্যার’ বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। মনে পড়লো ঐ পাগল বলেছিলো কোনো প্রশ্নের উত্তরে ‘ইয়েস’ না বলতে। কিন্তু এমন প্রশ্নের উত্তরে আমি ‘নো’ বলবো কি করে?
“কি ব্যাপার? কিছু বলছেন না কেন? পারবেন প্রেসার সামলাতে?”
আমি মন থেকে চিন্তা ঝেরে ফেলে বললাম, “ইয়েস স্যার! অবশ্যই পারবো।”
“ভেরি গুড।” হাসি ফুটলো দস্তগীরের মুখে। “প্রেসারের মধ্যে ডেডলাইনও কিন্তু মিট করতে হবে! আমরা এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের বিজনেস করি, আমাদের এখানে ডেডলাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। প্রয়োজনে দিন-রাত কাজ করতে হবে সেজন্য। পারবেন তো?”
এই সেরেছে! ডেডলাইন জিনিসটা আমাকে দিয়ে হয় না! তারপরও মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, “হ্যাঁ স্যার। আমি ডেডলাইনের ভেতর কাজ শেষ করতে ভালোবাসি।”
“আরেকটা বিষয় হচ্ছে- প্রমোশন ইস্যু।” দস্তগীর ঠোঁট টিপে এক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, “যে পোস্টের জন্য অ্যাপ্লাই করেছেন, তার স্যালারি জানেন তো?”
“জানি। ৬৫ হাজার।”
“৬৫ হাজার!” খুব জোর দিয়ে কথাটা বললেন দস্তগীর সাহেব। “এন্ট্রি লেভেলের জবের জন্য খুব লোভনীয় স্যালারি। তবে চাকরির পর ২ বছর কোনো প্রমোশন কিংবা স্যালারি ইনক্রিজ হবে না। এর মধ্যে আপনি চাকরিটা ছাড়তেও পারবেন না। এই ২ বছরে আমরা আপনাকে একজন লিডার হিসেবে গড়ে তুলবো। তারপর যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে আপনাকে প্রমোশন পেতে হবে। কি? দুই বছর দিতে পারবেন আমাকে?”
“হ্যাঁ, স্যার! অবশ্যই পারবো!” আমি দৃঢ় কণ্ঠে বললাম।
“ভেরি গুড! আই লাইক ইওর কনফিডেন্স। এবার শেষ প্রশ্ন-” কিছুক্ষণ থেমে থাকলেন দস্তগীর চৌধুরী। মনে হচ্ছে সাসপেন্স তৈরি করে খুব মজা পাচ্ছেন। “নেক্সট মানথ থেকে জয়েন করতে পারবেন?”
কথাটা শুনে প্রথমে অবাক হলাম আমি। তারপর হাসিতে সবগুলো দাঁত বের করে বললাম, “ইয়েস স্যার!”
এরপর বেশ কিছুক্ষণ মিস্টার দস্তগীর আমার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললেন। বুঝতে পারলাম লোকটার অনেক জ্ঞান। বিজনেসের অনেক জটিল বিষয়ে সুন্দর ধারণা পেয়ে গেলাম তার অল্প কথা থেকেই!
***
আমি দরজা ঠেলে বেরিয়ে এলাম বাইরে। হাসিটা এখনও ঠোঁটে লেগে আছে। ইন্টারভিউ বোর্ডেই চাকরি ফাইনাল হয়ে গেছে। নিজেকে এতটা ভাগ্যবান আগে কখনো মনে হয়নি! রিমিকে এক্ষুনি ফোন করে বলা দরকার- ‘তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতেছি খুব তাড়াতাড়ি।’
আরে বাহ! চাকরি হতেই বিয়ের কথা ভাবছি আমি! এই হচ্ছে ম্যাচিউরড হওয়ার লক্ষণ! রিমি আমাকে সব সময় ইম্যাচিউরড বলে ক্ষ্যাপায়। এবার আর বলতে পারবে না!
সামনের ডেস্কে মহিলা এখনও ছেলেটিকে কাজ বুঝাচ্ছে। আচমকা আমার মাথায় একটা চিন্তা উদয় হলো! এই মহিলার সাথে অল্পবয়সী ছেলেটির অনৈতিক সম্পর্ক আছে নিশ্চয়ই! অন্তত তাদের চোখের চাহনি, হাসার ধরনে তাই মনে হচ্ছে! আজব! এই রকম চিন্তা আমার মাথায় আসছে কেন?
আর একটু এগিয়ে এসে ল্যাপটপের সামনে ঝুঁকে থাকা লোকটিকে দেখে বুঝলাম উনার মেরুদণ্ডে কিছু একটা সমস্যা আছে। এই কারণে সামনে ঝুঁকে থাকেন, মনোযোগ দিচ্ছেন তা নয়! কিন্তু এই বিষয়টা আগে কেন বুঝতে পারলাম না? হঠাৎ করে আমার জ্ঞান বুদ্ধি বেশ খানিকটা বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে!
বাইরে এসে রিসিপশনে বসা মেয়েটিকে দেখলাম এখনও মহাযাত্রা বইটা পড়ছে। মহাযাত্রা বইয়ের প্রথম দুই-তিনটা খুনের দৃশ্য মনে পড়লো আমার। দারুণ উপভোগ্য ছিলো খুনের বর্ণনা! সিরিয়াল কিলারটাও জোস উপায়ে কিল করছিলো। আশ্চর্য! পড়ার সময় তো অসুস্থ অনুভূতি হচ্ছিলো আমার। এখন হঠাৎ করে সেটা ভালো লাগছে কি করে?
মনে হচ্ছে দস্তগীর সাহেবের মতো জ্ঞানী মানুষের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমার নিজের জ্ঞানের লেভেল বেড়ে গেছে। নিজেকে অনেক বেশি ম্যাচিউরড মনে হচ্ছে! ওয়াও! দস্তগীর সাহেব মানুষটা তো এক্সট্রা অর্ডিনারি! অন্যের ভেতরে মানসিক পরিবর্তন আনার দারুণ ক্ষমতা আছে তার। এমন বস পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার!
***
বাইরে এসে দেখলাম ঐ পাগল লোকটা এখনও বসে আছে। চাকরি হওয়ার খুশিতে আমার ভেতরে দানশীল সত্ত্বা জেগে উঠলো। আমি এগিয়ে গিয়ে তার থালার মধ্যে একটা ১০০টাকার নোট রাখলাম। পাগল লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে কালো দাঁত বের করে হাসলো।
“চাকরি হয়ে গেছে?” লোকটা প্রশ্ন করলো।
আমি হ্যাঁ-বোধক মাথা নাড়লাম।
“কত বছর চাইলো?”
প্রথমে প্রশ্নটা বুঝতে পারলাম না। পরে বুঝলাম প্রমোশনের জন্য কত বছর লাগবে জিজ্ঞেস করেছে। আমি বললাম, “দুই বছর।”
পাগল লোকটার হাসি চওড়া হলো, “ব্যাস! এবার সার্টিফিকেটে বয়সের সাথে দুই বছর যোগ করে নাও।”
“মানে?” অবাক হলাম আমি।
“মানে তোমার দুই বছর বয়স বেড়ে গেছে! ঐ বুড়োটার আধ্যাতিক ক্ষমতা আছে অন্যের বয়স কেড়ে নেওয়ার। কেউ যদি হ্যাঁ বলে বা সম্মতি দেয়, তাহলেই সেই ক্ষমতা কাজ করে! এই কারণেই তো ৮০ বছর বয়সেও তাকে দেখতে লাগে ৪০!”
আমি ভীষণভবে চমকে উঠলাম লোকটার কথা শুনে! দস্তগীরের রুম থেকে বের হওয়ার পর থেকেই আমার নিজেকে অনেক বেশি ম্যাচিউরড লাগছে! যা কিছু দূর্বোধ্য লাগছিলো, তা এখন সহজেই বুঝতে পারছি! মনে হচ্ছে যেন বয়স খানিকটা বেড়ে গেছে!
এদিকে পাগল লোকটা বলে যাচ্ছে, “…সবার কাছ থেকে দুই-এক বছর করেই নেয় শালা। শুধু আমার বেলাতেই চাইলো ২০ বছর! আমিও না বুঝে রাজি হয়ে গেলাম! ব্যাস! যৌবনে পা দিয়েই বুড়ো হয়ে গেলাম!”
আমি আর পাগলের কথা শুনছি না। আমার কানে তখন দস্তগীরের ঐ প্রশ্নটা বাজছে- দুই বছর দিতে পারবেন আমাকে?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


....সমাপ্ত....


লেখক সংক্ষেপ:
নাজিম উদ দৌলার জন্ম ১৯৯০ সালের ৪ নভেম্বর নানাবাড়ি কেরানীগঞ্জে। পৈত্রিক নিবাস যশোর জেলায় হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকার আলো বাতাসের মাঝে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি ‘অ্যানালাইজেন’-এ কর্মরত আছেন। লেখালেখির চর্চা অনেক দিনের। দীর্ঘসময় ধরে লিখছেন ব্লগ, ফেসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে। ২০১২ সালে প্রথম গল্প ‘কবি’ প্রকাশিত হয় কালান্তর সাহিত্য সাময়িকীতে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম থ্রিলার উপন্যাস ‘ইনকারনেশন’। একই বছর আগস্টে প্রকাশিত হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার ‘ব্লাডস্টোন’ তাকে এনে দেয় বিপুল পাঠকপ্রিয়তা। এ পর্যন্ত ৬টি থ্রিলার উপন্যাস ও ১টি গল্পগ্রন্থ লিখেছেন তিনি। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখায় মনোনিবেশ করেছেন। কাজী আনোয়ার হোসেনের কালজয়ী চরিত্র ‘মাসুদরানা’ নিয়ে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন তিনি। এছাড়াও ‘শান’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সহ বেশ কিছু বড় বাজেটের বাংলা চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। অবসর সময় কাটে বই পড়ে, মুভি দেখে আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে। সদালাপী, হাসি খুশি আর মিশুক স্বভাবের এই মানুষটি স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর বাংলাদেশের, যেখানে প্রত্যেকটি মানুষ এক হয়ে দেশ গড়ার কাজে মন দেবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন