উপন্যাস        :         বজ্রমেঘ
লেখিকা        :          ফাবিয়াহ্ মমো
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১৩ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং

লেখিকা ফাবিয়াহ্ মমোর “বজ্রমেঘ” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ১৩ই এপ্রিল থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
বজ্রমেঘ || ফাবিয়াহ্ মমো
বজ্রমেঘ || ফাবিয়াহ্ মমো

৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

বজ্রমেঘ || ফাবিয়াহ্ মমো (পর্ব -৪ )


নাযীফ নিশ্চিত আজ একটা অঘটন ঘটবে! কোথা থেকে ঘটবে সেটা বুঝতে পারছে না। বারবার দৃষ্টিযুগল জানালার বাইরে চোরাভাবে ফেলছে। গাড়ির রিয়ার-ভিউ মিররে পেছনের অবস্থা দেখার জন্য চাপা কৌতুহলী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গাড়িতে শাওলিন বাদে বাকিরা এই মুহুর্তে এড শিরানের শেপ অফ ইয়্যু গানে গলা মিলাতে ব্যস্ত। ড্রাইভার লোকটা সেলিমের পূর্ব পরিচিত বলে ওদের উচ্চস্বরে তেমন সমস্যা অনুভব করছে না। নাযীফ আরো একবার হাতের সেলফোনটাতে দৃষ্টি ফেলে চিন্তিত একটা ঢোক গিলে। হাতে সময় কম। বড্ড কম। যদি সেই বন বিভাগের একগুঁয়ে অফিসারটা ওকে ধরে ফেলে, তাহলে আল্লাহর ওয়াস্তে আর রক্ষে নেই। নাযীফ বুকভর্তি দম টেনে সরাসরি জিদানের উদ্দেশ্যে গলা ছাড়ল,
- বাডি? আই থিংক আই হেভ টু গো। সামনে তিন রাস্তার মোড়ে একটা কাজ আছে। গাড়িটা ওইদিকে ব্রেক দিতে বল।
পেছনের সিটে বসা নাযীফের কণ্ঠটা সবাই শুনতে পেয়ে থমকাল। আচানক ওদের গানের আড্ডাটা বন্ধ হলে জিদান ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে শুধিয়ে ওঠল,
- ওদিকে নামবা কেন মামা? তিন রাস্তার মোড়ে হঠাৎ কীসের কাজ পড়ছে? আর্জেন্ট ম্যাটার নাকি?
নাযীফ চট করে বিষয়টা হালকা বানাতে মুখভর্তি হাসি ছেড়ে দেয়। হাসতে হাসতে সেলফোনটা উঁচু করে মোবাইল স্ক্রিনে ফুটে ওঠা একটি আননোন নাম্বার জিদানকে দেখিয়ে বলে,
- এই কাজে যেতে হবে বাড্ডি। মেয়েমানুষ সঙ্গে থাকলে কেমন ঝামেলা হয় ওটা তো গতকাল সন্ধ্যা থেকে ভালোই প্রমাণ পেলে। আগে আমি দেখে আসি ওখানে সবাই মিলে যাওয়া পসিব্যাল কিনা। যদি রেজাল্ট নেগেটিভ আসে তাহলে তো আসসালামুয়ালাইকুম বলে বিদায়।
জিদান কয়েক সেকেণ্ডের জন্য মাথাটা পিছু ঘুরিয়ে নাযীফের ফোনটা দেখল। সহসা মুখের রঙিন ঝলমলে আনন্দ ঝুপসি অন্ধকারে বদলে যেতে চাইলে তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিল। ঠোঁট ঠিকরে গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো বলতে গিয়েও একটি মাত্র নারীমুখের আশঙ্কায় বলতে পারল না জিদান। থমথমে চোখে দেখল, সিটে গা এলিয়ে বিষণ্ণ নীরব চোখদুটো জানালার বাইরে নিবদ্ধ রেখেছে শাওলিন। ওদের কথাবার্তার প্রতি তিলমাত্র আগ্রহ নেই। শুনছেও না কিছু। জিদান চোখের ইশারায় সেলিমকে কিছু একটা ইঙ্গিত বুঝিয়ে ড্রাইভারকে বলে গাড়ি থামায়। সবকিছু এমন নির্ভেজাল কায়দায় সম্পণ্ণ হলো যে কেউ বিন্দু পরিমাণ চিন্তাও করেনি এই জঙ্গুলে জায়গায় কী ভয়াবহ ব্যাপারটা ঘটছে। গাড়িটা পুনরায় ছেড়ে দিয়ে জিদান তড়িৎ গতিতে নাযীফের নাম্বারে টেক্সট পাঠিয়ে বলল,
- ট্যূরের লোকেশনটা কে দিল নাযীফ! কে জানাল আমরা এখানে আছি? আমি তো বাসাতে কাউকেই কিছু বলে আসিনি আমরা চট্টগ্রাম ট্যূরে যাচ্ছি! হচ্ছে কী ভাই? কীভাবে কী জানল?
ছটফটে মন নিয়ে জিদান একটুও স্থির থাকতে পারছে না। মাথা সম্পূর্ণ গুলিয়ে যাচ্ছে, বিগড়ে যাচ্ছে, সমস্ত কিছু বেখাপ্পা ছকে যাচ্ছে! ঠিক সে মুহুর্তেই নোটিফিকেশনের যান্ত্রিক কাঁপনে হড়বড় করে ফোনে তাকাল জিদান। স্ক্রিনে ফুটে ওঠা সদ্য আগত ম্যাসেজে দৃষ্টি রেখে মনে মনে প্রত্যেকটি শব্দ পড়তে লাগল,
- আমরা যেই এরিয়ায় কাল গেছিলাম ওই জায়গাটা কিছুদিন আগে সিল করে দিছে। আমি এটা স্থানীয় এক লোকের কাছ থেকে শুনছিলাম। কিন্তু এটা কোনোদিন ভাবিনি ওই এরিয়ায় খারাপ কিছু থাকতে পারে। আমি ভাবছি পাহাড়ি এলাকায় মানুষ শি [কা] র টিকার করতে আসে দেখে বন বিভাগের লোকেরা ওই রেঞ্জের সেক্টরটা রেস [ট্রি] ক্টেড করে রাখছে। কিন্তু ঘটনা এখানে অন্য! আমরা আসার ঠিক ছয় দিন আগে ওই এরিয়ায় সন্ধ্যার সময় চারটা ব[ডি] পাওয়া যায়। আমি সঠিক জানি না ওই ব[ডি[র ভেতর কীসের কি প্রবলেম আছে, কিন্তু এই গ্রাউণ্ডের মানুষজন আমজণতার কাছ থেকে ভয়ংকর কোনো সত্য লুকাচ্ছে। এরা কাউকেই কিছু জানতে দিচ্ছে না। এখানে কিছু একটা গড়পড় আছে জিদান। আল্লাহ আমাদের জানের ওপর দিয়ে বাঁচাইছে! ওই রেস [ট্রি] ক্টেড এরিয়ায় গিয়েও একদম সুস্থসমেত জীবিতাবস্থায় ফিরে আসছি। আমি এখন তিন রাস্তার মোড়ে এক ভাইয়ের সাথে মিট করতে আসলাম। ভার্সিটির জুবায়ের ভাইয়ের কেমন দূর-সম্পর্কীয় মামাতো ভাই লাগে, ওই ভাইয়ের সাথে একটু যোগাযোগ করতে আসছি। তোরা টেনশন নিস না। স্ক্যাজিউল যেভাবে প্ল্যান করা আছে সব ওভাবেই রেডি করিস। আমি সন্ধ্যার দিকে তোদের সাথে জয়েন করতেছি। এ বিষয়ে মেয়েগুলোকে জানাস না। রোজা আর সোহানা খামোখা খরগোশের মতো লাফালাফি করবে।
একনিঃশ্বাসে প্রতিটি শব্দ পড়ার পর গভীরভাবে দম ফেলল জিদান। যেন শত শতাব্দী ধরে বুকের ভেতরে হাঁশফাঁশ নিঃশ্বাসটা জব্দ করে রেখেছিল। কিন্তু ম্যাসেজটা পড়ার পর মুখের সবকটা পেশি শক্ত হয়ে আছে। চোখের দৃষ্টি সচকিত হয়ে জানালার বাইরে চলন্ত গতিপথের দিকে বিমর্ষভাবে ফেলে রেখেছে। একটা সাধারণ ট্যূর দেবার প্ল্যান করলেও শেষপর্যন্ত চট্টগ্রামের ঘন-গভীর প্রকৃতির রূপ দেখে অ্যাডভেঞ্চারাস ট্যূরে স্থির হয়। সেই অ্যাডভেঞ্চারাস ট্যূরটি পদে পদে এমন খারাপ, জঘণ্য, ভয়াবহ, দুঃসাহসিক একেকটি ঘটনায় প্রবর্তিত হয় যে এখন মনে হচ্ছে ঢাকা ফিরে যাওয়াই মঙ্গল। ট্যূরে অযাচিতভাবে প্রবেশ করেছে রোজা হায়দায়। মেয়েটাকে শুরু থেকেই ওর পছন্দ নয়। উদ্ধত, অমার্জিত, অশালীন, যথেষ্ট বেপরোয়া স্বভাবের একটি মেয়ে। তার ওপর বাবা রবিন হায়দায় এলিট পর্যায়ের একজন নামকরা উচুঁদরের চতুর ব্যবসায়ি। এমন বাবার বখে যাওয়া মেয়ের সামান্য কিছু অঘটন হলে ওদের পায়ের নীচে মাটি থাকবে না। রোজা যদি সেলিমের ফুপাতো বোন না হতো, তাহলে কখনো সেই উদ্ধত স্বভাবের চিড়িয়াকে ট্যূরে যুক্ত করতো না। অন্যদিকে দলের আরেক আহ্লাদী চিড়িয়া সোহানা মামুন। আলালের ঘরের দুলালী বলতে শুদ্ধ শব্দে যা বোঝানো হয় সোহানা হচ্ছে এক অর্থে তা-ই। সারাক্ষণ আড্ডায় গুজুর গুজুর করবার মতো নিরেট একজন খোশমেজাজি মানুষ চাই। এমন আড্ডামুখর গল্পবাজ মেয়ে যেমন-তেমন হলেও রোজার মতো দম্ভোক্তি নেই। সরল সাদাসিধে মন। শ্রেষ্ঠার পুরো নাম শ্রেষ্ঠা জাহান নূপুর হলেও ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর নামটা স্রেফ শ্রেষ্ঠা হিসেবেই পরিচিতি টেনে এনেছে। সবচেয়ে তুখোড়, দুরন্ত, রণচণ্ডী মেয়ে হিসেবে শ্রেষ্ঠার শ্রেষ্ঠত্বের শেষ নেই। নানারকম নেতা গোত্রীয় মানুষদের সঙ্গে ওর ওঠা-বসা, চলাফেরা, সুসম্পর্ক বর্তমান। সর্বশেষ চিন্তাচেতনায় যার নামটি মুখে উচ্চারণ করলে বুকের ভেতর ঢং করে কোনো ঘণ্টা বাজে, সে হচ্ছে শাওলিন। রোজা, সোহানা, শ্রেষ্ঠাকে ছাড়িয়ে যেটুকু বৈশিষ্ট্য, ব্যক্তিত্ব, আত্মসচেতন বোধ সবার মধ্য থেকে অন্যচোখে দেখতে বাধ্য করে, ওর মধ্যে তেমনি কিছু অদ্ভুত সম্মোহন বিচিত্র অনুভূতি লুকানো। আজও ওর ব্যক্তিত্বের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি খোদ জিদান হাসানও। সবার সঙ্গে মিলেমিশে চললেও কোথাও যেন সুক্ষ্ম এক দূরত্ব মেয়েটা বজায় রাখে। একটু দূরে দূরে নিজেকে রাখে, একটু আড়াল মনোভাব বজায় রাখে, একটু নিঃসঙ্গ হয়ে একাকী চিত্তে আবদ্ধ রাখে। কখনো নিজের মনের ভেতরকার শব্দগুলো ঠোঁট ফুটে জানায়নি। প্রয়োজন অনুভব করলে শ্রেষ্ঠার সঙ্গে ঝরঝর করে বাক্য-বিনিময় হয়। তবু বাকিদের সঙ্গে কেন জানি ওর বন্ধুত্ব-মনের সংযোগটা আজও ঘটেনি। জিদানের ভাবুক দৃষ্টি জানালার বাইরে থাকা গাড়ির রিয়ার-ভিউ মিররে হঠাৎ আঁটকালো। ওর ঠিক পিছনের সিটে বসা মেয়েটি জানালার বাইরে মুখ বাড়িয়ে দিয়েছে। পাপড়ি ঘন কৃষ্ণকালো চোখদুটি বন্ধ, ভ্রুঁদুটি বিষণ্ণ ছাঁচে সামান্য কুঞ্চিত, সূর্যের স্বর্ণাভ স্পর্শে ঠোঁটদুটি রক্ত-কোয়ার মতো ফুটে ওঠেছে। জিদানের মনে হলো, গাড়িতে উপস্থিত অন্য মেয়েদের সৌন্দর্যের কাছে ওর সৌন্দর্য বর্ণনাতীত সুন্দর! প্রকৃতি যেন সমস্ত আয়োজন ওর মুখটায় বুক উজাড় করে ঢেলে দিয়েছে। বাতাসের শোঁ শোঁ দমকা বেগ লুকোচুরি খেলছে ওর মসৃণ কেশ-অরণ্যে, কপালের ছোট ছোট দুষ্টু কেশগুচ্ছ ছুঁয়ে যাচ্ছে ঠোঁটের আরক্ত ত্বকে, কিছু এসে ঝাপটা দিচ্ছে ফুটফুটে নরম গালে। হঠাৎ বন্ধ চোখের কপাট আস্তে আস্তে মেলে দূরের বনজীবনকে বিমোহন দৃষ্টিতে দেখতে লাগল। খেয়াল করেনি সামনের সিট থেকে এক্স-রে সুলভ লাজহীন চক্ষুতে ওর আদ্যোপান্ত রূপ-রৌশনাই শোষণ করছে কেউ। আন্দাজ করেনি ওকে এই ট্যূরে যুক্ত করার পেছনে কতরকম বখরা তাকে দিতে হয়েছে। কোলে থাকা ব্যাগটার সাইড পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন বের করল শাওলিন। খুঁজে খুঁজে মণির নম্বরে কল দিতেই দুবার রিং হয়ে রিসিভ করল। কণ্ঠে প্রীতিমধুর প্রসন্নতা এনে বলল,
- শুভ সকাল মণি। নাস্তা করেছেন?
ওপাশ থেকে রেবেকা নেওয়াজ চোখে চশমা পড়তে পড়তে বললেন,
- তোমার টেনশনে কী সকাল কখনো শুভ ভাবে কাটে? বাইরে যতবার গিয়েছ ততবারই আমার টেনশনে রাত জাগতে হয়েছে। কালও তো এর ব্যতিক্রম হলো না। বলো তো মেয়ে, কোথায় ছিলে? কাল তোমার সঙ্গি সাথিরা আমার কাছে অতোগুলো ফাঁকা ফাঁকা মিথ্যা বলল কেন? তারা কী ভুলে গেছে রেবেকা নেওয়াজ এখনো মিথ্যা ধরার ক্ষমতা রাখে?
ভাবীর কণ্ঠে জলদ্গম্ভীর সুর শুনে মুচকি ঠোঁটে হেসে ফেলল শাওলিন। ফোনটা বাঁকান থেকে ডানকানে চেপে বলল,
- আপনি যে এখনো স্ট্রিক্ট ব্যক্তিত্ব ধরে রেখেছেন সেটা তো ওরা জানে না। এখন বলুন, সকালের নাস্তাটা করেছেন? ঔষুধগুলো নিয়েছেন? আমি দুঃখিত গতকাল শরীর একটু বেশি খারাপ হওয়ায় ফোন ধরতে পারিনি। ওরা আমার অবস্থা দেখে কী কী সব ভুজুং ভাজং বলেছে তা জানি না। তবে এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ। হাই পাওয়ারের কিছু ট্যাবলেট খাওয়াতে এখন জ্বর নেই। সুস্থবোধ করছি এখন।
রৌদ্র ঝলকানিতে রক্ত পুরুষ্টু ঠোঁটদুটো অদম্য তীব্র প্রলোভন জাগাচ্ছে বুকে। রিয়ার-ভিউ মিররে দৃষ্টি আঁটকে নিঃশ্বাসটা বন্ধ করে ফেলেছে জিদান। ওই হাসিভরা প্রাণচাঞ্চল্য মুখ কদাচিতই দেখেছে সে। কিন্তু এভাবে, এতো কাছে, একটুখানি দূরত্বে ওরকম সুন্দর হাসিটি দেখতে পায়নি কোনোদিন। কী নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ওইটুকু মিঠে হাসিটা তার জান্তব হৃৎপিণ্ড মুচড়ে দিচ্ছে! জিদান বিস্ফোরিত চোখে অবাক সম্মোহন দৃশ্যটি দেখতে থাকলে হঠাৎ মেয়েলি চোখজোড়া নড়ে ওঠে। সহসা দৃষ্টিটা সামনের সেই রিয়ার-ভিউ আয়নায় নিবদ্ধ হলে তৎক্ষণাৎ কথা বলা থামিয়ে ফেলে শাওলিন। অপ্রতিভ আশ্চর্যে ভ্রুঁদুটো আস্তে আস্তে কুঁকড়ে এলে চট করে মুখটা ভেতরে আনল সে। সারামুখ হাসি শূন্য হয়ে জিদানের চাহনিটা বারবার বিচিত্র সংকোচ বোঝাচ্ছে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আবারও জানান দিচ্ছে জিদানের চাহনি ওকে স্বস্তি দিচ্ছে না। চাহনিটা কেমন গিলে খাওয়া ধরণের! যেন এক্স-রে'র মতো ওর সবটুকু অস্তিত্বে অদৃশ্য লেহন পৌঁছে দিচ্ছে। কথা শেষে ফোনটা হ্যাণ্ডব্যাগের ভেতর রাখতে গেলে হঠাৎ শিউরে ওঠল শাওলিন! সর্বনাশ! তড়িৎ গতিতে ব্যাগের চেইনটা খুলে ফেললে ব্যাগের ভেতর অস্থির দৃষ্টি বুলাল সে। ব্যাগে ওর ডায়েরিটা নেই! ডায়েরিটা কোথায় ফেলে এসেছে? কোথায় হারাল! ওখানে ছবিগুলো যে আছে!
.
চনমনে রোদের ভেতর উঁকি দিয়ে আছে সুদর্শন বিরাট ভবনটা। ভবন বললে অত্যন্ত ভুল হবে, পুরোনো দিনের জমিদার সুলভ বাংলো সদৃশ বাসস্থান। এখনো বাড়িটির ইট-পাথরের খাঁজে খাঁজে কাঠিন্য টেকসই ভাবটা সদর্পে মাথা উঁচু করে জানান দিচ্ছে। বাড়িটির সামনে ও পেছনে বেশ খানিকটা করে উঠোন সম জায়গা। সেখানে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে সবুজে ছাওয়া নরম ঘাসের আস্তরণ। সকালের প্রথম মিঠে রোদটা সেই সবুজের বুকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেলে দমকা হাওয়ায় ভীষণ মন্ত্রমুগ্ধ দেখায়। মাথা উঁচু করে আকাশ দেখতে চাইলে সেখানে ধরা দেয় বিশাল উঁচু উঁচু নারকেল, সুপারি ও তাল গাছের সবুজ-ছাদ। শতবর্ষী পুরোনো একটি প্রকাণ্ড অশ্বত্থ গাছ আজও বাড়ির পেছন দিকটায় অফুরন্ত ছায়া বিকিয়ে রেখেছে। ঘুমন্ত বাড়ির ভেতরে পাঁচটি জীব সত্তা বসবাস করছে বহুদিন। কখনো ঝগড়া বাঁধিয়ে বাড়ি ছাড়াছাড়ি পর্যায়ে এসে যায়, কখনো ভুবন রাঙানো প্রীতিমধুর আনন্দে ডুবে যায় হৃদয়। যাকে ঘিরে এই বাড়িটির নীরব অস্তিত্ব আজও নৈসর্গিক চট্টগ্রামের বুকে মাথা উঁচু করে রয়েছে, সেই মানুষটি ওদের পরম প্রিয়, হৃদয়ের অতি কাছের। দেয়ালে টাঙানো সোনালি ফ্রেমের ছবিটি বড় যত্ন করে মুছে নিচ্ছে রোকেয়া। পড়ণে আটপৌরে সালোয়ার-কামিজ, ওড়নাটা বুকে ও কোমরে কর্মরত মহিলার মতো বেঁধে রেখেছে। সূর্যের দাপটে সারামুখ ঘেমে শেষ। তবু রাজ্যের কাজগুলো কর্মঠ নারীর ন্যায় দুকাঁধে তুলে নিতে কার্পণ্য বোধ নেই। একটু দূরে ছোট ছোট চারগাছে পানি দিচ্ছে কেয়ারটেকার মতিন। কাঁধে ময়লা গামছা ফেলে মনের সুখে গান গাইছে এখন, "আমি পারি না আর পারি না, আমি কেন মরি না, আজরাইল কি চিনে না রে, আমি কেন মরি না . . . " দূর থেকে অমন বেসুরো কণ্ঠের কা কা গলা শুনে ধমকে ওঠে রোকেয়া,
- কিছুনি কামড়ায়ছে? গলা দিয়া ওরম করি গ্যা গ্যা করতাছু ক্যা? ম রি না ম [রি] না অ্যাঁ? জুতা দি ফি [ডা] ই তুমার ম [রি] না ম [রি] না ব [ন্দ] করায় দিমু।
রোকেয়ার ঝাঁজ মাখানো কণ্ঠ শুনে গান বন্ধ করে তাকায় মতিন। কী সুন্দর শিকল পা [গ] লার গানটা নকল করে গাইছিল! এই রোকেয়া শ য়[তা] নটা সবসময় তার আবেগমিশ্রিত গানের মাঝে খ্যাঁক খ্যাঁক করতে চলে আসে। পানির পাইপটা মাটিতে রাখতেই কাঁধের গামছাটা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বাড়ির দোরগোড়ায় দাঁড়াল মতিন। চোখে-মুখে ক্রুদ্ধভাব ফুটিয়ে গজগজ সুরে বলল,
- ভোঁতা কইরা কথা কবি না কইলাম। থা [ব] ড়া দিয়া সামনের সবক[য়]ডা দাঁ [ত] আ [ল] গা ক ই [রা] দিমু। ফ [হু] ন্নি ছেড়ি। কম্ম থুইয়া দি ভজর ভজর মা [রা] চ্ছিস। কম্ম কর!
মতিনের মুখে 'ফকিন্নি' সম্বোধন শুনে তেলে বেগুনে ঝলসে ওঠল রোকেয়া। বাড়িঘর মাথায় তুলে বাজখাঁই স্বরে তেড়ে এসে বলল,
- আয় ব্যাডা! দাঁত অক্ষণ তু [ই] লা দেখা। তোর সাহস আইজ দেখুম নি। আয় অক্ষণ সামনে আয়!
পানির পাইপে অর্ধ ছেঁড়া স্যাণ্ডেল পায়ে কঠিন একটা পাড়া দিল মতিন। ভাবভঙ্গি এমন, যেন এক্ষুণি ত [লো] য়ার হাতে কো [প] বসাতে ছুটে আসছে। রোকেয়া যেন শত্রুপক্ষের মহা শত্রু, ওকে এক্ষুণি জব্দ করতে তেড়ে আসছে। ঠিক সেসময় বাড়ির দোতলা থেকে ঝপ করে এক বালতি ময়লা পানি ফেলল মোখলেস। বেচারা মতিন ময়লা পানিতে জবুথবু হলে হইহই করে চিৎকার করে ওঠল। "ওই কেডা রে . . কেডা রে" স্বরে চিৎকার ভেসে ওঠতেই চোখ পাকিয়ে ওপরতলায় চাইল সে। দেখল, পুরো দোতলার বারান্দাটা মুছে ধুয়ে নোংরা ময়লা পানিটা ঝপ করে ছেড়েছে মোখলেস। বারান্দায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে রেলিংয়ের ওপর ঠাসঠাস চাপড় মারছে ও। মতিনের ময়লা পানিতে কাকভেজা দৃশ্য দেখে রোকেয়া হাসতে হাসতে দেয়াল ধরে নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত। পেটে খিল ধরে যাচ্ছে। মতিন নিজের গা থেকে আঁশটে পঁচা দুর্গন্ধটা পেল। দূষিত গন্ধে নিজেরই নাড়িভুঁড়ি উল্টে বমি চলে আসার জোগাড়। দু আঙুলে কোনোমতে নাক চেপে নাকিসুরে ঝাঁজ ছাড়ল মতিন,
- আজকা যদি ভাইজানের কাছে তোগোর দুইডারে বিচারে না বহাইছি! তইলে আমার নামও মতিন লাল জবলু মিয়া না! ভাইজানে আহুক আইজকা! কু [টি] কু [টি] কইরা তো [গো] রে সা [ই] জ কইরা বাঁশের চিপায় গা [ই] ত্থা থু [মু]। তুই আইজকা খারাইস ফ [হু] ন্নি ছেড়ি ফ[হু] ন্নি!
রোকেয়ার দিকে গর্জন ছেড়ে এবার ওপরতলায় চাইল মতিন,
- তুইও খারাইস হা [লা] র খা [ইশ] ট্টা চ[র্বি]র গো বা ই জ্জা ফু ত!
ক্রোধে ফুঁসতে ফুঁসতে মতিন বাড়ির অন্যদিকে চলে গেলে মোখলেস বহুকষ্টে হাসি থামিয়ে ফেলল। পেট চেপে হাসি হাসি রবটা মুখে এঁটে বলল,
- রোকেয়াবু? ও রোকেয়াবু? এইদিকে চাও তো দেহি।
রোকেয়া হাসি সামলে কোনোমতে ওপরের দিকে চাইল। মুখ উঁচু করে তার চেয়ে ছোট বয়সি ছেলেটার দিকে দৃষ্টি তুলে বলল,
- কি কবি কই লা মানু। হাতে মেলা কাম! বারান্দা মুইছে দিছস? ওডা শেষ?
- হ বু, শেষ। ভাইজানে আইজ আসব কয়ডার দিক? কিছু কী বইলা গেছে তুমারে?
কথাটা বেশ স্বাভাবিক শোনালেও রোকেয়ার মনে হল কিছু একটা স্বাভাবিক নেই। এভাবে তো মোখলেস ভাইজানের ব্যাপার অযথা প্রশ্ন কৌতুহল রাখে না! ঘটনা কী এখানে? রোকেয়া দুই ভ্রুঁ কুঁচকে অপ্রতিভ মুখে শুধোল,
- কিছু হইছে মোখলেস? গলা ঝাড়া দি কাশ তো!
মোখলেস এবার ডানে-বামে দৃষ্টি বুলিয়ে কী যেন দেখল একবার। ভাবটা এমন, গলা বেশি উঁচু করলে যদি বাইরের কেউ শুনে ফেলে! অমনেই তড়িৎ গতিতে দৌড়ে দোতলা থেকে হুড়মুড়িয়ে নেমে সরাসরি বাইরে এসে পৌঁছুল। হাঁপাতে হাঁপাতে হালকা একটু কেশে মোখলেস নীচুস্বরে বলল,
- রোকেয়া বু, আমগোর মনে হয় সাবধান থাকোন দরকার। যেকোনো সময় বিপদ আইতে পারে! খালু খালাম্মারে জলদিই সবকিচ্ছু জানায়া দেও। হেরা হুইন্না কিছুমিছু একটা কইরা রাখুক। ভাইয়েরে সরায় ফেলুক। কালকা রাইতে ওইহানে . . ওই ছোডো গেটের ওইহানে কেডা জানি আছিল। আমি রাইতের আন্ধারে ভালা দেহি নাই। পানি আনতে গিয়া হঠাৎ ওইদিহি চোখ পড়নে ঘাবড়ায় গেছিলাম। পরে দেহি কেডা জানি সিগারেট ফুঁইকা খাড়ায় আছে। আমার ডর করতাছে রোকেয়াবু। কিছুদিন আগে রমিজ সাহেবরে ঘরের ভিতর জ [বা] ই কইরা কু [ত্তা] র মতো কু [পা] ইছে! এহন যদি ওই কামের লিগা ভাইয়ের ওপরেও নজর দেয়? আমার মন কইতাছে অঘটন একটা ঘটব! বিরাট অঘটন ঘটব! শান্তি পাইতাছি না! ডর ঢুইকা গেছে!
মোখলেসের মুখ থেকে সম্পূর্ণ কথা শুনে স্তব্ধ হয় রোকেয়া। মুখটা হাঁ করে দুহাতের তালু দিয়ে ঠোঁট ঢাকে ও। ভেতরে ভেতরে এতো বড় দুষ্কৃতি, মারাত্মক রকম ভয়াবহতা ফাঁদ পেতে আছে তা ও কল্পনাও নেই! ভেবেছিল সেই ঘটনার পর সবকিছু বুঝি চুকে-বুকে গেছে। ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। কিন্তু কই? রোকেয়া বিস্ফোরিত নেত্রে মুখ ঘুরিয়ে পেছনের দিকটায় চাইল। ভয়-সর্বস্ব শ্বাস ফেলে ছোটো গেটটায় চাইতেই সমস্ত শরীর ঝিমঝিমিয়ে এলো। এই বুঝি ফাঁকা গেটটার বাইরে কেউ নজর রাখছে . . খুন করতে চাইছে . . কুখ্যাত সেই ঘটনার শোধ ভাইজানের ওপর দিয়ে নিচ্ছে! আতঙ্কে কথা বলতে পারল না রোকেয়া। মাথার ওপর বটবৃক্ষের মতো ছায়া দেওয়া পুরুষটির মর্মাহত অবস্থা সে ইহজনমেও দেখতে পারবে না!
.
হাসপাতালে পৌঁছে চরম ক্ষিপ্ত হলো শোয়েব। রাগের বহিঃপ্রকাশটা সবসময় অখণ্ড নীরবতা দিয়ে হয়। জিনিস ভাঙচুর, ক্ষোভিত স্বর উঁচু, অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে কখনো রাগ, ক্ষোভ, জিদের হলকা প্রকাশ করেনি। তবে আজ মনে হচ্ছে পুরোনো সেই নিভে যাওয়া সত্তাটা আবারও দপদপ করে ফিরছে। রাগ হচ্ছে। ক্রোধে অসহ্য লাগছে। হাতের মুঠোয় নরম কাগজের টুকরো শত শত খাঁজে দলা পাকিয়ে একটুখানি হচ্ছে। নার্স রেহানার দিকে খাঁজকাটা ছুড়ির মতো দৃষ্টি ছুঁড়ল শোয়েব,
- আপনি আমার কাছে ঠিক কি আশা করেন? কথাটা বোল্ডলি আজ বলুন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জিলাপি বানিয়ে আমার-আপনার ব্যক্তিগত টাইম ওয়েস্ট করবেন না।
শূন্য কেবিনের ভেতর দুজন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে। খোলা থাইগ্লাসের ওপর দুটো মানব-মানবীর প্রতিচ্ছবি। শোয়েব আজও নিজেকে নারী-সীমানা থেকে ব্যাপক দূরত্ব বজায় রেখেছে। তবে রেহানার ভেতর এই দূরত্বটুকু সবসময়ই অসহন। ফোঁস করে ভেতরকার নিঃশ্বাস ছেড়ে এপ্রণের পকেটে হাত ডোবাল রেহানা। সমস্ত চুর উঁচু করে ঝুটি বাঁধা হলেও মাথাটা কিঞ্চিত নাড়িয়ে চুলটা বুকের বাঁদিকে আনল।
- আপনি নিজেকে প্রচণ্ড রিজার্ভ রাখেন শোয়েব।অতিমাত্রায় রিজার্ভ! আপনার ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা পশুটা কোনো মেয়ে দেখে জাগে না। বিষয়টা আপনি লক্ষ করেছেন?
কাটা কাটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও জবান খুলেনি শোয়েব। বুকের ওপর দুহাত ভাঁজ করে নিশ্চল মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল সে। ক্রোধিত চাপা নিঃশ্বাসে পুরুষোচিত দেহ ফুলে ফুলে ওঠলেও সুনীল চোখে নির্বিকার শান্তভাব। রেহানা এক কদম এগিয়ে এসে নীল দৃষ্টিজোড়ায় কৃষ্ণাভ চাহনি ছেড়ে বলল,
- শোয়েব, নিজের ভেতর এতোটা ঠাণ্ডা ভাব রাখবেন না, যেন আপনার কপালে কোনো নারীই না জোটে! আপনি যেভাবে আমাকে ইগনোরটা দেখাচ্ছেন, বিলিভ মি, আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে ঠাস করে কটা চড় লাগিয়ে দিতাম। অন্য কোনো মেয়ে হলে আপনার মতো লোহার পেছনে কক্ষণো সময় নষ্ট করতো না! আপনি পুরোপুরি একটা স্বার্থপর মানুষ। যে নিজের প্রয়োজনটুকু ছাড়া অন্যদিকে নজর দেয় না।
মুখের লাগাম ছেড়ে দিয়ে কথাগুলো শোনাল রেহানা। সামনে দাঁড়ানো এই পুরুষ যদি সত্যিকার অর্থেই মানুষ হতো, তাহলে বোধহয় রোবটের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতো না। অথচ, লোকটা কী দারুণভাবে নিরুত্তর চেয়ে আছে। কিয়ৎক্ষণ পর ভারি একবুক শ্বাস টেনে বুকের হাতদুটো খুলল শোয়েব। প্যান্টের পকেটে হাতদুটো ঢুকিয়ে খুনির মতো ঠাণ্ডাভাবে জানাল,
- তোমার মতো মেয়ের জন্য পুরো নারীজাতিটা ছিঃ ছিঃ পায়। রাস্তাঘাটে শয়তানদের খপ্পরে পড়ে, ওদেরকে নোংরা দৃষ্টিতে দেখে। তোমার পরিবার আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কতটুকু তোমাকে পাঠ শিখিয়েছে সেটা বুঝতে পেরে দুই মিনিট চুপ ছিলাম। কিন্তু মনে হলো আফটার দ্যাট লেসন তোমার আরো কিছু শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
কথাগুলো শুনতে শুনতে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল রেহানা। কখন যে 'আপনি' সম্বোধন 'তুমি'তে এসে পৌঁছেছে তা খেয়াল করেনি সে। হঠাৎ লক্ষ করল, এই প্রথম মানুষটা ওর দিকে এক কদম এগিয়ে এসেছে। হ্যাঁ ... এসেছে! দুরুদুরু করে বুকের কাঁপন ওর পাঁজরা যেন চিড়ে দিচ্ছে! ওর মুখের দিকে সেই ওশেন-ব্লু চোখদুটো স্থির করে কণ্ঠ হিম করে বলল,
- তোমার জায়গায় তুমিই হলে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার এই হাত চালাতাম, যতক্ষণ এই হাতের প্রত্যেকটা নার্ভ অবশ না হতো। এসব মুখের ভাষা অন্য কোনো ভদ্রলোকের সামনে উচ্চারণ কোরো না রেহানা হানিফ। কেমন বীভৎস অবস্থা করে ছাড়বে কল্পনা করতেও ভয় হবে। বিকেলে ট্রান্সফার লেটারটা বুঝে নিতে দেরি কোরো না। তোমাকে এই বিভাগ ছাড়ার শেষ সুযোগ দিলাম। সেটাও দয়াকরে।
নীল চক্ষুতে ঝলসে ওঠা বারুদ-ভষ্ম চাহনিতে হতবাক হয় রেহানা। মুখের রা যেন অদূরে কোথাও মিলিয়ে গিয়েছে। ভাষারা আজ বিদ্রোহ করেছে ওর দিকে। ঈষৎ ফাঁক হয়ে ঠোঁটদুটো থরথর করে কাঁপতে থাকলে আচমকা ঢোক গিলল রেহানা। শোয়েব দু কদম পিছিয়ে যেই কেবিন থেকে বেরুতে নিবে, হঠাৎ তার চোখদুটো বেডের নিচে হঠাৎই আঁটকে গেল। বেডের নীচে কী যেন একটা পড়ে রয়েছে। রেহানাকে পাশ কাটিয়ে পায়ে পায়ে সেই বেডের নীচে ঝুঁকলে হাত বাড়িয়ে সেটা ধরল শোয়েব। নিজের দিকে টেনে আনতেই দেখল সেটা একটা ডায়েরি! ডায়েরিটা ঠিক কাঠ-মলাটের। কাঠের এককোণায় ছোট্ট করে লেখা— SHEHZANA .


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা ফাবিয়াহ্ মমো সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন