উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ১০)

তরু উঠে দাঁড়িয়েছে বসা থেকে।ফাইজান তরুর হাত চেপে ধরে রেখেছে।
তরু আলগোছে হাত ছাড়িয়ে নিলো।নরম সুরে বললো, "আমার জন্য কাউকে ভাবতে হবে না।আপনার ও ভাবতে হবে না।"
"আমি তো ভাবতে চাচ্ছি না তরু,তোমার সব ভাবনা আমার করে নিতে চাচ্ছি।"
"তাও করতে হবে না। আমি এভাবেই ভালো আছি।"
"আমি তো ভালো নেই তরু।মনে করো আমি নিজে ভালো থাকার জন্যই না হয় তোমাকে আমার করে চাইছি।তুমি ফিরিয়ে দিলেও আমি তোমাকেই চাইবো।"
তরু মলিন হেসে বললো, "করুণা দেখাচ্ছেন কেনো এতো?আমার বাবা নেই,মা নেই বলে? আমি কারো করুণা চাই না।"
"তুমি না চাইতেই পারো।তুমি শক্ত মনের মানুষ। আমি অতো শক্ত মনের মানুষ নই তরু।তুমি না হয় আমাকে একটু করুণা করো।করুণা করে হলেও একটু আমার হও তরু। "
ফাইজান তরুর খুব কাছে এসে দাঁড়ালো। তরুর হাতটা নিজের বুকের বা পাশে রেখে বললো, "একটু করুণা করো তরু।করুণা করে হলেও ভালোবাসো।"
তরু জবাব দিতে পারলো না। তবে আর দাঁড়ালো না সেখানে। নেমে গেলো নিচে।
বাড়িতে কেউ নেই লোকজন তেমন একটা। তরুর মামা খালারা কেউ নেই।আশেপাশে বাড়ির দুই একজন মানুষ আছে।তরুকে দেখে একজন জিজ্ঞেস করলো, "কই ছিলি তুই?তোর মা তোরে এতো খুঁজছে?কই গিয়ে লুকাই ছিলি?"
তরু জবাব দিলো না।কারো কথার জবাব দেওয়ার বা কিছু বলার মতো মানসিক শক্তি তরুর নেই।তরুর হাত পা সব কেমন অসাড় হয়ে আসছে।মাথার ভেতর ধপধপ করছে।সারাদিনের না খাওয়া তরুর পেট মোচড় দিচ্ছে। অথচ বি**ষের মতো লাগছে সবকিছু। চাচীকে দেখলো পাশের বাড়ির দুইজন মহিলার সাথে হাসাহাসি করছে।বৃষ্টিতে এরা আটকে গেছে।বৃষ্টি কমলে সবাই বাড়ি যাবে।এখন সবাই খোশগল্প করছে।
তরু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমেনার দিকে। মনে মনে বললো, "এই পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ আপনি চাচী।আপনাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।"
তারপর নিজের রুমে চলে গেলো।
ফাইজান বসে বসে তরুকে নিয়ে ভাবছে।কিছুক্ষণ পর আলমগীর এসে ফাইজানকে ডাকলো খেতে যাওয়ার জন্য।
ফাইজান নিচে এসে দেখে সবাই আছে তরু ছাড়া।
তরুকে না দেখে ফাইজানের বুকের ভেতর কেমন খালি খালি লাগতে লাগলো। লজ্জা ত্যাগ করে বললো, "তরু খেতে আসে নি? "
আমেনা বিরক্ত হয়ে বললো, "আর বলিও না, সব নাটক বাজ। মায়ের বিয়া দেওয়ার জন্য কতো লাফালাফি করছে ওই মেয়ে।এখন নাটক দেখায় ঘরের দরজা বন্ধ করে আছে।খেতে ডাকছে লতা,ও খাবে না।কতো বড় বেয়াদব মেয়ে চিন্তা কর!
নিজেই গিয়ে তোমার রুমে লুকিয়ে বসে ছিলো এখন নিজেই আবার নাটক করতেছে।"
ফাইজান বললো, "ভাবনার বিষয় হলো ও নিজে যদি লুকায় গিয়ে তাহলে ওরে বাহিরে থেকে তালা দিলো কে চাচী?যে ওরে তালা দিছে সে তো জানতো ও ভিতরে, তাহলে সে কেনো তালা খুলে দিলো না। আন্টি এতো কান্না করেছিলো মেয়ের জন্য, কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব না সেই কান্না অগ্রাহ্য করার।"
আমেনা এক নজর আলমগীরের দিকে তাকালো। আলমগীর হেসে বিগলিত হয়ে বললো, "কে জানে বাবা,ও হয়তো ওর মামা খালা কাউরে দিয়ে এই কাজ করছে।"
ফাইজান খেতে খেতে বললো, "কিন্তু আমার রুমের চাবি তো আমার আর চাচী ছাড়া কারো কাছে নেই।"
আমেনার মুখ কালো হয়ে গেলো। মুখ ভোঁতা করে বললো, "আমার চাবিটা তো খুঁজে পাই না সকাল থেকে। হয়তো তরু চুরি করে নিয়ে গেছে কোন ফাঁকে।"
ফাইজান আর কথা বাড়ালো না তবে এরা যে ভীষণ মিথ্যাবাদী আর স্বার্থপর তা বুঝে গেলো।
বিছানায় পিঠ দিতেই ফাইজানের মনে পড়লো তরু তো সকাল থেকে এখানে ছিলো। তাহলে তো সারাদিন কিছু খায় নি।"
ঘড়িতে রাত তখন সাড়ে দশটা।ফাইজান আশেপাশের কয়েকটা রেস্টুরেন্টে কল দিলো খাবার হোম ডেলিভারি দেওয়ার জন্য।
প্রায় সব রেস্টুরেন্টের সার্ভিস ততক্ষণে ক্লোজ হয়ে গেছে।
ফাইজান কল দিয়েই যাচ্ছে। বাহিরে বৃষ্টি দেখে কেউ হোম ডেলিভারি দিতে আসতে চাইছে না।অগত্যা ফাইজান নিজে বের হয়ে গেলো। ঝড় জল মাথায় নিয়ে বের হলো তরুর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে।
ফাইজান খাবার নিয়ে ফিরলো যখন তখন রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে।
বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে ফাইজান এসেছে।
তরু জানালা খুলে অন্ধকারে তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে। হুট করে জানালায় ফাইজানের মুখ দেখে ভয়ে চমকে উঠলো তরু। তরুর এলোমেলো ভাবনার মধ্যে দিয়ে ফাইজান এসে হাজির হওয়ায় ভয় পেলো। তাছাড়া ফাইজান ওই মুহূর্তে এখানে কেনো!
ভিকে জবজবে হয়ে ফাইজান বললো, "এই প্যাকেটটা নাও তরু।রাতে কিছু খাও নি তুমি, সারাদিনের না খাওয়া।না খেয়ে থাকলে সকালে বিছানা থেকে উঠার শক্তি পাবে না।এখন আন্টি নেই,কেউ তোমাকে ডেকে খাওয়াবে না।"
তরু বললো, "আপনাকে কে বলেছে এভাবে এখানে আসতে?"
"তাহলে কিভাবে তোমার সাথে কথা বলতাম বলো?দরজা তো তুমি খুলতে না এখন।তুমি না খেয়ে থাকবে ব্যাপারটা আমার সহ্য হতো না। অপরাধবোধে ভুগতাম আমি। "
তরু বিষণ্ণ হয়ে বললো, "তাহলে অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেতে আমাকে খাওয়াতে চাইছেন?"
"না তরু,ভালোবাসি বলেই তোমার না খেয়ে থাকা আমাকে কষ্ট দেয়।ভালোবাসা না থাকলে তো অপরাধবোধের প্রশ্ন ও আসতো না।ভালোবাসা না থাকলে কি এতো রাতে বের হয়ে যেতাম এই বৃষ্টির মধ্যে? তুমি আমাকে ভালোবাসতে হবে না তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি ভীষণ, এটুকু তোমাকে আমি হাজারবার বলে যাবো।"
তরু কিছু বললো না। ফাইজান জানালা দিয়ে বিরিয়ানির প্যাকেটটা দিয়ে বললো, "খেয়ে নিও তরু।তোমাকে নিজের জন্য ভালো থাকতে হবে। "
ফাইজান চলে যাওয়ার পর তরু উঠে গিয়ে খাবারের প্যাকেটটা নিলো।বিরিয়ানি হালকা গরম আছে এখনো। ভালো করে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখা।
আচমকা তরুর দুই চোখ ভিজে উঠলো। এতোক্ষণে টের পেলো তার ভীষণ ক্ষিধে পেয়েছে।
আস্তে-ধীরে খেয়ে নিলো তরু।
খেতে খেতে চোখের পানি মুছতে লাগলো। মা এখন কি করছে কে জানে!
মা'র ও নিশ্চয় তরুর জন্য কলিজা জ্বলে যাচ্ছে।
আজ রাতে তরু একা ঘুমাবে।এরপর থেকে সারাজীবনের জন্য তরু একা।তরুর কেমন দমবন্ধ লাগছে। মনে হচ্ছে বিশাল এক মরুভূমিতে তরু একা।
কেউ নেই,শীতল ছায়া হয়ে মা ও নেই জীবনে এখন আর।
সারারাত তরু মায়ের জন্য কান্না করে কাটালো।
তরু জানে এখন থেকে জীবন এভাবেই চলবে তার।তবুও মায়ের জীবনে সুখ আসুক।তরুকে নিয়ে আর কতো কষ্ট করবে?
অন্যের জন্য নিজেকে তো শেষ করে দিচ্ছিলো। এটা তো জীবন না।মায়ের তো এই জীবন পাওনা ছিলো না। জীবনের কাছে মায়ের ও কিছু সুখ পাওয়ার কথা ছিলো। তরু স্বার্থপর হয়ে নিজের কথা তাই ভাবতে পারে নি।
তার যতই কষ্ট হোক মাকে কখনো কিছু বুঝতে দিবে না তরু।মা সুখী হোক এটাই তরুর কামনা।
পরদিন সকাল হলো তরুর নতুন প্রত্যাশা নিয়ে। নিজেকে নিজেই ভালো রাখবে তরু।কাউকে বুঝতে দিবে না তরুর কষ্ট হচ্ছে যে।
নিজের কাছে এই নিজের অঙ্গীকার তরুর।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন