উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৮৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৮৭)


রাত এক’টা বাজে। শুভ্র, রোদ আর আহান গল্প করে ছাদ থেকে নামছে। শুভ্রর ফর্সা গায়ে কালো রঙট বরাবরই খুব মানায়। আজকেও তার ফর্সা গায়ে কালো রঙের বিয়ের শেরওয়ানীটা খুব সুন্দর মানিয়েছে। হ্যাঁ আজকে শুভ্র বিয়ে করেছে তার। নিজের করে নিয়েছে তার ভালোবাসা, তার শ্যামাঙ্গিনীকে। সামনে শুভ্রের পরীক্ষা, তাকে আবার ঢাকা ফিরতে হবে। তাই ছোট করেই অনুষ্ঠান করে তাদের বিয়ে পড়ানো হয়েছে। ছোট হলে একদম ছোটও না। প্রতিবেশী, মিষ্টার হাছিবের চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাইবোন, গ্রামের কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি, মিসেস সম্পার বাবার বাড়ির মানুষ, দীপ্তি, রোদ, চন্দ্রা, আহান, মিসেস সোনালী, মিষ্টার আফরান, মিসেস আফিফা আর মিষ্টার মুস্তাফা সব মিলিয়ে প্রায় চারজন লোক। দীপকের খুব ইচ্ছে ছিল আসার, কিন্তু একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে বলে দীপক আসতে পারেনি। নীলাও চট্টগ্রামে আছে, তার পরীক্ষা চলছে তাই। অভি আর তোয়া হানিমুনে গিয়েছে নরওয়েতে, তাই তারা আসতে পারেনি। তূবার শরীরটা ভালো না। তাই তূবা, অভ্র, মিসেস মিতালী আর মিষ্টার আসাদ আসতে পারেনি। শুভ্র নিজের রুমে যাওয়ার জন্য রুমের সামনে আসতেই দেখে রুমের সামনে দীপ্তি আর চন্দ্রা তার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এতো রাতে তাদের এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার মতলবটা বুঝতে তার সময় লাগে না। তাই সে দীপ্তি আর চন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে বললো
- আমি কোন টাকা পয়সা দিব না, যা ফুট।
দীপ্তি স্বভাব-সিদ্ধ কন্ঠে বললো
- তা বললে তো হবে না ধলা মামা। আমরা এতো কষ্ট করে সেই সুদূর ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এসিছি, তোর বিয়ে দিতে। আর তুই আমাদের এই সামান্য কটা টাকা দিতে কিপ্টামি করছিস!
চন্দ্রা কপালে ভাঁজ ফেলে, কোমরে হাত দিয়ে বললো
- আরে তোর তো এমনে এমনেই আমাদের বেশি বেশি টাকা দিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন। আজকে আমরা না থাকলে তোর বিয়েই হতো না।
শুভ্র সুন্দর করে বললো
- সেই তো বন্ধুর কষ্টের কথা ভেবে যেহেতু বিয়েটা করালি, তখন বন্ধুর কষ্টের কথা ভেবে এখন ছেড়ে দে। তোরা না কতো ভালো বন্ধু।
দীপ্তি বাঁকা চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- পাম দিচ্ছিস দোস্ত।
শুভ্র দাত কেলিয়ে বললো
- না খাটি সরিষার তেল দিচ্ছি।
দীপ্তি ভাব নিয়ে বললো
- সে যা-ই মারিস না কেন, কাজ হবে না ধলা মামা। টাকা তো তোকে দিতেই হবে। হয় টাকা ফেল, না হয় ভুলে যা যে তুই আজকে বিয়ে করেছি।
শুভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
- কি নিষ্ঠুর তোরা। তোরা বন্ধু নামের কলঙ্ক।
চন্দ্রা দৃঢ় কন্ঠে বললো
- সে তুই কলঙ্ক বা কয়লা যাই বলিস না কেন, টাকা ছাড়া আজকে তুই এই দরজার ওপারে যেতে পারবি না।
শুভ্র অনুতাপের কন্ঠে বললো
- এখন আমি বুঝছি অভ্র ভাইয়ার সেদিনের কষ্টটা।
দীপ্তি হেসে বললো
- ভালো, ভালো।
চন্দ্রাও দীপ্তি সাথে তাল মিলিয়ে হেসে বললো
- খুব ভালো।
তারপর দীপ্তি আর চন্দ্রা দুইজন মিলে হাইফাই করল। শুভ্র বুঝতে পারলো টাকা না, আজকে সে কোনভাবেই রুমে যেতে পারবে না। তাই জিজ্ঞেস করল
- বল, কতো চাস?
দীপ্তি উত্তর দিল
- বেশি না, মাএ পঞ্চাশ হাজার।
শুভ্র অবাক কন্ঠে বললো
- পঞ্চাশ হাজার টাকা! দোস্ত টাকার রেটটা আমার জন্য কম হয়ে গেল না। না মানে, যেখানে বাকিদের থেকে নিস তিরিশ হাজার টাকা। সেখানে আমার থেকে মাএ পঞ্চাশ হাজার টাকা!
দীপ্তি মুখে করুন ভাব এনে বললো
- তোর গেইট ধরার, হাত দোয়ার বা অন্যান্য কিছুতেই কোন টাকা লাগেনি। টাকা গুলো তোর পকেটে থেকে কান্না করতেছে দোস্ত। তাকে মায়া করে মাএ পঞ্চাশ হাজার টাকা চাইলাম।
শুভ্র মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব এনে বললো
- বউ আমার একা একা ভয় পেয়ে কান্না করতেছে দোস্ত। কেমন নিষ্ঠুর মেয়ে তোরা এক মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের কষ্ট বুঝিস না।
চন্দ্রা চোখ জোড়া ছোট ছোট করে বললো
- কেমন নিষ্টুর বর তুই, সামান্য কটা টাকার জন্য বউকে কান্না করাচ্ছিস।
শুভ্র তার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাদের তক বিতর্ক দেখতে থাকা রোদ আর আহানকে বললো
- ভাই আপনাদের বউগুলোকে সামলান না।
আহান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো
- তোমার কি মনে হয়, তোমার থেকে এরা আমাদের কথা বেশি শুনিবে।
রোদ হাসি মুখে বললো
- তুমিই সামলাও তোমার প্রাণ প্রিয় বন্ধুদের। তাছাড়া ওদের কাছে অভ্রের অর্ডার আছে, তোমাকে যেন টাকা আদায় না করা পর্যন্ত না ছাড়া হয়। অভ্রের বিয়েতে নাকি অনেক লাফালাফি করেছো তুমি। তার উসুল।
শুভ্র বেচারা আর উপায় না পেয়ে দীপ্তি, চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বললো
- অ্যামাউন্টটা একটু কমা।
দীপ্তি দোকানদারদের মতো করে বললো
- সরি ভাই, ফিকড প্রাইস। নিলে নেন, না নিলে ভাগেন। আপনার বাসর সাজানো খাটে গিয়ে আমরা একটা জম্পেশ ঘুম দেই।
শুভ্র পকেট থেকে চেক বের করে লিখতেই, দীপ্তি য়া ছোঁ মেরে নিয়ে বললো
- সেই তোর দেওয়াই লাগলো শুধু শুধু এতোক্ষণ সময় নষ্ট করলি।
চন্দ্রা দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে বললো
- যা যা মেয়েটা একা একা সেই কখন থেকে বসে আছে। যা ভিতরে অনুর কাছে যা।
শুভ্র রুমের ভিতরে ঢুকে বললো
- বদগুলা শোন।
দীপ্তি আর চন্দ্রা শুভ্রের দিকে তাকায়। শুভ্র ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো
- আমি খুব লাকিরে। তোদের মতো বন্ধু পাওয়া, সত্যিই ভাগ্যের বেপার।
শুধু ওদের দিন বন্ধুর না, চন্দ্রা দীপ্তি পিছনে দাঁড়ানো রোদ, আহান আর রুমে বিছানায় ঘোমটা টেনে বসে থাকা অনুর মুখেও হাসির রেখা ফুটে উঠে। হাসি হাসি মুখেই দীপ্তি এক ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল
- এই উপলক্ষে আরও দশ হাজার টাকা বেশি দিবি?
- যা ফুট।
বলেই দড়াম করে রুমের দরজা লাগিয়ে দিল শুভ্র। দরজার ওপাশ থেকে দীপ্তি, চন্দ্রার হাসির শব্দ ভেসে আসে। তআ শুনে শুভ্রও ঠোঁট দুটো প্রসারিত হেসে পিছনে ঘুরে। পিছনে ঘুরতেই তার চোখ যায় ফুল দিয়ে সাজানো খাটের উপর টকটকে লাল রঙের বেনারসি শাড়ি পরে, মাথায় লম্বা ঘোমটা টেনে বসে থাকা অনুর দিকে। যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসেও, তাকে নিয়ে সময় স্বপ্ন দেখার সাহসও সে করতোনা। আজকে সেই তার বউ। আজকে তার বার বার শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে, ভাগ্য তাকে একদিন দিয়ে খারাপ হলেও, বাকি সব দিক দিয়ে অনেক বেশিই ভালো। কিন্তু নিজের শ্যামাঙ্গিনীর কাছে না গিয়ে, রুমে রাখা আলমারির দিকে যায় সে। আলমারি খুলে, ড্ররের খুলে একটা বক্স বের করে সে। তারপর আলমারি লাগিয়ে সেই বক্সটা নিয়ে যায় অনুর কাছে। বিছানায় অনুর ঠিক সামনে বসে শুভ্র। অনু তার শান্ত মিষ্টি কন্ঠে শুভ্রকে বললো
- আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
বলেই শুভ্র আস্তে-ধীরে অনুর ঘোমটা তুলে দেয়। শুভ্রই না করেছিল, তার শ্যামাঙ্গিনীকে যেন মেকাপ করে সাদা ভূত না বানানো হয়। তাই মুখে খুবই হালকা মেকাপ করা হয়েছে। চোখে মোটা করে কাজল টানা আর ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক দেওয়া। গলায় দুটো সোনার হার, কানে সোনার দুল, কপালে টিকলি, হাতে কাচের চুড়ির পাশাপাশি আছে সোনার চুড়ি। কাচের ওই টকটকে লাল চুড়ি জোড়া ছাড়া বাকি সবই মিষ্টার হাছিবের কেনা। এমন কি শুভ্রের গায়ের জামা কাপড়গুলোও। শুধু অনুর হাতের কাচের চুড়িগুলো মেলা থেকে শুভ্র কিনে দিয়েছিল। এই অল্প সাজেই মেয়েটাকে খুব সুন্দর লাগছে। শুভ্র অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার শ্যামাঙ্গিনীর দিকে। শুভ্রের ধ্যান ভাঙে তার শেরওয়ানীর পকেটে থাকা ফোনটার ট্রিং ট্রিং শব্দে। বিরক্ত নিয়ে শুভ্র পকেট থেকে বের করে দেখে দীপ্তি কল করেছে। যদি কোন প্রয়োজনে ফোন করে থাকে, তাই শুভ্র কলটা রিসিভ করে বললো
- হ্যাঁ তিরিং বিরিং বল।
ফোনের ওপাশ থেকে দীপ্তি বললো
- তুই ঠিক আছিস, আমি তো ভাবলাম খুশির ঠেলায় হার্ট অ্যাটাক করছিস তাই কল করেছি। আচ্ছা রাখি তাহলে।
বলেই দীপ্তি কলটা কেটে দেয়। শুভ্র ফোনটা পাশে বিছানায় রেখে, হাতের বক্সটা খুলে একজোড়া বালা বের করে। তখন আবার বিছানায় রাখা ফোনটা বেজে উঠে। এবারও স্কিনে ভেসে উঠে "তিরিং বিরিং" লেখাটা। শুভ্র কলটা রিসিভ করে বললো
- হ্যালো।
ফোনের ওপাশ থেকে দীপ্তি বললো
- এখন তুই ঠিক আছিস। আচ্ছা রাখি তাহলে।
বলে আবার কলটা কেটে দেয় সে। শুভ্র বুঝে দীপ্তি আর চন্দ্রা মিলে তাকে জ্বালাচ্ছে। ফোন অফ না করলে সে শান্তি পাবে না। তাই ফোনটা সুইচ অফ করে, বিছানায় রেখে দেয় সে। তারপর হাতের বালা জোড়া অনুর হাতে পরিয়ে দিতে দিতে বললো
- এই বালা দুটো আমার মা'র। বাবা খুব শখ করে এই বালা জোড়া মা'র জন্য কিনে এনেছিল। এটাই ছিল মাকে দেওয়া বাবার প্রথম আর শেষ সোনার গহনা। মা সব সময় এই বালা জোড়া পরে থাকতো। আজ থেকে এই বালা জোড়া তোর। তুই সব সময় এগুলো পরে থাকবি। তোর শাশুড়ির দেওয়া গিফট। মা বেঁচে থাকলে এর সাথে আরও অনেক কিছু দিত, কিন্তু আমার কাছে তাদের পক্ষ থেকে তোকে দেওয়ার মতো আর কিছু নেই।
- কে বলেছে কিছু নেই। সব চেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস তাদের দোয়া আর ভালোবাসা আছে না। এই অনেক।
কথাটা বলেই হাসি মুখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে অনু। শুভ্র একটানে অনুকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে, মাথায় চুমু এঁকে দিয়ে বললো
- ভালোবাসি শ্যামাঙ্গিনী।
তারপর শক্ত নিজের বুকে জড়িয়ে রাখে তাকে। অনুও চোখে সুখের নোনা জল নিয়ে চুপটি মেরে পড়ে থাকে তার, শুধু তার শুভ্রের বুকে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৮৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন



আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন