উপন্যাস : অনন্ত প্রেম
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১১ই জুন, ২০২৪ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “অনন্ত প্রেম” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ১১ই জুন থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত |
১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত (পর্ব - ২)
সায়েম বিরক্তির সুর তুলে বলল,'ন্যাকামি করো না তো!তুমি যাচ্ছো মানে যাচ্ছোই।'
আজ একটু বেলা করেই উঠলো দিশা।মন মেজাজ কাল রাত থেকে খারাপ।ঘুম থেকে উঠে আগে ফোন করলো বড়বোনকে।ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করে উষা বলল,'কি রে!কেমন আছিস?'
'ভালো আর থাকতো দিচ্ছো কোথায়?'
'কেন?হয়েছে কি?'
'তোমার ভাসুরকে বিয়ে করতে পারব না আমি।'
'কেন?'
'তাকে আমার পছন্দ হয় নি।'
'কি যা তা বলছিস!পছন্দ হবে না কেন?কমতি কোথায়?'
'মানসিকতায়,চরিত্রে!'
'কি বলছিস বুঝতে পারছি না কিছুই।'
'তোমার ভাসুর নিজের ইচ্ছা আমার ওপর চাপিয়ে দিতে চায়।সে আমাকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যেতে চায় বিয়ের আগেই।আমি 'না' বললে সে আমাকে বলে আমি ওল্ড স্কুল,ন্যাকামি করি।আমাকে যেতেই হবে তার সাথে।'
'ওহ!এই ব্যাপার।সায়েম ভাই যা বলেছে খারাপ বলে নি।তুই ওল্ড স্কুলই।জীবনে যদি দু'একটা প্রেম করতি তাহলেও বুঝতি এসব কমন।আর করবিই বা কিভাবে!তোর যা গায়ের রঙ!তোকে প্রেম করার জন্যই কেউ পছন্দ করে না।আর বিয়ে তো বিলাসিতা!সেদিকে সায়েম ভাই নিজে তোকে বিয়ে করতে চাইছে বলে কত ঢং শুরু করেছিস।ভার্সিটিতে পড়েছিস ঠিকই কিন্তু আক্কেল হয় নি!'
বোনের কাছে অপমানিত হয়ে আরেকটা টু শব্দও করে নি দিশা।ফোন রেখে নিরব কান্নায় ভেঙে পড়লো।কি হতো যদি গায়ের রঙটা উষার মত হতো!
সায়েম ফোন দিলো দুপুরের পরে।নেয়ে,খেয়ে সবেমাত্র বসেছিলো দিশা।ফোনের স্ক্রিনে সায়েমের নাম দেখতেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে গেলো।কল রিসিভ না করে সাইলেন্ট করে ফেলে রাখলো সোফার ওপর।এমনিই মন ভালো না।তারওপর এই লোকের সাথে কথা বলার মানেই হয় না!
একটা উপন্যাসের বই নিয়ে বসেছিলো দিশা।আর তখনই নার্গিস এলো।নিজের ফোন'টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,'তোমার হবু বর মশাই কল করেছেন।তোমাকে নাকি কলে পাচ্ছে না।নাও কথা বলো।'
ফোনটা দিশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে নার্গিস চলে গেলো নিজের ঘরে।যত চায় পিছু ছাড়াতে তবুও যেন ঘুরেফিরে সামনে চলেই আসে।বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করে ফোন কানে দিয়ে বলল,'বলুন।'
'ফোন ধরছিলে না কেন?'
'সাইলেন্ট ছিলো ফোন।দেখি নি।'
'দেখো নি নাকি ইচ্ছে করে ধরো নি?'
দিশার ইচ্ছে করেছিলো মুখের ওপর বলতে ও ইচ্ছে করেই ধরে নি।কিন্তু নিজেকে সামলে বলল,'দেখি নি।'
'এবারের মত কিছু বললাম না।পরবর্তীতে যেন এমনটা না হয়।ফোন বাজার সাথে সাথেই যেন রিসিভ হয়।'
দিশা কিছু বলল না।যেন শুনতে পায় নি।সায়েম হুকুমের স্বরে বলল,'আমরা শুক্রবার যাচ্ছি কক্সবাজার।এয়ার টিকেট কনফার্ম করেছি।তো গোছানো শুরু করে দাও।সন্ধ্যার পর বের হব তোমার কিছু কেনাকাটা থাকলে করে নিবা আর রাতের ডিনার সেরে আসব আমরা।'
'আমার আজকে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।'
'আমি তোমার ইচ্ছার কথা জিজ্ঞেস করেছি?মনে রাখবা তুমি আমার বউ হচ্ছো মানে তোমার কোনো ইচ্ছা থাকা যাবে না।আমার ইচ্ছাই তোমার ইচ্ছা।এখন আর একটা কথাও বলবে না।চুপচাপ রেডি হয়ে থাকবে।'
দিশা কিছু বলল না।সায়েম ফোন রাখার পর নার্গিসকে নিজের ফোন ফিরিয়ে দিয়ে উদাস মনে ছাঁদে গেলো।পশ্চিম পাশে একটা দোলনা আছে।দোলনায় বসে দুলতে দুলতে একমনে আকাশ পানে চেয়ে রইলো।এই আকাশের মেঘগুলোর মত সাদা হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত?
মাগরিবের আজানের আগে দিশা বাবার ঘরে গেলো।মইনুল ইসলাম ফোনে কথা বলছিলেন।দিশাকে দেখে ইশারায় বসতে বললনে।ফোনে কথা বলা শেষে কোমল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,'কিছু বলবেন আম্মা?'
'বাবা আমি বিয়েটা করতে পারব না।'
'কেন আম্মা?তুমি কি কাউকে পছন্দ করো?'
দিশা মাথা নেড়ে 'না' বলল।মইনুল ইসলাম প্রশ্ন করলেন,'তাহলে কেন বিয়ে করবে না?'
'লোকটা ভালো না।আমাকে বলছে বিয়ের আগে কক্সবাজার নিয়ে যাবে।আমি তো এসবে অভ্যস্ত নই বাবা।'
মেয়ের কথা শুনে মইনুল ইসলাম চিন্তিত স্বরে বললেন,'আচ্ছা,আমি দেখছি আম্মা।তুমি তোমার ঘরে যাও।আমি নামাজ সেরে আসি।'
দিশা চলে গেলো নিজের ঘরে।এই ঘরে বাবাই মনে হয় ওকে একটু বোঝে।
নামাজের পর মইনুল ইসলাম দিশার ঘরে এসে বসলেন।মেয়েকে ডেকে বললেন,'সায়েমের সাথে আমার কথা হয়েছে।তুমি তাকে ভুল বুঝছো মা।তোমরা একা যাচ্ছো না।সায়েমের বন্ধুরা আর ওদের বউরাও যাচ্ছে।এটা একটা পিকনিক।আর তোমাদের বিয়েটা হুট করে ঠিক হয়েছে বলে তোমরা জানাশোনার সুযোগ পাও নি।এইজন্য এই আয়োজন করেছে ও।ছেলেটা ভালোই।তুমি মন খারাপ করো না।'
দিশা কিছু বলল না।মাথা নীচু করে বসে রইলো।যেখানে নিজের বাবাই তাকে বুঝছে না সেখানে এরচেয়ে দুঃখজনক কি হতে পারে!'মইনুল ইসলাম মেয়ে নানারকম উপদেশ দিয়ে চলে গেলেন।
একটু পরই সায়েম এলো বাসায়।নিজের ঘর থেকে গলার আওয়াজ পেয়েছে দিশা।নার্গিস এসে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল,'বাব্বাহ!বিয়ে ঠিক হতে না হতেই এতকিছু!না জানি বিয়ে হলে কি করে!একদম বউ পাগল তোমার বর।এটা পরে রেডি হয়ে আসো।সায়েম অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।'
দিশা ব্যাগটা খুলে দেখলো সেখানে একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস।ও কখনোই এমন পোশাক পরে নি।আর কখনো পরতেও চায় না।ড্রেসটা ব্যাগের ভেতর রেখে আলমারি থেকে নীল রঙেরল শাড়ী বের করলো।শাড়ীটা পরে তৈরি হয়ে চলে গেলো বসার ঘরে।সায়েম বসে বসে গল্প করছিলো নার্গিসের সাথে।দিশাকে শাড়ী পরা দেখে ক্রমেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো।ক্রোধে সারা শরীর জ্বলছে।নার্গিস দিশার দিকে চেয়ে বিচলিত স্বরে বলল,'এ কি দিশা!তোমাকে না বললাম ওই ড্রেসটা পরে আসো।'
'আমি ওসবে অভ্যস্ত না।'
'কিন্তু....
নার্গিসকে থামিয়ে দিয়ে সায়েম থমথমে স্বরে বলল,'চলো।'
সায়েম দিশাকে নিয়ে আজকেও শপিং মলে এলো।এবার ওয়েস্টার্ন ড্রেসের কালেকশনে এসে নিজের পছন্দ মত একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস দিশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,'এটা পরে এসো।'
'আমি তো বললাম ই।আমি এসবে অভ্যস্ত না।'
'অভ্যস্ত হতে হবে।আমার সাথে থাকতে হলে সব পারতে হবে।আমি যখন যেটা বলব সেটাই করতে হবে।'
'আমি আপনার দাসী নই।'
'তারচেয়ে কমও নও।এখন যা বলছি করো।'
দিশা উল্টোঘুরে হাঁটা ধরলে সায়েম পথরোধ করে দাঁড়িয়ে বলল,'কোথায় যাচ্ছো?'
'বাসায়।'
'আমার কথার অমান্য হলে এমন অবস্থা করব যে কোথাও যাওয়ার জায়গা পাবে না।'
দিশা ভয় পেলো।সায়েম জোর করে ওর হাতে ড্রেস ধরিয়ে ট্রায়াল রুমে নিয়ে এলো।কুটিল হেসে বলল,'নিজে চেঞ্জ করবে নাকি আমি করিয়ে দিব?'
প্রাণপণে কান্না আঁটকে দিশা ওয়েস্টার্ন পোশাকটা পরে নিলো।লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।বাইরে বের হতেই সায়েম ওর দিলে লোভী দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,'সে'ক্সি লাগছে!'
দিশা এবার আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারলো না।কেঁদেই ফেললো।ওর কান্নার দমকে মলের সকলে ওর দিকে চেয়ে রইলো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন