উপন্যাস : অনন্ত প্রেম
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১১ই জুন, ২০২৪ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “অনন্ত প্রেম” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ১১ই জুন থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত |
২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত (পর্ব - ৩)
অবস্থা বেগতিক দেখে সায়েম দিশার কাছে এসে ক্রোধ মিশ্রিত ক্ষীণ স্বরে বলল,'হচ্ছে কি এসব?কাঁদছো কেন?'
প্রবল কান্নার কারণে কথাই বলতে পারছে না দিশা তবুও বলার চেষ্টা করলো কিছু কিন্তু সায়েম বুঝতে পারলো না।তবে এটা বুঝতে পারলো যে দিশাকে এভাবে নেওয়া যাবে না।তাই হতাশ হয়ে বলল,'যাও,যাও শাড়ি পরেই এসো।'
সায়েমের অনুমতি পেয়ে দিশা দ্রুত ট্রায়াল রুমের ভেতরে চলে গেলো।কোনরকম শাড়িটা পরে এলো বাইরে।মনের ওপর তীব্র ঝড় যাচ্ছে।কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল হয়ে গেছে।এখনও কাঁপছে শরীর।কাঁপা কন্ঠেই বলল,'আমি বাসায় যাব।প্লিজ আমাকে যেতে দিন।'
সায়েম ভাবলো আর বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না।বাকি ডোজ পরে দেওয়া যাবে।
সারা রাস্তা ভীষণ চুপচাপ ছিলো দিশা।বলবেই বা কি!কখনো যা ভাবেনি আজ তাই করতে হলো!এমন দুঃখ কোথাও রাখারা জায়গা নেই।আচ্ছা জীবনটা কি এভাবেই চলবে?এক সমুদ্র অপমান,অসম্মান আর দাসত্বে!
বাড়ির সামনে এসে বাইক থেকে নেমে দিশা আর পিছু ফিরে চাইলো না।বিধ্বস্ত মন নিয়ে এগিয়ে চললো সামনের দিকে।পেছন থেকে সায়েম বলল,'আজকের শিক্ষাটা ভুলে যেও না।তা নাহলে এরচেয়েও কঠিন কিছু অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।'
দিশা শুনলো তবে কিছু বললো না।আচ্ছা কপাল খারাপ হলে সবদিকেই খারাপ হতে হবে কেনো?এই জীবনে একটু সুখ কি তারও প্রাপ্য ছিলো না?
বাসায় এসে কারো সাথেই কথা বলল না।সোজা চলো গেলো নিজের ঘরে।দরজা আঁটকে পড়ে রইলো বিছানায়।বালিশের মাঝে বইছে কান্নার স্রোতধারা।একটু পর নার্গিস এসে দরজা ধাক্কিয়ে বলল,'কি গো,ননদিনী!জামাই পেয়ে একদম ভুলে গেলে?কি কিনলে একটু দেখালেও না!'
দিশা প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না।একইভাবে রইলো।সাড়াশব্দ না পেয়ে কিছুক্ষণ পর নার্গিস আবারও বলল,'না দেখালে না দেখাও।আম্মা খেতে ডেকেছে।খেতে আসো।'
'আমি খাব না ভাবি।'কন্ঠস্বর কোনোরকম স্বাভাবিক করে বলল দিশা।
'ও আচ্ছা জামাই খাইয়ে দিয়েছে বুঝি?তা আগে বলবে না!'নার্গিস রসিয়ে রসিয়ে কথাটা বলে চলে গেলো।
দুশ্চিন্তা আর মন খারাপের কারণে দিশা অনেক রাত পর্যন্তই জেগে ছিলো যার কারণে সকালে উঠতে বেশ কষ্টই হলো তবুও আজ দেরি হয়েছে।কোনরকম তৈরি হয়েই ছুটলো ভার্সিটির উদ্দেশ্য!নাস্তাও খায় নি ঠিকমতো!
ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে গিয়ে খিচুড়ি আর ডিম ভাজা দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিলো।সকাল থেকেই না খাওয়া ছিলো।প্রচন্ড ক্ষিদেও ছিলো পেটে। এবার টিউশনিতে যাওয়ার পালা।কিন্তু হঠাৎই মনে পড়লো সায়েমের নিষেধাজ্ঞা এবং কালকের ঘটনা।গা শিউরে উঠলো আবারও!দ্বিধাদ্বন্দে বুঝে উঠতে পারলো না কি করবে!
তখনই ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে ফরিদা বেগমের কল এলো।দিশা রিসিভ করতেই তিনি বললেন,'কোথায় তুই?'
'টিউশনিতে যাব।'
'আজ যাওয়া লাগবে না বাসায় আয়।'
'কেন?'
'বেয়াইন ফোন করেছিলো সায়েমের খালারা এসেছে।তোকে দেখতে চেয়েছে।বিকেলে সায়েম এসে নিয়ে যাবে।তোকে তৈরি হয়ে থাকতে বলল।'
'এখন আবার কিসের দেখা।বিয়ের পর তো দেখবেই।'
'এত কথা বলছিস কেন?দেখতে চাইছে,যাবি।ব্যাস!'
'আচ্ছা,আসছি।'
ম্লান স্বরে বলল দিশা।যেন সবার কথামতো চলার জন্যই জন্ম হয়েছে ওর।
ফরিদা বেগম নার্গিসকে দায়িত্ব দিলেন দিশাকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য।নার্গিস দিশাকে সাজাতে সাজাতে বলল,'কি গো,ননদিনী!জামাই দেখি তোমার নামে বিচার দেয়।তুমি নাকি কথা শোনো না!'
দিশা কিছু বলল না।চুপ করেই রইলো।আসলে কথা বলতেই ইচ্ছে করছে না।নার্গিসও উত্তরের ধার ধারলো না সে সমানতালে বলতে রইলো,'শোনো,জামাইর কথা শুনতে হয়।তা নাহলে তারা রাগ হয় একসময় মন উঠে যায়।তাই যা বলে করিও।পুরুষ মানুষের মন উঠতে কিন্তু বেশি সময় লাগে না।ছলাকলা দিয়েই আঁটকে রাখতে হয় এদের।'
দিশা নিরাসক্ত গলায় বলল,'ভালোবাসার মানুষকে ছলাকলায় আঁটকে রাখতে হয় কেন ভাবি?'
'পুরুষের ভালোবাসাই এমন। ক্ষণে ক্ষণে বদলায়।ছলাকলা না জানলে অন্যতে আসক্ত হয়।'
নার্গিস একটু থেমে আবারও বলল,'শুনলাম তুমি নাকি সায়েমের সাথে কক্সবাজার যেতে চাও না?শোনো,এই সুযোগ হাতছাড়া করো না।নিজের ছলাকলায় এখনই আয়ত্তে নিয়ে আসো।এত বোকা হইও না।'
আরও নানারকম উপদেশ দিতে দিতে নার্গিস সাজিয়ে দিলো দিশাকে।একটু পর সায়েম এসে দিশাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো নিজের বাসার উদ্দেশ্যে।বাসায় পৌঁছে দিয়ে সায়েমে চলে গেলো তার নাকি জরুরি কোনো কাজ আছে।সায়েমের বড় খালা দিশাকে দেখেই বোনের নাম ধরে চিৎকার করে বলল,'কি রে,নিলু!এই কালা মেয়ে পছন্দ করেছিস সায়েমের জন্য?আমার এত্ত সুন্দর একটা ছেলের জন্য এই কালি পছন্দ করেছিস কেন?'
নিলুফার খাতুন এসে মুখ বেঁকিয়ে বললেন,'আমি তো পছন্দ করি নি আপা।সায়েম নিজেই পছন্দ করেছে।আর তুমি তো জানোই ছেলে কেমন রাগী!আর রাগ উঠলে কি করতে পারে!'
'তাই বলে এই মেয়ে!'
'আপা,সায়েমের এক কথা সে এই মেয়ে ছাড়া বিয়েই করবে না।'
'কিন্তু কেন?'
সায়েমের বড় খালা দিশার দিকে চেয়ে বলল,'এই মেয়ে তুমি কি ব্ল্যাকমেইল করেছো সায়েমকে?'
দিশা উত্তর দেওয়ার মত অবস্থায় নেই।অঝোর ধারায় কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু!অদূরে দাড়িয়ে উষা তামাশা দেখছে।বোনের হয়ে একটা শব্দও বলছে না।একে একে আরও দুই খালা এসে নানাভাবে অপমানে জর্জরিত করলো মেয়েটাকে!দিশা মনে হচ্ছিলো এরচেয়ে ম'রে যাওয়াটা মনে হয় ভালো ছিলো।অপমান সহ্য করতে না পেরে দিশা দৌড়ে বেরিয়ে গেলো সায়েমের বাসা থেকে।ঝাপসা চোখে হাঁটতে লাগলো এলোমেলো!কোনোকিছুরই খেয়াল নেই যেন।কয়েকবার হোঁচট খেয়ে পড়েও গেলো।তবুও থামলো না দু'চোখ যেদিকে যায় সেদিকে চলে যেতে লাগলো।হঠাৎই খেয়াল করলো রাস্তার মাঝে একটা বাচ্চা বসে তার পড়ে যাওয়া পুতুল কুড়চ্ছিলো।কিন্তু একটু দূরেই একটা ট্রাক আসছিলো তীব্র গতিতে।থামার কোনো লক্ষ্মণই দেখা যাচ্ছিলো না।সবকিছু ভুলে দিশা ঝাপিয়ে পড়লো বাচ্চাটাকে বাঁচাতে।খুব দ্রুত বাচ্চাটাকে নিয়ে রাস্তার পাশেই ছিটকে পড়লো।বাচ্চাটার কোনো ক্ষতি না হলেও দিশা মাথায় আঘাত পেলো ভালোই।মাথা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে।জ্ঞান হারানোর আগে দেখতে পেলো কোথা থেকে এক সুদর্শন পুরুষ দৌড়ে আসছে তার দিকে।এরপরই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
দিশা বেরিয়ে যাবার পর উষা সায়েমকে ফোন করে ওর চলে যাওয়ার খবর জানালো।সায়েম অবশ্য তার পুরোনো প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।কিন্তু এই খবর শোনার পর সব ফেলেই হন্তদন্ত হয়ে চলে এলো বাসায়।তারপর দিশার ভাবিকে ফোন দিয়ে জানলো দিশা বাসাতেও যায় নি!কোনো অঘটন করে ফেলে নি তো!ফোনের ওপর ফোন দিয়েও পাওয়া যাচ্ছিলো না তাকে!হঠাৎ একঘন্টা পর একটা কল এলো দিশার নাম্বার থেকে।সায়েম রিসিভ করেই প্রথমে গালি দিলো।পরে বলল,'কোন ভা*তারের কাছে গিয়েছিস?ফোন ধরছিস না কেন?বেয়াদবের বাচ্চা!একবার খালি হাতে পাই তারপর দেখবি!'
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন