উপন্যাস       :        অনন্ত প্রেম
লেখিকা        :         আরশি আয়াত
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১১ই জুন, ২০২৪ ইং

লেখিকা আরশি আয়াতের “অনন্ত প্রেম” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ১১ই জুন থেকে লেখা শুরু করেছেন।
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত

৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত (পর্ব - ৪)

কানের মধ্যে মনে হলো কেউ গরম সীসা ঢেলে দিয়েছে।এমন বাজে কারো মুখের ভাষা হতে পারে!বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে গেছে আহাদের।তবুও নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে বলল,'আসসালামু আলাইকুম।আপনার পরিচিত কেউ একজন এক্সিডেন্ট করেছেন।তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।কল লিস্টে আপনার নাম্বার উপরে থাকায় আপনাকে জানানো হলো।একটু দ্রুত আসবেন।'
পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে সায়েমের মেজাজ যেন আরও বিগড়ে গেছে।সে উত্তপ্ত স্বরে বলল,'আপনি কে?আর ওর কি হয়েছে?'
'আমি একজন পথচারী।একটা বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে ওনার মাথা ফেটে গেছে।'
'কোন হাসপাতাল?'
হাসপাতালের ঠিকানা জেনে বেরিয়ে পড়লো সায়েম।
মাত্রই জ্ঞান ফিরলো দিশার।মাথাটা টনটন করছে।চোখ মেলে চারপাশে তাকিয়ে বুঝলো বর্তমানে হাসপাতালে অবস্থান করছে সে।কিন্তু আনলো কে এখানে?
হঠাৎই বাইরে থেকে একটা ছেলে ব্যাস্ত পায়ে এগিয়ে এসে বলল,'আপনার জ্ঞান ফিরেছে তাহলে?'
দিশা ভালো করে লক্ষ্য করলো ছেলেটাকে।তারপর মনে পড়লো এই ছেলেটাকেই জ্ঞান হারানোর আগে তার দিকে দৌড়ে আসতে দেখেছে।তারমানে ও ই দিশাকে এনেছে এখানে।ছেলেটা আবারও বলল,'এখন কেমন লাগছে?মাথা কি খুব ব্যাথা লাগছে?'
'এখন ঠিক আছি।সমস্যা নেই।'
'আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দেব আমি আসলে বুঝতে পারছি না।আপনি না হলে টুকির যে কি হতো!আমি আইসক্রিম নিচ্ছিলাম।কি করে যে আমার পাশ থেকে রাস্তায় চলে গেলো বুঝতেই পারলাম না।'
দিশা কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বলল,'এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই।বেশি কোথাও লাগে নি তো!আর বাবুটা কেমন আছে?ও ঠিকাছে তো?'
'হ্যাঁ।ওর কিছু হয় নি।আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় ও সাথেই এসেছিলে।পরে আপা এসে নিয়ে গেলো।'
কথার মাঝেই হঠাৎ দিশার মনে পড়লো সময়ের কথা।ও তড়িঘড়ি গলায় বলল,'এখন কয়টা বাজে?আমি কত সময় ধরে আছি এখানে?'
'তিনঘণ্টা হবে।চিন্তা করবেন না।আপনার বাসায় জানানো হয়েছে।'
'কাকে জানিয়েছেন?'
'আপনার কললিস্টের প্রথমে যে ছিলো।সম্ভবত সায়েম নাম।'
আহাদ খেয়াল করলো কথাটা শুনে মেয়েটার মুখে অদ্ভুত এক ভয় ফুটে উঠেছে।এই নামটাই কি ভীতির কারণ?মেয়েটা এবার দ্রুত বেড থেকে নামতে নামতে বলল,'আমার যেতে হবে এক্ষুনি।প্লিজ,কিছু মনে করবেন।'
আহাদ বাঁধা দিয়ে বলল,'এভাবে যেতে পারবেন না আপনি।আপনারর রেস্টের প্রয়োজন।'
'আমি ঠিক আছি।আমার যেতেই হবে।'
এটা বলে এলোমেলো পায়ে দরজা দিকে যাওয়া শুরু করলে হাঠাৎই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নেয় দিশা।আহাদ দ্রুততার সাথে ধরে ফেলে।পুনরায় বেডে এনে বসাতে বসাতে বলে,'আপনাকে নিষেধ করেছিলাম আমি।আপনার শরীরের এখন বিশ্রামের প্রয়োজন।'
'আপনি বুঝতে পারছেন না।'দিশা দুর্বল গলায় বলল।
'কি হয়েছে?আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে ভয়ে আছেন?'
দিশা অসহায় ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল,'আপনি যাকে ফোন করেছিলেন সে আমার ফিয়ন্সে!'
আহাদ বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে রইলো।কেউ কারো হবু বউয়ের সাথে এত বাজে,জঘন্য আচরণ করে কিভাবে?মেয়েটা হয়তো এই কারণেই ভয় পাচ্ছে।দিশা থেমে আবারও বলা শুরু করলো,'আমাদের পারিবারিক বিয়ে পারিবারিক ভাবে ঠিক হয়েছে।উনি বড় আপুর ভাসুর।আগের পক্ষের স্ত্রী মারা গিয়েছে।ওনাকে আমি বিয়ে করতে চাই নি কিন্তু আমার পরিবারের কারণে বাধ্য হচ্ছি।গায়ের রঙ চাপা হওয়ার কারণে বিয়ের প্রস্তাব আসে না।আর যেগুলো আসে আমাকে দেখার পর তারাও না করে।তাই বাবা মা চায় আমি এই বিয়েটা করি।কারণ তারা মনে করে এরচেয়ে ভালো প্রস্তাব আর আসবে না।'
'আর সেই সুযোগে লোকটা আপনার সাথে যা ইচ্ছা তাই ব্যবহার করছে,তাই তো?'
'হ্যাঁ।'
'আপনার পড়াশোনা কতদূর?'
'মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি।'
'পাশাপাশি কিছু করেন?'
'টিউশনি করি দু'টো।'
'ব্যাস?'
'হ্যাঁ।'
'শুনুন,এখন এত অবলা হয়ে থাকার দিন নেই।নিজের প্রতিবাদ নিজেকেই করতে হবে।আপনি যথেষ্ট শিক্ষিত একজন মেয়ে।শিক্ষিত মেয়েরাই যদি পড়ে পড়ে মার খায় তাহলে বাকি যারা আছে তারা কি করবে?আর বডি শেমিং একটা ক্রা ই ম।আপনি যদি এটা মেনে নেন তাহলে আপনিও এই দোষে দোষী।
আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবারের বিরুদ্ধেও যেতে হয়।নিজের শক্ত অবস্থা তৈরি করুন।আ...'
আহাদ আরও কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু তার আগেই সায়েমের গলা পাওয়া গেলো।সে ভেতরে ঢুকতে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলতে লাগলো,'বাহ!ভালোই মোটিভেশন দেওয়া হচ্ছে আমার সাধাসিধা বউটাকে।'
দিশা সায়েমকে দেখে আঁতকে উঠল আর আহাদ একদৃষ্টে সায়েমের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।সায়েম আহাদের দিকে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,'থ্যাংকস,আমার এত বড় উপকার করার জন্য।এবার আপনি আসতে পারেন।'
আহাদ সায়েমের সাথে হ্যান্ডশেক করে চোখে চোখ রেখে বলল,'আসছি,দেখা হবে শীঘ্রই।'
আহাদ যাওয়ার পর সায়েমে দিশার সামনে এসে দাড়ালো।চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,'ওইভাবে বেরিয়ে গিয়েছিলি কেন বাড়ি থেকে?
দিশা থমথমে গলায় বলল,'আপনার মা,খালারা আমাকে অপমান করছিলো।'
'মান থাকলেই না অপমান করা হয়।তোর তো মানসম্মান ই নাই।তোর পরিবারের কারোই মানসম্মান নাই।যে-ই দেখেছে টাকাওয়ালা ছেলে ওমনই গছিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।কারণ তারা জানে তাদের এই কা লি,নি গ্রো মেয়ের জন্য আর ভালো ছেলে পাবে না।'
'আল্লাহর দোহাই লাগে চুপ করুন।'দিশা কাঁদতে কাঁদতে বলল।
'এখন আবার আরেকজন জুটিয়েছিস।দেখি এই ছেলের মোটিভেশনে কি কি করতে পারিস।'
দিশা কিছু বলল না।অঝোরে কাঁদতে লাগলো।সায়েম আরও কিছুক্ষণ গালাগাল করে দিশাকে বাসায় দিয়ে আসলো।
বাসায় আসার পর সবাই অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করলো কিন্তু দিশা একটা প্রশ্নের উত্তরও দিলো না।নিজের মত রুমে চলে গেলো।ভাবতে লাগলো শুধু গায়ের রঙ ছাড়া আর কোনোকিছুতে কি কমতি আছে তার?আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো নিজেকে।নাহ!কোনো কমতি নেই!তাহলে এত অপমানের কারণ কি?আর ও সহ্য করছেই বা কেনো?এই গায়ের রঙের জন্য যদি বিয়ে নাহয় তো না হোক!বিয়ে নাহলে কি নারী জন্ম বৃথা?
'বাবা,আমি বিয়েটা করতে পারব না।'
'কেন আম্মা?আবার কি হয়েছে?'
'এই ছেলেকে আমার পছন্দ না।তার সাথে আমার মিলছে না।'
বাপ মেয়ের কথার মধ্যে ফরিদা বেগম চিল্লিয়ে বললেন,'কি মিলছে না তোর?তোর মত মেয়ের কপালে এরচেয়ে ভালো জুটবে?'
'না জুটলে নাই।'
'না জুটলে নাই মানে?বিয়ে না করলে কি সারাজীবন ঘরে খুঁটি হয়ে বসে থাকবি?'
মইনুল ইসলাম স্ত্রী'কে ইশারায় চুপ করতে বলে মেয়ের দিকে চেয়ে বললেন,'আসলে তোমার সমস্যা টা কোথায়?মিলছে না মানে কি কোথায় মিলছে না?'
'সে এবং তার পরিবার আমাকে কথায় কথায় অপমান করে।আমার গায়ের রঙ নিয়ে খোঁটা দেয়।'
ফরিদা বেগম ফোঁড়ন কেটে বললেন,'কা লি রে কালি বলবে না তো কি বলবে!'
দিশা মায়ের দিকে চেয়ে ধরা গলায় বলল,'তোমার মত মা আল্লাহ কাউকে না দিকে।এমন পরিবার কারো না হোক।যে পরিবার সন্তানের দুঃখ বোঝে না এমন পরিবারে কারো জন্ম না হোক!'
কথাগুলো বলেই দিশা মুখ চেপে কান্না আঁটকে দৌড় দিলো নিজের ঘরে।পরের কথা কি বলবে নিজের ঘরের মানুষরাই তো মর্মব্যাথা বোঝে না!
কোনো এক হিন্দি ছবিতে প্রিয়াংকা চোপড়া বলেছিলো,'পারায়া লোগো স্যে কেয়া শিকায়াত ঘাও তো আপনো কি জাদা চুবতি হ্যায়।'

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 
লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন