উপন্যাস        :         বজ্রমেঘ
লেখিকা        :          ফাবিয়াহ্ মমো
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১৩ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং

লেখিকা ফাবিয়াহ্ মমোর “বজ্রমেঘ” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ১৩ই এপ্রিল থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
বজ্রমেঘ || ফাবিয়াহ্ মমো
বজ্রমেঘ || ফাবিয়াহ্ মমো

৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

বজ্রমেঘ || ফাবিয়াহ্ মমো (পর্ব - ৯)


 আকস্মিক ধাক্কার মতো লেগেছে ওর। ভয়ে বুকটা হাঁপড়ের মতো ধড়ফড় ধড়ফড় করছিল। কে ওর নাম ধরে জিজ্ঞেস করল বুঝতে পারছে না। কানের কাছে ফোন চেপে দ্রুতপদে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। সকালের কাঁচা রোদ্দুর সারা মুখে পরলে দ্রুত ডানহাতে চোখদুটো রোদ আড়াল করে বলল,
- কে আপনি বলবেন? জবাব দিচ্ছেন না কেন? কেন আপনি কল দিয়ে একজনকে চাচ্ছেন?
আবারও একপ্রস্থ প্রশ্নবাণে আক্রমণ করল শাওলিন। চোখের উপর ডানহাতের আড়াল যেন বাঁধ মানছে না। সূর্যের তেজ বড্ড বাড়ছে। এমন সময় ফোনের ওপাশ থেকে সম্ভ্রন্ত এক নারীকণ্ঠে জবাব এল,
- আমি মনে হয় তোমাকে বিরক্ত করছি। বিরক্ত করার জন্য অবশ্যই দুঃখিত। তবে প্রয়োজনটা বেশি জরুরি বলেই এই মুহুর্তে কল দিলাম। তুমি শাওলিন?
এবার শাওলিনের মনে হলো মহিলাটা বয়স্ক। কণ্ঠটা সুন্দর, মার্জিত, বুদ্ধিমনষ্ক। শাওলিন নিজের রুক্ষ স্বরটা সামলে নিয়ে সারল্য সুরে বলল,
- জ্বী, আমি শাওলিন বলছি। কিন্তু আপনাকে আমি চিনতে পারলাম না।
অকপটে কথাগুলো বলে উঠতেই ওপাশ থেকে সরল হাস্যে বলে উঠলেন বয়স্কা,
- না চেনারই তো কথা। তুমি আমাকে চিনবে কী করে? আমিও তোমাকে চিনি না। তোমার নাম্বারটা কীভাবে জোগাড় করেছি এটা শুনলে হয়তো অবাক হবে। তবু বাড়তি প্রশ্ন হিসেবে জিজ্ঞেস করছি, তুমি এদিকে থাকো? বাড়ি কী এখানে?
শাওলিন ভীষণ কৌতুহলী হয়ে চোখের সামনে থেকে আস্তে আস্তে ডানহাতটা নামাল। মহিলা নিজেও ওকে চেনে না? তাহলে ফোন দিয়েছে কেন? সঙ্গে সঙ্গে ওর সুখচিত সুন্দর ভ্রুঁদুটো মৃদু কুঞ্চল করে উঠল,
- আমি এখানে ঘুরতে এসেছি। একজন ট্যুরিস্ট হিসেবে। তবে নাম্বারটা আপনি কীভাবে পেলেন? আমার নাম যে শাওলিন এটা কী করে নিশ্চিত করলেন আপনি?
প্রচণ্ড অস্থির উৎকণ্ঠা নিমিষেই ফুটে উঠল সুন্দর সুমিষ্ট কণ্ঠস্বরে। সেই কণ্ঠের ভেতরে অক্ষরে অক্ষরে প্রকাশ পাচ্ছিল কী পরিমাণ চিন্তা নিয়ে প্রশ্নগুলো করছে। ব্যাপারটা দূর থেকে আঁচ করতে পারলেন প্রবীণ বয়সি ফাতিমা। মৃদু হেসে বেশ সুন্দরভাবে বলতে শুরু করলেন তিনি,
- তাহলে শুরু থেকে বলি? তোমার বুঝতে সবকিছু সুবিধা হবে। আমি বয়সে একজন বৃদ্ধ মানুষ। বুড়িও বলতে পারো। গতকাল এখানে পৌঁছনোর পরপরই তোমার একটা ব্যক্তিগত সম্পদ আমার কাছে চলে আসে। কাঠের মলাটে খুব সুন্দর একটা ডায়েরি। অভিনব সুন্দর! উপরে কাঠগোলাপের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল আঁকা। ছোট্ট করে তোমার নামটাও লেখা। তবে উপরে শুধু শেহজানা নামটা লেখা ছিল। তোমার ডাকনামের তথ্যটা ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠা থেকে পেয়েছি। সেখানে তোমার নাম, নাম্বার, ঠিকানাসহ আরো কিছু তথ্য ছোট ছোট অক্ষরে লেখা ছিল। তবে . . .
কথাটা বলতে বলতেই হঠাৎ রহস্যময় ভাবে দাড়ি বসালেন ফাতিমা। কিছু একটা বলতে যেয়েও তিনি খোলাশা করে বললেন না। ডায়েরিটা তার কোলেই ছিল তখন। বাঁহাতে কানে ফোন চেপে ডানহাতে আস্তে আস্তে ছুঁয়ে দিচ্ছিলেন ডায়েরিটা। যেন অমোঘ এক সত্য এই ডায়েরির অতলে চুপ করে ঘুমিয়ে রয়েছে। সেই ঘুম আজও কেউ ভাঙাতে পারেনি। স্বয়ং ফাতিমা নাজও নয়। বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর মৃদুকণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন তিনি,
- তুমি কী একা থাকো? ওখানে কেউ নেই?
দুটি ছোট্ট ছোট্ট প্রশ্ন ছিল। শুধু ছোট্ট দুখানি বাক্য। তাতেই যেন শাওলিনের সমস্ত পৃথিবী একপাক ঘূর্ণি খেয়ে টলে উঠল। কানে চেপে রাখা হাতটা থরথরিয়ে কেঁপে উঠল খুব। গলায় বিষম শুষ্কতা টের পেলেও পানির জন্য ভয়ংকর অস্থিরতা প্রকাশ করল না শাওলিন। একেবারে নিঃশ্চুপ হয়ে বৃদ্ধার পরবর্তী কথাটা শুনল,
- তুমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছ, আমি সেখানকার একজন অবসরপ্রাপ্ত ফ্যাকাল্টি সদস্য। পেশাজীবনের নির্দিষ্ট একটা অংশ ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছি। জেনে বেশ আশ্চর্য হয়েছি তুমিও সেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। খুব ভালো লাগছে। আমার নাম শুনেছ? আমি ফাতিমা নাজ। 'নাজু ' নামে এখনো বোধহয় দু চারজন আমায় চিনবে। ওদের বেশিরভাগ একসময় আমার ছাত্র-ছাত্রী ছিল। আজ পড়াশোনা শেষ করে দু চারজন অধ্যাপনা করছে।
কথাগুলো শুনতে শুনতে দুচোখ প্রচণ্ড আশ্চর্যে, বিস্ময়ে, বাকশূন্য হয়ে গেল শাওলিনের। বিস্ফোরিত চোখজোড়া দূরের রৌদ্র ঝলকানি রাস্তার পানে অপলক হয়ে রইল। মস্তিষ্কে ভনভন মৌমাছির মতো বাজতে থাকল 'ফাতিমা নাজ', 'ফাতিমা নাজ', 'ফাতিমা নাজ'! ও জানে এই নাম! শুনেছে এই পরিচয়! বারবার বহুবার কতবার শিক্ষকদের মুখে এই ক্ষুদ্র নাম জেনেছে। ক্লাসে পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে আজও শিক্ষকরা প্রাক্তন শিক্ষকদের নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করতেন। বুকভরা আফসোস নিয়ে বলতেন, প্রাক্তন শিক্ষকরা ছিলেন অসম্ভব আদর্শপূর্ণ ব্যক্তিত্বের। তাদের সেই ধারালো কঠিন ব্যক্তিত্বের কাছে কোনো বহিরাভূত অপশক্তি গলা উচুঁ করার সাহস পেত না। চিন্তার জ্ঞানগর্ভে তারা ছিলেন একেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আজ সবাই প্রাক্তন। অবসর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়েছে চিরবিদায়। অনেকে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন বহু বহুদূরে। অথচ ভাগ্যের কী অসাধারণ লীলাখেলা! আজ নিজেরই শিক্ষকের প্রাণের এক শিক্ষিকাকে চিনতে পারল শাওলিন। আনন্দে উচ্ছ্বাসিত মন ভেতরে ভেতরেই চঞ্চল হয়ে উঠছিল। বাইরে থেকে সেটা প্রকাশ পেল না। সকালের কড়কড়ে রোদ্দুরে শাওলিন মুখ লালচে আভায় ছেয়ে গেছে। কপালে জমে উঠা ঘামটুকু হাতের উল্টোপিঠে মুছে শান্তস্বরে বলল,
- অবাক হওয়ার পালা শেষ হচ্ছে না ম্যাম। কীভাবে সবকিছু প্রকাশ করব বুঝতে পারছি না। ডায়েরির সুখবরটা দেওয়ার পর এই সুসংবাদটুকু সত্যিই আমার জন্য আনন্দে। জামান, শহীদ, দীপ্ত স্যাররা আজও আপনাকে নিয়ে কত গল্প যে করেন। আমরা শুনি, মুগ্ধ হই, আক্ষেপ করি। আপনি আজ থাকলে ক্যাম্পাসে দুর্নীতি শেষ হয়ে যেতো।
কথাগুলো শুনে অবসন্নভাবে হাসলেন ফাতিমা। বয়স বেড়েছে। চামড়া কুঁচকেছে। চুলে পাক ধরেছে আজ। তবু উনার স্মৃতিভরা মস্তিষ্ক অতীত দিনের সোনালী যুগে ফিরে ফিরে যায়। আজ কেন জানি এই অদেখা অচেনা মেয়েটার প্রতি বড্ড মায়া কাজ করছে। এক অবিদিত কোমল নরম মায়া। কোমলার্দ্র কণ্ঠে ভীষণ পরিশীলিত শব্দে বলেন তিনি,
- তোমার ডায়েরি থেকে কিছু কিছু জিনিস পড়ে অনেক কিছু জানলাম। এভাবে কারো ব্যক্তিগত তথ্য পড়া উচিত নয়। কিন্তু ডায়েরির ভেতরে তোমার একখানা ছবি দেখে মনে হল, তোমাকে জানা খুব দরকার। কেন দরকার সে খবর আমিও জানি না। মাঝে মাঝে এমন অদ্ভুত কিছু পরিস্থিতি আসে, যেখানে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে লাভ নেই। উত্তর ধরা দেবে না। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কেন তোমার ডায়েরি শুধু আমার কাছেই আসলো। আজ বাতের যন্ত্রণা না হলে তোমার কাছে একবার যেতাম। বুড়ো হয়ে গিয়েছি। এখন আগের মতো অনেক কিছুই সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে চিন্তা কোরো না। তোমার ডায়েরি পাঠানোর অবস্থা আমি করব। এখন যেখানে আছ, সেখানকার ঠিকানা আমাকে জানাও। আমি লোক দিয়ে দ্রুততম সময়ের ভেতর পাঠিয়ে দিচ্ছি।
বৃদ্ধার কথাগুলো শুনতে শুনতে শাওলিন এতোটাই মশগুল ছিল যে, বারান্দার অন্যপাশে আরেকটি দরজা খুলে শ্রেষ্ঠা এসে দাঁড়িয়েছে তা লক্ষ করেনি। শাওলিনের বাঁদিক দিয়ে এসে ওর বাঁকানে চেপে ধরা ফোনের কাছে কান পেতে সবই শুনল। যদিও চুপিচুপি অন্যের কথোপকথন শোনা ঘোর অপরাধের শামিল। কিন্তু শ্রেষ্ঠা জানে শাওলিন ওর প্রতি বিশেষ ক্ষিপ্ত ভাব দেখাবে না। এমন সময় বৃদ্ধা ডায়েরি পাঠিয়ে দেবার কথা বললে চট করে বুদ্ধি এঁটে ফিসফিসিয়ে বলল,
- জানা, শোন! অ্যাই, এদিকে তাকা।
শাওলিন চমকে উঠতে নিলেও নিজেকে ধীরস্থির করে নেয়। মুখটা বাঁয়ে ফিরিয়ে শ্রেষ্ঠার দিকে ফিসফিস করে বলে,
- কী হলো?
- এখুনি উনাকে বল আমরা নিজেরা গিয়ে নিয়ে আসব। কষ্ট করে উনার পাঠাতে হবে না। দরকার পরলে আমরা সবাই যেয়ে তোর ডায়েরিটা সহি সলামত ফিরিয়ে আনব। যা, এখন বল উনাকে। উনি হ্যালো হ্যালো করছেন। সাড়া দে!
শাওলিন বেশি কিছু ভাবনা-চিন্তার সুযোগ পেল না। শ্রেষ্ঠার ব্যাপারটাই বৃদ্ধাকে সরাসরি জানিয়ে দিল। মনে মনে ভাবল, নিজে গিয়ে আনাটাই বোধহয় সবচেয়ে সুন্দর দেখাবে। একদিকে ডায়েরিটাও আনা হয়ে যাবে, অপরদিকে একজন প্রাক্তন শিক্ষিকার সঙ্গেও সাক্ষাৎ হবে আজ। এদিকে ফাতিমা শাওলিনের আসার খবরটা শুনে বেজায় রকম খুশি! খুশিতে প্রায় আত্মহারা। তিনিও যে মনে মনে এমন কিছুই প্রাণপণ আকাঙ্ক্ষায় চাইছিলেন, তা যেন সাক্ষাৎ এই মুহুর্তে পূরণ হয়ে যায়। কলটা কাটার পর শ্রেষ্ঠার দিকে কঠোর চোখে চাইল শাওলিন। চুপিচুপি ওর কথা শোনার অপরাধে শ্রেষ্ঠাকে যেন কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ছাড়ল। শ্রেষ্ঠা দ্রুত নিজের দুকান ধরে ভুল স্বীকার করলে দুষ্টু দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, ' হায়রে! মাফ কর মা, মাফ কর। আর শুনতাম না যা। সোহার মতো পিংকি প্রমিস করছি! ' এমন সময় দাঁত ব্রাশ করতে করতে বারান্দায় এসেছিল রোজা; শ্রেষ্ঠার ওই কান ধরা কীর্তি দেখে হাসতে হাসতে মুখ থেকে টুথব্রাশ ফেলে দেয় ও। ঘটনা এখানেই শেষ হলো না। সেই হাসির দমক সহ্য করতে না পেরে মুখভর্তি পেস্টের ফেনিভ থুথু বারান্দার বাইরে খক্ করে ছাড়ল। ওমনেই নীচে ব্যায়াম করতে থাকা সেলিম মাথায় ঝপ করে কিছু পড়ল। বেচারা সেলিম কানে হেডফোন গুঁজে মনের সুখে ওয়ার্কআউট করছিল। বুঝতে পারেনি মাথার উপর কী বর্ষিত হয়েছে। এখন চূড়ান্ত গাঁধার মতো মাথায় হাত দিলে সেই দৃশ্য আর বলার মতো রইল না। শুধু বারান্দা থেকে শোনা গেল মেয়েলি গলার হাস্যধ্বনি। দুটি উচ্চকণ্ঠের মাঝে একটি নিম্ন সুরের ঠাণ্ডা হাসি।
.
পরশু দিন ফেরার পালা। হাতে মাত্র কালকের দিন। আজকের দিনটি পুরোপুরি উপভোগ্য করতে চাইছিল ওরা। কিন্তু শেষপর্যন্ত সম্ভব নয়। শাওলিনের ডায়েরিটি যেখান থেকে উদ্ধার করতে হবে, সে জায়গাটা হোটেল থেকে বেশ দূর। হোটেলের কিছু কর্মচারীর মাধ্যমে জেনেছে, ওই জায়গায় ঘুরে দেখার মতো বেশ চমৎকার কিছু স্পট রয়েছে। সেই সঙ্গে থাকার মতো রেসোর্টও। এমনকি আনন্দের বিষয় হচ্ছে যে, সেখানে একজন বন কর্মকর্তাও থাকেন। এমন জমজমাট তথ্য পাওয়ার পর আবারও প্রাণোল্লাসে সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে ওরা। আজ ও কালকের দিনটা নাহয় সেদিকেই থাকবে। রুমের জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই হোটেলের গেটে দুটো গাড়ি দেখল নাযীফ। ভেজা চুলগুলো টাওয়ালে মুছতে মুছতে বলল,
- জানার গাড়িটা এসে গেছে বাডি। দুটো গাড়িই হোটেলের বাইরে ফিট অ্যাণ্ড ফাইন রেডি। তুই কী ড্রাইভারকে আমাদের সাথে দিতেছিস?
প্রশস্ত চওড়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সেলিম। চোখজোড়া বাঁহাতের কবজির উপর মগ্ন। বেশ গুরুত্ব সহকারে রোলেক্স মডেলের ঘড়িটা হাতে পড়ছে সে। মুখজুড়ে থমথমে এক ক্রুরতা ছড়ানো। বোধহয় সকালের সেই অঘটন ব্যাপারটা এখনো মাথায় বিক্ষুদ্ধ ক্ষোভ রেখেছে। সেলিম চোখ তুলে আয়নার মাঝে দৃষ্টি স্থির করে চাইল। ব্যায়াম পুষ্ট গায়ে নেভি ব্লু টিশার্ট, সঙ্গে কালো প্যান্ট, কোমরে দামী কোনো ব্রাণ্ডেড বেল্ট। তবু বিক্ষিপ্ত এক শূন্যতা তার অন্তর্দৃষ্টিতে স্পষ্ট। গম্ভীর এক শ্বাস ছেড়ে মাথাটা পিছু ঘুরিয়ে নাযীফকে তাক করে বলল,
- জানার জন্য ড্রাইভার লাগবে না। ওকে ড্রাইভ করে আমিই নিয়ে যেতে পারব। তোরা সেখানকার রেসোর্ট ইস্যুগুলো দেখিস। আর মনে রাখবি, আমার রুমটা কার পাশে দিবি। বুঝছিস তো?
নাযীফ টিশার্ট পড়তে গিয়ে সহসা সেলিমের দিকে চোখ আঁটকাল। ওর চোখের চাহনিটা স্বাভাবিক বলে মনে হলো না। যেন বুভুক্ষু মানসিকতার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। নাযীফ সেই দ্ব্যর্থ চাহনির মর্ম উদ্ধার করতে নিবে, ঠিক তখনি নিজেকে আড়াল করে সরে পড়ল সেলিম। রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ডানদিকের পথ ধরল সে। নাযীফ জানে ডানদিক বরাবর কার রুম, কাদের রুম এবং কেন সেদিকে পা চালিয়েছে। এদিকে সেলিম ঠিকই ডানদিক বরাবর সোজা করিডোরটা ধরে আস্তে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকাল। কী একটা হাতের মুঠোয় বের করে আনতেই একটি বন্ধ দরজার সামনে সটান দাঁড়িয়ে পরল। সাবধানে দরজার উপর বাঁহাতে মৃদু চাপ দিতেই আশ্চর্যজনক ভাবে দরজাটা কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে যায়। সেলিম কল্পনাও করতে পারেনি দরজাটা আনলক থাকবে! বরং আনলক করার জন্যই সে ব্যবস্থা নিয়ে এসেছিল। নিঃশব্দে দরজার চিকন ফাঁকে চোখ রাখতেই সমস্ত শরীরজুড়ে ঠাণ্ডা শিরশিরে কাঁপন ছড়িয়ে পড়ল! বাতাসে মুহুর্মুহু শৈত্যস্পর্শের মতো অনুভূত হলো তার। কী দেখছে সে? শত শত কাঁটা যেন পশমস্তরে কাঁটা দিয়ে ফুটছে। বুকের ভেতরে সহস্র হাতুড়ি দ্রিম দ্রিম করে পরতেই অস্ফুট স্বরে ফিসফিস করে বলল,
- . . ড্রপ ডেড গর্জিয়াস। শী লুকস্ সিডাক্টিভলি বোল্ড, বিউটিফুল, আই ক্যাচিং . . . ।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা ফাবিয়াহ্ মমো সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন