উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৮৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৮৯)
নিশীথ সূর্যের দেশ নরওয়ের রাজধানী অসলো, সবুজ পাহাড় পর্বতে ঘেরা এই শহরের একটা বিলাসবহুল হোটেল রুমের সোফাতে বসে কফি খাচ্ছে আর নিজের ফোনে মেইল চেক করছে অভি। তখনি টেবিলের উপর থাকা তোয়ার ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠে। নিজের ফোন থেকে চোখ সরিয়ে, সোফার পাশের টেবিলের উপর থাকা তোয়ার ফোনের দিকে তাকায় সে। তোয়ার ফোনের স্কিনে ভাসছে "ভাইয়া" নামটা। তোয়া ওয়াসরুমে, তাই অভি হাসিমুখে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে বললো
- হ্যালো শালা বাবু, কি খবর তোর?
ফোনের ওপাশ থেকে দীপক মলিন কন্ঠ বললো
- এই আছি বউ বিহীন। তা তোর কি খবর? কেমন চলে হানিমুন।
হঠাৎ কিছু মনে পড়লে মানুষের কন্ঠস্বর যেমন শোনায়, অভি নিজের কণ্ঠস্বর ঠিক তেমন করে বললো
- হানিমুন! ওহ আমি যে হানিমুনে এসেছি তা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।
দীপক হেসে জিজ্ঞেস করল
- তোয়ার রাগ এখনো কমেনি?
অভি ম্লান কন্ঠে উত্তর দিল
- না। উল্টো বই পড়তে পড়তে আমার জীবন শেষ। এর থেকে বেশি ভালো হতো তোর সাথে ট্যুরে গেলে।
দীপক অনুতাপ করে বললো
- আগেই বলেছিলাম তোয়াকে রাগাস না। শুনিসনি আমার কথা। এখন বুঝ ঠেলা। তুই এদিকে বউয়ের শাস্তি ভোগ করিস আর ওদিকে অভ্র ভাইয়া, তোর সাথে বিয়ে করে বাপ হয়ে যাচ্ছে।
অভি বিষ্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি তূবা প্রেগন্যান্ট?
দীপক ছোট করে উত্তর দিল
- হ্যাঁ।
অভ্র একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো
- একেই বলে কপাল। ঢাকা গিয়ে সবার আগে আমি অভ্র ভাইয়ার সাথে দেখা করে, তার কপালের সাথে নিজের কপাল কিছুক্ষণ ঘোষবো। যদি ওনার মতো কপাল খুলে আমার। যদিও কাজ হবে বলে মনে হয় না। কারণ অভ্র ভাইয়ার বউ হচ্ছে নরম-সরম মেয়ে। আর অন্যদিকে আমার বউ হচ্ছে গিয়ে ,,,,,,,
অভির মনে হয় কেউ ওর ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। তাই কথাগুলো বলতে বলতেই পিছনের দিকে তাকায় সে। তার পিছনে দুই হাত পরিমাণ দূরে হালকা গোলাপি রঙের হাটু পর্যন্ত লম্বা টপস আর কালো লেগেন্স পরে দাঁড়িয়ে আছে তোয়া। কোমর ছুঁই ছুঁই লম্বা চুলগুলো কোন রকম পেঁচিয়ে পাঞ্চ হেয়ার ক্লিপ দিয়ে বাঁধা। চোখে চশমা নেই, মুখের কোথাও কোথাও এখনো দু-এক ফোঁটা পানি লেগে আছে। রাগে চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে অভির দিকে। সেদিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে অভি, দাত বের করে হেসে বললো
- পরি, সাক্ষাৎ বেহেশতের হুর পরি।
অভি তোয়ার ফোন রিসিভ করাতেই দীপক বুঝে গিয়েছিল, তোয়া ফোনের কাছে নেই। হয়তো ঘুমাচ্ছে না হয় ওয়াসরুমে গিয়েছে। আর এখন হঠাৎ অভির কথার সুর পালটে যাওয়া শুনে দীপক বুঝতে পারে তোয়া এতক্ষণ অভির পাশে না এসেছে, তাই সে হেসে অভিকে বললো
- তোয়া এসেছে, দে ওকে ফোন দে।
অভি তোয়ার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে মুখে জোর পূর্বক হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- নেও লক্ষী বউটুসি, তোমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই, দীপক তোমার সাথে কথা বলবে।
তোয়া অভির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে দাত কটমট করে বললো
- তোমার খবর আমি পরে নিচ্ছি।
অভির হাসির রেখা ফুটিয়ে রাখা মুখটা নিমেষেই চুপসে যায়। তোয়া ফোনটা কানে দিয়ে বিছানার কাছে যেতে যেতে বললো
- হ্যালো ভাইয়া, কেমন আছো তুমি?
দীপক স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস?
তোয়া বিছানায় বসতে বসতে বললো
- ভালো। তূবার রিপোর্ট কি এসেছে?
দীপক আনন্দিত কন্ঠে বললো
- খুশির খবর আছে। তুই খালামনি হতে যাচ্ছিস।
তোয়া বিষ্মিত কন্ঠে বললো
- সত্যি!
দীপক হাসি মুখে ছোট করে বললো
- হুম।
তোয়া উল্লাসের কন্ঠে বললো
- ইস আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আমি কালকেই ঢাকা চলে আসছি।
দীপক হাসি মুখে বললো
- আচ্ছা, তাহলে কয়টার ফ্লাইটে আসছিস জানাস আমাকে। আমি এয়ারপোর্টে চলে যাবো। এখন রাখি একটা মিনিং আছে আমার।
তোয়া ছোট করে বললো
- আচ্ছা।
কথাটা বলেই তোয়া লাইন কেটে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকায়। তা দেখে অভি মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করল
- বউ, কিছু বলবে?
তোয়া শক্ত কন্ঠে বললো
- টিকেট কাট। কালকে বাংলাদেশে যাবো।
অভি আমতা-আমতা করে বললো
- কালকেই চলে যাবে। না মানে, বলছিলাম কি আরও দুটো দিন তো থাকার কথা ছিল।
তোয়া চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো
- আমার সাথে আসার থেকে না, ভাইয়ার সাথে আসা ভালো। তাহলে এখন আবার থাকতে চাচ্ছ কেন?
অভি শুকনো মুখে বললো
- ওটা তো আমি তোমার ভাইয়ের জন্য বলেছিলাম। তোমার ভাই বেচারা বিয়ে করেও বউয়ের কাছে নাই, কি দুঃখ। তাই ওর দুঃখ কমাতে বুঝেয়েছি যে আমিও কষ্টে আছি।
তোয়া ফিচেল হেসে বললো
- শুধু শুধু নকল দুঃখ বিলাশ করবে কেন? তোমাকে আমি আসল দুঃখ বিলাশ করার সুযোগই করে দিচ্ছি।
অভি কৌতুহলী চোখে তোয়ার দিকে তাকায়, তোয়া হালকা হেসে পুনরায় বললো
- আজকে রাতে তোমার বই পড়ার শাস্তির শেষ দিন তাই না।
অভি মুখে কিছু না বলে, উপর নিচে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। তার খুব ভালো করেই মনে আছে যে, আজকে রাতেই তার শাস্তি শেষ। তাইতো সে চাইছে তারা আর দুটো দিন নরওয়েতে থাকুক। অভির মাথা নাড়ানো দেখে তোয়া আবার বলা শুরু করল
- কালকে থেকে যতদিন পর্যন্ত বাবা ভাইয়া আর ভাবিকে মেনে নেবে, ততদিন পপর্যন্ত তোমার আর আমার মাঝে বালিশ ঘুমাবে।
অভি করুন মুখ করে বললো
- তোয়া প্লিজ ,,,,,
অভিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তোয়া বললো
- আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না। এখনই অনলাইনে প্লেনের টিকেট কাট।
অভি নিজেকে নিজেই বকতে থাকে, কোন দুঃখে যে সকাল সকাল অভির ফোন রিসিভ করতে গেল সে। দূর আর ভালো লাগে না। এবার ঢাকা গিয়ে সত্যি সত্যিই অভ্র ভাইয়ার কপালের সাথে কপাল ঘোষতে হবে।

রুমে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে অভ্রকে খুঁজতে থাকে তূবা। বিছানায় চোখ পড়তেই দেখে ফর্সা গায়ে সাদা টি-শার্ট আর কালো টাউজার পরে বিছানায় আধসোয়া হয়ে বসে আছে অভ্র। চশমা না খুলেই চোখ বন্ধ করে আছে সে। তূবা আস্তেধীরে গিয়ে বিছানায় অভ্রের পাশে বসে মলিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- তুমি খুশি হওনি বেবি আসার খবর শুনে?
চোখ তূবার দিকে তাকায় অভ্র। তূবার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- তোর বাবার কাছ থেকে আমাকে বকা খাওয়াতে খুব ভালো লাগে না তোর।
তূবা পুনরায় শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- তুমি রাগ করেছ বাবা বকেছে বলে?
- না ছোটবেলা থেকে তোর দয়ায় তোর বাপের কথা শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। সেই ছোটবেলা থেকেই তোর বাপ মনে করে, তুই আমার সব কথা শুনিস। আসলে তো কাজকলা।
- এখন থেকে আমি তোমার সব কথা শুনবো, প্রমিজ।
অভ্র তূবার ডান হাত নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে তাতে চুম্বন করে, তারপর অসহায় চোখে তূবার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
- কেন এখনই তুই বেবি নিতে গেলি সোনা। খালু যে ভয় পাচ্ছে, আমারও কিন্তু সেই ভয়টাই হচ্ছে। তুই এখনো ছোট। এখনই বেবির কি প্রয়োজন ছিল। তুই আরও একটু বড় হলে ,,,,,,,,
অভ্রকে কথার মাঝেই তূবা বললো
- এতো মানুষের দোয়া আর ভালোবাসা আছে আমার সাথে। তার উপর আমার বর হচ্ছে ইয়াং, হ্যান্ডসাম, বিলিয়ান্ড ডাক্তার। আমার কিছু হবে না। দেখ তুমি।
অভ্র হালকে হেসে তূবাকে টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে, পুনরায় চোখ বন্ধ করে বললো
- তাই যেন হয়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৯০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন