উপন্যাস : অনন্ত প্রেম
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১১ই জুন, ২০২৪ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “অনন্ত প্রেম” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ১১ই জুন থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত |
৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত (পর্ব - ৭)
সারাদিনের এত ঝুটঝামেলার মধ্যে আহাদকে একটা কলও করা হয় নি।তাই বাসায় ফিরে ফোনটা হাতে নিয়ে কল করতে যাবে তখনই আহাদের মেসেজ চোখে পড়লো।
'মিস,দিশা।আমি অত্যন্ত দুঃখীত।আজ আপনাকে সময় দিতে পারছি না।আমার হঠাৎই একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে।আপনি ফ্রী থাকলে আমরা কাল দেখা করতে পারি।'
দিশা একটু চিন্তামুক্ত হয়ে রিপ্লাই দিলো,'সমস্যা নেই।কাল কখন দেখা করবেন সেটা জানিয়ে দিয়েন।'
ফোন রেখে সোফায় হেলান দিয়ে একটু চোখ বুঝলো দিশা।তখনই নার্গিস এসে ন্যাকা স্বরে বলল,'কি গো,ননদিনী!অসুস্থ হবার আর সময় পেলে না?কি সুন্দর কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগটা মিস করলে।আমি হলে তো জীবনেও মিস করতাম না।'
দিশা চোখ খুলে ভাবীর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,'তাহলে আমার ভাইকে ডিভোর্স দিয়ে সায়েম সাহেবকে বিয়ে করে নিলেই পারো।সে তোমাকে এখানে ওখানে ঘুরাবে,দামী ড্রেস,জুয়েলারি কিনে দেবে।'
নার্গিস লজ্জা পেয়ে গেলো দিশার কথায়।আর কিছু না বলে চলে গেলো রুম থেকে।
রাতের খাবারের সময় মইনুল ইসলাম মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,'তোর শরীর কেমন আছে এখন?'
'ভালো।'দিশা সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলো।
'সায়েম ফোন দিয়েছিলো?'
'না।'
'ছেলেটা বোধহয় রাগ করেছে।তুই একটু ফোন দিয়ে দেখিস।'
স্বামীর সাথে তাল মিলিয়ে দিশার মাও বলল,'হ্যাঁ ফোন দিস।ওর কত আশা ছিলো তোকে নিয়ে যাবার।'
দিশা বিরক্ত বোধ করলো।খাওয়া বন্ধ করে বাবা-মায়ের দিকে চেয়ে বলল,'বাবা,মা আমি ওই ছেলেকে বিয়ে করব না,ম'রে গেলেও না।'
ফরিদা বেগম রোষিত গলায় বলল,'তুই আমার পেটের কল'ঙ্ক।তোকে পেটে ধরেই ভূল করেছি।না আছে গুণ,না আছে রুপ।আবার বেয়াদবও হয়েছিস।এমন বেয়াদব হলে কেউ নিবে না তোকে আর নিলেও পরেরদিন দিয়ে যাবে।তোর থেকে হাজারগুণে ভালো উষা।দেখতেও যেমন,কাজেকর্মে,আদব-কায়দায়ও ভালো।লক্ষী মেয়ে আমার।আর তুই হলি অ'পয়া।তোর চেহারাই দেখতে ইচ্ছা করে না আমার।'
মাথানিচু করে মায়ের কথাগুলো শুনলো দিশা।ভাতের প্লেটে টপটপ করে ঝরতে লাগলো অশ্রুবিন্দু।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সুভা' গল্পের মত ওর মা-ও ওকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করে।সুভার দোষ ছিলো সুভা বোবা আর ওর দোষ ও কালো।
মইনুল ইসলাম স্ত্রীকে মৃদু ধমক দিয়ে মেয়ের দিকে ফিরে বললেন,'সায়েম তোর জন্য খারাপ হবে না।তুই সুখে থাকবি।উষাও থাকবে তোর সাথে।তুই সায়েমকে বিয়ে কর।'
দিশা কান্নার স্বরেই বলল,'আমি পারব না বাবা।'
মইনুল ইসলাম রেগে গেলেন এবার।তিনি ক্রোধে বললেন,'এই বাসায় থাকতে হলে আমার কথা শুনতে হবে।আর যদি না শোনো তাহলে বেরিয়ে যাও।'
দিশা অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালো।বাবা কি ওকে বেরিয়ে যেতে বলল?ও বুঝলো এই বাড়িতে থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।কান্নারত অবস্থা নিজের ঘরে গিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আর জমানো কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে এলো।সদর দরজা দিয়ে বের হতে হতে বলল,'তোমরা ভুলে যেও তোমাদের দিশা নামের কোনো মেয়ে ছিলো।ভালো থেকো আর আমাকে মাফ করে দিও।'
এরপর আর একবাক্যও ব্যয় করলো না ও।বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়।কোথায় যাবে জানা নেই।ভার্সিটিতে এত ভালো বান্ধবীও নেই যে একরাত থাকার জন্য বলবে।ভার্সিটির কাছেই একটা মহিলা হোস্টেল আছে সেটার কথাই মনে পড়লো এখন।কিন্তু এতরাতে খোলা থাকবে?মনে মনে অনেক শংকা নিয়ে রওনা হলো সেদিকে।এরমধ্যেই আহাদ ফোন দিয়েছে।দিশা রিসিভ করতেই বলল,'স্যরি,স্যরি।সারাদিনে একদমই ফোন ধরার সুযোগ পাই নি।'
'সমস্যা নেই।'
দিশার কাঁপা কন্ঠের স্বর শুনে আহাদ কিছু একটা বুঝতে পেরে বলল,'কিছু কি হয়েছে?'
'আমি বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি একেবারে।'
'এতরাতে?'
'হ্যাঁ,বাবা-মা কেউ আমার কথাটা বুঝতে চাইছে না।বাবা বলেছে যদি তার কথা শুনি তাহলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে য়েতে।'
'এইজন্য আপনি এতরাতে বেরিয়ে আসবেন বাড়ি থেকে?'
'আমার মাথায় কিছু কাজ করছিলো না।'
'আচ্ছা এখন কোথায় যাবেন?'
'জানি না।'
'বাসায় ফিরে যান।'
'সম্ভব না।ভার্সিটির কাছেই একটা মহিলা হোস্টেল আছে সেখানে যাব ভাবছি।'
'এতরাতে কিছু হবে না।ওখানকার অফিশিয়াল কার্যক্রম রাত আট'টায় শেষ হয়ে যায়।আমার বান্ধবীরা থাকত আগে তাই জানি।'
'তাহলে?'দিশা দিশেহারা কন্ঠে বলল।
'এখন কোথায় আছেন আপনি?'
'চৌরাস্তার মোড়ে।'
'নেহা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে বসুন।আমি আসছি।'
'হাসপাতালে বসব?'
'আপাতত ওটাই সেইফ প্লেস এতরাতে।'
'আচ্ছা।'
আহাদ এলো বিশ মিনিট পর এলো।হাসপাতালের ভেতরে রোগীদের বসার জায়গায় শুকনো মুখে বসে ছিলো দিশা।আহাদ এগিয়ে এসে ওর পাশে বসলো।দিশা ওর দিকে চেয়ে বলল,'বুঝতে পারছি না কি করব।'
'এটা বেরিয়ে আসার আগে ভাবা উচিত ছিলো।এখন চলুন আমার সাথে।'
'কোথায়?'
'বেঁচে দেব আপনাকে।'
দিশা আঁতকে উঠল।আহাদ ওর মুখের অভিব্যক্তি দেখে হেসে ফেললো।বলল,'আমার বড়বোনের বাসা সামনেই দশ মিনিট লাগে।আজ রাত সেখানেই থাকেন কাল হোস্টেলে উঠবেন।'
দিশা তবুও বিশ্বাস করতে পারছিলো না।আহাদ ওর মনের কথা বুঝতে পেরে বলল,'আপা আর আমি পিঠাপিঠি।আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো আর আপা আপনাকে চেনে।এখানে আসার আগে আমি আপাকে আপনার অবস্থা জানিয়েছি।দাঁড়ান,আপাকে কল দেই।আপনি কথা বলুন।'
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন