উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৮৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৮৮)
অভ্রদের বাসার ড্রয়িং রুমের সিঙ্গেল সোফাতে বসে খবর দেখছে মিষ্টার আসাদ। পাশের লম্বা সোফাটার একপাশে হাত-পা তুলে বসে আছে তূবা আর অন্য মিসেস মিতালী বসে তূবার চুল আঁচড়ে দিচ্ছে। মেয়েটা এখনো অসুস্থ। খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি, কিছু খেলে বমি করা এমন আরও বেশ কিছু লক্ষন দেখে তূবা কিছু না বুঝলেও, অভ্র, মিষ্টার আসাদ আর মিসেস মিতালী বুঝতে পারে যে তূবা প্রেগন্যান্ট। তারপরও সিউর হওয়ার জন্য অভ্র কালকে বিকেলে তূবাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে কিছু টেস্ট করায়। টেস্টের রিপোর্টগুলো হাতে নিয়ে কালো মুখে বাসার ভিতরে ঢুকে অভ্র। অভ্রের শুকনো মুখটা দেখে মিষ্টার আসাদ প্রশ্ন করল
- কিরে তোর মুখটা এমন শুকনো কেন? আমার মতে তো টেস্টের রেজাল্ট ভালো হওয়ার কথা!
রিপোর্টটা মিষ্টার আসাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে অভ্র বললো
- নেও দেখ।
মিসেস মিতালীও উঠে স্বামীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে?
তূবাও বেশ চিন্তায় পরে যায়। তার বড় কোন অসুখ হলো না তো আবার! মাএই তার অভ্রে সাথে বিয়ে হয়েছে এখনি সে মরে যাবে। একটা বছরও সংসার করা হলো না অভ্রের সাথে। এখনই সে মরে গেলে অভ্রের কি হবে। এতো ছোট জীবন নিয়ে জন্মেছিল সে। আগে জানলে সে কখনোই অভ্রকে বিয়ে করতো না। কথাগুলো ভাবতেই চোখ দুটো ছলছল করে উঠে তার। মিষ্টার আসাদ স্ত্রী প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, রিপোর্ট থেকে মুখ তুলে কপালে ভাঁজ ফেলে অভ্রকে বললো
- এতো খুশির খবর। এতো ভালো একটা খবরে, তুই মিষ্টি না এনে এমন পেঁচা মুখ করে ঘরে ঢুকেছিস কেন?
ছলছল চোখের পরিবর্তনে এবার কৌতুহলী চোখে একবার মিষ্টার আসাদ আর একবার অভ্রের দিকে তাকায় তূবা। মিষ্টার আসাদের পাশে দাঁড়ানো মিসেস মিতালী একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো
- আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।
অভ্র মিষ্টার আসাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো
- খুশির খবর! দাঁড়াও আসতে দেও তোমার বন্ধু, আমার খালু প্লাস শশুড়কে তারপর বুঝবে এটা কিসের খবর।
মিষ্টার আসাদ হাসি মুখে বললো
- ভয় পাচ্ছিস শশুড়কে।
অভ্র কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- ভয় কেন পেতে যাবো। আমি তো,,,,,,
অভ্রের কথার মাঝেই, মিসেস সোনালীর সাথে ড্রয়িং রুমে আসতে আসতে মিষ্টার আফরান তার গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে তূবার?
মিষ্টার আসাদ একনজর অভ্রের দিকে তাকিয়ে পুনরায় উত্তর দিল
- খুশির খবর আফরান। তুই দাদা প্লাস নানা হতে যাচ্ছিস।
মিষ্টার আফরান বিষ্মিত কন্ঠে বললো
- কি!
তারপর অভ্রের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো
- তোমাকে আমি ভরসা করেছিলাম। আর তুমি।
মাএই মিষ্টি হেসে মেয়ে কাছে যেতে নিয়েছিল মিসেস সোনালী। কিন্তু তার আগেই মিষ্টার আফরানের কথা শুনে দাঁড়িয়ে গিয়ে কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো
- অভ্র যা করে তাতেই তোমার সমস্যা না। তাই তো এতো আনন্দের একটা খবর শুনেও, তুমি খুশি না হয়ে শুধু শুধু ছেলেটাকে বকছো।
মিষ্টার আফরান কঠিন সরে বললো
- বকছি কারণ তূবা এখনো ছোট। একটু কিছু থেকে কিছু হলেই ঠান্ডা লেগে যায়। তার উপর অ্যানিমিয়া পেসেন্ট।
মিষ্টার আসাদ মিষ্টার আফরানকে শান্ত করতে বললো
- আরে এতো চিন্তা করিস না। ঘরে দুটো ডাক্তার আছে আল্লাহ ভরসা আমাদের তূবার কিছু হবে না।
মিসেস মিতালীও স্বামীর সাথে তাল মিলিয়ে বললো
- হ্যাঁ ভাইয়া, আপনি চিন্তা করেন না। আমরা সবাই মিলে তূবার খেয়াল রাখবো। ইনশাআল্লাহ সব ভালো হবে।
মিষ্টার আফরান পুনরায় শক্ত কন্ঠে বললো
- সুস্থতা না হয় দেখবে। কিন্তু ওর লেখাপড়া! তার কি হবে? সামনে ভার্সিটির এডমিশন টেষ্ট। এমনেই নামকরা ফাঁকিবাজ এই মেয়ে। এই অবস্থায় ও কি আর লেখাপড়া কিছু করবে?
তূবা মাথা নিচু রেখে শান্ত, ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- আমি এখন থেকে একদম ফাকিবাজি করবো না, বাবা। মনোযোগ দিয়ে পড়বো।
মিষ্টার আসাদ হাসিমুখে বললো
- তূবা মা যখন বলেছে মনোযোগ দিয়ে পড়বে, তখন আর চিন্তা কিসের। চল আমরা গিয়ে এখন মিষ্টি কিনে নিয়ে আসি। এলাকার সবাইকে আজকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে। আমি দাদা হবো বলে কথা।
বলেই তিনি মিষ্টার আফরানকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন। মিসেস সোনালী আর মিসেস মিতালী হাসিমুখে তূবার কাছে এসে তাকে আদর করতে থাকলো। কিন্তু তূবার দেখতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকা অভ্রকে।

রাতের খাবার হজম হওয়ার জন্য রুমের মধ্যেই পাইচারি করছিল মিষ্টার সফিক। তখনই বিছানার পাশে থাকা তার ফোনটা ট্রিং ট্রিং শব্দ করে বেজে উঠে। মিষ্টার সফিক বেড সাইড টেবিলের কাছে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে স্কিনে ভেসে আছে " Boro vai" লেখাটা। একটা নিশ্বাস ফেলে ফোনটা রিসিভ করে বললো
- হ্যালো ভাই, আস,,,,,,
মিষ্টার সফিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই মিষ্টার রফিক রাগী কন্ঠে বললো
- আমার ছেলে তো তোর নিজেরই রক্ত। তুই কিভাবে পারলি তার নামে কেস করতে? কষ্ট হলো না তোর?
মিষ্টার সফিক উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল
- নিরব কি করেছে জানিস তুই?
মিষ্টার রফিক সোজাসাপ্টা উত্তর দিল
- হ্যাঁ জানি। কুহুকে পাওয়ার জন্য ও একটা ভুল করে ফেলেছে। তাই বলে আমার ছেলের সাথে তোর রক্তের সম্পর্ক, তাকে তুই এভাবে ফাসিতে ঝুলাতে পারবি!
মিষ্টার সফিক তাচ্ছিল্যের সুরে বললো
- মানুষের দেহের কোন অঙ্গ পঁচে গেলেই, মানুষ তাই কেটে ফেলে দেয় আর এ তো আমার রক্তের সম্পর্কের মানুষ।
মিষ্টার রফিক বিষ্মিত কন্ঠে বললো
- তাই তুইও আমার ছেলেকে মেরে ফেলবি! নিজের ভাইয়ের কথাও ভাববি না!
- তোর ছেলের ফাঁসি হবে না। হয় যাবজ্জীবন হবে, না হয় কিছু বছরের জেল হবে। কিন্তু তুই একবার ভাব, তোর ছেলের জন্য লতিফের প্রাণ গিয়েছে আর লতিফ যদি কাব্যের সামনে এসে না দাঁড়াতো, তাহলে আমার মেয়ে জামাইটা প্রাণ হারাতো। সেই সঙ্গে আমার একমাত্র মেয়েটাও মরে যেত। তারপর এই দুটো ফ্যামিলির কি হতো বুঝতে পারছিস তুই!
- আমার ছেলে তোর মেয়েকে ভালোবাসে। তাকে পাওয়ার জন্যই এসব কিছু করেছে। এতে তার দোষ নেই, সব দোষ তোদের। আজকে তোরা যদি ওই ছেলের সাথে তোর মেয়ের বিয়ে না দিয়ে আমার ছেলের সাথে দিতি, তাহলে এমন কিছুই হতো না।
- নিরব যদি আমার মেয়েকে ভালোই বাসতো, তাহলে আমার মেয়ের সুখ দেখে, খুশি থাকতো। আমার মেয়েকে সর্বহারা করে তার কাছে নিয়ে যেতে চাইতো না।
মিষ্টার রফিক শক্ত কন্ঠে প্রশ্ন করল
- তারমানে তুই তোর মেয়েকে কেসটা তুলতে বলবি না?
মিষ্টার সফিক স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল
- না, আমি বলবো না। আর তাছাড়া আমি বললেও কাজ হবে না। আমার মেয়েকে তো আমি চিনি। কাব্যকে যারা যারা কষ্ট দিয়েছে, তাদের শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমার মেয়ের শান্তি হবে না।
মিষ্টার রফিক রাগী কন্ঠে বললো
- এর শাস্তি তোদের পেতে হবে।
বলেই লাইন কেটে দেয় মিষ্টার রফিক। কান থেকে ফোনটা নামিয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মিষ্টার সফিক। কষ্ট তার ঠিকই হচ্ছে। তাদের বংশের একমাএ ছেলে নিরব। সেও খুব ভালোবাসে তাকে। কিন্তু নিরবের এই অন্যায় ক্ষমার যোগ্য না। এখন তার বাসায় নিচে নামলে লতিফের কথা মনে পড়ে চোখ ভিজে উঠে। কাব্যের কিছু হলে কুহুর কি হতো তা ভেবেই বুক কেঁপে উঠে। কিভাবে ক্ষমা করবে সে নিরবকে!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৮৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন